• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ১৬ এপ্রিল, ২০২০
সর্বশেষ আপডেট : ১৬ এপ্রিল, ২০২০

চাঁদপুর নৌ-সীমানায় পদ্মা-মেঘনায় জাটকা ও পাঙ্গাসের পোনা নিধনের চলছে মহোৎসব

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

চাঁদপুর, ১৬ এপ্রিল, বৃহস্পতিবার॥

চাঁদপুরে জেলা প্রশাসন, জেলা পুলিশ ও সেনাবাহিনী করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে দিবারাত্রি ব্যস্ত সময় পার করছেন। এ সময় প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেটগণও নদীতে অভিযানে যেতে পারছেন না। আর এ সুযোগেকে কাজে লাগিয়ে পদ্মা-মেঘনার চাঁদপুর নৌ-সীমানায় অভয়াশ্রমে সুযোগ নিয়ে নির্বিচারে জাটকা ও পাঙ্গাসের পোনা নিধনের অসাধু জেলেরা মহোৎসবে মেতে ওঠেতে দেখা যাচেছ।

অপরদিকে মৎস্য বিভাগ, নৌ-পুলিশ ও কোস্টগাডের্র মধ্যে সমন্বয় না থাকায় অসাধূ জেলেরা এ খবর জানতে পেরে জেলেরা আরো বেশী সুযোগ পেয়েছে বলে জেলেদের একটি সূত্র থেকে জানা গেছে। যার ফলে নির্বাচারে এ ভাবে জাটকা নিধন হওয়ায় এ বছর ইলিশ উৎপাদনে ব্যাপক বাধা হওয়ায় ইলিশ মৌসুমে ইলিশ উৎপাদন বিগত বছরের তুলনায় অনেক গুন কম হবে বলে প্রবীন মৎস্য ব্যবসায়ীরা জানান।

এদিকে চাঁদপুরে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে বর্তমান পরিস্থিতি নিয়ে চাঁদপুর নৌ-সীমানার নদী রক্ষায় কুমিল্লা র‌্যাব-১১ এর পক্ষ থেকে অভিযান কামনা করে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে র‌্যাবের হেড কোয়াটারে চিঠি দিয়েছেন বলে চাঁদপুরের জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো: আসাদুল বাকির নিশ্চিত করেছেন।

অভয়াশ্রম কার্যক্রম বাস্তবায়নে সংশ্লিষ্ট উপজেলা, জেলা জাটকা রক্ষা টাস্কফোর্স কমিটি থাকলেও করোনার ব্যস্ততায় কেহই এদিকে খেয়াল নেই। আর এ সুযোগে জেলা সদর, মতলব উত্তর ও হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম অঞ্চলে জাটকা ও পাঙ্গাসের পোনা নিধনকারী অসাধু জেলে, আড়তদার ও পাইকাররা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। মৎস্য বিভাগ ও নৌ পুলিশের সোর্সদের ম্যানেজ করে জাটকা নিধন ও পাচারের উৎসব চলছে। এছাড়া পাঙ্গাসের ৫/৬ ইঞ্চি সাইজের পোনা চাঁদপুর শহরের পালবাজার,নতুনবাজার,পুরানবাজারসহ শহরতলীর বিভিন্ন বাজারগুলোতে অলি-গলিতে,মহল্লায় চিৎকার দিয়ে রাস্তার পাশে বসে জেলেরা প্রকাশ্যে প্রতি কেজি জাটকা ১২০ টাকা ধরে ও পাঙ্গাসের পোনা ২৫০টাকা থেকে ৩০০টাকায় বিক্রি করছে। দিনের বেলায় অভিযান চলায় রাতের বেলা নিধনকারীদের কোনো সমস্যা হচ্ছে না।

প্রতিদিন বিকেল থেকেই চাঁদপুর সদর, মতলব উত্তর ও হাইমচর উপজেলার শত শত অসাধু জেলে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল নিয়ে নদীতে জাটকা নিধনে নেমে পড়ে। আবার এদের কেউ কেউ নদীর কিনারায় পাঙ্গাস ধরার চাঁই পেতে পাঙ্গাসের ছোট-ছোট পোনা নিধন করে নদী পাড়ে বসেই এ সব পোনা ১২০টাকা থেকে ১৫০টাকা কেজি ধরে পাইকারী বিক্রি করছে। অপরদিকে কারেন্ট জাল দিয়ে মধ্যরাত পর্যন্ত ইলিশে পোনা জাটকা নিধন চলতে থাকে। শত-শত মন আহরিত এসব জাটকা রাতের আঁধারেই চরাঞ্চল ও নদী পাড়ের অস্থায়ী আড়তগুলোতে মজুদ করে রাখছে। প্রশাসনের অবস্থান বুঝে সুযোগমতো স্পীডবোটে করে নৌপথে কিংবা পিকআপ ভ্যানে করে সড়কযোগে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করছে।

