৬ই ডিসেম্বর কচুয়া মুক্ত দিবস, অরুনাদয়ের অগ্নি স্বাক্ষর-১৯৭১

  • আপডেট: ০১:৪০:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ২৯

॥ মো. আনোয়ার হোসেন সিকদার ॥

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। গৌরবউজ্জ্বল এই সু-মহান বিজয় অর্জনে চরম মূল্য দিতে হয়েছে বাঙ্গালী জাতিকে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের উত্তাল আহবান ছিল তারুন্যের জাগরন। লক্ষ লক্ষ জনতা বিশেষ করে তারুন্যের প্রতীক ছাত্র ও যুবসমাজ জয় বাংলার রন-ধ্বনি বুকে ধারন করে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে।

বিভীশিকাময় ৯ মাসের যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ভোগান্তির অন্ত ছিলনা। খাবার কষ্ট, শোভার কষ্ট, পানিয় জল, গোসল ও শৌচকাজের কষ্ট এবং পরিধান সহ যাতায়াতের চরম ভোগান্তি। পবিত্র শবে-বরাত এবং ঈদে বাঙালি মুসলমানদের পরিবারে যেখানে পিরনি-পায়েস, পোলাও মাংস খেয়ে আনন্দ উল্লাস করতো। দুর্ভাগ্য মুক্তিযোদ্ধাদের এসব বিশেষ দিনে তাদের অর্ধাহারে, অনাহারে উপবাস করতে হয়েছে।

মরন পণ এ যুদ্ধে অগণিত মায়ের কোল খালি হয়েছে। অসংখ্য মা, বোন তার ইজ্জত হারিয়েছে। মায়ের সামনে মেয়েকে এবং স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে পাক সেনারা। অগণিত লোক বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। হাজার হাজার পরিবারের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে সহায় সম্পদ লুপটাট করেছে। সন্তান হারা মায়ের কান্না, ছেলে হারা বাবার আর্তনাদ, স্বামীহারা স্ত্রীরির করণ আর্ত চিৎকার বাংলার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল।

জীবন মৃত্যুর এ সন্ধিক্ষনে অরুনাদয়ের অগ্নি স্বাক্ষর কচুয়া বীর মুক্তিযোদ্ধারা কচুয়ায় অবস্থানকারি পাক বাহিনীকে আক্রমন করার সকল প্রস্তুতি গ্রহন করে। সোর্স মারফত এ সংবাদ খাঁন সেনারা জানতে পেরে তাদের উদ্ধার করার জন্য আকুতি জানায়। এসময় খাঁন সেনারা চারদিকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর আঘাতে পর্যদস্ত হচ্ছিল। পালাতেও শুরু করেছে। ইতি মধ্যে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার, মতলবসহ বহু অঞ্চল মুক্ত হতে শুরু করেছে।

ডিসেম্বরের ৫ তারিখে দিবাগত গভীর রাত পাক-সেনাদের একটি শক্তিশালী সু-সজ্জিত বেটেলিয়ান কচুয়া কালিয়াপাড়া একমাত্র পাকা রাস্তা কচুয়ার অদূরে লুন্তি গ্রামে সিকদার বাড়ির সামনে তাদের গাড়ীর বিশাল বহর রেখে কাকা ডাকা ভোরে কচুয়া অভিমূখে মার্চ করে স্বল্প সময়ে কচুয়া বাজারটি লুটপাট করে এবং জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তাদের লোকজন এবং মালামাল নিয়ে অতিদ্রুত পালিয়ে যায়।

একটি গ্রুপ উল্লেখিত গ্রামটি ঘেরাও দিয়ে চলচাতুরির অংশ হিসেবে মর্টার নিক্ষেপ করে গ্রামটি জ্বালিয়ে দেবার পূর্ব প্রস্তুতি থাকলেও হিং¯্র বর্বর কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার আব্দুল খালেকসহ সকল রাজাকাররা ভিন্ন পথে পালিয়ে যাওয়ার কারণে গ্রামটি নিশ্চিত ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায়। গ্রামের মানুষ তাদের আগমনী বার্তা নারী পুরুষ অবলা মহিলা গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।

