প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের প্রতিবাদে বিদ্যালয়ে তালা দিল শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

  • আপডেট: ০৪:৪৪:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০
  • ২৪

ফরিদগঞ্জ ব্যুরো :
প্রধান শিক্ষকের দুর্ণীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদে ধানুয়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছে সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। রবিবার সকালে উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য ফারুক খাঁন জানান, চলতি মাসে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিটি গঠন করার জন্য প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবেক সাংসদ ড. শামছুল হক ভূঁইয়া সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তাতে কর্ণপাত না করে এডহক কমিটি গঠনের পাঁয়তারা করছেন। বিদ্যালয়ের বিগত ৪ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবও তিনি কাউকে দেননি। বিদ্যালয়ের সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তিনি প্রতিদিন ব্যাগে করে বাসায় নিয়ে যান। প্রয়োজনীয় খরচের ভাউচার নিজে তৈরী করে নিজেই স্বাক্ষর করেন। বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের বরাদ্দ পেলেও এর উন্নয়ন হয়নি। গ্রন্থাগারিক থাকলেও গ্রন্থাগারের চাবি প্রধান শিক্ষক কুক্ষিগত করে রেখেছেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে কৃষি শিক্ষক দিয়ে রসায়ন ক্লাসের পাঠদান করছেন। বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষককে প্রশিক্ষণে না পাঠিয়ে নিজেই বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনের নাম করে প্রায়ই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। বিদ্যালয়কে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। তাই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ বিদ্যালয়ে তালা দিয়েছেন। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে বিদ্যালয়টিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ সময় অভিভাবক সদস্য জসিম উদ্দীন খান, মুকবুল মিজি, মহসিন গাজী সহ অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনিক চন্দ্র দাস নামে এক শিক্ষার্থী জানান, সরকারীভাবে আমাদের স্কুলে পরীক্ষাগারের সামগ্রী এলেও প্রধান শিক্ষক সেগুলো আমাদের ব্যবহার করতে দেন না। আমাদের শ্রেণীর বোর্ড, বেঞ্চ, জানালার গ্লাস, দরজা ভাঙ্গা থাকলেও তিনি সেগুলো মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। কৃষিশিক্ষার স্যার আমাদের রসায়ন পড়ান। আমরা প্রধান শিক্ষকের এ সকল অনিয়মের প্রতিবাদ জানাই। এ সময় উপস্থিত ছাত্রীরা জানান, ফরম ফিলাপের পর প্রধান শিক্ষক কোচিংয়ের নাম করে আমাদের কাছ থেকে ১৪০০ টাকা করে নিয়েছেন, যার রশিদ তিনি আমাদের দেননি। আমাদের কোন কমনরুম এবং পৃথক শৌচাগার না থাকায় আমরা প্রায়ই বিড়ম্বনার শিকার হই।
ঘটনার বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি প্রোগ্রামে আছেন বলে ফোন কেটে দেন। তারপর তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের সভাপতি ড. শামছুল হক ভূঁইয়ার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া গেছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আলী রেজা আশরাফী জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে তালা মারার ঘটনাটি প্রধান শিক্ষক আমাকে জানাননি। আমি একাধিকবার ফোন করে তার মোবাইল বন্ধ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগও আমার কাছে আসেনি। স্কুল কমিটির সদস্যগণ মৌখিকভাবে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের বিষয়ে আমাকে এবং ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করেছেন। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমানকে একাধিকবার ডেকেছিলাম। তিনি আসেননি। সরকারী বিধি অনুযায়ী নির্বাচনের সময় পার হয়ে যাওয়ায় এই মুহুর্তে বিদ্যালয়ের কমিটি নির্বাচনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে পারেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

শিশুর মধ্যে কোরআনি শিক্ষা থাকলে ভবিষ্যতে কল্যাণময় সমাজ ও রাষ্ট্র গঠনে সে ভূমিকা রাখবে-মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী

প্রধান শিক্ষকের অনিয়মের প্রতিবাদে বিদ্যালয়ে তালা দিল শিক্ষার্থী-অভিভাবকরা

আপডেট: ০৪:৪৪:২৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৯ ফেব্রুয়ারী ২০২০