প্রতিদিন সন্ধ্যার পর জাটকা নিধনকারী শত শত জেলে নৌকার আলোয় মেঘনা নদী আলোকিত হয়ে উঠতে দেখা যাচেছ। এ সময় মনে হয় মেঘনা নদীতে কোনো অভয়াশ্রম নেই,জেলেরা অন্য সময়ের মত নিরাপদে জাটকা ও পাঙ্গাসের পোনা নিধন করে যাচেছ। লক্ষ্যণীয় বিষয় হচ্ছে, নৌ-থানা, নৌ-পুলিশ ফাঁড়ি ও কোস্টগার্ড ক্যাম্পের পাশেই নদীতে জেলেরা যেনো বিনে বাধায় জাটকা নিধন করছে। নদীতে একপাশে নৌ-পুলিশ, কোস্টগার্ড ও মৎস্য বিভাগের লোকজনের টহল চলে অপর পাশে সোর্সের মাধ্যমে খবরা খবর নিয়ে অসাধু জেলেরা জাটকা নিধনে মেতে উঠছে। এ যেনো ইঁদুর-বিড়াল খেলার মতো। যা বিগত বছর অভয়াশ্রমের সময় দেখা যায়নি।

একটি সূত্র জানায়, চাঁদপুর নৌ থানার একশ মিটারের মধ্যে অবস্থিত চাঁদপুর শহরের নিকটবর্তী স্থানে টিলাবাড়ি এলাকায় আলী হোসেন, কামরুল ইসলাম, নূর মোহাম্মদ, জাকির মোল্লা ও সোবহান চোকদারের নেতৃত্বে অর্ধশত জেলে নৌকা প্রতিদিন শত-শত কেজি জাটকা নিধন করছে নিরাপদে। পুরাণবাজারের শাহাদাত পাটওয়ারী, লিটন গাজী, জান্নায় মাস্টার, রফিক শেখ, শাহজাহান গাজীর নেতৃত্বে পুরাণবাজার ফায়ার সার্ভিস, হরিসভা, গোয়ালঘর, বাবুর্চিঘাট এলাকায় শতাধিক জেলে নৌকা কারেন্টজাল দিয়ে জাটকা নিধন করে চলছে। রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের দেওয়ান বাজারে রফিকুল দেওয়ান, তাজুল দেওয়ান, হাছান দেওয়ান, ফয়সাল বেপারী, লক্ষ্মীরচরের মুকুল মেম্বার, ওচমান গাজী, সরাফত গাজী, সলেমান বকাউল, আলী বকাউল, বাশগাড়ীয়া চরের হানিফা মেম্বার, ইউসুফ বন্দুকসী, শাহজালাল বন্দুকসী, বহরিয়ায় ফরিদ মাঝি, মুতু মাঝি, মনু মাঝি, মুছা মাঝির নেতৃত্বে জাটকা নিধন করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী ও বিভিন্ন সূত্রে এ খবর জানা গেছে। নদীতে ঘুরে দেখা যাচ্ছে, ১০/১৫ হাত দৈর্ঘ্যরে একটি ইঞ্জিন চালিত জেলে নৌকায় ১০/১২ জন জেলে মনের আনন্দে নিজেদের মধ্যে গুনগুন করে গান গেয়ে জাটকা নিধন করে যেতে দেখা যাচেছ।

এদিকে নদীর তীরবর্তী মতলব উত্তর, চাঁদপুর সদর, হাইমচর উপজেলা, শরীয়তপুরের ভেদরগঞ্জ, নড়িয়া, জাজিরা, গোসাইরহাট, ডামুড্ডা উপজেলার জেলেরা এক জেলা থেকে অন্য জেলায় ও উপজেলায় গিয়ে জাটকা নিধন করায় তাদের মাধ্যমে করোনা সংক্রমণের আশঙ্কাও দেখা দিয়েছে। গত ৪ এপ্রিল ভোর রাতে চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের জাটকা আড়তদার রফিকুল দেওয়ানের স্পীডবোটের সাথে শরীয়তপুরের ফিরোজ খানের স্পীডবোটের শরীয়তপুরের কাছিকাটায় পদ্মা নদীতে মুখোমুখি সংঘর্ষে ২জন স্পীডবোট কর্মচারী মারা যায়। সেই সব স্পীডবোটও জাটকা নিধনে ব্যবহার হয় বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে চাঁদপুর নৌ-থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ জাহিদুল ইসলাম বলেন, আমরা নিয়মিত নদীতে অভিযান চালিয়ে যাচ্ছি। প্রায় প্রতিদিন জাটকাসহ জাল উদ্ধার করছি। জেলা মৎস্য কর্মকর্তা আসাদুল বাকি বলেন, চাঁদপুরের নদীতে নৌবাহিনী, কোস্টগার্ড ও নৌ-পুলিশ নিয়মিত অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে। আসলে রাতে নদীতে অসাধু জেলেদের সংখ্যা এতো বেশি থাকে এবং এরা এতো বেশী সশস্ত্র ও সংর্ঘবদ্ব হয়ে থাকে যে, অনেক সময় নিরাপত্তা না থাকায় ঠিকমতো নদীতে অভিযান করা যায় না। এজন্যে জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে কুমিল্লা র‌্যাব-১১ এর সাথে কথা হয়েছে। র‌্যাবের একটি টীম ইতিমধ্যে চাঁদপুরে এসে নদী এলাকা দেখেও গেছে। তারা বলেছে সহসাই তারা র‌্যাপিড এ্যাকশান ফোর্স বাড়িয়ে যৌথভাবে চাঁদপুর নৌ-সীমানায় অভিযান চালানো হবে বলে তিনি জানান। তারা এখন করোনার ডিউটি নিয়ে ব্যস্ত রয়েছে।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • চাঁদপুর সদর এর আরও খবর
error: Content is protected !!