• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ৫ অক্টোবর, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ৫ অক্টোবর, ২০১৯

ভিআইপিদের ‘রঙ্গমহলে’ নিয়ে সুন্দরী নারী দিয়ে ভিডিও করে ফাঁদ পাততেন সেলিম

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশে অনলাইনভিত্তিক ক্যাসিনো ব্যবসার মূল হোতা সেলিম প্রধান। গত ৩০ সেপ্টেম্বর শাহজালাল বিমানবন্দরে ফ্লাইট থেকে তাকে গ্রেফতারের পর জুয়াসহ তার নানা অপরাধ সম্পর্কে চাঞ্চল্যকর তথ্য উঠে আসছে।

বলা হচ্ছে আন্ডারওয়ার্ল্ডে ‘থাই ডন’ হিসেবে পরিচিত সেলিম প্রধান।

র‌্যাব জানায়, গুলশান ২-এর ৯৯ নম্বর সড়কের ১১/১ নম্বরে বিলাসবহুল ফ্ল্যাট ভাড়া করে ‘রঙ্গমহল’ বানিয়েছিলেন সেলিম প্রধান। সেই রঙ্গমহলে প্রভাবশালী রাজনীতিক, মন্ত্রী, শিল্পপতি, ব্যবসায়ী ও উচ্চপদস্থ সরকারি কর্মকর্তাগণের যাতায়াত ছিল। সেখানে নানা অনৈতিক কাজ হতো চার দেয়ালের আড়ালে। আর এসব কুকর্মের ভিডিও গোপন ক্যামেরায় ধারণ করতেন সেলিম।

সূত্র জানায়, ওই ফ্ল্যাটে প্রতি শনিবার বিকেল সাড়ে ৩টা থেকে সারারাত ‘জলসা’ হতো। সেই জলসায় সাবেক দুই প্রতিমন্ত্রীর নিয়মিত যাতায়াত ছিল বলে জানিয়েছে সেলিমের কয়েকজন ঘনিষ্ঠজন।

এছাড়াও একাধিক দায়িত্বশীল গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, গুলশান-২ এর ওই ফ্ল্যাটের জলসায় আনন্দ-ফূর্তি করতে যারা যেতেন সেখানে তাদের অনৈতিক ও অসংযত আচরণের ছবি গোপনে ধারণ করতেন সেলিম। সব চিত্র ও ভিডিও নিজের মেমোরি কার্ডে জমা করতেন। পরে নানা ধরনের প্রয়োজন অনুভব করলে সেসব ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে ভিআইপিদের ফাঁসানোর ফাঁদ পাততেন তিনি। সেই জলসায় অংশ নেয়া বেশিরভাগই ছিল ভিআইপি ও উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা আর প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ীরা।

সেলিমের লাগেজে পাওয়া তিনটি মেমোরি কার্ড থেকে এসব তথ্য নিশ্চিত করা হয়েছে।

গত ৩০ সেপ্টেম্বর থাই এয়ারওয়েজের টিজি-৩২২ নম্বর ফ্লাইটে হযরত শাহজালাল বিমানবন্দর হয়ে বাংলাদেশ ছাড়ার ঠিক আগ মুহূর্তে গ্রেফতার হন সেলিম প্রধান।

এ সময় তার লাগেজ তল্লাশি করে তিনটি মেমোরি কার্ড পাওয়া যায়। পরে ওই কার্ড তিনটি পরীক্ষা করে সেখান থেকে দেশি-বিদেশি তরুণীদের সঙ্গে বাংলাদেশি অনেক উচ্চপদস্থ ব্যক্তিবর্গ ও রাজনীতিবিদদের আপত্তিকর ছবি উদ্ধার করা হয়।

গোয়েন্দা সূত্র জানিয়েছে, এ বিষয়ে র‌্যাবের জেরায় নিশ্চুপ ছিলেন সেলিম প্রধান। তাকে জিজ্ঞাসা করা হয়, কেন ওই মেমোরি কার্ডগুলো থাইল্যান্ডে নিয়ে যাচ্ছিলেন?

জবাবে কোনো সদুত্তর দিতে পারেননি সেলিম।

র‌্যাবের দাবি, নিজের রঙ্গমহলে এসব ভিআইপিতের মনোরঞ্জনের ব্যবস্থা করে দিয়ে তাদের আপত্তিকর সব ছবি ও ভিডিও বানাতেন সেলিম। পরে বিভিন্ন সময় এসব ছবি ও ভিডিও দেখিয়ে তাদের ফাঁসাতেন।

ভিআইপিদের ভয় দেখিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা ছিল সেলিম প্রধানের।

