আশানুরুপ ফসল উৎপাদন না হওয়ায় দুর্ভিক্ষের পথে উত্তর কোরিয়া

  • আপডেট: ০৩:৫৪:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৫

অনলাইন ডেস্ক:

উত্তর কোরিয়া প্রবল খাদ্য সংকটের মুখে। গত কয়েক দশকের ভেতর সবচেয়ে বেশি খরার মধ্যে পড়েছে দেশটি। এতে ফসল ফলাতে সমস্যা মুখে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের। এটি দেশটির মারাত্মক খাদ্য ঘাটতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে দেশটি এমন সঙ্কটের মুখ দেখতে হয়নি। জাতিসংঘ বলছে, উত্তর কোরিয়ার প্রতি দশ জন নাগরিকের চার জনের খাদ্য সহায়তা দরকার। আর এই বছর গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে দেশটিতে।

উত্তর কোরিয়ায় খাদ্যসহ সবক্ষেত্রে সঙ্কট থাকলেও অর্থ ঢালা হচ্ছে পরমাণু কর্মসূচিতে। আর সেই অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রায় এক কোটি মানুষ- যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪০ শতাংশ, তারা বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে চলেছে।
উত্তর কোরিয়ার মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে রেশন দেওয়া হয়। আগে তাদের পাঁচশ ৫০ গ্রাম করে খাবার দেওয়া হতো। কিন্তু মে মাসে তা নেমে আসে তিনশ কেজিতে। বছরের প্রারম্ভিক ফসলের ক্ষতি হওয়া তাদের খাবারের পরিমাণ কমে গেছে।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ ও উত্তর হাওয়ানহে এবং দক্ষিণ পিয়ংগাইনে সবচেয়ে বেশি খাদ্যদ্রব্য উৎপাদিত হয়। সেখানে এবারো ফসল উৎপাদন হয়েছে কিন্তু অন্যান্য বারের থেকে অনেক কম। সেই সঙ্গে ফসলের মানও অনেক খারাপ। গ্রীষ্মকালে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং স্বল্প জলাস্তরের কারণে ফসল উৎপাদনে সমস্যা হয়েছে। এই কারণে উত্তর কোরিয়ার সামগ্রিক খাদ্য পরিস্থিতি উন্নতি হবে বলে আশা করা যায় না। তাই দেশটিতের নেমে আসতে পারে বড় ধরনের দুর্যোগ। নেমে আসতে পারে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।

উত্তর কোরিয়া বসন্তকালে ও গ্রীষ্মে মারাত্মক কয়েকটি খরার মুখোমুখি হয়েছিল। সেই সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে দেশটি কৃষি জমি প্লাবিত হয়েছিল টাইফুন লিংলিংয়ায়। এই কারণে আরো খাবার সঙ্কট গভীর হয়। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলে, ভালো মানের চাল না থাকা এবং ভুট্টা চাষের কারণে দেশটির ১০ মিলিয়নেরও বেশি লোককে জরুরি খাদ্য সহায়তা দিতে হতে পারে।

নিষেধাজ্ঞা থাকার পরো খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় এগিয়ে আসছে চীন। শুধু চীন নয় কোরিয়ার আরো অনেক মিত্র দেশই তাদের সাহায্য করছে। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়াকে ৫০ হাজার টন চাল দিতে চেয়েছিল। কিন্তু উত্তর কোরিয়া তা নিতে রাজি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় উত্তর কোরিয়া চাল নিতে প্রত্যাখ্যান করে।

নিষেধাজ্ঞাও নানাভাবে দেশটির খাদ্য সঙ্কট বাড়িয়ে দিয়েছে। লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক হ্যাজেল স্মিথ এমনটাই মনে করেন। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞায় উত্তর কোরিয়ার কাছে তেল বা গ্যাস ভিত্তিক দরকারি কৃষি সরঞ্জাম বিক্রির ওপর নিষেধ রয়েছে, যার ফলে দেশটিতে সার, কীটনাশক বা সেচের মতো কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। তেল নির্ভর সরঞ্জামের অভাবে উৎপাদনের হার কমে যায় এবং অনেক কম খাদ্য উৎপাদিত হয়। সূত্র: বিবিসি।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ভারতে মসজিদের স্থানে মন্দির দাবি করে জরিপের চেস্টায় উত্তেজনা, পুলিশের গুলিতে ৩ মুসল্লি নিহত (ভিডিওসহ)

আশানুরুপ ফসল উৎপাদন না হওয়ায় দুর্ভিক্ষের পথে উত্তর কোরিয়া

আপডেট: ০৩:৫৪:২৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১০ নভেম্বর ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

