শরীফুল ইসলাম:
চাঁদপুর জেলার ফরিদগঞ্জ উপজেলার মূলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদের নিয়োগ পরীক্ষায় প্রথম হওয়া প্রার্থীকে নিয়োগ না দেওয়ার পাঁয়তারা করছে ম্যানেজিং কমিটি। এ নিয়ে নিয়োগ কমিটির সদস্যবৃন্দ ও ভুক্তভোগী শিক্ষক বিষ্ময় প্রকাশ করেছেন। অভিযোগ উঠেছে, মোটা অংকের অর্থের বিনিময়ে বিদ্যালয়ের বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ দিতে ভেতর ভেতর অপচেষ্টা করছেন ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি।
মূলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক পদটি দীর্ঘদিন ধরে শূন্য পড়ে আছে। এই পদে নিয়োগের জন্য পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিয়ে দরখাস্ত আহ্বান করা হয়। প্রধান শিক্ষক পদটির জন্য ১২জন প্রার্থী আবেদন করেন। গত ১২ জুন প্রার্থীদের লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষা (ইন্টারভিউ) অনুষ্ঠিত হয়। এতে ১২জন প্রার্থীর মধ্যে ৬জন অংশগ্রহণ করেন।
লিখিত ও মৌখিক পরীক্ষায় সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জন করেন চাঁদপুর সদরের মহামায়া হানাফিয়া উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক মোঃ বুলবুুল আহছান। নিয়োগ কমিটি তাকে প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়ার সর্বসম্মত সুপারিশ করেন। বিদ্যালয় ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহীদুল্লাহ তপাদার নিজে নিয়োগ বোর্ডের পক্ষে ওইদিন ফলাফল ঘোষণা করেন। এ সময় সকল প্রার্থী উপস্থিত ছিলেন। ফলাফল সিটে সকল নিয়োগ কমিটির সকল সদস্য স্বাক্ষর করেন এবং তাদের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়। নিয়োগ পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারী সকল প্রার্থীও ফলাফল মেনে নেন।
কিন্তু নিয়োগ পরীক্ষার পর প্রায় দেড় মাস অতিবাহিত হলেও এখনো প্রধান শিক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়নি। এলাকায় গুঞ্জন শোনা যাচ্ছে, ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি চাচ্ছেন বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষক আবুল কাশেমকে নিয়োগ দিতে। তিনি নিয়োগ পরীক্ষায় দ্বিতীয় হয়েছিলেন। তাকে নিয়োগ দেওয়ার জন্য নাকি কয়েক লাখ টাকার অলিখিত চুক্তি হয়েছে।
এ বিষয়ে মূলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি শহীদুল্লাহ তপাদার বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ১২ জুন পরীক্ষার দিন ঘোষণা হয়েছে সত্য। কিন্তু নিয়োগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত আসতে হবে ম্যানেজিং কমিটির সভায়। সেখানে একজন সদস্য খাতা মূল্যায়নে ভুল হওয়ার অভিযোগ তুললে তাৎক্ষণিক খাতা পুনঃমূল্যায়ন করা হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, প্রথম হওয়া প্রার্থীর অংক ভুল হয়েছে। তাই এ ব্যাপারে চূড়ান্ত কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। ম্যানেজিং কমিটির পরবর্তী সভায় এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত হবে। তবে তার বিরুদ্ধে উত্থাপিত অবৈধভাবে বর্তমান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষককে নিয়োগের অপচেষ্টা এবং এ ক্ষেত্রে আর্থিক চুক্তির অভিযোগটি অস্বীকার করেছেন তিনি।
এ ব্যাপারে ফরিদগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা ও নিয়োগ কমিটির সদস্য শাহ আলী রেজা আশরাফী বলেন, আমিসহ নিয়োগ কমিটির সকলের উপস্থিতিতে ফলাফল ঘোষণা করা হয়েছে। সেই ফলাফল অনুযায়ী প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ প্রদানের কথা। কেন নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে না তা জানি না। তিনি আরো বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল বাতিল বা খাতা পুনঃমূল্যায়নের ক্ষমতা ম্যানেজিং কমিটির নেই। তাছাড়া ফলাফল বাতিলের কোনো আবেদন বা খাতা পুনঃমূল্যায়নের কোনো আবেদন/অভিযোগও আমাদের কাছে করা হয়নি।
কুমিল্লা শিক্ষা বোর্ডের সাবেক উপ-পরিচালক ও চাঁদপুর হাসান আলী সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মোহাম্মদ হোসেনও ডিজি’র প্রতিনিধি হিসেবে এই নিয়োগ কমিটির সদস্য ছিলেন। তিনি বলেন, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল ঘোষণার সময় কোনো প্রার্থী এর বিরুদ্ধে আপত্তি তোলেননি। পরবর্তীতে কেউ দাবি তুলেছেন বলেও আমার জানা নেই। নিয়ম অনুযায়ী, নিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল নিয়ে কেউ কোনো অভিযোগ বা আপত্তি তুললে সাথে সাথে তুলতে হয়। পরে করলেও নিয়োগ কমিটিকে তা জানাতে হয়। ম্যানেজিং কমিটি নিজেরা খাতা পুনঃমূল্যায়নের কোনো নিয়ম নেই। ফলাফল বাতিলের ক্ষমতাও তাদের নেই।
এদিকে নিয়োগ কমিটি কর্তৃক মনোনীত প্রধান শিক্ষক মোঃ বুলবুল আহছান বলেন, নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি দেখে নিয়ম মোতাবেক আমি পরীক্ষা দেই এবং প্রথম স্থান অর্জন করি। ফলাফল ঘোষণার পর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি আমাকে জানিয়েছেন শীঘ্রই নিয়োগ দেয়া হবে। কিন্তু এখনো নিয়োগ দেয়া হচ্ছে না। সভাপতির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি পরে জানাবেন বলে জানিয়েছেন।
শিরোনাম:
মূলপাড়া উচ্চ বিদ্যালয়ে মনোনীত প্রধান শিক্ষককে নিয়োগ না দেওয়ার পাঁয়তারানিয়োগ পরীক্ষার ফলাফল বাতিল বা খাতা পুনঃমূল্যায়নের ক্ষমতা ম্যানেজিং কমিটির নেই : মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা
Tag :
সর্বাধিক পঠিত