সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে নলকুপ দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

  • আপডেট: ০২:৩৩:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯
  • ২২

শাহরাস্তি প্রতিনিধি:

চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কেশরাঙ্গা গ্রামের জনপ্রতিনিধি মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে নলকূপ বিতরণের জন্য মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় কয়েকটি পরিবাবরকে গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে সময় ক্ষেপন করে তাদেরকে নলকূপ প্রদান করলেও তিনি তাদের নিকট মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেন।

গত ২ অক্টোবর সকালে ওই এলাকার স্থানীয় একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উদ্দেশ্য করে খোলা চিঠি লিখলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এতে অর্থ গ্রহণের বিষয়টি জানাজানি হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এক বছর আগে মোহাম্মদ আলী পরিবারগুলোকে গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে একেক জনের থেকে ২০-৩০ হাজার টাকা করে অর্থ আদায় করেন। নতুন গ্রাহকদের থেকেও তিনি অর্থর মাধ্যমে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে বিষয়টি স্থানীয় যুবকের সাহসিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা সকলের সামনে ফাঁস হয়ে যায়।

গত সোমবার সকালে সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কেশরাঙ্গা গ্রামে গিয়ে তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর আরও তথ্য। সরকার প্রদত্ত আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ স্থাপনে সাত হাজার পাঁচশ টাকা চার্জ নির্ধারণ করার পরেও স্থানীয় মেম্বারের প্ররোচনায় ভুক্তভোগীরা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হওয়ার বিষয়টি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।

১০টি পরিবারের স্বাক্ষর সম্বলিত ফরমে আবেদনের মাধ্যমে উন্মুক্ত জায়গায় নলকূপ স্থাপনের কথা থাকলেও, দেখা গিয়েছে ভিন্ন চিত্র। একক স্থাপনায় চারপাশে ঘিরে রাখা বাড়িতে নলকূপ স্থাপনের দৃশ্য কোথাও কোথাও নজরে আসে। পূর্বপাড়ার আব্দুল ওয়াহাবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি অনুপস্থিত।

প্রবাসী আব্দুল ওয়াহাবের ভাই আব্দুল মতিন প্রতিবেদকের সাথে কথা বলে স্বীকার করেন তার ভাই মেম্বারকে ২৫-৩০ হাজার টাকা দিলেও তা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তার এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য নেই বলেও জানান। দূর্ণীতির কথাটি তিনি লুকাতে চান। পূর্বপাড়ার মালেক মাষ্টারের বাড়ির মারুফ সরাসরি উপজেলায় আবেদনের মাধ্যমে স্থানীয় মেম্বারের সহযোগিতা ছাড়াই নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় নলকূপ স্থাপন করেন।

তারপরেও তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো। যা নলকূপ স্থাপনে জড়িত লোকেরা তার কাছ থেকে নিয়েছেন বলে তিনি জানান। উত্তরপাড়ার হাসির বাড়ির জান্নাতুল নাঈমকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরবর্তীতে সব খুলে বলেন। তার কাছ থেকেও নলকূপ স্থাপনের জন্য মেম্বার ২৮ হাজার টাকা নেন বলেও তিনি স্বীকার করেন। আর নলকূপ স্থাপনে জড়িত লোকেরা ৩ হাজার টাকা তার কাছ থেকে নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।

উত্তরপাড়ার আরেক বাসিন্দা হাফেজ বাড়ীর খোকা মিয়াকে নলকূপ দেয়ার কথা বলে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে জানান তার আপন ভাই। খোকা মিয়া সেদিন বাড়িতে ছিলেন না বিধায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। এ ব্যাপারে মেম্বার মোহাম্মদ আলীকে দূর্ণীতির ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এ গ্রামের মেম্বার আমি। কেউ চাইলেও কিছু করতে পারবে না তার। আমি কারও নিকট হতে কোনো অতিরিক্ত টাকা নেই নি। সরকার নির্ধারিত টাকাই আমি গ্রাহকদের নিকট হতে নিয়েছি। এতো দূর্ণীতির তথ্য পাওয়া গেলেও সাহস করে কেউ এগিয়ে আসেন নি। তবে নতুন নলকূপ স্থাপনে নতুন আরেক জনের কাছে অর্থ দাবি করলে তিনি তা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চিঠির মাধ্যমে জানান। যা সকল অনলাইন পত্রিকায় ও স্থানীয় পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হলে জনসমক্ষে মেম্বার মোহাম্মদ আলীর দূর্ণীতির তথ্য উঠে আসেন।

