মতলব খাদ্যগুদামে ধান ক্রয়ে অনিয়ম ॥ হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরছে কৃষক

  • আপডেট: ০৪:৪২:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০১৯
  • ৫৮

মতলব উত্তর প্রতিনিধি:

মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের খাদ্যগুদামে ধান ক্রয়ে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে কৃষকরা ধান নিয়ে এসে বিক্রি করতে না পেরে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় মোট ১শত ৩৪ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে উপজেলা সদর খাদ্যগুদামের লক্ষ্যমাত্রা ৯৬ টন। গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার ধান ক্রয়ের উদ্বোধনী দিনে ক্রয় করা হয় ৪শত কেজি।
স্থানীয় কৃষক মিজান,ইলিয়াস, মহসিনসহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার ও শনিবার ধান ক্রয় বন্ধ থাকলেও রবিবার তারা ধান নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে পারেনি। উল্টো গোডাউনে ধান আনতে যানবাহন ও লেবার খরচ দিতে হয়েছে। তারা আরো বলেন, আমাদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে বলে লিখে নেওয়া হলেও আমাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার চরমুকুন্দি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমার কাছ থেকে এক টন ধান কেনার কথা থাকলেও নিয়েছে দশ মণ। বাকি ধান বাড়িতে নিয়ে আসতে হয়েছে।
ধান বিক্রি করতে পারা আরেক কৃষক হাসমত আলী বলেন, আমি এক টন ধান বিক্রি করতে পেরেছি। কিন্তু ধান বিক্রির জন্য খাদ্যগুদামের লোকজন আমার কাছ থেকে সাড়ে ৮শত টাকা নেয় খরচের কথা বলে।
সরেজমিনে গতকাল বুধবার উপজেলা সদরের খাদ্যগুদামের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ধান বিক্রি করতে না পেরে অনেক কৃষক কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তারা অভিযোগ নিয়ে বলেন, অনেক দূর থেকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে ধান নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। কিন্তু এখন খাদ্যগুদামের স্যার বলেন ধান ক্রয়ের কোটা শেষ। এই নিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে কৃষক মনজুর আলম জানান, ’মঙ্গলবার গুদামের স্যার (জামাল উদ্দিন) আমারে আজ (বুধবার) ধান নিয়ে আসতে কয়। আমি ৫শ টাকা ভাড়া দিয়া ধান আনলে এহন তিনি কয় যে ধান রাখা যাইবো না, কোটা শেষ। এখন এই ধান নিয়ে বাড়ি যাইতে হলে আবারো ৫শ টাকা ভাড়া দিতে ওইবো’ বলে কৃষক কান্না শুরু করেন।
এদিকে মতলব পৌরসভার কৃষকদের জন্য ২০ টন নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডের ৯ জন কৃষকের কাছ থেকে উল্লেখিত পরিমাণ ক্রয় করা হয়।
উপজেলা সদর খাদ্যগুদামের খাদ্য পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, আমার এই গোডাউনে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৯৬ টন। যার মধ্যে মতলব পৌরসভার জন্য ২০ টন এবং চার ইউনিয়নের জন্য ১৯ টন করে। যার মধ্যে পৌরসভার লক্ষ্যমাত্রা শেষ হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, আমাদের কাজ কৃষকদের তালিকা দেওয়া, ধান ক্রয়ের বিষয়টি দেখেন খাদ্য অফিস। এ ব্যাপারে আমাদের কোন কিছু বলার নাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহিদুল ইসলাম বলেন, ধান ক্রয়ে কোন কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকলে তা অন্যায় হয়েছে। এছাড়া যারা ধান বিক্রি করতে পারেনি তাদের বিষয়টি ধান ক্রয়ের পরবর্তী ধাপে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

হাজীগঞ্জে ৯ কিশোর গ্যাং আটক

মতলব খাদ্যগুদামে ধান ক্রয়ে অনিয়ম ॥ হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরছে কৃষক

আপডেট: ০৪:৪২:৫৯ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৩০ মে ২০১৯

মতলব উত্তর প্রতিনিধি:

