অনলাইন ডেস্ক:
স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্বদানকারী উপমহাদেশের সবচেয়ে প্রাচীনতম রাজনৈতিক দল বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের দুই দিনব্যাপী ২১তম জাতীয় সম্মেলন আজ শুক্রবার অনুষ্ঠিত হবে। ‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ/এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ’ স্লোগান সামনে রেখে বিকাল ৩টায় ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
শনিবার সকাল সাড়ে ১০টায় রমনার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে কাউন্সিল অধিবেশনে আগামী তিন বছরের জন্য নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত করা হবে। দলটির সভানেত্রী পদে টানা নবমবারের মতো নির্বাচিত হবেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। সাধারণ সম্পাদক পদেও পরিবর্তন আসছে না বলে বিভিন্ন সূত্রে নিশ্চিত হওয়া গেছে। দ্বিতীয়বারের মতো থেকে যাচ্ছেন বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তবে অন্য পদগুলোতে আসবে নতুন মূখ। দলের প্রেসিডিয়াম সদস্য পদে পরিবর্তনের আভাস মিলেছে। একইভাবে ব্যাপক রদবদল হবে যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদক পদেও। অন্যান্য সম্পাদকমন্ডলীর পদগুলোতেও দায়িত্বের হেরফেরের পাশাপাশি ছিটকে পড়বেন কেউ কেউ। মূল্যায়ন হবে ১৯৮১ সালের পর যারা ছাত্রলীগসহ আওয়ামী লীগের দুঃসময়ে নেতৃত্ব দিয়েছেন তাদের। দলের একাধিক নেতা বাংলাদেশ প্রতিদিনকে এমন আভাস দিয়েছেন। এবারের সম্মেলনে দলের থিম ট্যাংক হিসেবে পরিচিত উপদেষ্টা পরিষদও সাজানো হবে নতুন করে।
সূত্রমতে, আওয়ামী লীগের জাতীয় কাউন্সিল সফল করতে সব ধরনের প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান প্রস্তুত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের বরণ করে নিতে। গতকাল গভীর রাত পর্যন্ত জেলা-মহানগর, উপজেলা থেকে আগত ডেলিগেটস ও কাউন্সিলরদের কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। কাউন্সিলর ও ডেলিগেটস ছাড়াও সারা দেশ থেকে আসা ৫০ হাজার নেতা-কর্মী সম্মেলনে উপস্থিত থাকবেন।
আওয়ামী লীগের একাধিক সূত্র জানায়, রাজনীতিতে গুণগত পরিবর্তন আনার বার্তা নিয়ে দলের ২১তম সম্মেলনের দিকে তাকিয়ে দেশবাসী। সভানেত্রী শেখ হাসিনার বিকল্প কেবল শেখ হাসিনাই। কাজেই টানা নবমবারের মতো তিনি পুনরায় সভানেত্রী হিসেবে নির্বাচিত হবেন এটা শতভাগ নিশ্চিত। টানা ৩৮ বছর দেশের প্রাচীনতম রাজনৈতিক দলটির নেতৃত্বে থেকে তিনি চার মেয়াদে দলকে ক্ষমতায় এনেছেন। ১৯৮১ সালে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবর্তমানে দেশে ফিরে গ্রামের পর গ্রাম হেঁটে সংগঠনকে সুসংগঠিত করেন। তিনি শুধু আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীই নয়, দেশবাসীর আস্থার প্রতীক।
দলের সাধারণ সম্পাদক পদ নিয়ে সবার আগ্রহ থাকলেও এ পদে এবার পরিবর্তন আসছে না বলে জানা গেছে। সে কারণে শেখ হাসিনার রানিং মেট হিসেবে দ্বিতীয় মেয়াদে থেকে যাচ্ছেন ছাত্রলীগের সাবেক সভাপতি বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। গুরুতর অসুস্থ হয়ে ফিরে আসার পর ওবায়দুল কাদের এখন আগের চেয়ে বেশি শক্ত ও সুস্থ। আওয়ামী লীগের অতীত কমিটিগুলোর দিকে তাকালেই দেখা যায় দলটির সাধারণ সম্পাদক পদে সবসময়ই জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ নেতারা দায়িত্ব পালন করেছেন। আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক পদে পাঁচবার দায়িত্ব পালন করেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। তাজউদ্দীন আহমদ এ পদে ছিলেন তিনবার। জিল্লুর রহমান ছিলেন চারবার। এ ছাড়া আবদুর রাজ্জাক দুবার, সৈয়দা সাজেদা চৌধুরী দুবার, সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম দুবার। সেই ধারাবাহিকতায় ওবায়দুল কাদের দ্বিতীয় মেয়াদে সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পাচ্ছেন বলে একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
সূত্রমতে, এবার প্রেসিডিয়াম পদে বড় চমকই থাকছে বলে মনে করেন দলের একাধিক নেতা। প্রেসিডিয়ামের অনেক সদস্যই এবার উপদেষ্টা পরিষদে যাবেন বলে জানা গেছে। এখানে দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও বিভিন্ন সম্পাদকীয় পদে আসবে নাটকীয় নানা পরিবর্তন। ছাত্রলীগের রাজনীতিতে গুরুদায়িত্ব পালন করা ত্যাগী ও পরীক্ষিত নেতা, যারা আওয়ামী লীগের দুর্দিনে বুক চিতিয়ে লড়েছেন, তাদের মধ্যে থেকেই দলের নেতা নির্বাচন করা হবে। আওয়ামী লীগ সভানেত্রী শেখ হাসিনা দেশে ফেরার পর যারা দলের রাজনীতিতে সক্রিয় ছিলেন তাদের মূল্যায়ন করা হবে এবারের সম্মেলনে।
অন্যদিকে কেন্দ্রীয় কমিটিতে নারী নেত্রীদের সংখ্যাও বৃদ্ধি পাবে এবারের জাতীয় সম্মেলনের মাধ্যমে। আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনের মধ্য দিয়ে গঠিত কমিটিতে সভানেত্রী শেখ হাসিনাসহ নারী নেত্রীর সংখ্যা ১৫ জন। এবার সেই সংখ্যা আরও বৃদ্ধি করার পরিকল্পনা নিয়ে কাজ গুছিয়ে উঠেছেন আওয়ামী লীগ প্রধান। দুই দিনব্যাপী সম্মেলনের প্রথম অধিবেশন আজ বিকাল ৩টায়। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা জাতীয় ও দলীয় পতাকা উত্তোলন এবং শান্তির প্রতীক পায়রা উড়িয়ে সম্মেলনের উদ্বোধন করবেন। সম্মেলন উপলক্ষে সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশ এলাকা বর্ণিল সাজে সাজানো হয়েছে। একই সঙ্গে কড়া নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে পুরো সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও এর আশপাশ এলাকায়। দ্বিতীয় দিন আগামীকাল বেলা সাড়ে ১১টায় ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন (আইইবি) মিলনায়তনে অনুষ্ঠিত হবে কাউন্সিল অধিবেশন। ওই কাউন্সিল অধিবেশনেই নতুন নেতৃত্ব নির্বাচিত হবে। এ জন্য তিন সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। নির্বাচন কমিশনের চেয়ারম্যানের দায়িত্ব পেয়েছেন দলের উপদেষ্টা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট ইউসুফ হোসেন হুমায়ুন। অপর দুই সদস্য হলেন- উপদেষ্টা সদস্য ড. সাইদুর রহমান ও ড. মশিউর রহমান।