কারণ এ গ্রামের খন্দকার বাড়ির সামনে কচুয়া একমাত্র পাকা রাস্তায় ট্রেন্সকাটা, কচুয়া ডাকবাংলার পূর্ব পাশের ব্রিজ ভাংঙ্গা সহ বিভিন্ন ভাবে বেরিকেট তৈরি করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাড. মোবারক হেসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা সালাহ উদ্দিন মানিক সহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা উল্লেখিত রাস্তায় যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে কচুয়া উপজেলা মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার (অপারেশন) জাবের মিয়া বর্তমান চাঁদপুর জেলা কমান্ডারের সহকারী কমান্ডার (দপ্তর) ইয়াকুব আলী মাষ্টারের নেতৃত্বে উল্লেখিত রাস্তায় হোসেনপুর বাজারের উত্তর পার্শ্বের ব্রিজটি এক্সুসিভ দিয়ে ঘুড়িয়ে দেয়া হয়।

৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত কচুয়ায় দায়িত্ব গ্রহন করেন যুদ্ধকালীন (এফ.এফ) কমান্ডার আব্দুর রশিদ পাঠান ও সম্মিলিত বাহিনীর অধিনায়ক মরহুম ওয়াহিদুর রহমান লোমহর্ষক নানান আজব কাহিনী ও ধ্বংসলীলা মুক্তিযোদ্ধাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

বিরল প্রতিভার অধিকারী সু-সাহসী মরহুম ওয়াহিদুর রহমান তখনও কচুয়া মুক্ত অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন দিতে থাকেন। প্রশিক্ষন পরিচলানার দায়িত্বে ছিলেন, দক্ষ প্রশিক্ষক মোঃ জাবের মিয়া। ক

চুয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান কমান্ডার আব্দুল মবিন, ডেপুটি কমান্ডার জাবের মিয়া, ইয়াকুব আলী মাষ্টার, সাবেক কমান্ডার আবুল বাশার মাষ্টার, ওসমান গণি পাটোয়ারী, শাহআলম পাটোয়ারী, দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম, হেদায়েত উল্যাহ, মরহুম আব্দুল হালিম, বর্তমান সাংগঠনিক কমান্ডার শফিকুর রহমান, মরহুম কে.এম মফিজুল ইসলাম (ডুমুরিয়া), আবু তাহের, আবিদ মজুমদার, আব্দুল বারি, আব্দুর রহিম, গাজী ইউছুফ, সালাউদ্দিন মানিক, হাফিজ উল্যাহ পাটোয়ারী, আঞ্চলিক কমান্ডার সৈয়দ আহমেদ, বিল্লাল মাষ্টার, আবুল খায়ের মাষ্টার, চারু মিয়া এবং আরো মুক্তিযোদ্ধা হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, বরুড়া, চান্দিনা সহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে মরন পণ লড়াইয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। হানাদার মুক্ত হয়েও মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ খুলে আনন্দ উল্লাস করতে পারেনি।

যেহেতু তখনও স্বাধীনতার মহা নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি কারাগারে বন্ধী, বন্দিশালার পাশেই ছিল তার জন্য ফাঁসির মঞ্চ ও কবর। আজকের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা, রাজাকার মুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ।

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

সর্বাধিক পঠিত

তারিখবিহীন খাবার তৈরি, চাঁদপুরে তিন প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা

৬ই ডিসেম্বর কচুয়া মুক্ত দিবস, অরুনাদয়ের অগ্নি স্বাক্ষর-১৯৭১

আপডেট: ০১:৪০:৪৭ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ ডিসেম্বর ২০১৯

॥ মো. আনোয়ার হোসেন সিকদার ॥

বিজয়ের মাস ডিসেম্বর। গৌরবউজ্জ্বল এই সু-মহান বিজয় অর্জনে চরম মূল্য দিতে হয়েছে বাঙ্গালী জাতিকে। ঐতিহাসিক ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর বজ্রকন্ঠের উত্তাল আহবান ছিল তারুন্যের জাগরন। লক্ষ লক্ষ জনতা বিশেষ করে তারুন্যের প্রতীক ছাত্র ও যুবসমাজ জয় বাংলার রন-ধ্বনি বুকে ধারন করে ঝাঁপিয়ে পড়ে ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে।

