ফের মায়ানমার সেনাপ্রধানসহ ৪ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা

  • আপডেট: ০৫:১৪:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ২৮

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়নের অভিযোগে ফের আরেক দফা মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ চার সামরিক কর্মকর্তার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘু নিপীড়নের জন্য নতুন করে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর রয়টার্সের।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ছাড়াও আছেন- সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ভাইস সিনিয়র জেনারেল সোয়ে উইন, ৩৩ লাইট ইনফানট্রি ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং এবং ৯৯ লাইট ইনফানট্রি ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থানও।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট মঙ্গলবার মিয়ানমারের ওই সেনা কর্মকর্তাদের কালো তালিকাভুক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মিয়ানমারের ওই সব সামরিক কর্মকর্তার কোনো সম্পদ থাকলে তা জব্দ করা হবে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখতে পারবেন না কোনো মার্কিন নাগরিক।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর চালানো গণহত্যার দায়ে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়েরকৃত মামলার শুনানি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টার দিকে শুরু হওয়া ওই শুনানিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা বন্ধে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গাম্বিয়ার আইন ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদো।

আজ বুধবার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেবে বিবাদী মিয়ানমার। এর পর বৃহস্পতিবার হবে যুক্তিতর্ক।

গাম্বিয়ার পক্ষে মামলা লড়ছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইন ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর তামবাদো। তিনি ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যার মামলায় এক দশকের বেশি সময় লড়াই করেছেন।

অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষে আদালতে বক্তব্য দেবেন ও যুক্তি খণ্ডন করবেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। সু চির সঙ্গে থাকবেন দেশটির আইনজীবীরাও।

গত ১১ নভেম্বর রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে মিয়ানমারের নামে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করেছিল গাম্বিয়া।

ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে গাম্বিয়া এ মামলা করে। জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানোর প্রায় আড়াই বছর পর প্রথমবারের মতো কোনো দেশ এমন পদক্ষেপ নেয়।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, যা বিশ্ব আদালত হিসেবেও পরিচিত তাতে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে- রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের অভিযানের মধ্যে ছিল হত্যা, ধর্ষণ, গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন, ভৌত বিনাশ বয়ে আনার মতো পরিস্থিতি তৈরি, জন্ম রোধের ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া ও জোরপূর্বক স্থানান্তর।

এগুলো গণহত্যার বৈশিষ্ট্য। কারণ এসবের উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দেয়া।

রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি নিরাপত্তাচৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক কঠোর বিদ্রোহ দমন অভিযান শুরু করে।

এ সময় গণধর্ষণ, হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়াসহ জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বাঁচতে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ভারতে মসজিদের স্থানে মন্দির দাবি করে জরিপের চেস্টায় উত্তেজনা, পুলিশের গুলিতে ৩ মুসল্লি নিহত (ভিডিওসহ)

ফের মায়ানমার সেনাপ্রধানসহ ৪ কর্মকর্তার উপর নিষেধাজ্ঞা

আপডেট: ০৫:১৪:২৪ পূর্বাহ্ন, বুধবার, ১১ ডিসেম্বর ২০১৯

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

রোহিঙ্গা মুসলিম সম্প্রদায়ের উপর নিপীড়নের অভিযোগে ফের আরেক দফা মিয়ানমারের সেনাপ্রধানসহ শীর্ষ চার সামরিক কর্মকর্তার নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে যুক্তরাষ্ট্র।

রোহিঙ্গাসহ সংখ্যালঘু নিপীড়নের জন্য নতুন করে এই নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র। খবর রয়টার্সের।

মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় পড়া মিয়ানমার সেনাবাহিনীর প্রধান সিনিয়র জেনারেল মিন অং হ্লাইং ছাড়াও আছেন- সেনাবাহিনীর উপপ্রধান ভাইস সিনিয়র জেনারেল সোয়ে উইন, ৩৩ লাইট ইনফানট্রি ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল অং অং এবং ৯৯ লাইট ইনফানট্রি ডিভিশনের ব্রিগেডিয়ার জেনারেল থানও।

