ফ্রান্সের গির্জার করোনা টাইম বোমা

  • আপডেট: ০৫:১৮:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ মার্চ ২০২০
  • ৩০

Medical staff clad in protective gear prepare to provide care for suspected coronavirus patients onboard the quarantined Diamond Princess cruise ship at Daikoku Pier Cruise Terminal in Yokohama on February 7, 2020. - Another 41 people on a cruise ship quarantined off Japan have the new coronavirus, the country's health minister said on February 7, confirming more on board will now be tested for the illness. (Photo by Kazuhiro NOGI / AFP) / “The erroneous mention[s] appearing in the metadata of this photo by Kazuhiro NOGI has been modified in AFP systems in the following manner: [YOKOHAMA] instead of [TOKYO]. Please immediately remove the erroneous mention[s] from all your online services and delete it (them) from your servers. If you have been authorized by AFP to distribute it (them) to third parties, please ensure that the same actions are carried out by them. Failure to promptly comply with these instructions will entail liability on your part for any continued or post notification usage. Therefore we thank you very much for all your attention and prompt action. We are sorry for the inconvenience this notification may cause and remain at your disposal for any further information you may require.”

অনলাইন ডেস্ক:

ফ্রান্সের একটি গির্জা থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে খবর বেরিয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় দেশটির ক্রিশ্চিয়ান ওপেন ডোর গির্জায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড সীমান্ত লাগোয়া এক লাখের বেশি মানুষের শহর ফ্রান্সের মূল হাউসের এই গির্জায় সপ্তাহব্যাপী ধর্মীয় উপাসনায় অংশ নেন তারা। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো মানুষ এখানে আসেন। রয়টার্স।

খবরে বলা হয়, এবার এই উপাসনায় অংশ নেয়া কেউ কেউ করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করেছিলেন। মূল হাউসের স্থানীয় সরকার বলছে, করোনার ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়া উত্তর ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে এই গির্জার ধর্মীয় সেই উপাসনা অনুষ্ঠানের সম্পর্ক রয়েছে। এই গির্জায় গিয়েছিলেন এমন আড়াই হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

ফ্রান্সের মূল হাউসের ক্রিশ্চিয়ান ওপেন ডোর গির্জা থেকে এই ভাইরাস এখন ছড়িয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার বুর্কিনা ফাঁসো থেকে ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ কর্সিকা, লাতিন আমেরিকার গায়ানা থেকে সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্সের পারমাণবিক পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ইউরোপের বৃহত্তম গাড়ি প্রস্তুতকারক মার্সিডিজ-বেঞ্চের কারখানায়ও।

ধর্মীয় ওই অনুষ্ঠানের কয়েক সপ্তাহ পর ফ্রান্সের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় জার্মানি। একই সঙ্গে গত ২৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুই দেশের নাগরিকদের অবাধ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জার্মানি। গির্জার ওই ঘটনার কারণেই জার্মানি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

গির্জার কর্মকর্তারা বলছেন, গির্জাটির সমাবেশে অংশ নেয়াদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। একই ধরনের একটি ধর্মীয় সমাবেশ থেকে করোনাভাইরাস বিস্তারের ঘটনা আছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটির দায়েগু শহরের একটি গির্জায় অংশ নিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। সেখানে একজন নারী করোনা সংক্রমিত জানার পরও চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ উপেক্ষা করে গির্জার সমাবেশে গিয়েছিলেন। পরে তার মাধ্যমে গির্জায় আসা পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হন।

ক্রিশ্চিয়ান ওপেন ডোর গির্জার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা রয়টার্সকে যে ঘটনাটি বলেছেন তাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতি এবং নাজুক পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে। ফ্রান্সের ওই অঞ্চলের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখনো এই সংক্রমণ মোকাবেলার প্রস্তুতি পর্বে রয়েছেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ১৭৪ এবং মারা গেছেন দুই হাজার ৬০৬ জন। উত্তর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো ফ্রান্সের সরকারও বড় ধরনের জনসমাবেশ কিংবা মানুষের অবাধ চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেনি।

