মোঃ জামাল হোসেনঃ
শাহরাস্তিতে গ্রাহকদের কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে রাতের অন্ধকারে পালিয়েছে অগ্রগতি সংস্থা নামের একটি হায় হায় এনজিও কোম্পানি। স্বল্প সময়ে খুঁটি গেঁড়ে গ্রাহকদের সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার কথা বলে প্রায় কোটি টাকা হাতিয়ে নেয় তারা। হঠাৎ করে ১১ ডিসেম্বর রাতে তারা পলিয়ে যায়। তাদের পালিয়ে যাওয়ার সংবাদ শুনে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা তাদের অফিসের সামনে ভিড় জমান। ক্ষতিগ্রস্ত কয়েকজন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কর্যালয়ে অভিযোগ দায়ের করেছেন। বিষয়টি থানা প্রশাসন অবহিত হওয়ার পর তদন্ত শুরু করেছে।
ঘটনার বিবরণে জানা যায়, শাহরাস্তি পৌরসভার ৫নং ওয়ার্ডের ৬৯/৩, ৬৯/৪নং হোল্ডিংয়ের বাড়ির মালিক দুই ভায়রা মোঃ জাকির হোসেন ও মোঃ এনায়েত হোসেন চুক্তিনামার মাধ্যমে অগ্রগতি সংস্থাকে মাসিক ২২ হাজার টাকায় বাড়ি ভাড়া প্রদান করেন। সংস্থার পক্ষে উক্ত চুক্তিনামায় স্বাক্ষর করেন এরিয়া ম্যানেজার, যিনি হচ্ছেন লক্ষ্মীপুর জেলা সদরের ভবানীগঞ্জ গ্রামের বশির উল্লার ছেলে মোঃ হানিফ।
১২ ডিসেম্বর অগ্রগতি সংস্থার নিকট জমাকৃত সঞ্চয় উদ্ধারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থাগ্রহণের জন্যে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার নিকট লিখিত আবেদন করেন ভুক্তভোগী ১২ জন গ্রাহক। তারা বাড়ির মালিক দুই ভায়রাকে বিবাদী করেন। উক্ত আবেদনে বেশ কিছু ক্ষতিগ্রস্ত গ্রাহকের নাম উল্লেখ করা হয়। বাড়ির মালিক এনায়েত হোসেন জানান, এ মাসের প্রথম তারিখ হতে বাড়ি ভাড়া শুরু হয়।
সংস্থার নামে তারা তাদের কার্যক্রম শুরু করে মাঠ পর্যায়ে প্রতিনিধি নিয়োগ করে গ্রাহকদের নিকট থেকে অর্থ আদায় শুরু করে। সংস্থাটি গ্রাহকদের বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে এ অর্থ আদায় শুরু করে। তাদের সংস্থা থেকে ঋণ নিতে হলে আগেই সঞ্চয় জমা দিতে হয়। এর বিপরীতে ৫০ হাজার, ১ লক্ষ, দেড় লক্ষ, দুই লক্ষ ও ৫ লক্ষ টাকা পর্যন্ত ঋণ সুবিধা দেয়ার আশ্বাস দেয়া হয়।
এক্ষেত্রে প্রতিজন গ্রাহককে ১০ ভাগ জামানত জমা দিতে হবে। ভুক্তভোগী গ্রাহক ভোলদিঘি গ্রামের সাবিকুন্নাহার নিপা মনি জানান, তিনি ৫ লক্ষ টাকা ঋণ সুবিধা পেতে ৫০ হাজার টাকা জামানত জমা দিয়েছেন। পূর্ব উপলতার নাজমা আক্তার ৫০ হাজার টাকা জমা দেন। এছাড়া কাজীরকাপ গ্রামের স্বপ্না ১০ হাজার ৪শ’ টাকা, ভোলদিঘির রেজিয়া ১০ হাজার ৫শ’ ৫০ টাকা, ভোলদিঘির রোকেয়া ৪০ হাজার টাকা, একই গ্রামের ছায়েদ ১৫ হাজার টাকা, নিজমেহার গ্রামের মমতাজ ২০ হাজার টাকা, সাহাপুরের ফাতেমা ১৫ হাজার ২শ’ টাকা, নিজ মেহার গ্রামের আমেনা আক্তার ৩০ হাজার ৫শ’ ৫০ টাকা, সাহাপুরের ফরিদা আক্তার ২০ হাজর টাকা, ভোলদিঘির মোতালেব ১২ হাজার টাকা, বাবুল হোসেন ৩০ হাজার টাকা, নিজ মেহারের সাহিন আক্তার ২১ হাজার টাকা, কাজির কাপের আমেনা বেগম ২৫ হাজার টাকা, ভোলদিঘির ফরিদা বেগম ৫০ হাজার টাকা, কাজির কাপের কবির হোসেন ৬৮ হাজার টাকা জমা দেন। এভাবে প্রায় ১৯৬ জন গ্রাহকের টাকা নিয়ে পালিয়ে যায় অগ্রগতি সংস্থা।
বৃহস্পতিবার (১২ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় উপলতায় অবস্থিত অগ্রগতি সংস্থার কার্যালয়ের সামনে ভুক্তভোগী গ্রাহকরা ভিড় জমান। শাহরাস্তি থানার উপ-পরিদর্শক সৈকত দাস গুপ্তা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। তিনি বাড়ির মালিক ও ভুক্তভোগী গ্রাহকদের কথা শুনেন। সংবাদ পেয়ে স্থানীয় কাউন্সিলর প্রহল্লাদ দে ও কাউন্সিলর আঃ কুদ্দুস ঘটনাস্থালে আসেন। প্রহল্লাদ দে জানান, কিভাবে প্রতারক চক্র সাধারণ জনগণের টাকা হাতিয়ে নিয়ে চলে গেলো তার সুষ্ঠু তদন্ত হওয়া দরকার। আমি দোষীদের শাস্তি দাবি করি।
আঃ কুদ্দুস জানান, আমি দু-তিন দিন আগে এখানে এসেছি, পরে সত্যতা যাচাই করতে উপজেলা প্রশাসনে খোঁজ খবর নেই। এর সাথে যারা জড়িত তাদের বিচার হওয়া উচিত। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা সৈকত দাশ গুপ্তা জানান, জনগণের অভিযোগের আলোকে তদন্ত চলছে। প্রাথমিকভাবে ঘটনার সত্যতা পাওয়া গেছে।
শাহরাস্তি থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ শাহ আলম এলএলবি জানান, তাদের ধরার চেষ্টা চলছে। অভিযোগ পাওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে কাজ করছি।