যুক্তরাষ্ট্রের ট্রেজারি ডিপার্টমেন্ট মঙ্গলবার মিয়ানমারের ওই সেনা কর্মকর্তাদের কালো তালিকাভুক্ত করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এর আগেও মিয়ানমারের সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের ওপর ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা জারি করেছিল।

নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রে মিয়ানমারের ওই সব সামরিক কর্মকর্তার কোনো সম্পদ থাকলে তা জব্দ করা হবে। পাশাপাশি তাদের সঙ্গে কোনো ধরনের ব্যবসায়িক সম্পর্ক রাখতে পারবেন না কোনো মার্কিন নাগরিক।

মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যে মুসলিম সংখ্যালঘুদের ওপর চালানো গণহত্যার দায়ে দেশটির বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে (আইসিজে) দায়েরকৃত মামলার শুনানি শুরু হয়েছে মঙ্গলবার।

মঙ্গলবার বাংলাদেশ সময় বিকাল ৩টার দিকে শুরু হওয়া ওই শুনানিতে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের ওপর নির্বিচারে গণহত্যা বন্ধে দেশটির প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন গাম্বিয়ার আইন ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর মারি তামবাদো।

আজ বুধবার আত্মপক্ষ সমর্থন করে বক্তব্য দেবে বিবাদী মিয়ানমার। এর পর বৃহস্পতিবার হবে যুক্তিতর্ক।

গাম্বিয়ার পক্ষে মামলা লড়ছেন দেশটির অ্যাটর্নি জেনারেল এবং আইন ও বিচারমন্ত্রী আবুবকর তামবাদো। তিনি ১৯৯৪ সালে রুয়ান্ডায় গণহত্যার মামলায় এক দশকের বেশি সময় লড়াই করেছেন।

অন্যদিকে মিয়ানমারের পক্ষে আদালতে বক্তব্য দেবেন ও যুক্তি খণ্ডন করবেন দেশটির স্টেট কাউন্সেলর অং সান সু চি। সু চির সঙ্গে থাকবেন দেশটির আইনজীবীরাও।

গত ১১ নভেম্বর রাখাইনে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা মুসলিমদের বিরুদ্ধে পরিচালিত অভিযানে গণহত্যা চালানোর অভিযোগ এনে মিয়ানমারের নামে জাতিসংঘের সর্বোচ্চ আদালতে মামলা করেছিল গাম্বিয়া।

ইসলামিক সহযোগিতা সংস্থার (ওআইসি) পক্ষে গাম্বিয়া এ মামলা করে। জাতিগত নির্মূল অভিযান চালানোর প্রায় আড়াই বছর পর প্রথমবারের মতো কোনো দেশ এমন পদক্ষেপ নেয়।

আন্তর্জাতিক বিচার আদালত, যা বিশ্ব আদালত হিসেবেও পরিচিত তাতে দায়ের করা মামলায় অভিযোগ করা হয়েছে- রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে মিয়ানমারের অভিযানের মধ্যে ছিল হত্যা, ধর্ষণ, গুরুতর শারীরিক ও মানসিক ক্ষতি সাধন, ভৌত বিনাশ বয়ে আনার মতো পরিস্থিতি তৈরি, জন্ম রোধের ব্যবস্থা চাপিয়ে দেয়া ও জোরপূর্বক স্থানান্তর।

এগুলো গণহত্যার বৈশিষ্ট্য। কারণ এসবের উদ্দেশ্য ছিল রোহিঙ্গা গোষ্ঠীকে পুরোপুরি বা আংশিকভাবে ধ্বংস করে দেয়া।

রাখাইন রাজ্যের কয়েকটি নিরাপত্তাচৌকিতে বিদ্রোহীদের হামলার জবাবে মিয়ানমারের সামরিক বাহিনী ২০১৭ সালের ২৫ আগস্ট আগস্টে রোহিঙ্গাদের বিরুদ্ধে এক কঠোর বিদ্রোহ দমন অভিযান শুরু করে।

এ সময় গণধর্ষণ, হত্যা ও ঘরবাড়ি জ্বালিয়ে দেয়াসহ জাতিগত নির্মূল অভিযান থেকে বাঁচতে সাড়ে সাত লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে প্রতিবেশী দেশ বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়।