বিশেষ প্রতিনিধিঃ
দাফনের দীর্ঘ ১৮ মাস পর বুধবার কবর থেকে উত্তোলন করা হবে শাহরাস্তির গৃহবধূ মেহজাবিন সুলতানা ইতির লাশ। চাঁদপুরের অতিরিক্ত বিজ্ঞ জেলা ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জামাল হোসেনের নির্দেশে সহকারী কমিশনার ও বিজ্ঞ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, চাঁদপুর সেলিনা আক্তার আজ ৫ ফেব্রুয়ারি বুধবার এ লাশ উত্তোলন করবেন।
জানা যায়, ২০১৮ সালের ২৩ জুন সন্ধ্যায় (বিয়ের ২ মাস ১৮ দিনের মাথায়) স্বামীর বাড়ি শাহরাস্তি উপজেলার মেহের দক্ষিণ ইউনিয়নের মালরা মজুমদার বাড়িতে রহস্যজনক ভাবে মৃত্যু হয় পৌরসভাধীন ঘুঘুশাল গ্রামের আমির হোসেনের কণ্যা মেহজাবিন সুলতানা ইতি’র। ওই ঘটনায় ২৪ জুন একটি অপমৃত্যু মামলা রুজু করা হয়। পরবর্তীতে ২৮ জুন নিহতের ভাই নুরে আলম বাদি হয়ে ৪জনকে আসামী করে শাহরাস্তি থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে। মামলা নিয়ে আসামীদের বিভিন্ন মহলে দৌড়ঝাঁপ ও গোপন সমঝোতার আভাস পেলে বাদি মামলাটির বিষয়ে আদালতে আপত্তি জানায়। ওই বছরের ৫ জুলাই মামলাটি জেলা গোয়েন্দা শাখায় (ডিবি) বদলি করা হয়। সেখানকার পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) এম এ রঊফ খান হত্যার বিষয়টি মিথ্যা বলে আদালতে চুড়ান্ত প্রতিবেদন (ফাইনাল রিপোর্ট) দাখিল করেন। ২০১৯ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারী বাদির অনাস্থার ভিত্তিতে আদালত ২৭ মে ২০১৯ তারিখ সিআইডি চাঁদপুরকে তদন্তের নির্দেশ দেন। তদন্ত চলাকালে ২৪ আগষ্ট সন্ধ্যায় নিজ গ্রাম হতে ইতি’র স্বামী ইকরামুল হক রাজুকে শাহরাস্তি থানার সহযোগিতায় আটক করা হয়। ৩১ অক্টোবর মামলাটির তদন্ত কর্মকর্তা আবদুল মান্নান সরকারকে পরিবর্তণ করে পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) সাইফুল ইসলামকে দেয়া হয়। বার বার মামলার তদন্ত কার্যক্রম পরিবর্তণে বোন হত্যার বিচার চেয়ে হতাশ নুরে আলম শাহরাস্তি-হাজীগঞ্জের গণমানুষের নেতা মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম বীর উত্তমের স্বরণাপন্ন হন এবং একটি লিখিত আবেদন করেন। সংসদ সদস্যের হস্তক্ষেপে ১৪ নভেম্বর সিআইডি ব্রাক্ষ্মণবাড়িয়া’র পুলিশ পরিদর্শক (ইন্সপেক্টর) মোঃ আবদুল মান্নানকে তদন্তভার ন্যস্ত করা হয়। তদন্ত কর্মকর্তা সিআইডি’র বিশেষ পুলিশ সুপার মোঃ কুতুব উদ্দিনের সার্বিক দিক নির্দেশনায় ২৪ নভেম্বর ইতি’র স্বামী ইকরামুল হক রাজু’র রিমান্ড মঞ্জুর ও কবর হতে লাশ উত্তোলন পূর্বক পুনঃ ময়না তদন্তের জন্য বিজ্ঞ নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালে আবেদন করেন। আদালত জেলগেটে ৫ দিনের জিজ্ঞাসাবাদের অনুমতি দিলে জিজ্ঞাসাবাদে রাজু ইতি হত্যার সম্পূর্ণ ঘটনা খুলে বলে। পরবর্তীতে চাঁদপুরের সিনিয়র জুডিসিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ শফিউল আযমের আদালতে ফৌঃ কাঃ বিঃ ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দি প্রদান করেন।
স্বীকারোক্তি মূলক জবানবন্দিতে আসামী একরামুল হক রাজু জানায়, ঘটনার দিন সন্ধ্যায় আমি বাড়িতে এসে ইতি’র সাথে কথা বলি। কথা বলার এক পর্যায়ে আমার সাথে তার বাকবিতন্ডা হয়। আমি রাগের বশবর্তি হয়ে তার গলায় চাপ দিলে তার শ্বাস বন্ধ হয়ে যায়। পরবর্তীতে দিশেহারা হয়ে কোন উপায় না দেখে দ্রুত বাড়ি থেকে বের হয়ে তাদের (ইতির) বাড়িতে চলে যাই। সেখানে গিয়ে তার পরিবারের সদস্যদের বলি ইতি অসুস্থ্য, আপনারা তাকে বাড়িতে নিয়ে আসেন। প্রকৃতপক্ষে আমি রাগের বশে তার গলা চেপে ধরি। আমি বুঝতে পারিনি সে মরে যাবে।
পরবর্তীতে গত ১৬ জানুয়ারী চাঁদপুরের বিজ্ঞ অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট মোহাম্মদ জামাল হোসেন মৃত্যুর কারণ নির্ণয়ের জন্য কবর হতে নিহত ইতি’র লাশ উত্তোলন করে পুনঃ ময়না তদন্তের নির্দেশ দেন।