শাহরাস্তিতে ১’শ ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩টি সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম, ক্ষুব্দ সাধারন মানুষ

  • আপডেট: ০৮:২২:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৯
  • ২৭

শাহরাস্তি প্রতিনিধি:

চাঁদপুরের শাহরাস্তির প্রধান ৩টি সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অনিয়ম ও খামখেয়ালিপনায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে এলাকাবাসি। নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী, কাজে অবহেলা, আইন কানুন না মেনেই কাজ করছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স।

শাহরাস্তি উপজেলাবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষিত ৩টি প্রধান সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় ১ বছর। ১ শ’ ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ঐসব সড়কগুলো নির্মাণ কাজে চলছে চরম নৈরাজ্য। সড়কগুলো নির্মাণের শুরুতেই সেখানে চরম অনিয়ম করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ এলাকার সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঐ ৩টি প্রধান সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

নির্মাণাধীন সড়কগুলো হচ্ছে- মেহার কালীবাড়ী হয়ে শোরশাক-লোটরা-পানিয়ালা সড়ক, দোয়াভাঙ্গা-কালিবাড়ী-সুচীপাড়া-আয়নাতলী-উঘারিয়া মোল্লারদজ্জা সড়ক ও চিতোষী-নরিংপুর সড়ক (শাহরাস্তি অংশ)। সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সত্তজ) বাস্তবায়নাধীন সড়কগুলো নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইচ্ছামাফিক (সিডিউলে) কাজ পরিচালনা করে চলেছেন। ৩টি সড়ক নির্মাণের সিডিউলে পুরোনো সড়কের মালামাল নরম ইটা, মাটি, বালি, কার্পেটিং ও ৩ ফুট মাটি সরিয়ে সম্পূর্ণ নতুনভাবে ১নং পাথর ও বালি দিয়ে ১৮ ফুট কার্পেটিং (কালো) অংশ, ২ পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট চলাচলের রাস্তাসহ ২৪ ফুট রাস্তা তৈরি করার কথা উল্লেখ রয়েছে। অথচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোনো রাস্তার সেই নরম-পঁচা ইটা, মাটি, বালি ও কার্পেটিং সড়ক থেকে তুলে নিয়ে এক জায়গায় স্তূপ করে রাখে।

পরবর্তীতে স্তূপকৃত এসব মালামালের সাথে বালি মিশিয়ে ১শ’ ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য সড়কের প্রধান স্ট্রাকচার (সেড) নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে সড়কগুলোতে সম্পূর্ণ নতুন পাথর ও বালি দিয়ে প্রধান স্ট্রাকচার (সেড) নির্মাণ করার নিয়ম সেখানে এসব সড়কের স্থায়ীত্ব নিয়ে সাধারণ জনগণ ও জনমনে আজ প্রশ্ন উঠেছে, কতদিন টিকবে এসব সড়ক।

এ ছাড়া কার্পেটিংকৃত কিছু অংশে তেল কম দিয়ে নিন্মমানের মরা পাথর দিয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। ১ বছর আগে ৩টি সড়কের কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১টি সড়কের কাজও শেষ করতে পারেনি। দীর্ঘদিন সড়কের ঢিলে-ঢালাভাবে কাজ চলমান থাকায় প্রতিনিয়তই জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করছে। উপজেলা সদরে আসার প্রধান রাস্তা দোয়াভাঙ্গায় সড়কের কাজ চলমান থাকায় যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে কালিয়াপাড়া, উপলতা ও মেহের করবা কাজিরকামতা ঘুরে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ঠাকুরবাজার, কালিবাড়ী ও অফিসপাড়ায় আসতে হয়। সড়কগুলোর পাশে খাল ও পুকুরের অংশে পেলাসাইডিং দিয়ে মাটি ভরাট করে রাস্তার পাশ তৈরি করার নিয়ম থাকলেও পেলাসাইটিং না দেয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে কিছু অংশ পুকুর ও খালে ধসে পড়েছে।

এ বিষয়ে সড়কের দায়িত্বে নিয়োজিত সড়ক ও জনপদ বিভাগের (এসডি) তানভীর আহম্মেদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি বদলি হয়ে গেছি। এ সড়কের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। এ সড়কের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদার কোম্পানীর সাথে মুঠোফোনে বার-বার যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

সড়কে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্সের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, ঠিকাদাররা আমাদের যেভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবেই আমরা কাজ করছি। পুরোনো সড়কের মালামালগুলো সিডিউলে ধরা রয়েছে বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমাদের জানিয়েছে।

সচেতন এলাকাবাসী সড়কের যথাযথ মান, তদারকি বৃদ্ধি ও সিডিউল অনুযায়ী সড়কগুলোর কাজ সম্পন্ন করতে সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

জাতীয়তাবাদী (বিএনপির) রিকশা, ভ্যান, অটো চালক দলের চাঁদপুর জেলা কমিটির অনুমোদন

শাহরাস্তিতে ১’শ ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৩টি সড়কের কাজে ব্যাপক অনিয়ম, ক্ষুব্দ সাধারন মানুষ

আপডেট: ০৮:২২:৩৮ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ৬ অক্টোবর ২০১৯

শাহরাস্তি প্রতিনিধি:

চাঁদপুরের শাহরাস্তির প্রধান ৩টি সড়ক নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের ব্যাপক অনিয়ম ও খামখেয়ালিপনায় ক্ষিপ্ত হয়ে উঠছে এলাকাবাসি। নিন্মমানের নির্মান সামগ্রী, কাজে অবহেলা, আইন কানুন না মেনেই কাজ করছে নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্স।

