• ঢাকা
  • শুক্রবার, ২৬শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৩ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৪ মে, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ২৪ মে, ২০১৯

রোজাদের মাঝে বৌদ্ধদের ইফতার বিতরণ

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

অনলাইন ডেস্ক:

বিকেল সাড়ে ৪টার দিকে খুলে যায় প্রধান ফটক। সারি বেঁধে বিহারে ঢুকতে থাকে শত শত মানুষ। ভেতরে বড়সড় একটা টেবিলে থরে থরে সাজানো ইফতারির প্যাকেট। সামনে রোজাদার দুস্থ মুসলমানদের দীর্ঘ সারি। সুশৃঙ্খল লাইনের এক পাশে নারী আরেক পাশে পুরুষ। কোনো হট্টগোল ছাড়াই টোকেন নিয়ে মানুষগুলো একে একে এগিয়ে যাচ্ছেন আর মহাবিহারের সর্বোচ্চ ধর্মীয় গুরু সংঘনায়ক শুদ্ধানন্দ মহাথেরর হাত থেকে ইফতারির প্যাকেট নিচ্ছেন। সবাই ইফতারি নিয়ে হাসিমুখে বেরিয়ে যাচ্ছেন। রাজধানীর সবুজবাগের অতীশ দীপঙ্কর সড়কের ধর্মরাজিক বৌদ্ধ মহাবিহারে গিয়ে এমন দৃশ্য চোখে পড়ে। আশপাশের অসহায় ও দুস্থ রোজাদারদের মধ্যে এভাবে ১৬ বছর ধরে ইফতার বিতরণ করছে বিহার কর্তৃপক্ষ।

এখানে নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা আজাদ মুন্সি বলেন, ‘ধর্ম নয়, এখানে মানুষই বড়।’

বৌদ্ধ মহাবিহারের প্রধান শুদ্ধানন্দ মহাথের বলেন, “আমাকে এলাকার মানুষ ‘বড়দা’ বলে। রমজানে এলাকায় ঘুরে দেখেছি, দরিদ্র মানুষের ইফতার করার টাকা নেই। তখন মহারাজিকের সব ভিক্ষুর সঙ্গে আলোচনা করে ইফতারি বিতরণের এই সিদ্ধান্ত নিই।”

ইফতার তদারকির কাজে নিয়োজিত নিভ্রতি থের ভিক্ষু বলেন, ‘ধর্মীয় সম্প্রীতির উদাহরণ এই ইফতার বিতরণ। বছর পাঁচেক আগেও ইফতার নিতে আসা মানুষের সংখ্যা একশ’-দেড়শ’ ছিল। এখন সে সংখ্যা প্রায় ছয়শ’ ছাড়িয়ে গেছে। লোক বাড়লে প্যাকেটের সংখ্যা বাড়ানো হয়। অসহায় মানুষকে অন্ন দেওয়াটা খুব আনন্দের।’

এখানে প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ইফতারি দেওয়া হয়। ইফতারে থাকে চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু, ছোলা ভুনা, শাহি জিলাপি ও মুড়ি।

প্রতিদিন বিকেল সাড়ে ৪টা থেকে ইফতারি দেওয়া হয়। ইফতারে থাকে চপ, বেগুনি, পেঁয়াজু, ছোলা ভুনা, শাহি জিলাপি ও মুড়ি— নতুনেরকথা।

মন্দিরের সামনের হারুন হোটেল পুরো ইফতার বানানোর কাজ তদারকি করে। প্রতিদিন সকালে মন্দির থেকে হারুন হোটেলের ম্যানেজার কৃষ্ণপদ সাহাকে টাকা দিয়ে দেওয়া হয়। দুপুরের পরই মন্দিরের ভেতরে অবস্থিত রান্না ঘরে ইফতারি তৈরি হয়। প্রতি প্যাকেটে খরচ হয় ৫০ টাকা। কেউ কেউ ইফতারের পরও আসেন ইফতার নিতে, তখনও তারা খালি হাতে ফেরেন না।

বিহার থেকে ইফতার হাতে নিয়ে ফিরলেন রিকশাচালক আলিমুজ্জামান। তার চোখে-মুখে তৃপ্তির হাসি। অন্য ধর্মাবলম্বীদের কাছ থেকে ইফতার নিতে কেমন লাগছে প্রশ্ন করতেই আবেগাপ্লুুত হয়ে বলেন, ‘বৌদ্ধরা দিচ্ছে বলে ইফতার নেওয়া যাবে না– আমরা এ নীতি মানি না। গরিবের জন্য এসব নিয়ম কাজে আসে না।’

এ মন্দিরে ৪০ জন বৌদ্ধভিক্ষু আছেন। তাদের ধর্মে সংসার ধর্ম করলে বৌদ্ধভিক্ষু হওয়া যাবে না। ফলে তারা ব্যক্তিজীবনের সুখ-শান্তি বিসর্জন দিয়েছেন। পুরো জীবনটা মানুষের কল্যাণে নিজেকে বিলিয়ে দিয়েছেন তারা। ১৯৬০ সালে প্রতিষ্ঠিত এ বিহারে সাতশ’রও বেশি অনাথ শিশু আছে। বিহারই তাদের পড়াশোনা ও থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করে থাকে।

বৌদ্ধ মহাবিহারের প্রধান শুদ্ধানন্দ মহাথের। তিনি বাংলাদেশ বৌদ্ধ কৃষ্টি প্রচার সংঘের সভাপতি সংঘনায়ক। ৮৬ বছর বয়সী এ ভিক্ষুর জীবন কাটছে মানুষের সেবায়। বিহারকে দুস্থদের ঠিকানায় রূপ দিয়েছেন তিনি।

ইফতার বিতরণ নিয়ে তিনি বলেন, ‘মুসলমানদের সংযমের মাস রমজান। তাদের কাছ থেকে আমরাও সংযম শিখি। মানুষ মানুষের জন্য, মানবতার সেবাই সবচেয়ে উত্তম ধর্ম। সব ধর্মই সম্প্রীতির কথা বলে। এ সম্প্রীতি বজায় রাখলেই বিশ্ব শান্তিময় হবে। মানুষে-মানুষে বন্ধুত্ব ও প্রীতি বাড়বে। একে-অপরের প্রতি শ্রদ্ধা বাড়বে। সমাজ শান্ত হবে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা থামবে। ভালোবাসা দিয়ে থামাতে হবে হানাহানি। আমরা এক হব, ভালো থাকব, সুখে থাকব।’

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • সারা দেশ এর আরও খবর
error: Content is protected !!