নতুনের কথা ডেস্ক:
মারণ ভাইরাস করোনা রোখার ওষুধ পেয়ে গিয়েছেন বলে চাঞ্চল্যকর দাবি করলেন কানাডার একদল বিজ্ঞানী। ওই বিজ্ঞানীদলের দাবি, গাঁজার এক ধরনের স্ট্রেইনের সন্ধান তাঁরা পেয়েছেন, যার দ্বারা করোনাভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধ করা যেতে পারে। এমনকী COVID-19 আক্রান্তদের চিকিৎসার জন্যও কাজে আসতে পারে গাঁজার ওই শক্তিশালী স্ট্রেইন।
সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসকে কানাডার লেথব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা জানিয়েছেন, এপ্রিল মাসে করা একটি গবেষণায় দেখা গিয়েছে, ১৩ টি গাঁজা গাছ, যাদের মধ্যে CBD খুব বেশি পরিমাণে ছিল, তারা ACE2 পথকে প্রভাবিত করতে পারে যেখান থেকে করোনাভাইরাস শরীরে প্রবেশ করতে পারে৷ ওই গবেষকদেরই একজন ওলগা কোভালচুক বললেন, “বিষয়টি নজরে আসতে অবাক হয়ে যাই আমরা। পরে সত্যিই খুব খুশি হই।”
ওই গবেষক দের গবেষণার ফলাফল এই মুহূর্তে অনলাইন জার্নাল প্রিপ্রিন্টসে লিপিবদ্ধ করে রাখা হয়েছে। সেখানে বলা হচ্ছে, গাঁজার এই শক্তিশালী স্ট্রেইনে অতিরিক্ত পরিমাণে CBD থাকার কারণে তারা সেই প্রোটিনগুলিকে আটকে দিতে পারে, যেগুলি আসলে কোষে COVID-19 এর প্রবেশপথ।
কোভালচুকের স্বামী ইগোর সিটিভি-কে দেওয়া একটি সাক্ষাৎকারে বলছেন, ওই শক্তিশালী স্ট্রেইনের গাঁজা মানবদেহে করোনাভাইরাস-কে প্রবেশ করতে ৭০-৮০ শতাংশ পর্যন্ত আটকাতে পার।। সে ক্ষেত্রে এই ভাইরাসের সঙ্গে লড়াই করার সুযোগ রয়েছে বলেও দাবি ইগোরের।
ক্যালগ্যারি হেরাল্ড-কে ইগোর আরও বলেছেন, “আমাদের এই পরীক্ষা গোটা বিশ্বকে দিশা দেখাতে পারে। কারণ এখনও অবধি বিশ্বের কোথাও করোনাভাইরাসের ৭০-৮০ শতাংশ সংক্রমণ হ্রাসের সম্ভাবনার কথা কেউই বলেননি।”
যদিও গবেষণা এই মুহূর্তে দ্রুত গতিতে আরও একটু বেশি পরিমাণেই প্রয়োজন বলে মনে করছেন এই গবেষক দল। এনজাইমকে নিয়ন্ত্রিত করতে পারার এই গবেষণা যদি সত্যি প্রমাণিত হয়, তাহলে বিজ্ঞানীদের মতে “রোগের সংবেদনশীলতা হ্রাস করার জন্য একটি প্রশংসনীয় স্ট্যাটেজি হয়ে দাঁড়াতে পারে গোটা বিশ্বের কাছেই।” ওই গবেষকদের কথায়, “COVID-19 এর চিকিত্সার জন্য এটি অত্যন্ত দরকারি এবং নিরাপদ থেরাপি হতে পারে।”
এ ছাড়াও মুখ থেকে যে সমস্ত ভাইরাস শরীরে ঢুকতে পারে, তাদেরও রুখে দিতে পারে গাঁজা। মাউথ ওয়াশ এবং গার্গেল করার নানাবিধ প্রোডাক্টের মধ্যে গাঁজার শক্তিশালী স্ট্রেইন ব্যবহার করে তার ইতিবাচক ফলও পাওয়া গিয়েছে। কানাডার এই বিজ্ঞানী দলই সেই পরীক্ষা করে দেখেছিলেন।
তবে ওলগা কোভালচুক সিটিভি-কে দেওয়া সাক্ষাৎকারে আরও বলছিলেন, “তবে দোকান থেকে যে কোনও ধরনের গাঁজা কিনলেই যে তা করোনার প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করবে, এটা ভাবলে ভুল হবে।” তাঁর কথায়, ‘৮০০ ভিন্ন ধরনের গাঁজার স্যাটাইভা রয়েছে, যেগুলিই কেবল করোনার চিকিৎসায় সাহায্য করতে পারে।’
গাঁজার যে স্যাটাইভাগুলিতে অতিরিক্ত পরিমাণে প্রদাহনাশক CBD থাকে, কিন্তু THC-র পরিমাণ খুব কম, সেগুলিই কেবল করোনার প্রতিষেধক হিসেবে কাজে আসতে পারে।
এই গবেষণার এখনও অবধি কোনও রিভিউ করা হয়নি। গাঁজার থেরাপি সংক্রান্ত রিসার্চ সংস্থা Pathway Rx এবং Swysh Inc-এই দুই কোম্পানির পার্টনারশিপেই আপাতত লেথব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের গবেষকরা এই পরীক্ষা চালাচ্ছেন। COVID-19 সংক্রমণ চিরতরে রুখতে গবেষণা চালিয়ে যাওয়ার জন্য অনুদানও চাইছেন এই গবেষকরা।
ওই গবেষকদলের কথায়, “দুনিয়ার প্রতিটি গবেষণার জন্যই প্রচুর অর্থের প্রয়োজন হয়। আর যেখানে COVID-19 এর মতো একটি আতিমারী রোগের প্রতিষেধক আবিষ্কারের জন্য প্রত্যেক দেশেই কোনও না কোনও রিসার্চ করা হচ্ছে, সেখানে আমাদের এই গবেষণার একটা সুদূরপ্রসারী ফল রয়েছে। সে ক্ষেত্রে পরবর্তীতেও রিসার্চ চালিয়ে যাওয়ার জন্য প্রচুর পরিমাণে অর্থের প্রয়োজন আমাদের।”