একই তথ্য দিয়েছেন গুলশানের সেই বাড়ির মালিক ও সেলিমের সহযোগী মাসুম।

গুলশান ২-এর ৯৯ নম্বর সড়কের সেই বাড়ির মালিক জানান, সেলিম প্রধানের কাছে ভাড়া বাবদ ২৬ লাখ টাকা পাবেন তিনি। তবে প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে সেলিম সেই ভাড়া দিচ্ছে না। ওই বাড়ির ৪র্থ তলায় প্রভাবশালীদের আনাগোনা থাকার বিষয়টি জানার পরেও আন্ডারওয়ার্ল্ডের ডন বলে সেলিম প্রধানকে কিছু বলতে বা বাড়ি ছেড়ে দিতে বলতে পারেননি তিনি।

বাড়িওয়ালার বরাত দিয়ে গোয়েন্দা সূত্র জানায়, গুলশান-২ এর ওই বাড়ির দুটি ফ্লোর ভাড়া নিয়েছিলেন সেলিম প্রধান। ওই বাড়ির তৃতীয় তলায় স্ত্রীকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি। আর চতুর্থ তলায় ছিল তার রঙ্গমহল। সেখানে পাঁচটি বড় বড় কক্ষের তিনটি নাচ-গান ও আনন্দফূর্তির জন্য ব্যবহার হতো।

গোয়েন্দারা জানান, ওই তিনটি কক্ষের একটির ভেন্টিলেটরের ওপর ছোট্ট গোপন ক্যামেরা বসানো ছিল। মাসুম নামে এক যুবককে দিয়ে এ ক্যামেরা বসিয়েছিলেন সেলিম। সেলিম প্রধানের দীর্ঘদিনের বিশ্বস্ত সহযোগী এই মাসুম। দেশি-বিদেশি সুন্দরী তরুণীদের সঙ্গে ভিআইপিদের একান্তে সময় কাটানোর মুহূর্তগুলো ওই ক্যামেরায় ধারণ করতেন সেলিম।

এ বিষয়ে মাসুমকে জেরা করেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একটি সংস্থা।

মাসুম জানিয়েছেন, সেলিমের নির্দেশে বায়তুল মোকাররম মার্কেট থেকে গোপন ক্যামেরা কিনে গুলশানের বাসার ওই ফ্ল্যাটে লাগিয়ে দিয়ে আসেন তিনি। আর এটি কীভাবে অপারেট করতে হয় তা শিখিয়ে দিয়ে আসেন। এরপর এ বিষয়ে তিনি আর কিছু জানেন না।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা গেছে, গুলশান-২ নম্বরের ৯৯ নম্বর রোডের ১১/এ নম্বর বাড়ির ৪র্থ তলায় সেলিমের অফিস। ওই অফিসে ঢুকতেই চোখে পড়বে একটি সাইনবোর্ডে লেখা, ‘প্রধান গ্রুপ, উই আর ডিফারেন্ট।’ অফিসে প্রবেশের আগেই একটি ছোট্ট অভ্যর্থনা কক্ষ। এর বাম পাশে বড় একটি কক্ষে অনেক অফিস ডেস্ক।

কক্ষটি পার হলেই বাম পাশে সাজানো রয়েছে আসবাবপত্র। এটি অনেকটা বেডরুমের মতো। এর ডান পাশের কক্ষতেই বসতেন সেলিম প্রধান। ওই কক্ষটিও দামি আসবাবপত্রে সুসজ্জিত।

র‌্যাব জানায়, এই অফিস থেকেই অনলাইন ক্যাসিনো ব্যবসা পরিচালনা করা হতো।

শাহাজালাল বিমানবন্দর থেকে আটকের পর ৩০ সেপ্টেম্বর রাতেই সাড়ে ৯টায় রাজধানীর গুলশান-২ এর ১১/এ রোডে সেলিম প্রধানের অফিসে অভিযান চালায় র‌্যাব। রাতভর অভিযানের পর মঙ্গলবার দুপুরে বনানীর আরেকটি অফিসে অভিযান চালানো হয়।

২০ ঘণ্টা ধরে তার চলা অভিযানে নগদ ২৮ লাখ ২৫ হাজার টাকা, ৭৭ লাখ ৬৩ হাজার টাকা সমমূল্যের ২৩ দেশের মুদ্রা, ৩২টি চেকবই, ১২টি পাসপোর্ট, ৪৮ বোতল মদ, তিনটি হরিণের চামড়া উদ্ধার করা হয়।

এরই মধ্যে অনলাইন ক্যাসিনোর মূল হোতা সেলিম প্রধানসহ তিনজনকে মাদক মামলায় চার দিনের রিমান্ডে পাঠিয়েছেন আদালত। ঢাকা মহানগর আদালতের হাকিম মইনুল ইসলাম বৃহস্পতিবার দুপুরে এ আদেশ দেন। অন্য দুই আসামি হলেন- আখতারুজ্জামান ও রোমান। সেলিমের আরো কয়েকজন ঘনিষ্ঠ সহযোগীকে খোঁজা হচ্ছে। তাদের মধ্যে একাধিক দেশি-বিদেশি নারীও আছেন।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • জাতীয় এর আরও খবর
error: Content is protected !!