যে কারণে ওই গির্জার সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের জন্য কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ। গির্জাটির প্রতিষ্ঠাতার নাতি এবং বর্তমান প্রধান যাজক জোনাথন পিটার্সমিট বলেন, সেই সময় আমরা কোভিড-১৯ কে খুব দূরের কিছু মনে করেছিলাম। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া পিটার্সমিটের বাবা স্যামুয়েলের সাক্ষাৎকার নিতে পারেনি রয়টার্স।

এই গির্জার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায় ২৯ ফেব্র“য়ারি। এরপর দেশটির জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই গির্জায় আগতদের ও তাদের সংস্পর্শে আসাদের শনাক্ত করতে দীর্ঘ অনুসন্ধান শুরু করেন। কিন্তু তার আগেই গির্জায় আগতরা দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েন।

গির্জা কর্তৃপক্ষ উপাসনায় অংশগ্রহণকারীদের একটি তালিকা দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে দিয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্তকারীরা বলছেন, বেশ দেরি হয়ে গেছে। ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলের জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থার মহামারী বিশেষজ্ঞ মাইকেল ভার্নি বলেন, গির্জায় শিশুদের দেখাশোনা যারা করেন, ইতোমধ্যে তাদের অনেকেই করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা হেরে গেছি। আমরা বুঝতে পারছি, আমাদের সামনে এখন করোনার টাইম বোমা অপেক্ষা করছে। গির্জার সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একজন স্থানীয় বাসিন্দা এলি উইদমার। একটি গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যবস্থাপক বলেন, তার বাবা-মা এই গির্জার সদস্য ছিলেন। ১৯৬৬ সালে গির্জাটি নির্মাণ করেছিলেন জিন পিটার্সমিট নামের এক ব্যবসায়ী। একদিন হঠাৎ করেই তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ওই দোকানি যীশু খ্রিস্টের বাণী প্রচার করলে স্ত্রী সুস্থ হয়ে যান বলে জনশ্র“তি রয়েছে। এর পরপরই যীশুর বাণী প্রচারের জন্য গির্জাটি প্রতিষ্ঠা করেন জিন।

এলি উইদমার বলেন, কিশোর বয়সে এই গির্জা থেকে দূরে ছিলেন তিনি, কিন্তু বর্তমানে আবারও সেখানে যাতায়াত শুরু করেছেন। মূল হাউসের এই গির্জার বার্ষিক এই সমাবেশের জন্য অনেকেই পুরো বছর ধরে অপেক্ষা করেন। তিনি বলেন, এই সপ্তাহে সেখানে গেলে আপনি বিশেষ শক্তি অনুভব করবেন। আধ্যাত্মিক এই শক্তি অর্জনের জন্য আপনি সবকিছু এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেবেন। এই গির্জার বাদক দলের ড্রামার হিসেবে সেখানে পুরো সপ্তাহজুড়ে থাকেন এলি।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-অর্থ সম্পাদক হাজীগঞ্জের মাহবুব আলম ২ দিনের রিমান্ডে

ফ্রান্সের গির্জার করোনা টাইম বোমা

আপডেট: ০৫:১৮:৩৯ অপরাহ্ন, সোমবার, ৩০ মার্চ ২০২০

অনলাইন ডেস্ক:

ফ্রান্সের একটি গির্জা থেকে করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ে বলে খবর বেরিয়েছে। ১৮ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় দেশটির ক্রিশ্চিয়ান ওপেন ডোর গির্জায় হাজার হাজার মানুষের সমাগম হয়। জার্মানি ও সুইজারল্যান্ড সীমান্ত লাগোয়া এক লাখের বেশি মানুষের শহর ফ্রান্সের মূল হাউসের এই গির্জায় সপ্তাহব্যাপী ধর্মীয় উপাসনায় অংশ নেন তারা। প্রতি বছর বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে হাজারো মানুষ এখানে আসেন। রয়টার্স।

