আবরারকে হত্যা’ নানা কারণেই

  • আপডেট: ০৪:১০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৮

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শুধু শিবির সন্দেহে নয়, নানা কারণেই হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।

এর আগে দুপুরে আবরার হত্যায় ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবরার হত্যায় ২৫ জনকে আসামি করে দুপুরে মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট পাঠানো হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে এজাহারনামীয় ১৬ জন ও এজাহারের বাইরে পাঁচজন আছেন। আর বাকি চারজন এখনো পলাতক।’

তিনি বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্লেষণ দ্বারাই পাশাপাশি আটজন আসামির যে বক্তব্য – এই সবগুলো এভিডেন্ট মেলানোর কারণেই আমরা মনে করছি, এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীরা থাকলেও তারা সাধারণত সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসে না। কিন্তু আমরা যেভাবে চার্জশিট প্রস্তুত করেছি, তাতে আসামিদের সাজা নিশ্চিত হবে।’

শিবির সন্দেহে নাকি অন্য কোনো কারণে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘এটি আসলে একক কোনো কারণ না। শিবির করে এটা একটি মাত্র কারণ। কিন্তু ওরা এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। ছোটখাট বিষয়ে কেউ একটু দ্বিমত পোষণ করলে কিংবা কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে, সালাম না দেওয়ার কারণেও এই র্যাগিংয়ের নামে অন্যদের, নতুন যারা আসবে তাদের আতঙ্কিত করে রাখার জন্যই তারা এই কাজগুলো করে অভ্যস্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিবির সন্দেহ শুধু একক কারণ নয়, নানা কারণে তারা তার (আবরার) আচরণে, সালাম না দেওয়া এসব মিলিয়ে আগে থেকেই একটা ক্ষোভ ছিল। এবং অন্যদেরকেও কথিত শিক্ষা দেওয়ার নামে র্যাগিংয়ের নামে আসলে তাই হচ্ছিল অর্থাৎ ঝিকে মেরে বৌকে শেখানোর মতো আরকি। একজনের ওপর নির্যাতন করে বাকিরা যাতে তাদের যথাযথভাবে সালাম দেয়, তাদের ভয় করে চলে-এ রকম একটা ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতেই যে দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া সেটির অংশ হিসেবে এর ধাবরাবাহিকতায় উচ্ছৃঙ্খল ছেলেগুলো এই কাজ করেছে।’

এখানে সিনিয়র-জুনিয়র ইস্যুও রয়েছে জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কথিত সিনিয়রা তাদের জুনিয়রদের এক ধরনের আতঙ্কে রাখার জন্য, তাদের কাজে লাগানোর জন্য তারা এটা করেছে। এ রকম বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।’

আগে ওইভাবে কেউ অভিযোগ করেনি জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘সাক্ষ্য হিসেবে একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য এসেছে যে শুধু সালাম দেয়নি বলে নৃশংসভাবে তাকে পেটানো হয়েছে। আগের অপরাধমূলক কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য যদি কেউ মামলা করতে চায় তাহলে সেটিও আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

উল্লেখ্য, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী’র সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগম

আবরারকে হত্যা’ নানা কারণেই

আপডেট: ০৪:১০:৪৪ পূর্বাহ্ন, শনিবার, ১৬ নভেম্বর ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে শুধু শিবির সন্দেহে নয়, নানা কারণেই হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার মো. মনিরুল ইসলাম। বুধবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি একথা জানান।

এর আগে দুপুরে আবরার হত্যায় ২৫ জনকে আসামি করে আদালতে চার্জশিট জমা দিয়েছে মহানগর গোয়েন্দা (ডিবি) পুলিশ। পরে সংবাদ সম্মেলনে আসেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার।

মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘আবরার হত্যায় ২৫ জনকে আসামি করে দুপুরে মহানগর হাকিম আদালতে চার্জশিট পাঠানো হয়েছে। এই হত্যাকাণ্ডে এখন পর্যন্ত ২১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে এজাহারনামীয় ১৬ জন ও এজাহারের বাইরে পাঁচজন আছেন। আর বাকি চারজন এখনো পলাতক।’

