যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে চলে রমরমা দাস ব্যবসা

  • আপডেট: ০৪:৫৩:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০১৯
  • ৩৪

অনলাইন ডেস্ক:

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের রাস্তাগুলোতে দেখা মিলবে না এসব ভাগ্যাহত নারীদের। তাদেরকে প্রায়ই পাওয়া যায় বদ্ধঘরে। সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত তারা।

ঘরের গণ্ডির বাইরে বেরোতে পারে না। বিকিকিনির মাধ্যমে শুধু হাত বদল হয়। স্মার্টফোনের এক ক্লিকেই যে কেউ কিনে নিতে পারে তাদের। অনলাইনের দোকানে জাতি-বর্ণভেদে বিভিন্ন ক্যাটাগরির হাজার হাজার নারীর ছবি দেয়া আছে।

গুগল, ফেসবুক, অ্যাপল, মাইক্রোসফটের বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করেই কিছু ডলার খরচ করেই কেনা যায় সহজেই। ঠিক এভাবেই শুধু কুয়েতই নয়, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চলছে রমরমা দাস ব্যবসা।

বিশেষ করে ‘যৌনদাসী’ হিসেবে নারীর কেনাবেচা। মধ্যযুগের বর্বরতা আধুনিক যুগে এসে পেয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ডিজিটাল রূপ। সম্প্রতি বিবিসি নিউজ অ্যারাবিক’র এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দাস ব্যবসার এই চিত্র।

এ খবর প্রকাশের পর কুয়েত কর্তৃপক্ষ দাস ব্যবসার বিরুদ্ধে সীমিত পরিসরে ব্যবস্থা নিয়েছে। জড়িত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই সব অ্যাকাউন্টসের কয়েকজন মালিকের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে।

দাসী হিসেবে নারীদের বিক্রির জন্য দেয়া হয় চটকদার বিজ্ঞাপন। সর্বোচ্চ দাম হাঁকিয়ে তাদের কিনে নিতেও আছে প্রতিযোগিতা। একবার টাকা খরচ করে কিনলেও ক্ষতি নেই, চাহিদা পূরণের পর আবার বিক্রি করে উঠিয়ে নেয়া যাবে সেই বিনিয়োগ।

খদ্দের সেজে নারী কেনাবেচার এমনই বাজার প্রত্যক্ষ করেছেন ওয়েন পিনেল ও জেস কেলী। অ্যাপের মাধ্যমে নারীদের বিক্রি করেন এমন ৫৭ জন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন তারা।

প্রায় এক ডজনেরও বেশি বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছেন বলেও জানান প্রতিবেদকরা। মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত ও সৌদি আরব নারী কেনাবেচার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বাজার।

ফেসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম, অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ও গুগলের প্লে-স্টোরে থাকা অ্যাপ দিয়ে বিকিকিনি চলে দাসীদের। কুয়েতে দাসীদের কেনাবেচার জন্য জনপ্রিয় অ্যাপ হচ্ছে ‘ফর সেল’।

সৌদিতে আরবে এমনই একটি অ্যাপের নাম ‘হারাজ’। এছাড়া ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে দাসী বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে যাবতীয় যোগাযোগ ও লেনদেন সারা হয় ব্যক্তিগত মেসেজিংয়ের মাধ্যমে। এসব মাধ্যমে দুই থেকে তিন হাজার মার্কিন ডলারে সাধারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতো বেচাকেনা চলে হতভাগ্য নারীদের।

নারীদের শুধু বিক্রি নয়, তাদের ‘বশে’ রাখার কৌশলও শিখিয়ে দেন বিক্রেতারা। তারা জানান, নারীদের এই নরক থেকে বের হওয়ার সব পথ বন্ধ করে দিতে শুরুতেই কেড়ে নেয়া হয় তাদের পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন। এরপর নিষিদ্ধ করা হয় বাড়ির বাইরে যাওয়া। সামান্য খাবার দিয়ে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখা হয় তাদের।