স্থানীয় ইউনিয়নের প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় মেম্বার একজন কট্টরপন্থী বিএনপির সমর্থক। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ এই গ্রামের মেম্বার। তার দূর্ণীতির সকল তথ্য প্রমাণ থাকলেও কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। তিনি আর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান একত্রে এই এলাকায় আরও অনেক প্রকল্পের টাকা মেরে খায়। তবুও দিব্যি এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে তিনি সকলের নিকট জুলুম করে টাকা আদায় করেন।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ছাত্রলীগকে গণ*ধোলাই দিয়ে থানায় সোপর্দের আহ্বান ওসির বক্তব্যে প্রশাসনে তোলপাড়

সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউপি সদস্য মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে নলকুপ দেয়ার নামে অর্থ আত্মসাতের অভিযোগ

আপডেট: ০২:৩৩:২৫ অপরাহ্ন, শনিবার, ১২ অক্টোবর ২০১৯

শাহরাস্তি প্রতিনিধি:

চাঁদপুর জেলার শাহরাস্তি উপজেলার সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কেশরাঙ্গা গ্রামের জনপ্রতিনিধি মোহাম্মদ হোসেনের বিরুদ্ধে নলকূপ বিতরণের জন্য মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ এর অভিযোগ পাওয়া গেছে।

স্থানীয় কয়েকটি পরিবাবরকে গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে সময় ক্ষেপন করে তাদেরকে নলকূপ প্রদান করলেও তিনি তাদের নিকট মোটা অংকের অর্থ আত্মসাৎ করেন।

গত ২ অক্টোবর সকালে ওই এলাকার স্থানীয় একজন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে উদ্দেশ্য করে খোলা চিঠি লিখলে বিষয়টি প্রকাশ্যে আসে। এতে অর্থ গ্রহণের বিষয়টি জানাজানি হয়।

স্থানীয় সূত্র জানায়, এক বছর আগে মোহাম্মদ আলী পরিবারগুলোকে গভীর নলকূপ দেওয়ার কথা বলে একেক জনের থেকে ২০-৩০ হাজার টাকা করে অর্থ আদায় করেন। নতুন গ্রাহকদের থেকেও তিনি অর্থর মাধ্যমে কল দেওয়ার চেষ্টা করলে বিষয়টি স্থানীয় যুবকের সাহসিকতায় সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের দ্বারা সকলের সামনে ফাঁস হয়ে যায়।

গত সোমবার সকালে সূচীপাড়া দক্ষিণ ইউনিয়নের কেশরাঙ্গা গ্রামে গিয়ে তদন্ত করলে বেড়িয়ে আসে চাঞ্চল্যকর আরও তথ্য। সরকার প্রদত্ত আর্সেনিকমুক্ত নলকূপ স্থাপনে সাত হাজার পাঁচশ টাকা চার্জ নির্ধারণ করার পরেও স্থানীয় মেম্বারের প্ররোচনায় ভুক্তভোগীরা ৩০ হাজার টাকা পর্যন্ত খরচ হওয়ার বিষয়টি প্রতিবেদককে নিশ্চিত করেন।

১০টি পরিবারের স্বাক্ষর সম্বলিত ফরমে আবেদনের মাধ্যমে উন্মুক্ত জায়গায় নলকূপ স্থাপনের কথা থাকলেও, দেখা গিয়েছে ভিন্ন চিত্র। একক স্থাপনায় চারপাশে ঘিরে রাখা বাড়িতে নলকূপ স্থাপনের দৃশ্য কোথাও কোথাও নজরে আসে। পূর্বপাড়ার আব্দুল ওয়াহাবের বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, তিনি অনুপস্থিত।

