• ঢাকা
  • শনিবার, ২৭শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৪ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০
সর্বশেষ আপডেট : ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২০

মৎস্য বিভাগের উদাসীনতায় চাঁদপুরে দেদারছে নিধন হচ্ছে বাইলা মাছের রেনু

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

স্টাফ রিপোর্টার॥
মৎস্য বিভাগের উদাসীনতায় চাঁদপুরে দেদারছে নিধন হচ্ছে বাইলা মাছের রেনু। রেনু নিধনের পরে চাঁদপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলায় বাইলা গুঁড়া নামে বিভিন্ন রেনু পোনা বিক্রি হচ্ছে। গত কয়েকদিন চাঁদপুর শহরসহ জেলার বিভিন্ন উপজেলার বাজার এবং পাড়া-মহল্লায় ও অলিতে-গলিতে ভ্যান ও বড় গামলা করে এক শ্রেণির অসাধু মাছ বিক্রেতারা বিভিন্ন প্রজাতির রেনু পোনা বিক্রি করে আসছে। এভাবে বাইলা মাছের পোনা বিক্রয় যেনো দেখেও না দেখার ভান করছে জেলা মৎস্য কর্মকর্তারা ও কোস্টগাড।

চঁাঁদপুরের নদী থেকে ধরে আনা বিভিন্ন প্রজাতির রেণু পোনা মাছ নিধনের মহোৎসব। প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে বিভিন্ন স্থানে নদীতে প্রতিদিন অন্তত কয়েকশ’ জেলে সুক্ষ ফাঁসের জাল দিয়ে বিভিন্ন প্রজাতির রেণু পোনা মাছ নিধন করছে। ভোর ও গভীর রাতে দু’বার ধরে এ মাছ আবার প্রকাশ্যে চাঁদপুর শহরের বিভিন্ন সড়ক, পাড়া-মহল্লায় ও অলি-গলিতে বিক্রি করছে। অন্যদিকে জেলা প্রশাসন, পুলিশ, মৎস্য অধিদফতর ও কোস্টগার্ড দেখেও যেন না দেখার ভান করছে বলে মনে করেন সচেতন মহল।

এসব এক-দেড় ইঞ্চি সাইজের বিভিন্ন প্রজাতির রেণু পোনা মাছ প্রতিকেজি একশ’ থেকে দেড়শ’ টাকা কেজি দরে বিক্রি হওয়ায় দামের সহজলভ্যতায় ক্রেতারা ব্যাগ ভরে এ মাছ কিনে নিচ্ছে। রেণু ও ছোট পোনা মাছ ধরা অপরাধ একথা স্বীকার করলেও সরকারি কোন অনুদান না থাকায় এবং পেটের টানেই বাধ্য হচ্ছেন বলেই মাছ শিকার করছেন বলে জানান জেলেরা।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিক্রি করা এ মাছের পোনা প্রতি কেজিতে দুই/তিন হাজার মাছ ওঠে। বিক্রি হওয়া মাছ বাইলা, চেওয়া, চিংড়ি, পোয়াসহ বিভিন্ন প্রজাতির নদীর মাছের রেনু পোনা। আর দুই/তিন মাস পর এ মাছ প্রতিকেজি মাছ বিক্রি করতে পারতো ২০০-২৫০ টাকারও বেশি। এককেজি বিক্রিত মাছ আগামি কয়েক মাসে কয়েক টন ওজন হতো। কিন্তু প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে এ রেণু পোনা শিকার ও বিক্রি হচ্ছে দেদারছে। চাঁদপুর জেলার পুরাণ বাজার, লক্ষ্মীপুর ইউনিয়নের বহরিয়া নদীর পাড়, আনন্দ বাজার ও মতলব উত্তর উপজেলায় এসব রেণু পোনা নিধন হচ্ছে। আর বিক্রি হচ্ছে বিভিন্ন উপজেলা ও পৌর শহরে বিভিন্ন সড়কে, পাড়া-মহল্লায় ও অলিতে-গলিতে ভ্যান বা বড় গামলায় করে এ মাছ বিক্রি হচ্ছে।

বিভিন্ন এলাকার নদীর পাড়ে ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন প্রজাতির মাছের পোনা বিভিন্ন সাইজের ব্যারেলে করে বিক্রি করা হচ্ছে। এছাড়া আবার কেউ কেউ মাছ নৌকায় থাকা অবস্থায়ই বিক্রি করে দিচ্ছে পাইকারদের কাছে। এসব রেণু পোনা ধরা বা বিক্রি নিষিদ্ধ থাকলেও মৎস্য বিভাগ ও কোস্টগার্ডের চোখ ফাঁকি দিয়ে জেলেরা সহজেই এ মাছ শিকার ও বিক্রি করে যাচ্ছে।

কয়েকজন জেলের সাথে কথা হলে তারা জানান, মাছ না ধরলে আমগো না খাইয়া থাকতে হইবো। বইস্সা থাকলে খাওন তো কেউ দেয় না। মাছ ধরাই তো আমাগো পেশা। নদীতে জাল পাতি (ফেলি)। যহন যে মাছ পাই হেইয়া বেচি (বিক্রি করি)। আমগো তো প্যাডের টানে মাছ ধরতে হয়। হারাদিন খাইট্টা এক থেকে দুই হাজার ট্যাহার মাছ পাইয়া। হেইডা আবার ভাগ করতে হয়।

জেলেরা আরো বলেন, জানি এই ছোড মাছ ধরা ঠিক না। কিন্তু জালে ওডলে কি করমু। এই নাও (নৌকা) চালাইয়া তো নদীতে জাল ফেলি। ভাগ্যে যা ওডে এই আশায়। তবে তারা স্বীকার করেন, এই ছোট মাছ ধরা অন্যায়।

চাঁদপুরে সচেতন মহল মনে করেন, বিভিন্ন প্রজাতির রেণু পোনা নিধিনের বিরুদ্ধে জেলা প্রশাসন, জেলা মৎস্য ও কোস্টগার্ডের কোন অভিযান দেখা যায়নি। বিভিন্ন প্রজাতির রেণু পোনা নিধিন বন্ধ করতে হবে। আর যারা এসব অন্যায়ের সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া খুবই জরুরি। তা নাহলে এমন এক সময় আসবে দেশী প্রজাতির কোন মাছ আর নদীতে পাওয়া যাবে না।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. আসাদুল বাকী মুঠো ফোনে জানান, জেলেরা যেসব মাছের পোন নিধন করছে, তা দেখের চোখের পানি ধরে রাখা দায়।

বুধবার রাত তিনটায় ভারপ্রাপ্ত জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মাহমুদের নেতৃত্বে আমরা নদীতে অভিযানে নামি। আমাদের সহযোগিতা করেন সদর সার্কেল মো. আসাদুজ্জামান, সদর মৎস্য কর্মকর্তা মো. মাকসুদুল হাছান, হাজীঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. শামসুল আলম পাটওয়ারী।

অভিযানে ৯টি কাঠের তৈরী নৌকা ও ১টি স্টিলের নৌকা জাল সহ আটক করা হয়। এ ছাড়াও ১৩জন জেলেকে আটক করা হয়েছে। এর মধ্যে ১২জনকে বিভিন্ন মেয়াদে সাজা প্রদান করা হয়েছে। ১জন নাবালক থাকায় তাকে জরিমানা প্রদান করা হয়েছে।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • অর্থনীতি এর আরও খবর
error: Content is protected !!