রণাঙ্গনের ভূমিকা নিয়ে বিতর্ক থাকলেও কাগজে কলমে তিনি মুক্তিযোদ্ধা! এই স্বীকৃতিকে কাজে লাগিয়ে সরকারী চাকরিতে নিয়োগ পেয়েছে ৪ ছেলে, ২ মেয়ে এবং ৩ নাতীসহ একই পরিবারের ৯ জন! চাকুরীর সুবাদে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের প্রভাব খাটিয়ে পরিবারের সদস্যরা সম্মিলিতভাবে এলাকায় ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেছে। উপরন্তু আওয়ামীলীগের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ততার কারণে রামরাজত্ব কায়েমের এ প্রচেষ্টা পেয়েছে অদম্য বেগ। নিরীহ এলাকাবাসী, ইউপি সদস্য, মসজিদের ইমাম, আলেম, ভিক্ষুকসহ কোন শ্রেণীই রেহাই পায়নি তাদের নিপীড়ন, হয়রানী এবং চাঁদাবাজির হাত থেকে। এ চিত্র ফরিদগঞ্জ উপজেলার ৭নং পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়নের ৭নং ওয়ার্ডের বাদশা পাঠান পরিবারের।
অভিযোগ রয়েছে বাদশা পাঠান পরিবারের অত্যাচারে পাইকপাড়া উত্তর ইউনিয়ন পরিষদের সংরক্ষিত আসনের ইউপি সদস্য সেলিনা বেগমকে বাড়ি ছাড়া করার তথ্য উঠে এসেছে। ভুক্তভোগী সেলিনা বেগম জানিয়েছেন, “গত কয়েক বছরে বাদশা পাঠানের ছেলেরা আমাকে, আমার স্বামী এবং আমার সন্তানদের বিরুদ্ধে কোর্ট, থানা, এসপি অফিস, ডিসি অফিস, ইউনিয়ন পরিষদসহ বিভিন্ন দপ্তরে মোট ১৪টি মামলা করেছেন। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আমাদের প্রতি জুলুম নিপীড়ন করে, মারধর করে উল্টো মামলায় আমাদেরকেই ফাসানো হয়েছে। বিপরীতে সুনির্দিষ্ট অন্যায়ের প্রতিকার চেয়ে মামলা করতে গেলে বাদশা পাঠানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল, মেহাম্মদ আলী, ও তার ৩ নাতী পুলিশে কর্মরত হওয়ায় পুলিশের সিনিয়র অফিসার, উপজেলা আওয়ামিলীগের শীর্ষস্থানীয় নেতৃবৃন্দ এবং মন্ত্রণালয়ের অফিসারদের দিয়ে লবিং করায় আমরা থানা পুলিশের সহযোগিতা পাইনি। বর্তমানে আমাদের সবকটি মামলার নিষ্পত্তি হয়েছে। কিন্তু এ সকল মামলা নিষ্পত্তি করতে মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল, জাহাঙ্গীর পাঠান, আলমগীর পাঠান ও মোহাম্মদ আলী আমাদের কাছ থেকে ১৬ লক্ষ ৪০ হাজার টাকা নিয়েছে।
জনপ্রতিনিধি, আইনজীবী, রাজনৈতিক ব্যক্তি, পুলিশসহ বিভিন্ন মাধ্যমে তারা আমাদের কাছ থেকে এ অর্থ আদায় করেন। অর্থের যোগান দিতে গিয়ে আমাকে জমি পর্যন্ত বিক্রি করতে হয়েছে। মামলা দিয়ে আমাদের থেকে টাকা আদায় করা তাদের একটি বাণিজ্যে পরিনত হয়েছে। এছাড়া বাদশা পাঠানের ছেলেরা আমার ৪ শতক জমির বিপরীতে আমাকে রাস্তা বাবদ ১ শতক জমি লিখে দিতে সম্মত হয়। কিন্তু গত কয়েক বছর ধরে তারা আমার জমি রেজিস্ট্রি ছাড়াই ভোগদখল করে খাচ্ছে। আর আমাকেও রাস্তার অংশ লিখে না দেওয়ায় রাস্তা ব্যবহার করলেই গালিগালাজ করছে। এমনকি রাস্তা ব্যবহার করায় আমার ছেলেকেও বেদম প্রহার করেছে তারা। বাড়ির পুকুরে আমরা এক চতুর্থাংশের মালিক। মাছ ফেলার সময় তারা টোটাল খরচের অর্ধেক আমার কাছ থেকে আদায় করেছে। অথচ আমাকে মাছ না দিয়েই তারা সেগুলো বাজারে বিক্রি করেছে এবং নিজেরা খেয়েছে। মাছ বিক্রির সব টাকাও তারা নিতো। প্রতিবাদ করলে আবারো মামলা হামলা নির্যাতনের হুমকি দিচ্ছে। এমনাবস্থায় নিজেদের নিরাপত্তার জন্য এবং হয়রানি এড়াতে বাড়ি ছেড়ে আমি রূপসা বাজারে বাসা ভাড়া করে থাকছি।”
বাদশা পাঠানের ছেলে মোস্তাফিজুর রহমান দুলাল বলেন, সেলিনা মেম্বারের বিরুদ্ধে করা মামলাগুলোর সমাধান হয়েছে। এ ক্ষেত্রে মামলা প্রত্যাহার করতে প্রয়োজনীয় খরচ তিনি বহন করেছেন। তাদের পরিবারের ৯ সদস্যের মুক্তিযোদ্ধা কোটায় চাকরীর বিষয়টি স্বীকার করে তিনি বলেন, আমার বাবা একজন মুক্তিযোদ্ধাই নন। তিনি মুক্তিযোদ্ধাদের প্রশিক্ষকও ছিলেন। জমি এবং পুকুর সংক্রান্ত বিরোধের সত্যতাও তিনি স্বীকার করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইউপি সদস্য শহীদুল্লাহ বলেন, বাদশা পাঠানের ছেলেরা জঘন্য চরিত্রের। এরা বাবার মুক্তিযোদ্ধা পরিচয় আর নিজেরা পুলিশে, সেনাবাহীনীতে কর্মরত হওয়ার অহংকারে বহু নিরীহ মানুষের উপর নিপীড়ন করেছে। সেলিনার সাথে মামলা মোকদ্দমা এবং এসব সমাধানে অর্থ আদায়ের বিষয়টি সত্য। তবে সকল মামলার বিষয় আমি জানি না। এছাড়া সেলিনার ৪ শতক জমি দখল করে রাখা এবং পুকুরের মাছ আত্মসাতের বিষয়টিও আমি অবগত আছি। সবাই নিজের কর্মফল ভোগ করা উচিৎ।
ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান আবু তাহের পাটওয়ারী বলেন, মামলা, হামলা, হয়রানির বিষয়টি সত্য। অর্থনৈতিক সব লেনদেন আমাকে জানিয়ে হয় নাই। তবে একটি লেনদেন আমার মাধ্যমে হয়েছে।