পদবি গৃহকর্মী হলেও মূলত পুরুষদের যৌনদাসী হয়েই থাকতে হয় তাদের। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে নারীদের কে কতদিন না ঘুমিয়ে থাকতে পারে, কে কত কম খাবার খায়, এমনকি কে কোনো প্রতিবাদ করে না, সেসব বিষয় বাড়তি যোগ্যতা আকারে প্রকাশ করা হয়। একদিনও যারা ছুটি চান না বা দিনের ২৪ ঘণ্টাই যাদের দিয়ে কাজ করানো যায়, তাদের দামও বেশ চড়া দরে হাঁকেন বিক্রেতা। এমন দাস বিক্রিতে কুয়েতের এক পুলিশ কর্মকর্তারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বিবিসির অনুসন্ধানী দল।

এসব বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত উর্মিলা ভুলা বলেন, তারা (গুগল, ফেসবুক, অ্যাপল) মূলত অনলাইন দাসী বাজারকে প্রমোট করছে। এমন অ্যাপ যদি তাদের প্ল্যাটফর্মে থাকে, তাহলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এগুলো আধুনিক দাস প্রথার নমুনা। এদিকে নিজেদের অ্যালগরিদম থেকে দাসী বা নারী বিক্রির হ্যাশট্যাগ মুছে দেয়ার কথা জানিয়েছে ফেসবুক। আর নিজেদের অ্যাপ স্টোরে এসবের সঙ্গে জড়িত অ্যাপস খুঁজে বের করে সরিয়ে ফেলার অঙ্গীকার করেছে গুগল ও অ্যাপল। কুয়েত সরকার এর তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বলে বিবিসির ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী’র সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগম

যেভাবে মধ্যপ্রাচ্যে চলে রমরমা দাস ব্যবসা

আপডেট: ০৪:৫৩:২৫ পূর্বাহ্ন, সোমবার, ৪ নভেম্বর ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

মধ্যপ্রাচ্যের দেশ কুয়েতের রাস্তাগুলোতে দেখা মিলবে না এসব ভাগ্যাহত নারীদের। তাদেরকে প্রায়ই পাওয়া যায় বদ্ধঘরে। সব ধরনের মৌলিক অধিকার থেকেই বঞ্চিত তারা।

ঘরের গণ্ডির বাইরে বেরোতে পারে না। বিকিকিনির মাধ্যমে শুধু হাত বদল হয়। স্মার্টফোনের এক ক্লিকেই যে কেউ কিনে নিতে পারে তাদের। অনলাইনের দোকানে জাতি-বর্ণভেদে বিভিন্ন ক্যাটাগরির হাজার হাজার নারীর ছবি দেয়া আছে।

গুগল, ফেসবুক, অ্যাপল, মাইক্রোসফটের বিভিন্ন অ্যাপস ব্যবহার করেই কিছু ডলার খরচ করেই কেনা যায় সহজেই। ঠিক এভাবেই শুধু কুয়েতই নয়, সৌদি আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের দেশগুলোতে চলছে রমরমা দাস ব্যবসা।

বিশেষ করে ‘যৌনদাসী’ হিসেবে নারীর কেনাবেচা। মধ্যযুগের বর্বরতা আধুনিক যুগে এসে পেয়েছে তথ্যপ্রযুক্তির ডিজিটাল রূপ। সম্প্রতি বিবিসি নিউজ অ্যারাবিক’র এক অনুসন্ধানী প্রতিবেদনে উঠে এসেছে দাস ব্যবসার এই চিত্র।

এ খবর প্রকাশের পর কুয়েত কর্তৃপক্ষ দাস ব্যবসার বিরুদ্ধে সীমিত পরিসরে ব্যবস্থা নিয়েছে। জড়িত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ওই সব অ্যাকাউন্টসের কয়েকজন মালিকের বিরুদ্ধে সমন জারি করেছে।

দাসী হিসেবে নারীদের বিক্রির জন্য দেয়া হয় চটকদার বিজ্ঞাপন। সর্বোচ্চ দাম হাঁকিয়ে তাদের কিনে নিতেও আছে প্রতিযোগিতা। একবার টাকা খরচ করে কিনলেও ক্ষতি নেই, চাহিদা পূরণের পর আবার বিক্রি করে উঠিয়ে নেয়া যাবে সেই বিনিয়োগ।

