• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ২২ ডিসেম্বর, ২০১৯

চাঁদপুরে উদ্বোধনের অপেক্ষায় ‘কৈশোরবান্ধব’ বাগাদী ইউনিয়ন

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

চাঁদপুর সদর ইউএইচএফপিও ডাঃ সাজেদা বেগমের একটি উদ্ভাবনী কর্মপরিকল্পনা
কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে এই উদ্ভাবনী পরিকল্পনাটি বাংলাদেশে এই প্রথম হতে যাচ্ছে

শওকতআলী,চাঁদপুর॥
প্রত্যেক কিশোর-কিশোরীর বয়ঃসন্ধিকাল একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়। এ সময়ে তাদের মাঝে শারীরিক ও মানসিক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে। আর এ সময়টাতেই তারা আবেগপ্রবণ হয়ে নানা ভুল সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে। তাই এ বয়ঃসন্ধিকাল সময়টাতে তাদেরকে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়ে সচেতন করতে পারলে সমাজ এবং দেশ উপকৃত হবে’। এ চিন্তা-ভাবনা থেকে কিশোর-কিশোরীদের স্বাস্থ্য সচেতন হিসেবে গড়ে তোলা এবং মানসিক পরিবর্তনের ফলে তাদের মাঝে ঝুঁকিপূর্ণ যে বিষয়গুলো থাকে সেসব বিষয়ে সচেতন ও সেবামূলক কাজ করার এক মহা পরিকল্পনা নিয়েছেন চাঁদপুর সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজেদা বেগম। এ পরিকল্পনা থেকেই তিনি একটি ইউনিয়নের সকল কিশোর-কিশোরীকে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুষ্টির আওতায় এনে ওই ইউনিয়নকে ‘কৈশোরবান্ধব ইউনিয়ন’ হিসেবে গড়ে তোলার উদ্ভাবনী একটি কার্যক্রম হাতে নিয়েছেন। তাঁর এ স্বপ্ন তথা ‘পাইলট প্রকল্পটি’ এখন বাস্তবায়নের পথে। এই উদ্ভাবনী পরিকল্পনাটি এখন উদ্বোধনের অপেক্ষায়। আর এর জন্যে তিনি বেছে নিয়েছেন চাঁদপুর সদর উপজেলার ৮নং বাগাদী ইউনিয়নকে।
বাগাদী ইউনিয়নের চারটি উচ্চ বিদ্যালয় ও দুটি মাদ্রাসা এবং চারটি কমিউনিটি ক্লিনিককে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হয়েছে। যেখানে ‘কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা কর্নার’ নামে কক্ষ থাকবে। সেখানে কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা ও পুষ্টি বিষয়ে প্রয়োজনীয় পরামর্শ এবং সেবা দেয়া হবে। ইউনিয়নের সকল ধরনের কিশোর-কিশোরী অর্থাৎ স্কুলগামী এবং স্কুল বহির্ভূত সকল কিশোর-কিশোরীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। প্রথম অবস্থায় তিনি বাগাদী গণি উচ্চ বিদ্যালয় ও বাগাদী আহম্মদিয়া ফাযিল মাদ্রাসা এবং বাগাদী কমিউনিটি ক্লিনিকে এ কার্যক্রমটি উদ্বোধন করবেন। এ লক্ষ্যে তিনি এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে ‘কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা কর্নার’ নামে তিনটি কক্ষ প্রস্তুতও করে ফেলেছেন। তবে এই তিনটি প্রতিষ্ঠানে ‘কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা কর্নার’ প্রস্তুত করতে ব্যয় যা হয়েছে, তা ডাঃ সাজেদা বেগম তাঁর ব্যক্তিগত তহবিল থেকেই করেছেন বলে তিনি জানান। যে কোনোদিন একযোগে এ তিনটি প্রতিষ্ঠানে এর উদ্বোধন অনুষ্ঠিত হবে। এরপর থেকেই ‘কৈশোরবান্ধব’ পরিকল্পনার কার্যক্রম শুরু হবে। এরপর পর্যায়ক্রমে ইউনিয়নের বাদবাকি চারটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাধ্যমিক স্তরের) ও তিনটি কমিউনিটি ক্লিনিকে এই কার্যক্রম চালু করা হবে। এ কর্মসূচির আওতায় আনার লক্ষ্যে বাগাদী ইউনিয়নের ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান (মাধ্যমিক স্তরের) এবং বিদ্যালয় বহির্ভূত কিশোর-কিশোরীদের একটি সফ্টওয়্যারের মাধ্যমে অনলাইন রেজিস্ট্রেশন করা হয়। ‘কৈশোরের জয়গান’ নামে একটি ওয়েবপেজ তৈরি করা হয়। অনলাইনের মাধ্যমে বিদ্যালয় বা মাদ্রাসার নাম, শ্রেণী, শিক্ষার্থীদের নাম, বয়স, অভিভাবকের নাম, মোবাইল নাম্বার, প্রাপ্ত সেবাসহ অন্যান্য স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সংযোজন করা হয়। যা শীঘ্রই অনলাইনে সহজলভ্য করা হবে বলে জানা গেছে। এসব কিশোর-কিশোরীকে ডাক্তার, সেকমো, স্বাস্থ্য বিভাগের মাঠকর্মী, ক্লাস টিচার, কিশোর-কিশোরী ক্লাবের সদস্যরা (প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত) সেবা প্রদান করবেন।
কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে এই উদ্ভাবনী পরিকল্পনাটি বাংলাদেশে এই প্রথম হবে বলে ধারণা করা যাচ্ছে।
এই উদ্ভাবনী পরিকল্পনার প্রবক্তা সদর উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ সাজেদা বেগমের সাথে এ বিষয়ে কথা হলে তিনি এ প্রতিবেদককে জানান, আমাদের মোট জনসংখ্যার ২২.৫% কিশোর-কিশোরী (১০-১৯ বছর বয়সী)। কিশোর-কিশোরীদের শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং পুষ্টির বিষয়টি আমাদের দেশে অনেকটাই অবহেলিত। এই বয়সে হরমোনজনিত কারণে শারীরিক ও মানসিক ব্যাপক পরিবর্তন ঘটে এবং ছেলে-মেয়েরা প্রজননক্ষম হয়। এই বিপুল জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং পুষ্টির বিষয়টি আরো তরান্বিত করা খুবই জরুরি। এ চিন্তা থেকেই আমার মাঝে এ পরিকল্পনাটি (কৈশোরবান্ধব ইউনিয়ন) এসেছে। তিনি জানান, সম্পূর্ণ আবেগের জায়গা থেকে তার এ কাজটি করা। এই কর্মপরিকল্পনাটি বাস্তবায়ন হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্ম শারীরিক ও মানসিকভাবে একটি সুস্থ প্রজন্ম উপহার দিতে পারবে। ফলে পরিবার, সমাজ তথা দেশ উপকৃত হবে। তিনি বলেন, মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হ্রাস করার ক্ষেত্রে এমডিজিতে অসাধারণ সাফল্যের জন্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘে পুরস্কৃত হয়েছেন। ২০৩০ সাল নাগাদ এসডিজির লক্ষ্য বাস্তবায়ন করতে আমরা প্রতিজ্ঞাবদ্ধ। সে লক্ষ্যে তার এ কাজে সকলের সহযোগিতা তিনি একান্তভাবে কামনা করেছেন।
এই কৈশোরবান্ধব স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা কর্নারে যে সব সেবা দেয়া হবে সেগুলো হচ্ছে : ব্যক্তিগত পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা, কৈশোরকালীন পুষ্টি বিষয়ক আলোচনা, কিশোরীদের জরুরি প্রয়োজনে স্যানিটারী প্যাড বিতরণ, কৈশোরকালীন শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন সম্পর্কে তাদের অবহিতকরণ এবং প্রজনন স্বাস্থ্য ও পুষ্টি শিক্ষা প্রদান, বাল্য বিবাহের কুফল সম্পর্কে কিশোর-কিশোরীদের এবং অভিভাবকদের অবহিতকরণ ও বাল্যবিবাহ নিরুৎসাহিতকরণ, মাদকের ভয়াবহতা ও ধূমপানের ক্ষতিকর সম্পর্কে অবহিকরণ এবং ধূমপান ও মাদক গ্রহণকে নিরুৎসাহিতকরণ, কিশোরীদের ১৫ বছর বয়সের পর টিটেনাস টিকা কর্মসূচীর আওতাভুক্ত করা, শিক্ষক, ইমাম ও এলাকার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের কিশোর ও প্রজনন স্বাস্থ্য সম্পর্কে দৃষ্টিভঙ্গি ও আচরণগত পরিবর্তন সম্পর্কে জ্ঞাত করা, যৌনরোগ সম্পর্কে ধারণা দেয়া, মানসিক স্বাস্থ্য সম্পর্কে সেবা : কিশোর-কিশোরীদের মানসিক পরিবর্তন খুব দ্রুত হয় এবং এরা খুব আবেগপ্রবণ হয়। ফলে অনেক সময়ই তারা ছোট বড় অপরাধ বা ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। তাই তাদের মানসিক পরিচর্যা একান্ত প্রয়োজন, খেলাধুলা এবং শারীরিক ব্যায়ামে উৎসাহিত করা, মেধা বিকাশের জন্য সুস্থ বিনোদন যেমন : গান, অভিনয়, কবিতা আবৃত্তি, বিতর্ক প্রতিযোগিতা ইত্যাদির আয়োজন করা এবং স্বল্প পরিসরে লাইব্রেরীর ব্যবস্থা রাখা, প্রত্যেকের নিজস্ব উদ্ভাবনী প্রতিভা জাগিয়ে তুলতে উৎসাহ দেয়া, গর্ভকালীন চেক-আপ ও পরিচর্যা বিষয়ে এবং শিশুর যতœ বিষয়ে কিশোরীদের ধারণা দেয়া। কারণ, এই কিশোরীরাই ভবিষ্যৎতে ‘মা’ হবে, সর্বোপরি স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করার লক্ষ্যে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মীদের প্রশিক্ষণ দেয়া।
উল্লেখ্য, বাগাদী ইউনিয়নে মোট কিশোর-কিশোরীর সংখ্যা হচ্ছে (অনুমান) সাড়ে সাত সহ¯্রাধিক। এর মধ্যে স্কুলগামী হচ্ছে প্রায় সাড়ে ছয় হাজার আর স্কুল বহির্ভূত হচ্ছে সহস্রাধিক। এই সকল কিশোর-কিশোরীকে এ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • চাঁদপুর সদর এর আরও খবর
error: Content is protected !!