ফরিদগঞ্জে ৬৯ দিন পর কবর থেকে প্রবাসীর লাশ উত্তোলন

  • আপডেট: ০৩:২৫:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯
  • ৬৪

নিজস্ব প্রতিনিধি:
ফরিদগঞ্জে দাফনের ৬৯ দিন পর কবর থেকে মো: সোহেল নামে ওমান প্রবাসী এক যুবকের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। গতকাল ২৪ জুলাই বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার(ভুমি), ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতা আফরিনের উপস্থিতিতে ফরিদগঞ্জ পৌরসভাধীন চরবসন্ত গ্রাম থেকে এ লাশ উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনের পর ফুলপ্যান্ট পরিহিত অবস্থায় লাশটি দেখা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও গোসল ও জানাজ না দিয়েই তড়িঘড়ি জানাজা দিয়ে করে দাফন করা হয়েছিল লাশটি। পুলিশ কবর থেকে লাশটি উত্তোলনের পর পোস্ট মর্টেমের জন্য চাঁদপুর প্রেরণ করেছে।
সোহেলের স্বজনরা জানায়, ফরিদগঞ্জ পৌরসভাধীন চরবসন্ত গ্রামের মৃত আব্বাছ হাজীর ছেলে মো: সোহেল তার চাচা মো: বাচ্চুর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছর পুর্বে মধ্য প্রাচ্যের দেশ ওমানে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তার চাচা ও চাচার শ্যালকসহ একত্রে একই কোম্পানীতে কাজ করার সুবাদে একই রুমে বসবাস করত। সেখানেই চাচার শ্যালক ফয়সালের সাথে সোহেলের বিরোধ সৃস্টি হয়। ঐ বিরোধের জের ধরে গত ৬ মে বাচ্চু ও ফয়সাল একত্রে মিলে সোহেলকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। কিন্তু ঘটনাটি তারা ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে সোহেলের মারাত্বক ব্যাধি হয়েছে বলে সোহেলের বড় চাচা শাহাজাহানকে ফোনে জানায় তারা। শুধু তাই নয় সোহেলকে ওমান থেকে বাংলাদেশে এনে চিকিৎসা করাতে হবে তাই সোহেলের মার স্বাক্ষর একটি সাদা কাগজে দিয়ে তাদের দেয়া ইমেইলে পাঠাতে বলে তারা। সরল বিশ্বাসে সোহেলের মা পিয়ারা বেগম ছেলেকে বাঁচাতে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে ইমেইলে পাঠিয়ে দেন। এর ১১ দিন পর অর্থ্যাৎ ১৭ মে বাচ্চু সোহেলের লাশ নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে। সুচতুর বাচ্চু তার লোকজন নিয়ে ঐ লাশের জানাযা না পড়িয়ে ও লাশ গোসল না করিয়ে তড়িঘড়ি করে দাফন করার উদ্যোগ নেয়। এসময় সোহেলের মা পিয়ারা বেগম, বড় চাচা শাহাজাহান, একমাত্র ভাই সোহাগসহ বাড়ির অন্যান্যরা শেষ বারের মতো সোহেলের মুখটি দেখতে চাইলে তা দেখাতেও অস্বীকৃতি জানায় বাচ্চু। শেষে চাপের মুখে পড়ে সোহেলের মৃতদেহটি দেখতে দেয়া হয়। এসময় সোহেলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমখমের চিহ্ন দেখা যায়। কিভাবে সোহেলের মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে বাচ্চু বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছে। কখনো বলেছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে বিদ্যুৎ ষ্পৃষ্ট হয়ে, কখনো বলেছে স্ট্রোক করে মারা গেছে, কখনো বা বলেছে গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে।
এদিকে স্থানীয় গণ্যমান্য বিষয়টি নিয়ে শালিসী বৈঠকে বাচ্চু সোহেলের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ হিসেবে আড়াই লক্ষ টাকা দিবে বলে স্বীকার করে। কিন্তু ক্ষতিপুরণের ঐ টাকা তিন মাস পরে দিবে বলে সে একটি ব্ল্যাংক চেক ও স্বাক্ষর যুক্ত একটি রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রদান করে। এর কিছুদিন পর জোর পুর্বক তার কাছ থেকে ব্ল্যাংক চেক ও স্বাক্ষর যুক্ত একটি রেভিনিউ স্ট্যাম্প নেয়া হয়েছে দাবী করে বাচ্চু তা উদ্ধারের জন্য চাঁদপুর আদালতে একটি মামলা করে।
অপরদিকে, সোহেলেকে পুর্ব শত্রুতার জের ধরে বাচ্চু ও তার শ্যালক ফয়সাল নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে, শুধু তাই নয়, পুরো ঘটনাটি আড়াল করার লক্ষ্যে লাশের গোসল ও জানাজা না দিয়েই তড়িঘড়ি করে লাশটি দাফন করা হয়েছে উল্লেখ করে গত ১ জুলাই চাঁদপুর আদালতে সোহেলের মা পিয়ারা বেগম সোহেলের লাশ উত্তোলন পুর্বক পোস্টমর্টেম করা ও মৃত্যুও সঠিক কারন উদঘাটন করে আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। পরে সি-আর আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: হাসান জামান ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শককে বাদীনীর আবেদন এজাহার(এফআইআর) হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবিদন দায়েরের আদেশ দেন। পরে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ৩ মে এটিকে মামলা হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে তদন্ত শুরু করে। এরই মধ্যে পুলিশ কবর থেকে লাশটি উত্তোলন পুর্বক পোস্ট মর্টেমের জন্য আদালতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে। এরপর বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতা আফরিনের উপস্থিতিতে চরবসন্ত গ্রাম থেকে এ লাশ উত্তোলন করার পর পোস্ট মর্টেমের জন্য চাঁপুর প্রেরণ করে পুলিশ।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

