গাজী মহিনউদ্দিন:
টাকার অভাবে মেডিকেলে ভর্তি অনিশ্চিত হাজীগঞ্জের পান্নার! বুধবার রাতে এমন একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে জেলার জনপ্রিয় পত্রিকা নতুনেরকথা অনলাইন ভার্সনে। সংবাদটি প্রকাশিত হওয়ার পর নজরে আসে চাঁদপুর-৫ (হাজীগঞ্জ-শাহরাস্তি) আসনের সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম। বৃহস্পতিবার দুপরে তিনি শাহরাস্তি উপজেলা যুবলীগের আহবায়ক আহসানুল মঞ্জুরুল ইসলাম জুয়েল মাধ্যমে নতুনকথার পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মহিউদ্দিন আল আজাদ এর কাছ থেকে পান্নার তথ্য সংগ্রহ করে পান্নার পরিবারের সাথে যোগাযোগ করে। তিনি পান্নাকে মেডিকেল পড়ার সকল খরচ বহন করার কথা জানান।
বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায়ও মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম পৌর ছাত্রলীগের সাধারন সম্পাদক মেহেদি হাছান রাব্বির মুঠোফোনে পান্নার বাবা-মায়ের সাথে কথা বলে পড়ালেখার দায়িত্ব নিশ্চিত করেন।
এদিকে নতুনেরকথায় সংবাদ প্রকাশ করার পর থেকেই দেশের বিভিন্ন প্রথম সারির পত্রিকা ও অনলাইনগুলোতে মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় টিকেও ভর্তি অনিশ্চিত রিক্সা চালকের মেধাবী মেয়ে পান্নার” এমন সংবাদ প্রকাশ করে। এতে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বিত্তবানের মেয়েটির সহায়তার হাত বাড়িয়ে দেন।
সন্ধ্যায় পান্না ও তার মা নতুনের কথা কার্যালয়ে এসে পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক এর সাথে সৌজন্য সাক্ষাত করে পত্রিকায় সংবাদ প্রকাশ করায় কৃতজ্ঞাতা প্রকাশ করেন। পান্না বলেন, বাঙ্গালীর শ্রেষ্ঠ সন্তান মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এমপি মহোদয়ের কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
মুঠোফোনে সাংসদ বলেন, ‘এখন থেকে আমি তোমাকে পড়াবো। তোমার পড়ালেখার দায়িত্ব আমার। ‘ সাংসদ পান্নার মা-বাবা বলেন, ‘আপনার মেয়ে মেডিকেলে পড়ালেখার সকল দায়-দায়িত্ব আমি পালন করবো।’
এদিকে বৃহস্পতিবার বিকেলে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে মা ইলিশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রেস ব্রিফিংকালে জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান সাংবাদিকদের জানান, জেলা শিক্ষা কল্যাণ ট্রাস্ট থেকে পান্না আকতারের পড়া-লেখার সকল খরচবহন করা হবে।
অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে পান্না বলেন, এই দেশকে স্বাধীনতার জন্য যিনি যুদ্ধ করেছেন এমন মহান ব্যক্তির সাথে কথা বলতে পেরে প্রাণ ভরে গেছে। আমি কথা বলেই নিজেকে অনেক ধন্য মনে করছি। তিনি একজন স্বাধীনতার যুদ্ধের ১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার। আমি বেজায় খুশি।
পান্না আরো বলেন, আমি মেডিকেলে পড়ালেখা করে প্রান্তিক অঞ্চলের মানুষের সেবা করতে চাই। তার সাথে নিজের গ্রামের একটি কমিউনিটি ক্লিনিকের চিকিৎসা সেবার মান বাড়ানোর কাজে নিজেকে জড়াতে চাই।
জানতে চাইলে পান্না বলেন, গ্রামের পল্লী চিকিৎসক কানন ভাই ও হাইস্কুলের আবদুল হক স্যারের অনুপ্রেরণাই আমার চিকিৎসক হবার ইচ্ছে জাগে। তারপর থেকে কলেজের শিক্ষকদের অনুপ্রেরণায় আমাকে এই পর্যায়ে নিয়ে এসেছে।
পান্নার মা-বাবা বলেন, দুপুরে জেলা প্রশাসক ভর্তির দায়িত্ব নিবেন বলেও জানান। এখন স্থানীয় সাংসদের প্রতিশ্রুতি পেয়ে নিজেদেরকে ধন্য মনে হচ্ছে।
পান্না এ বছর মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় ৭৫.২৫ স্কোর পেয়ে ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন। কিন্তু তাতে বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে দারিদ্রতা।
বাবা রিকশাচালক। নেই টাকার ব্যবস্থা। কিভাবে ভর্তি হবেন মেডিকেলে এ নিয়ে চিন্তায় পড়েছে পান্না।
পান্না চাঁদপুরের হাজীগঞ্জ উপজেলার বড়কুল ইউনিয়নের রায়চোঁ গ্রামের মুন্সী বাড়ির মেধাবী ছাত্রী। তার বাবা মোঃ দুলাল মিয়া। মা কোহিনূর বেগম। সে রায়চোঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রী। তিন বোনের মধ্যে সবার ছোট। বাবা রিক্সা চালক। মা গৃহিণী।