বিভীশিকাময় ৯ মাসের যুদ্ধের সময় মুক্তিযোদ্ধাদের ভোগান্তির অন্ত ছিলনা। খাবার কষ্ট, শোভার কষ্ট, পানিয় জল, গোসল ও শৌচকাজের কষ্ট এবং পরিধান সহ যাতায়াতের চরম ভোগান্তি। পবিত্র শবে-বরাত এবং ঈদে বাঙালি মুসলমানদের পরিবারে যেখানে পিরনি-পায়েস, পোলাও মাংস খেয়ে আনন্দ উল্লাস করতো। দুর্ভাগ্য মুক্তিযোদ্ধাদের এসব বিশেষ দিনে তাদের অর্ধাহারে, অনাহারে উপবাস করতে হয়েছে।

মরন পণ এ যুদ্ধে অগণিত মায়ের কোল খালি হয়েছে। অসংখ্য মা, বোন তার ইজ্জত হারিয়েছে। মায়ের সামনে মেয়েকে এবং স্বামীর সামনে স্ত্রীকে ধর্ষণ করেছে পাক সেনারা। অগণিত লোক বাড়ি ঘর ছেড়ে পালিয়েছে। হাজার হাজার পরিবারের ঘর-বাড়ী জ্বালিয়ে সহায় সম্পদ লুপটাট করেছে। সন্তান হারা মায়ের কান্না, ছেলে হারা বাবার আর্তনাদ, স্বামীহারা স্ত্রীরির করণ আর্ত চিৎকার বাংলার আকাশ বাতাস ভারী হয়ে উঠেছিল।

জীবন মৃত্যুর এ সন্ধিক্ষনে অরুনাদয়ের অগ্নি স্বাক্ষর কচুয়া বীর মুক্তিযোদ্ধারা কচুয়ায় অবস্থানকারি পাক বাহিনীকে আক্রমন করার সকল প্রস্তুতি গ্রহন করে। সোর্স মারফত এ সংবাদ খাঁন সেনারা জানতে পেরে তাদের উদ্ধার করার জন্য আকুতি জানায়। এসময় খাঁন সেনারা চারদিকে মুক্তিবাহিনী ও মিত্র বাহিনীর আঘাতে পর্যদস্ত হচ্ছিল। পালাতেও শুরু করেছে। ইতি মধ্যে বৃহত্তর কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার, মতলবসহ বহু অঞ্চল মুক্ত হতে শুরু করেছে।

ডিসেম্বরের ৫ তারিখে দিবাগত গভীর রাত পাক-সেনাদের একটি শক্তিশালী সু-সজ্জিত বেটেলিয়ান কচুয়া কালিয়াপাড়া একমাত্র পাকা রাস্তা কচুয়ার অদূরে লুন্তি গ্রামে সিকদার বাড়ির সামনে তাদের গাড়ীর বিশাল বহর রেখে কাকা ডাকা ভোরে কচুয়া অভিমূখে মার্চ করে স্বল্প সময়ে কচুয়া বাজারটি লুটপাট করে এবং জ্বালিয়ে পুড়িয়ে তাদের লোকজন এবং মালামাল নিয়ে অতিদ্রুত পালিয়ে যায়।

একটি গ্রুপ উল্লেখিত গ্রামটি ঘেরাও দিয়ে চলচাতুরির অংশ হিসেবে মর্টার নিক্ষেপ করে গ্রামটি জ্বালিয়ে দেবার পূর্ব প্রস্তুতি থাকলেও হিং¯্র বর্বর কুখ্যাত রাজাকার কমান্ডার আব্দুল খালেকসহ সকল রাজাকাররা ভিন্ন পথে পালিয়ে যাওয়ার কারণে গ্রামটি নিশ্চিত ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যায়। গ্রামের মানুষ তাদের আগমনী বার্তা নারী পুরুষ অবলা মহিলা গ্রাম ছেড়ে চলে যায়।

