ফরিদগঞ্জে ঘাতক জামাতার উপুর্যপরি ছুরিকাঘাতে স্ত্রীর পর শাশুড়ির প্রাণ গেল  

  • আপডেট: ০৪:১৩:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মে ২০২০
  • ৩০

হত্যার শিকার মা পারভীন ও মেয়ে রিত (বামে) ঘাতক জামাই (ডানে)

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি :

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে স্ত্রীর পরকিয়া সন্দেহে জামাতার উপুর্যপরি ছুরিকাঘাতে স্ত্রী তানজিনা আক্তার রিতুর নিহত হওয়ার পর এবার শাশুড়ি পারভীন আক্তারেরও প্রাণ গেল। ছুরিকাঘাতে তাৎক্ষনিক স্ত্রী রিতুর মৃত্যু হলেও শাশুড়ি পারভীন দুইদিন চিকিৎসাধীন থেকে শুক্রবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়ার পথে মৃত্যু বরণ করেন। এদিকে খুনের ঘটনায় ঘাতক জামাতা আল মামুন মোহনকে বৃহষ্পতিবার বিকালে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার জন্য আদালতে হাজির করা হলেও সে অস্বীকার করায় তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে খুনের ঘটনায় রিতুর স্বামী আল মামুন মোহনকে প্রধান  ও তার ভাই এবং বোনকে আসামী করে নিহত রিতুর চাচা লিয়াকত খান বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়েরের পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাজী জাকারিয়া অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমা- আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, লোহমর্ষক এই ঘটনার পর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত ঘাতক মোহনের শাশুড়ি পারভীন আক্তারকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহষ্পতিবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার করে। ঢাকা নেয়ার পথে শুক্রবার ভোরে তিনি মৃত্যু বরণ করে। শুক্রবার সকালে তার লাশ থানায় আসার পর পুলিশ পোস্ট মর্টেমের জন্য চাঁদপুর প্রেরণ করেছে। এদিকে নিহত রিতুর পোস্ট মর্টেম শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে তার লাশ দাফন করা হয়।

 উল্লেখ্য, নৃশংস এই খুনের ঘটনা ১৩ মে বুধবার ইফতার পুর্ব সময়ে উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, আড়াই বছর পুর্বে পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার শায়েস্তানগর গ্রামের মনতাজ মাস্টারের ছেলে আল মামুন মোহন ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া গ্রামের খাঁ বাড়ির সেলিম খানের মেয়ে তানজিনা আক্তারকে বিয়ে করে। বিয়ের পর সৌদি আরবে গেলেও গত দেড় বছর পুর্বে আল মামুন মোহন সৌদি আরব থেকে ফেরত আসে।  ১৩ মে বুধবার বিকালে সে তার নিজ বাড়ি রায়পুর থেকে শশুড় বাড়ি ফরিদগেঞ্জর গৃদকালিন্দিয়া আসে। ইফতারের পুর্বে মূর্হূতে স্ত্রী তানজিনা আক্তার রিতুর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রিতুকে উপর্যুপরি ছুরিকাহত করে। এক পর্যায়ে মেয়ের আত্মচিৎকারে মা পারভীন আক্তার তাকেও ছুরিকাহত করে মোহন। এসময় সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আশেপাশের লোকজন টের পেয়ে তাকে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরপর রিতুকে দ্রুত ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।

নিহত রিতুর মামী তাছলিমা বেগম জানায়, সৌদি আরব থেকে মোহন চলে আসার পর বেকার অবস্থায় ছিল। বিয়ের সময় রিতুকে দেয়া স্বর্ণালংকার সবকিছু বিক্রি করে ফেলে সে। এছাড়া বাড়িতে বসবাস করার জন্য কোন ব্যবস্থা না থাকায় রিতু স্বামীর বাড়িতে যেতে চাইতো না। সে বাপের বাড়ি থেকেই পড়ালেখা করতো। এই নিয়ে মোহন স্ত্রীকে সন্দেহ করতো যে, সে পরকিয়ায় আসক্ত। এসব বিষয় নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরে রিতুকে হত্যা করে এবং তার মা ও ভাইকে আহত করে মোহন।
এদিকে, ঘাতক মোহন ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে আটক অবস্থায় জানিয়েছে, তার স্ত্রী পরকিয়ায় লিপ্ত। তার প্রবাস থেকে পাঠানো সকল অর্থ তারা আত্মসাৎ করেছে। তাকে পাত্তা দিতো না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে ছুরিকাহত করেছে।

এব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রকিব জানান,  রিতুর মৃত দেহের পোস্ট মর্টেম সম্পন্নের পর শাশুড়ির লাশ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য চাঁদপুর প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত রিতুর চাচা লিয়াকত খান বাদী হয়ে বৃহষ্পতিবার সকালে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।

Tag :

সম্পাদক ও প্রকাশক:
মোঃ মহিউদ্দিন আল আজাদ

মোবাইল : ০১৭১৭-৯৯২০০৯ (নিউজ) বিজ্ঞাপন : ০১৬৭০-৯০৭৩৬৮
ইমেইলঃ notunerkotha@gmail.com

দেশে HMPV ভাইরাসে আক্রান্ত নারীর মৃত্যু, বাড়ছে আতঙ্ক

ফরিদগঞ্জে ঘাতক জামাতার উপুর্যপরি ছুরিকাঘাতে স্ত্রীর পর শাশুড়ির প্রাণ গেল  

আপডেট: ০৪:১৩:৫২ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ১৫ মে ২০২০

ফরিদগঞ্জ প্রতিনিধি :

চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে স্ত্রীর পরকিয়া সন্দেহে জামাতার উপুর্যপরি ছুরিকাঘাতে স্ত্রী তানজিনা আক্তার রিতুর নিহত হওয়ার পর এবার শাশুড়ি পারভীন আক্তারেরও প্রাণ গেল। ছুরিকাঘাতে তাৎক্ষনিক স্ত্রী রিতুর মৃত্যু হলেও শাশুড়ি পারভীন দুইদিন চিকিৎসাধীন থেকে শুক্রবার ভোরে ঢাকা মেডিকেল কলেজে নেয়ার পথে মৃত্যু বরণ করেন। এদিকে খুনের ঘটনায় ঘাতক জামাতা আল মামুন মোহনকে বৃহষ্পতিবার বিকালে ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি দেয়ার জন্য আদালতে হাজির করা হলেও সে অস্বীকার করায় তাকে জেল হাজতে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে খুনের ঘটনায় রিতুর স্বামী আল মামুন মোহনকে প্রধান  ও তার ভাই এবং বোনকে আসামী করে নিহত রিতুর চাচা লিয়াকত খান বাদী হয়ে হত্যা মামলা দায়েরের পর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা এসআই কাজী জাকারিয়া অধিকতর জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমা- আবেদন করবেন বলে জানিয়েছেন।

জানা গেছে, লোহমর্ষক এই ঘটনার পর ছুরিকাঘাতে গুরুতর আহত ঘাতক মোহনের শাশুড়ি পারভীন আক্তারকে চাঁদপুর সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। বৃহষ্পতিবার রাতে তার অবস্থার অবনতি হলে তাকে ঢাকা মেডিকেল কলেজে রেফার করে। ঢাকা নেয়ার পথে শুক্রবার ভোরে তিনি মৃত্যু বরণ করে। শুক্রবার সকালে তার লাশ থানায় আসার পর পুলিশ পোস্ট মর্টেমের জন্য চাঁদপুর প্রেরণ করেছে। এদিকে নিহত রিতুর পোস্ট মর্টেম শেষে বৃহস্পতিবার বিকালে তার লাশ দাফন করা হয়।

 উল্লেখ্য, নৃশংস এই খুনের ঘটনা ১৩ মে বুধবার ইফতার পুর্ব সময়ে উপজেলার গৃদকালিন্দিয়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে।
জানা গেছে, আড়াই বছর পুর্বে পাশ্ববর্তী লক্ষ্মীপুর জেলার রায়পুর উপজেলার শায়েস্তানগর গ্রামের মনতাজ মাস্টারের ছেলে আল মামুন মোহন ফরিদগঞ্জ উপজেলার রূপসা দক্ষিণ ইউনিয়নের গৃদকালিন্দিয়া গ্রামের খাঁ বাড়ির সেলিম খানের মেয়ে তানজিনা আক্তারকে বিয়ে করে। বিয়ের পর সৌদি আরবে গেলেও গত দেড় বছর পুর্বে আল মামুন মোহন সৌদি আরব থেকে ফেরত আসে।  ১৩ মে বুধবার বিকালে সে তার নিজ বাড়ি রায়পুর থেকে শশুড় বাড়ি ফরিদগেঞ্জর গৃদকালিন্দিয়া আসে। ইফতারের পুর্বে মূর্হূতে স্ত্রী তানজিনা আক্তার রিতুর সাথে কথা কাটাকাটির এক পর্যায়ে রিতুকে উপর্যুপরি ছুরিকাহত করে। এক পর্যায়ে মেয়ের আত্মচিৎকারে মা পারভীন আক্তার তাকেও ছুরিকাহত করে মোহন। এসময় সে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আশেপাশের লোকজন টের পেয়ে তাকে আটক করে গণধোলাই দেয়। পরে তাকে পুলিশের হাতে তুলে দেয়। এরপর রিতুকে দ্রুত ফরিদগঞ্জ স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে নেয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষনা করে।

নিহত রিতুর মামী তাছলিমা বেগম জানায়, সৌদি আরব থেকে মোহন চলে আসার পর বেকার অবস্থায় ছিল। বিয়ের সময় রিতুকে দেয়া স্বর্ণালংকার সবকিছু বিক্রি করে ফেলে সে। এছাড়া বাড়িতে বসবাস করার জন্য কোন ব্যবস্থা না থাকায় রিতু স্বামীর বাড়িতে যেতে চাইতো না। সে বাপের বাড়ি থেকেই পড়ালেখা করতো। এই নিয়ে মোহন স্ত্রীকে সন্দেহ করতো যে, সে পরকিয়ায় আসক্ত। এসব বিষয় নিয়ে দ্বন্ধের জের ধরে রিতুকে হত্যা করে এবং তার মা ও ভাইকে আহত করে মোহন।
এদিকে, ঘাতক মোহন ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশের হাতে আটক অবস্থায় জানিয়েছে, তার স্ত্রী পরকিয়ায় লিপ্ত। তার প্রবাস থেকে পাঠানো সকল অর্থ তারা আত্মসাৎ করেছে। তাকে পাত্তা দিতো না। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে সে ছুরিকাহত করেছে।

এব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আব্দুর রকিব জানান,  রিতুর মৃত দেহের পোস্ট মর্টেম সম্পন্নের পর শাশুড়ির লাশ উদ্ধার করে পোস্ট মর্টেমের জন্য চাঁদপুর প্রেরণ করা হয়েছে। নিহত রিতুর চাচা লিয়াকত খান বাদী হয়ে বৃহষ্পতিবার সকালে ফরিদগঞ্জ থানায় মামলা দায়ের করেছেন।