ফরিদগঞ্জ ব্যুরো :
প্রধান শিক্ষকের দুর্ণীতি ও অনিয়মের প্রতিবাদে ধানুয়া জনতা উচ্চ বিদ্যালয়ে তালা ঝুলিয়েছে সংক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। রবিবার সকালে উপজেলার গোবিন্দপুর উত্তর ইউনিয়নে এ ঘটনা ঘটে। এ সময় প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমান বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত ছিলেন।
বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির অভিভাবক সদস্য ফারুক খাঁন জানান, চলতি মাসে বিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির মেয়াদ শেষ হচ্ছে। নিয়মতান্ত্রিকভাবে কমিটি গঠন করার জন্য প্রধান শিক্ষককে বিদ্যালয়ের সভাপতি সাবেক সাংসদ ড. শামছুল হক ভূঁইয়া সুস্পষ্ট নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু প্রধান শিক্ষক তাতে কর্ণপাত না করে এডহক কমিটি গঠনের পাঁয়তারা করছেন। বিদ্যালয়ের বিগত ৪ বছরের আয়-ব্যয়ের হিসাবও তিনি কাউকে দেননি। বিদ্যালয়ের সকল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র তিনি প্রতিদিন ব্যাগে করে বাসায় নিয়ে যান। প্রয়োজনীয় খরচের ভাউচার নিজে তৈরী করে নিজেই স্বাক্ষর করেন। বিদ্যালয়ের গ্রন্থাগারের বরাদ্দ পেলেও এর উন্নয়ন হয়নি। গ্রন্থাগারিক থাকলেও গ্রন্থাগারের চাবি প্রধান শিক্ষক কুক্ষিগত করে রেখেছেন। বিদ্যালয়ে শিক্ষক নিয়োগ না দিয়ে কৃষি শিক্ষক দিয়ে রসায়ন ক্লাসের পাঠদান করছেন। বিদ্যালয়ের কোন শিক্ষককে প্রশিক্ষণে না পাঠিয়ে নিজেই বিভিন্ন প্রশিক্ষণে অংশগ্রহনের নাম করে প্রায়ই বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকেন। বিদ্যালয়কে ধ্বংসের দ্বার প্রান্তে পৌঁছে দিয়েছেন তিনি। তাই ক্ষুব্ধ শিক্ষার্থী ও অভিভাবকগণ বিদ্যালয়ে তালা দিয়েছেন। আমাদের সন্তানদের ভবিষ্যৎ বিবেচনা করে বিদ্যালয়টিতে শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি। এ সময় অভিভাবক সদস্য জসিম উদ্দীন খান, মুকবুল মিজি, মহসিন গাজী সহ অভিভাবকরা উপস্থিত ছিলেন।
অনিক চন্দ্র দাস নামে এক শিক্ষার্থী জানান, সরকারীভাবে আমাদের স্কুলে পরীক্ষাগারের সামগ্রী এলেও প্রধান শিক্ষক সেগুলো আমাদের ব্যবহার করতে দেন না। আমাদের শ্রেণীর বোর্ড, বেঞ্চ, জানালার গ্লাস, দরজা ভাঙ্গা থাকলেও তিনি সেগুলো মেরামতের ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না। কৃষিশিক্ষার স্যার আমাদের রসায়ন পড়ান। আমরা প্রধান শিক্ষকের এ সকল অনিয়মের প্রতিবাদ জানাই। এ সময় উপস্থিত ছাত্রীরা জানান, ফরম ফিলাপের পর প্রধান শিক্ষক কোচিংয়ের নাম করে আমাদের কাছ থেকে ১৪০০ টাকা করে নিয়েছেন, যার রশিদ তিনি আমাদের দেননি। আমাদের কোন কমনরুম এবং পৃথক শৌচাগার না থাকায় আমরা প্রায়ই বিড়ম্বনার শিকার হই।
ঘটনার বিষয়ে জানতে প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমানকে ফোন দিলে তিনি প্রোগ্রামে আছেন বলে ফোন কেটে দেন। তারপর তার ফোন বন্ধ পাওয়া গেছে। বিদ্যালয়ের সভাপতি ড. শামছুল হক ভূঁইয়ার মোবাইলও বন্ধ পাওয়া গেছে।
উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আলী রেজা আশরাফী জানিয়েছেন, বিদ্যালয়ে তালা মারার ঘটনাটি প্রধান শিক্ষক আমাকে জানাননি। আমি একাধিকবার ফোন করে তার মোবাইল বন্ধ পেয়েছি। তার বিরুদ্ধে কোন লিখিত অভিযোগও আমার কাছে আসেনি। স্কুল কমিটির সদস্যগণ মৌখিকভাবে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনের বিষয়ে আমাকে এবং ইউএনও মহোদয়কে অবহিত করেছেন। বিষয়টি নিষ্পত্তি করতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নির্দেশক্রমে আমি বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আনিসুর রহমানকে একাধিকবার ডেকেছিলাম। তিনি আসেননি। সরকারী বিধি অনুযায়ী নির্বাচনের সময় পার হয়ে যাওয়ায় এই মুহুর্তে বিদ্যালয়ের কমিটি নির্বাচনের সুযোগ নেই। এ বিষয়ে প্রধান শিক্ষককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হবে।
প্রশাসনিক কাজে ব্যস্ত থাকায় ঘটনার বিষয়ে কথা বলতে পারেননি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিউলী হরি।