অনলাইন ডেস্ক:
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, উন্নয়ন টেকসই করতে পুলিশকে আরও জনবান্ধব হতে হবে। কেননা বর্তমান সরকার দেশে আইনের শাসন নিশ্চিতে বদ্ধপরিকর।
রোববার সকালে রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে ৩৬তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের (এএসপি) সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, দায়িত্ব পালনের সময় জনগণের মৌলিক অধিকার, তাদের মানবাধিকার ও আইনের শাসন প্রতিষ্ঠায় পুলিশকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে।
অনুষ্ঠানে উপস্থিত ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাসহ শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের উদ্দেশ্যে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করার মাধ্যমে দেশে আইনের শাসন ও সর্বক্ষেত্রে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে বদ্ধপরিকর।
আমি আশা করি আপনাদের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে ভিশন-২০২১ এবং ‘রূপকল্প-২০৪১’ বাস্তবাস্তনের মাধ্যমে জাতির পিতার স্বপ্নের সোনার বাংলা বিনির্মাণে আন্তরিকভাবে কাজ করবেন।
মহান মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশ পুলিশ বাহিনীর গৌরবোজ্জ্বল ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা বাংলাদেশ পুলিশকে স্বাধীনতা পদকে ভূষিত করেছি। আমাদের বিশ্বাস, পুলিশের নবীন কর্মকর্তারাও তাদের পূর্বসূরিদের ন্যায় সততা, দেশপ্রেম, পেশাদারিত্ব ও অসীম সাহসিকতার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে পুলিশের ভূমিকাকে আরও উজ্জ্বল করবেন। তারা জনগণ ও দেশের সার্বিক কল্যাণে কাজ করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, প্রতিনিয়ত অপরাধের ধরন বদল হচ্ছে। গতানুগতিক সব অপরাধের পাশাপাশি দেশে সাইবার ক্রাইম, মানিলন্ডারিং, মানবপাচারসহ বিভিন্ন ধরনের গ্লোবাল অপরাধ সংগঠিত হচ্ছে। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে পরিকল্পিত সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ ও মাদকপাচারের মতো ভয়াবহ অপরাধ। বিশেষ করে মাদকসমাজ ও রাষ্ট্রে একটি বড় ধরনের ব্যাধি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সমাজ থেকে অপরাধ নির্মূলসহ সমসাময়িক অপরাধ মোকাবেলায় পুলিশকে সক্ষমতা বাড়াতে হবে। পুলিশকে এসব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করতে হবে শক্তহাতে। এ সময় তিনি তার বক্তব্যে দেশে জঙ্গিবাদ দমনে পুলিশের প্রশংসা করেন।
সরকারের চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড প্রসঙ্গ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী আরও বলেন, আমাদের সরকার বিগত ২০০৯ সালে দায়িত্ব গ্রহণের পর এ দেশের সার্বিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনযাত্রার মানোন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি, বৈদেশিক নীতি ও সম্পর্ক, গ্রামীণ ও নগরোন্নয়ন, ব্যবসা-বাণিজ্য, সামাজিক নিরাপত্তা-প্রতিটি ক্ষেত্রেই কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্য অর্জন সম্ভব হয়েছে।
তিনি আরও বলেন, বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট-১ উৎক্ষেপণের মাধ্যমে মহাকাশেও আমাদের অগ্রযাত্রা শুরু হয়েছে। যোগাযোগ খাতে বাংলাদেশ যুগান্তকারী উন্নয়ন সাধিত হয়েছে। এ ছাড়া রাজধানীতে মেট্রোরেল এবং নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে জাতিসংঘ বাংলাদেশকে স্বল্পোন্নত দেশ হতে উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ঘোষণা করেছে।
এর আগে রোববার সকাল সাড়ে ১০টায় সারদায় বাংলাদেশ পুলিশ একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে পৌঁছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা একটি সজ্জ্বিত খোলা জিপে চড়ে বর্ণাঢ্য প্যারেড পরিদর্শন এবং সহকারী পুলিশ সুপারদের সালাম ও অভিবাদন গ্রহণ করেন।
প্যারেড কমান্ডার শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার শাহিন আক্তার ও সহকারী প্যারেড কমান্ডার রবিউল ইসলাম খানের নেতৃত্বে পর পর ৮টি কন্টিনজেন্ট এসব প্যারেডে অংশগ্রহণ করেন।
৮টি কন্টিনজেন্টে থাকা মোট ১১৭ শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার চৌকস মার্চপাস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম জানান। এর পর রীতি অনুযায়ী পুলিশ বাহিনীর পতাকাবাহী দল, পুলিশ একাডেমির বিশেষ অশ্বারোহী দল ও সর্বশেষ বাদক দল একে একে মার্চপাস্ট করে প্রধানমন্ত্রীকে সালাম ও অভিবাদন জানান।
পরে একাডেমির প্যারেড গ্রাউন্ডে ৩৬তম বিসিএস পুলিশ ক্যাডারের শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপণী কুচকাওয়াজ পরিদর্শন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এর পর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণের সময় বিভিন্ন বিষয়ে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী সহকারী পুলিশ সুপারদের মধ্যে ট্রফি বিতরণ করেন। পরে তিনি নবীন এ পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশে ভাষণ দেন।
বিভিন্ন ক্ষেত্রে শ্রেষ্ঠত্ব অর্জনকারী শিক্ষানবিশ সহকারী সুলিশ সুপারগণ হলেন- ‘বেস্ট শুটার’ খায়রুল কবির, বেস্ট ফিল্ড পারফরমার আবদুল্লাহ আল মামুন, ‘বেস্ট হর্সম্যানশিপ’ সালাহউদ্দিন হোসেন, ‘বেস্ট একাডেমিক’ সাইফুল ইসলাম খান এবং বেস্ট প্রবেশনার সালাহউদ্দিন হোসেন। প্যারেডে ১৭ নারী অফিসারসহ ১১৭ শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপার অংশগ্রহণ করেন।
উল্লেখ্য, এই সমাপনী অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ১১৭ শিক্ষানবিশ সহকারী পুলিশ সুপারগণ কর্মজীবনে দায়িত্ব পালন শুরু করবেন। এদিকে আনুষ্ঠানিকতা শেষে প্রধানমন্ত্রী পুলিশ একাডেমি চত্বরে একটি আমগাছের চারা রোপণ করেন।
সহকারী পুলিশ সুপারদের প্রশিক্ষণ সমাপনী কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, বিভিন্ন দফতরের প্রতিমন্ত্রী, সংসদ সংসদ, পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) মোহাম্মদ জাবেদ পাটোয়ারী, পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ মো. নজিবুর রহমান, সিনিয়র সচিব ও সচিব, বিদেশি কূটনীতিক, অতিরিক্ত আইজিপি, ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা, পদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তা, মুক্তিযোদ্ধা, রাজশাহী শহরের গণ্যমান্য ব্যক্তি এবং আমন্ত্রিত অতিথিরা উপস্থিত ছিলেন।