তিনি বলেন, ‘তথ্য-প্রযুক্তি বিশ্লেষণ দ্বারাই পাশাপাশি আটজন আসামির যে বক্তব্য – এই সবগুলো এভিডেন্ট মেলানোর কারণেই আমরা মনে করছি, এই ধরনের মামলার ক্ষেত্রে প্রত্যক্ষদর্শীরা থাকলেও তারা সাধারণত সাক্ষ্য দিতে এগিয়ে আসে না। কিন্তু আমরা যেভাবে চার্জশিট প্রস্তুত করেছি, তাতে আসামিদের সাজা নিশ্চিত হবে।’

শিবির সন্দেহে নাকি অন্য কোনো কারণে আবরারকে হত্যা করা হয়েছে জানতে চাইলে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘এটি আসলে একক কোনো কারণ না। শিবির করে এটা একটি মাত্র কারণ। কিন্তু ওরা এ ধরনের উচ্ছৃঙ্খল আচরণে অভ্যস্ত হয়ে গিয়েছিল। ছোটখাট বিষয়ে কেউ একটু দ্বিমত পোষণ করলে কিংবা কেউ তাদের বিরুদ্ধে কথা বললে, সালাম না দেওয়ার কারণেও এই র্যাগিংয়ের নামে অন্যদের, নতুন যারা আসবে তাদের আতঙ্কিত করে রাখার জন্যই তারা এই কাজগুলো করে অভ্যস্ত।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিবির সন্দেহ শুধু একক কারণ নয়, নানা কারণে তারা তার (আবরার) আচরণে, সালাম না দেওয়া এসব মিলিয়ে আগে থেকেই একটা ক্ষোভ ছিল। এবং অন্যদেরকেও কথিত শিক্ষা দেওয়ার নামে র্যাগিংয়ের নামে আসলে তাই হচ্ছিল অর্থাৎ ঝিকে মেরে বৌকে শেখানোর মতো আরকি। একজনের ওপর নির্যাতন করে বাকিরা যাতে তাদের যথাযথভাবে সালাম দেয়, তাদের ভয় করে চলে-এ রকম একটা ভয়ের রাজত্ব কায়েম করতেই যে দীর্ঘদিনের প্রক্রিয়া সেটির অংশ হিসেবে এর ধাবরাবাহিকতায় উচ্ছৃঙ্খল ছেলেগুলো এই কাজ করেছে।’

এখানে সিনিয়র-জুনিয়র ইস্যুও রয়েছে জানিয়ে মনিরুল ইসলাম বলেন, ‘কথিত সিনিয়রা তাদের জুনিয়রদের এক ধরনের আতঙ্কে রাখার জন্য, তাদের কাজে লাগানোর জন্য তারা এটা করেছে। এ রকম বেশ কিছু তথ্য-প্রমাণ আমাদের কাছে রয়েছে।’

আগে ওইভাবে কেউ অভিযোগ করেনি জানিয়ে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার বলেন, ‘সাক্ষ্য হিসেবে একজন সাক্ষীর সাক্ষ্য এসেছে যে শুধু সালাম দেয়নি বলে নৃশংসভাবে তাকে পেটানো হয়েছে। আগের অপরাধমূলক কোনো কর্মকাণ্ডের জন্য যদি কেউ মামলা করতে চায় তাহলে সেটিও আমরা তদন্ত করে ব্যবস্থা গ্রহণ করবো।’

উল্লেখ্য, ফেসবুকে স্ট্যাটাস দেওয়ার জেরে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদকে গত ৬ অক্টোবর রাতে ডেকে নিয়ে যায় বুয়েট শাখা ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী। এরপর রাত ৩টার দিকে শেরেবাংলা হলের নিচতলা ও দোতলার সিঁড়ির করিডোর থেকে তার মরদেহ উদ্ধার করা হয়।

পরদিন ৭ অক্টোবর দুপুরে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে আবরারের ময়নাতদন্ত সম্পন্ন হয়। নিহত আবরার বুয়েটের ইলেকট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ছিলেন। তিনি শেরেবাংলা হলের ১০১১ নম্বর কক্ষে থাকতেন।

ওই ঘটনায় আবরারের বাবা বরকত উল্লাহ বাদী হয়ে চকবাজার থানায় ১৯ জনের বিরুদ্ধে একটি হত্যা মামলা করেন।