খদ্দের সেজে নারী কেনাবেচার এমনই বাজার প্রত্যক্ষ করেছেন ওয়েন পিনেল ও জেস কেলী। অ্যাপের মাধ্যমে নারীদের বিক্রি করেন এমন ৫৭ জন বিক্রেতার সঙ্গে কথা বলেন তারা।

প্রায় এক ডজনেরও বেশি বিক্রেতার সঙ্গে সরাসরি সাক্ষাৎ করেছেন বলেও জানান প্রতিবেদকরা। মধ্যপ্রাচ্যের কুয়েত ও সৌদি আরব নারী কেনাবেচার জন্য সবচেয়ে নিরাপদ বাজার।

ফেসবুকের মালিকানাধীন ইনস্টাগ্রাম, অ্যাপলের অ্যাপ স্টোর ও গুগলের প্লে-স্টোরে থাকা অ্যাপ দিয়ে বিকিকিনি চলে দাসীদের। কুয়েতে দাসীদের কেনাবেচার জন্য জনপ্রিয় অ্যাপ হচ্ছে ‘ফর সেল’।

সৌদিতে আরবে এমনই একটি অ্যাপের নাম ‘হারাজ’। এছাড়া ফেসবুক ও ইনস্টাগ্রামে দাসী বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে যাবতীয় যোগাযোগ ও লেনদেন সারা হয় ব্যক্তিগত মেসেজিংয়ের মাধ্যমে। এসব মাধ্যমে দুই থেকে তিন হাজার মার্কিন ডলারে সাধারণ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মতো বেচাকেনা চলে হতভাগ্য নারীদের।

নারীদের শুধু বিক্রি নয়, তাদের ‘বশে’ রাখার কৌশলও শিখিয়ে দেন বিক্রেতারা। তারা জানান, নারীদের এই নরক থেকে বের হওয়ার সব পথ বন্ধ করে দিতে শুরুতেই কেড়ে নেয়া হয় তাদের পাসপোর্ট ও মোবাইল ফোন। এরপর নিষিদ্ধ করা হয় বাড়ির বাইরে যাওয়া। সামান্য খাবার দিয়ে কোনোমতে বাঁচিয়ে রাখা হয় তাদের।

পদবি গৃহকর্মী হলেও মূলত পুরুষদের যৌনদাসী হয়েই থাকতে হয় তাদের। গ্রাহকদের আকৃষ্ট করতে নারীদের কে কতদিন না ঘুমিয়ে থাকতে পারে, কে কত কম খাবার খায়, এমনকি কে কোনো প্রতিবাদ করে না, সেসব বিষয় বাড়তি যোগ্যতা আকারে প্রকাশ করা হয়। একদিনও যারা ছুটি চান না বা দিনের ২৪ ঘণ্টাই যাদের দিয়ে কাজ করানো যায়, তাদের দামও বেশ চড়া দরে হাঁকেন বিক্রেতা। এমন দাস বিক্রিতে কুয়েতের এক পুলিশ কর্মকর্তারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেয়েছে বিবিসির অনুসন্ধানী দল।

এসব বিষয়ে জাতিসংঘের বিশেষ দূত উর্মিলা ভুলা বলেন, তারা (গুগল, ফেসবুক, অ্যাপল) মূলত অনলাইন দাসী বাজারকে প্রমোট করছে। এমন অ্যাপ যদি তাদের প্ল্যাটফর্মে থাকে, তাহলে তাদের জবাবদিহিতার আওতায় আনতে হবে।

এগুলো আধুনিক দাস প্রথার নমুনা। এদিকে নিজেদের অ্যালগরিদম থেকে দাসী বা নারী বিক্রির হ্যাশট্যাগ মুছে দেয়ার কথা জানিয়েছে ফেসবুক। আর নিজেদের অ্যাপ স্টোরে এসবের সঙ্গে জড়িত অ্যাপস খুঁজে বের করে সরিয়ে ফেলার অঙ্গীকার করেছে গুগল ও অ্যাপল। কুয়েত সরকার এর তদন্ত করে দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার কথা জানিয়েছেন বলে বিবিসির ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়।