প্রবাসী আব্দুল ওয়াহাবের ভাই আব্দুল মতিন প্রতিবেদকের সাথে কথা বলে স্বীকার করেন তার ভাই মেম্বারকে ২৫-৩০ হাজার টাকা দিলেও তা একান্ত ব্যক্তিগত বিষয়। তার এ ব্যাপারে কোনো মন্তব্য নেই বলেও জানান। দূর্ণীতির কথাটি তিনি লুকাতে চান। পূর্বপাড়ার মালেক মাষ্টারের বাড়ির মারুফ সরাসরি উপজেলায় আবেদনের মাধ্যমে স্থানীয় মেম্বারের সহযোগিতা ছাড়াই নিজ বাড়ির আঙ্গিনায় নলকূপ স্থাপন করেন।

তারপরেও তার খরচ হয়েছে ২০ হাজার টাকার মতো। যা নলকূপ স্থাপনে জড়িত লোকেরা তার কাছ থেকে নিয়েছেন বলে তিনি জানান। উত্তরপাড়ার হাসির বাড়ির জান্নাতুল নাঈমকে টাকা নেওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যেতে চাইলেও পরবর্তীতে সব খুলে বলেন। তার কাছ থেকেও নলকূপ স্থাপনের জন্য মেম্বার ২৮ হাজার টাকা নেন বলেও তিনি স্বীকার করেন। আর নলকূপ স্থাপনে জড়িত লোকেরা ৩ হাজার টাকা তার কাছ থেকে নিয়েছেন বলেও তিনি জানান।

উত্তরপাড়ার আরেক বাসিন্দা হাফেজ বাড়ীর খোকা মিয়াকে নলকূপ দেয়ার কথা বলে ২৫ হাজার টাকা নিয়েছেন বলে জানান তার আপন ভাই। খোকা মিয়া সেদিন বাড়িতে ছিলেন না বিধায় তার বক্তব্য পাওয়া যায় নি। এ ব্যাপারে মেম্বার মোহাম্মদ আলীকে দূর্ণীতির ব্যাপারে জানতে চাইলে বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। নিজেকে নির্দোষ দাবি করে এর পিছনে গভীর ষড়যন্ত্রের কথা উল্লেখ করেন।

তিনি আরও বলেন, দীর্ঘ ৩০ বছর ধরে এ গ্রামের মেম্বার আমি। কেউ চাইলেও কিছু করতে পারবে না তার। আমি কারও নিকট হতে কোনো অতিরিক্ত টাকা নেই নি। সরকার নির্ধারিত টাকাই আমি গ্রাহকদের নিকট হতে নিয়েছি। এতো দূর্ণীতির তথ্য পাওয়া গেলেও সাহস করে কেউ এগিয়ে আসেন নি। তবে নতুন নলকূপ স্থাপনে নতুন আরেক জনের কাছে অর্থ দাবি করলে তিনি তা উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে চিঠির মাধ্যমে জানান। যা সকল অনলাইন পত্রিকায় ও স্থানীয় পত্রিকায় ফলাও করে ছাপা হলে জনসমক্ষে মেম্বার মোহাম্মদ আলীর দূর্ণীতির তথ্য উঠে আসেন।

স্থানীয় ইউনিয়নের প্রভাবশালী নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, স্থানীয় মেম্বার একজন কট্টরপন্থী বিএনপির সমর্থক। তিনি দীর্ঘ ৩০ বছর যাবৎ এই গ্রামের মেম্বার। তার দূর্ণীতির সকল তথ্য প্রমাণ থাকলেও কেউ মুখ খোলার সাহস পায় না। তিনি আর ইউনিয়ন চেয়ারম্যান একত্রে এই এলাকায় আরও অনেক প্রকল্পের টাকা মেরে খায়। তবুও দিব্যি এলাকায় প্রভাব বিস্তার করে তিনি সকলের নিকট জুলুম করে টাকা আদায় করেন।