শাহরাস্তি উপজেলাবাসীর দীর্ঘ প্রতিক্ষিত ৩টি প্রধান সড়ক নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে প্রায় ১ বছর। ১ শ’ ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য ঐসব সড়কগুলো নির্মাণ কাজে চলছে চরম নৈরাজ্য। সড়কগুলো নির্মাণের শুরুতেই সেখানে চরম অনিয়ম করা হচ্ছে বলে এলাকাবাসী অভিযোগ করেন। শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জ এলাকার সংসদ সদস্য ও সাবেক স্বরাষ্টমন্ত্রী মেজর (অব.) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ঐ ৩টি প্রধান সড়কের নির্মাণ কাজ শুরু হয়।

নির্মাণাধীন সড়কগুলো হচ্ছে- মেহার কালীবাড়ী হয়ে শোরশাক-লোটরা-পানিয়ালা সড়ক, দোয়াভাঙ্গা-কালিবাড়ী-সুচীপাড়া-আয়নাতলী-উঘারিয়া মোল্লারদজ্জা সড়ক ও চিতোষী-নরিংপুর সড়ক (শাহরাস্তি অংশ)। সড়ক ও জনপদ বিভাগের (সত্তজ) বাস্তবায়নাধীন সড়কগুলো নির্মাণে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের ইচ্ছামাফিক (সিডিউলে) কাজ পরিচালনা করে চলেছেন। ৩টি সড়ক নির্মাণের সিডিউলে পুরোনো সড়কের মালামাল নরম ইটা, মাটি, বালি, কার্পেটিং ও ৩ ফুট মাটি সরিয়ে সম্পূর্ণ নতুনভাবে ১নং পাথর ও বালি দিয়ে ১৮ ফুট কার্পেটিং (কালো) অংশ, ২ পাশে ৩ ফুট করে ৬ ফুট চলাচলের রাস্তাসহ ২৪ ফুট রাস্তা তৈরি করার কথা উল্লেখ রয়েছে। অথচ ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোনো রাস্তার সেই নরম-পঁচা ইটা, মাটি, বালি ও কার্পেটিং সড়ক থেকে তুলে নিয়ে এক জায়গায় স্তূপ করে রাখে।

পরবর্তীতে স্তূপকৃত এসব মালামালের সাথে বালি মিশিয়ে ১শ’ ৩৫ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিতব্য সড়কের প্রধান স্ট্রাকচার (সেড) নির্মাণ করা হচ্ছে। যেখানে সড়কগুলোতে সম্পূর্ণ নতুন পাথর ও বালি দিয়ে প্রধান স্ট্রাকচার (সেড) নির্মাণ করার নিয়ম সেখানে এসব সড়কের স্থায়ীত্ব নিয়ে সাধারণ জনগণ ও জনমনে আজ প্রশ্ন উঠেছে, কতদিন টিকবে এসব সড়ক।

এ ছাড়া কার্পেটিংকৃত কিছু অংশে তেল কম দিয়ে নিন্মমানের মরা পাথর দিয়ে কাজ করার অভিযোগ রয়েছে। ১ বছর আগে ৩টি সড়কের কাজ শুরু হলেও ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানগুলো ১টি সড়কের কাজও শেষ করতে পারেনি। দীর্ঘদিন সড়কের ঢিলে-ঢালাভাবে কাজ চলমান থাকায় প্রতিনিয়তই জনভোগান্তি চরম আকার ধারণ করছে। উপজেলা সদরে আসার প্রধান রাস্তা দোয়াভাঙ্গায় সড়কের কাজ চলমান থাকায় যাত্রীরা ঘণ্টার পর ঘণ্টা জ্যামে আটকে কালিয়াপাড়া, উপলতা ও মেহের করবা কাজিরকামতা ঘুরে উপজেলার প্রাণকেন্দ্র ঠাকুরবাজার, কালিবাড়ী ও অফিসপাড়ায় আসতে হয়। সড়কগুলোর পাশে খাল ও পুকুরের অংশে পেলাসাইডিং দিয়ে মাটি ভরাট করে রাস্তার পাশ তৈরি করার নিয়ম থাকলেও পেলাসাইটিং না দেয়ায় সামান্য বৃষ্টিতেই সড়কে পানি জমে কিছু অংশ পুকুর ও খালে ধসে পড়েছে।

এ বিষয়ে সড়কের দায়িত্বে নিয়োজিত সড়ক ও জনপদ বিভাগের (এসডি) তানভীর আহম্মেদের সাথে আলাপকালে তিনি বলেন, আমি বদলি হয়ে গেছি। এ সড়কের বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারবো না। এ সড়কের দায়িত্বে নিয়োজিত ঠিকাদার কোম্পানীর সাথে মুঠোফোনে বার-বার যোগাযোগ করেও তাদের বক্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।

সড়কে নিয়োজিত ঠিকাদার প্রতিষ্ঠান রানা বিল্ডার্সের কাজে নিয়োজিত শ্রমিকরা জানান, ঠিকাদাররা আমাদের যেভাবে কাজ করার নির্দেশনা দিয়েছেন সেভাবেই আমরা কাজ করছি। পুরোনো সড়কের মালামালগুলো সিডিউলে ধরা রয়েছে বলে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান আমাদের জানিয়েছে।

সচেতন এলাকাবাসী সড়কের যথাযথ মান, তদারকি বৃদ্ধি ও সিডিউল অনুযায়ী সড়কগুলোর কাজ সম্পন্ন করতে সংসদ সদস্যসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।