কারণ এ গ্রামের খন্দকার বাড়ির সামনে কচুয়া একমাত্র পাকা রাস্তায় ট্রেন্সকাটা, কচুয়া ডাকবাংলার পূর্ব পাশের ব্রিজ ভাংঙ্গা সহ বিভিন্ন ভাবে বেরিকেট তৈরি করে ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অ্যাড. মোবারক হেসেনের নেতৃত্বে মুক্তিযোদ্ধা সালাহ উদ্দিন মানিক সহ অন্যান্য মুক্তিযোদ্ধারা উল্লেখিত রাস্তায় যুদ্ধ চলাকালিন সময়ে কচুয়া উপজেলা মুজিব বাহিনীর ডেপুটি কমান্ডার (অপারেশন) জাবের মিয়া বর্তমান চাঁদপুর জেলা কমান্ডারের সহকারী কমান্ডার (দপ্তর) ইয়াকুব আলী মাষ্টারের নেতৃত্বে উল্লেখিত রাস্তায় হোসেনপুর বাজারের উত্তর পার্শ্বের ব্রিজটি এক্সুসিভ দিয়ে ঘুড়িয়ে দেয়া হয়।

৬ ডিসেম্বর হানাদার মুক্ত কচুয়ায় দায়িত্ব গ্রহন করেন যুদ্ধকালীন (এফ.এফ) কমান্ডার আব্দুর রশিদ পাঠান ও সম্মিলিত বাহিনীর অধিনায়ক মরহুম ওয়াহিদুর রহমান লোমহর্ষক নানান আজব কাহিনী ও ধ্বংসলীলা মুক্তিযোদ্ধাদের বিব্রতকর অবস্থায় ফেলে দিয়েছে।

বিরল প্রতিভার অধিকারী সু-সাহসী মরহুম ওয়াহিদুর রহমান তখনও কচুয়া মুক্ত অঞ্চলে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষন দিতে থাকেন। প্রশিক্ষন পরিচলানার দায়িত্বে ছিলেন, দক্ষ প্রশিক্ষক মোঃ জাবের মিয়া। ক

চুয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের বর্তমান কমান্ডার আব্দুল মবিন, ডেপুটি কমান্ডার জাবের মিয়া, ইয়াকুব আলী মাষ্টার, সাবেক কমান্ডার আবুল বাশার মাষ্টার, ওসমান গণি পাটোয়ারী, শাহআলম পাটোয়ারী, দেওয়ান সিরাজুল ইসলাম, হেদায়েত উল্যাহ, মরহুম আব্দুল হালিম, বর্তমান সাংগঠনিক কমান্ডার শফিকুর রহমান, মরহুম কে.এম মফিজুল ইসলাম (ডুমুরিয়া), আবু তাহের, আবিদ মজুমদার, আব্দুল বারি, আব্দুর রহিম, গাজী ইউছুফ, সালাউদ্দিন মানিক, হাফিজ উল্যাহ পাটোয়ারী, আঞ্চলিক কমান্ডার সৈয়দ আহমেদ, বিল্লাল মাষ্টার, আবুল খায়ের মাষ্টার, চারু মিয়া এবং আরো মুক্তিযোদ্ধা হাজীগঞ্জ, শাহরাস্তি, বরুড়া, চান্দিনা সহ বিভিন্ন রণাঙ্গনে মরন পণ লড়াইয়ে সাহসিকতার পরিচয় দিয়েছিলেন। হানাদার মুক্ত হয়েও মুক্তিযোদ্ধারা প্রাণ খুলে আনন্দ উল্লাস করতে পারেনি।

যেহেতু তখনও স্বাধীনতার মহা নায়ক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান পাকিস্তানি কারাগারে বন্ধী, বন্দিশালার পাশেই ছিল তার জন্য ফাঁসির মঞ্চ ও কবর। আজকের এই দিনে মুক্তিযোদ্ধাদের প্রত্যাশা, রাজাকার মুক্ত ডিজিটাল বাংলাদেশ।