যে কারণে পুরুষে ৪টি বিয়ের পক্ষে হীরা সুমরো

ফরিদগঞ্জে ৬৯ দিন পর কবর থেকে প্রবাসীর লাশ উত্তোলন

আপডেট: ০৩:২৫:২১ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৪ জুলাই ২০১৯

নিজস্ব প্রতিনিধি:
ফরিদগঞ্জে দাফনের ৬৯ দিন পর কবর থেকে মো: সোহেল নামে ওমান প্রবাসী এক যুবকের লাশ উত্তোলন করা হয়েছে। গতকাল ২৪ জুলাই বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ও সহকারি কমিশনার(ভুমি), ও নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতা আফরিনের উপস্থিতিতে ফরিদগঞ্জ পৌরসভাধীন চরবসন্ত গ্রাম থেকে এ লাশ উত্তোলন করা হয়। উত্তোলনের পর ফুলপ্যান্ট পরিহিত অবস্থায় লাশটি দেখা গেছে।
স্থানীয়দের অভিযোগ, অনেকের আপত্তি সত্ত্বেও গোসল ও জানাজ না দিয়েই তড়িঘড়ি জানাজা দিয়ে করে দাফন করা হয়েছিল লাশটি। পুলিশ কবর থেকে লাশটি উত্তোলনের পর পোস্ট মর্টেমের জন্য চাঁদপুর প্রেরণ করেছে।
সোহেলের স্বজনরা জানায়, ফরিদগঞ্জ পৌরসভাধীন চরবসন্ত গ্রামের মৃত আব্বাছ হাজীর ছেলে মো: সোহেল তার চাচা মো: বাচ্চুর মাধ্যমে প্রায় দেড় বছর পুর্বে মধ্য প্রাচ্যের দেশ ওমানে যায়। সেখানে যাওয়ার পর তার চাচা ও চাচার শ্যালকসহ একত্রে একই কোম্পানীতে কাজ করার সুবাদে একই রুমে বসবাস করত। সেখানেই চাচার শ্যালক ফয়সালের সাথে সোহেলের বিরোধ সৃস্টি হয়। ঐ বিরোধের জের ধরে গত ৬ মে বাচ্চু ও ফয়সাল একত্রে মিলে সোহেলকে পিটিয়ে মেরে ফেলে। কিন্তু ঘটনাটি তারা ধামাচাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে সোহেলের মারাত্বক ব্যাধি হয়েছে বলে সোহেলের বড় চাচা শাহাজাহানকে ফোনে জানায় তারা। শুধু তাই নয় সোহেলকে ওমান থেকে বাংলাদেশে এনে চিকিৎসা করাতে হবে তাই সোহেলের মার স্বাক্ষর একটি সাদা কাগজে দিয়ে তাদের দেয়া ইমেইলে পাঠাতে বলে তারা। সরল বিশ্বাসে সোহেলের মা পিয়ারা বেগম ছেলেকে বাঁচাতে সাদা কাগজে স্বাক্ষর দিয়ে ইমেইলে পাঠিয়ে দেন। এর ১১ দিন পর অর্থ্যাৎ ১৭ মে বাচ্চু সোহেলের লাশ নিয়ে তার গ্রামের বাড়িতে ফিরে আসে। সুচতুর বাচ্চু তার লোকজন নিয়ে ঐ লাশের জানাযা না পড়িয়ে ও লাশ গোসল না করিয়ে তড়িঘড়ি করে দাফন করার উদ্যোগ নেয়। এসময় সোহেলের মা পিয়ারা বেগম, বড় চাচা শাহাজাহান, একমাত্র ভাই সোহাগসহ বাড়ির অন্যান্যরা শেষ বারের মতো সোহেলের মুখটি দেখতে চাইলে তা দেখাতেও অস্বীকৃতি জানায় বাচ্চু। শেষে