মতলব দক্ষিণ উপজেলা সদরের খাদ্যগুদামে ধান ক্রয়ে পক্ষপাতিত্বসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে কৃষকরা ধান নিয়ে এসে বিক্রি করতে না পেরে হতাশা নিয়ে বাড়ি ফিরে যাচ্ছে।
উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক অফিস সূত্রে জানা যায়, এই উপজেলায় মোট ১শত ৩৪ টন ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়, যার মধ্যে উপজেলা সদর খাদ্যগুদামের লক্ষ্যমাত্রা ৯৬ টন। গত ২৩ মে বৃহস্পতিবার ধান ক্রয়ের উদ্বোধনী দিনে ক্রয় করা হয় ৪শত কেজি।
স্থানীয় কৃষক মিজান,ইলিয়াস, মহসিনসহ একাধিক কৃষক অভিযোগ করে বলেন, শুক্রবার ও শনিবার ধান ক্রয় বন্ধ থাকলেও রবিবার তারা ধান নিয়ে গিয়ে বিক্রি করতে পারেনি। উল্টো গোডাউনে ধান আনতে যানবাহন ও লেবার খরচ দিতে হয়েছে। তারা আরো বলেন, আমাদের কাছ থেকে ধান ক্রয় করা হবে বলে লিখে নেওয়া হলেও আমাদেরকে ফিরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
উপজেলার চরমুকুন্দি গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম বলেন, আমার কাছ থেকে এক টন ধান কেনার কথা থাকলেও নিয়েছে দশ মণ। বাকি ধান বাড়িতে নিয়ে আসতে হয়েছে।
ধান বিক্রি করতে পারা আরেক কৃষক হাসমত আলী বলেন, আমি এক টন ধান বিক্রি করতে পেরেছি। কিন্তু ধান বিক্রির জন্য খাদ্যগুদামের লোকজন আমার কাছ থেকে সাড়ে ৮শত টাকা নেয় খরচের কথা বলে।
সরেজমিনে গতকাল বুধবার উপজেলা সদরের খাদ্যগুদামের সামনে গিয়ে দেখা যায়, ধান বিক্রি করতে না পেরে অনেক কৃষক কান্নায় ভেঙ্গে পড়ছেন। তারা অভিযোগ নিয়ে বলেন, অনেক দূর থেকে গাড়ি ভাড়া দিয়ে ধান নিয়ে এসেছি বিক্রির জন্য। কিন্তু এখন খাদ্যগুদামের স্যার বলেন ধান ক্রয়ের কোটা শেষ। এই নিয়ে কান্না জড়িত কণ্ঠে কৃষক মনজুর আলম জানান, ’মঙ্গলবার গুদামের স্যার (জামাল উদ্দিন) আমারে আজ (বুধবার) ধান নিয়ে আসতে কয়। আমি ৫শ টাকা ভাড়া দিয়া ধান আনলে এহন তিনি কয় যে ধান রাখা যাইবো না, কোটা শেষ। এখন এই ধান নিয়ে বাড়ি যাইতে হলে আবারো ৫শ টাকা ভাড়া দিতে ওইবো’ বলে কৃষক কান্না শুরু করেন।
এদিকে মতলব পৌরসভার কৃষকদের জন্য ২০ টন নির্ধারণ করা হয়। কিন্তু পৌরসভার দুটি ওয়ার্ডের ৯ জন কৃষকের কাছ থেকে উল্লেখিত পরিমাণ ক্রয় করা হয়।
উপজেলা সদর খাদ্যগুদামের খাদ্য পরিদর্শক জামাল উদ্দিন বলেন, আমার এই গোডাউনে ধান ক্রয়ের লক্ষ্যমাত্রা ৯৬ টন। যার মধ্যে মতলব পৌরসভার জন্য ২০ টন এবং চার ইউনিয়নের জন্য ১৯ টন করে। যার মধ্যে পৌরসভার লক্ষ্যমাত্রা শেষ হয়ে গেছে।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা দিলরুবা খানম বলেন, আমাদের কাজ কৃষকদের তালিকা দেওয়া, ধান ক্রয়ের বিষয়টি দেখেন খাদ্য অফিস। এ ব্যাপারে আমাদের কোন কিছু বলার নাই।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোঃ শাহিদুল ইসলাম বলেন, ধান ক্রয়ে কোন কৃষকদের কাছ থেকে টাকা নিয়ে থাকলে তা অন্যায় হয়েছে। এছাড়া যারা ধান বিক্রি করতে পারেনি তাদের বিষয়টি ধান ক্রয়ের পরবর্তী ধাপে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।