উত্তর কোরিয়া প্রবল খাদ্য সংকটের মুখে। গত কয়েক দশকের ভেতর সবচেয়ে বেশি খরার মধ্যে পড়েছে দেশটি। এতে ফসল ফলাতে সমস্যা মুখে পড়তে হচ্ছে স্থানীয় কৃষকদের। এটি দেশটির মারাত্মক খাদ্য ঘাটতি আরো বাড়িয়ে দিয়েছে। গত পাঁচ বছরের মধ্যে দেশটি এমন সঙ্কটের মুখ দেখতে হয়নি। জাতিসংঘ বলছে, উত্তর কোরিয়ার প্রতি দশ জন নাগরিকের চার জনের খাদ্য সহায়তা দরকার। আর এই বছর গত পাঁচ বছরের মধ্যে সবচেয়ে কম খাদ্য উৎপাদিত হয়েছে দেশটিতে।

উত্তর কোরিয়ায় খাদ্যসহ সবক্ষেত্রে সঙ্কট থাকলেও অর্থ ঢালা হচ্ছে পরমাণু কর্মসূচিতে। আর সেই অস্ত্র কর্মসূচি নিয়ে আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞার কারণে সঙ্কট আরো প্রকট আকার ধারণ করছে। প্রায় এক কোটি মানুষ- যা দেশটির মোট জনসংখ্যার অন্তত ৪০ শতাংশ, তারা বড় ধরনের দুর্ভিক্ষের মুখোমুখি হতে চলেছে।
উত্তর কোরিয়ার মোট জনসংখ্যার ৭০ শতাংশকে রেশন দেওয়া হয়। আগে তাদের পাঁচশ ৫০ গ্রাম করে খাবার দেওয়া হতো। কিন্তু মে মাসে তা নেমে আসে তিনশ কেজিতে। বছরের প্রারম্ভিক ফসলের ক্ষতি হওয়া তাদের খাবারের পরিমাণ কমে গেছে।

দেশটির দক্ষিণাঞ্চলীয় প্রদেশগুলোর মধ্যে দক্ষিণ ও উত্তর হাওয়ানহে এবং দক্ষিণ পিয়ংগাইনে সবচেয়ে বেশি খাদ্যদ্রব্য উৎপাদিত হয়। সেখানে এবারো ফসল উৎপাদন হয়েছে কিন্তু অন্যান্য বারের থেকে অনেক কম। সেই সঙ্গে ফসলের মানও অনেক খারাপ। গ্রীষ্মকালে অনিয়মিত বৃষ্টিপাত এবং স্বল্প জলাস্তরের কারণে ফসল উৎপাদনে সমস্যা হয়েছে। এই কারণে উত্তর কোরিয়ার সামগ্রিক খাদ্য পরিস্থিতি উন্নতি হবে বলে আশা করা যায় না। তাই দেশটিতের নেমে আসতে পারে বড় ধরনের দুর্যোগ। নেমে আসতে পারে ভয়াবহ দুর্ভিক্ষ।

উত্তর কোরিয়া বসন্তকালে ও গ্রীষ্মে মারাত্মক কয়েকটি খরার মুখোমুখি হয়েছিল। সেই সঙ্গে গত সেপ্টেম্বরে দেশটি কৃষি জমি প্লাবিত হয়েছিল টাইফুন লিংলিংয়ায়। এই কারণে আরো খাবার সঙ্কট গভীর হয়। সেপ্টেম্বরে জাতিসংঘের খাদ্য ও কৃষি সংস্থা (এফএও) বলে, ভালো মানের চাল না থাকা এবং ভুট্টা চাষের কারণে দেশটির ১০ মিলিয়নেরও বেশি লোককে জরুরি খাদ্য সহায়তা দিতে হতে পারে।

নিষেধাজ্ঞা থাকার পরো খাদ্য সঙ্কট মোকাবিলায় এগিয়ে আসছে চীন। শুধু চীন নয় কোরিয়ার আরো অনেক মিত্র দেশই তাদের সাহায্য করছে। এর আগে দক্ষিণ কোরিয়া উত্তর কোরিয়াকে ৫০ হাজার টন চাল দিতে চেয়েছিল। কিন্তু উত্তর কোরিয়া তা নিতে রাজি হয়নি। যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক থাকায় উত্তর কোরিয়া চাল নিতে প্রত্যাখ্যান করে।

নিষেধাজ্ঞাও নানাভাবে দেশটির খাদ্য সঙ্কট বাড়িয়ে দিয়েছে। লন্ডনের স্কুল অব ওরিয়েন্টাল এন্ড আফ্রিকান স্টাডিজের অধ্যাপক হ্যাজেল স্মিথ এমনটাই মনে করেন। তিনি বলেন, ২০১৬ সালের জাতিসংঘ নিষেধাজ্ঞায় উত্তর কোরিয়ার কাছে তেল বা গ্যাস ভিত্তিক দরকারি কৃষি সরঞ্জাম বিক্রির ওপর নিষেধ রয়েছে, যার ফলে দেশটিতে সার, কীটনাশক বা সেচের মতো কর্মকাণ্ড ব্যাহত হচ্ছে। তেল নির্ভর সরঞ্জামের অভাবে উৎপাদনের হার কমে যায় এবং অনেক কম খাদ্য উৎপাদিত হয়। সূত্র: বিবিসি।