চাপের মুখে পড়ে সোহেলের মৃতদেহটি দেখতে দেয়া হয়। এসময় সোহেলের শরীরের বিভিন্ন স্থানে জমখমের চিহ্ন দেখা যায়। কিভাবে সোহেলের মৃত্যু হয়েছে জানতে চাইলে বাচ্চু বিভিন্ন জনের কাছে বিভিন্ন তথ্য জানিয়েছে। কখনো বলেছে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে বিদ্যুৎ ষ্পৃষ্ট হয়ে, কখনো বলেছে স্ট্রোক করে মারা গেছে, কখনো বা বলেছে গাড়ি চাপা পড়ে মারা গেছে।
এদিকে স্থানীয় গণ্যমান্য বিষয়টি নিয়ে শালিসী বৈঠকে বাচ্চু সোহেলের পরিবারকে ক্ষতিপুরণ হিসেবে আড়াই লক্ষ টাকা দিবে বলে স্বীকার করে। কিন্তু ক্ষতিপুরণের ঐ টাকা তিন মাস পরে দিবে বলে সে একটি ব্ল্যাংক চেক ও স্বাক্ষর যুক্ত একটি রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রদান করে। এর কিছুদিন পর জোর পুর্বক তার কাছ থেকে ব্ল্যাংক চেক ও স্বাক্ষর যুক্ত একটি রেভিনিউ স্ট্যাম্প নেয়া হয়েছে দাবী করে বাচ্চু তা উদ্ধারের জন্য চাঁদপুর আদালতে একটি মামলা করে।
অপরদিকে, সোহেলেকে পুর্ব শত্রুতার জের ধরে বাচ্চু ও তার শ্যালক ফয়সাল নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যা করেছে, শুধু তাই নয়, পুরো ঘটনাটি আড়াল করার লক্ষ্যে লাশের গোসল ও জানাজা না দিয়েই তড়িঘড়ি করে লাশটি দাফন করা হয়েছে উল্লেখ করে গত ১ জুলাই চাঁদপুর আদালতে সোহেলের মা পিয়ারা বেগম সোহেলের লাশ উত্তোলন পুর্বক পোস্টমর্টেম করা ও মৃত্যুও সঠিক কারন উদঘাটন করে আসামীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য আবেদন করেন। পরে সি-আর আমলী আদালতের বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো: হাসান জামান ফরিদগঞ্জ থানার পুলিশ পরিদর্শককে বাদীনীর আবেদন এজাহার(এফআইআর) হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিবিদন দায়েরের আদেশ দেন। পরে ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ ৩ মে এটিকে মামলা হিসেবে অর্ন্তভুক্ত করে তদন্ত শুরু করে। এরই মধ্যে পুলিশ কবর থেকে লাশটি উত্তোলন পুর্বক পোস্ট মর্টেমের জন্য আদালতে আবেদন করলে আদালত তা মঞ্জুর করে। এরপর বুধবার সকালে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা(ভারপ্রাপ্ত) নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মমতা আফরিনের উপস্থিতিতে চরবসন্ত গ্রাম থেকে এ লাশ উত্তোলন করার পর পোস্ট মর্টেমের জন্য চাঁপুর প্রেরণ করে পুলিশ।