খবরে বলা হয়, এবার এই উপাসনায় অংশ নেয়া কেউ কেউ করোনাভাইরাসকে সঙ্গী করেছিলেন। মূল হাউসের স্থানীয় সরকার বলছে, করোনার ভয়াবহ বিপর্যয়ের মুখোমুখি হওয়া উত্তর ইউরোপের দেশগুলোর সঙ্গে এই গির্জার ধর্মীয় সেই উপাসনা অনুষ্ঠানের সম্পর্ক রয়েছে। এই গির্জায় গিয়েছিলেন এমন আড়াই হাজার মানুষ করোনা আক্রান্ত হয়েছেন।

ফ্রান্সের মূল হাউসের ক্রিশ্চিয়ান ওপেন ডোর গির্জা থেকে এই ভাইরাস এখন ছড়িয়েছে পশ্চিম আফ্রিকার বুর্কিনা ফাঁসো থেকে ভূমধ্যসাগরীয় দ্বীপ কর্সিকা, লাতিন আমেরিকার গায়ানা থেকে সুইজারল্যান্ড, ফ্রান্সের পারমাণবিক পাওয়ার প্ল্যান্ট থেকে ইউরোপের বৃহত্তম গাড়ি প্রস্তুতকারক মার্সিডিজ-বেঞ্চের কারখানায়ও।

ধর্মীয় ওই অনুষ্ঠানের কয়েক সপ্তাহ পর ফ্রান্সের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ করে দেয় জার্মানি। একই সঙ্গে গত ২৫ বছরের ইতিহাসে প্রথমবারের মতো দুই দেশের নাগরিকদের অবাধ চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে জার্মানি। গির্জার ওই ঘটনার কারণেই জার্মানি এই সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য হয়েছে।

গির্জার কর্মকর্তারা বলছেন, গির্জাটির সমাবেশে অংশ নেয়াদের মধ্যে এখন পর্যন্ত ১৭ জন করোনা আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন। একই ধরনের একটি ধর্মীয় সমাবেশ থেকে করোনাভাইরাস বিস্তারের ঘটনা আছে দক্ষিণ কোরিয়ায়। দেশটির দায়েগু শহরের একটি গির্জায় অংশ নিয়েছিলেন হাজার হাজার মানুষ। সেখানে একজন নারী করোনা সংক্রমিত জানার পরও চিকিৎসকদের কোয়ারেন্টিনে থাকার পরামর্শ উপেক্ষা করে গির্জার সমাবেশে গিয়েছিলেন। পরে তার মাধ্যমে গির্জায় আসা পাঁচ হাজারের বেশি মানুষ করোনায় আক্রান্ত হন।

ক্রিশ্চিয়ান ওপেন ডোর গির্জার পরিচালনা পর্ষদের সদস্য এবং প্রাদুর্ভাব মোকাবেলার সঙ্গে জড়িত কর্মকর্তারা রয়টার্সকে যে ঘটনাটি বলেছেন তাতে করোনাভাইরাস সংক্রমণের গতি এবং নাজুক পরিস্থিতির কথা উঠে এসেছে। ফ্রান্সের ওই অঞ্চলের স্থানীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এখনো এই সংক্রমণ মোকাবেলার প্রস্তুতি পর্বে রয়েছেন। দেশটিতে এখন পর্যন্ত করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন ৪০ হাজার ১৭৪ এবং মারা গেছেন দুই হাজার ৬০৬ জন। উত্তর ইউরোপের বিভিন্ন দেশের মতো ফ্রান্সের সরকারও বড় ধরনের জনসমাবেশ কিংবা মানুষের অবাধ চলাচলের ওপর কড়াকড়ি আরোপ করেনি।

যে কারণে ওই গির্জার সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের জন্য কোনো হ্যান্ড স্যানিটাইজার কিংবা হাত ধোয়ার ব্যবস্থা করেনি কর্তৃপক্ষ। গির্জাটির প্রতিষ্ঠাতার নাতি এবং বর্তমান প্রধান যাজক জোনাথন পিটার্সমিট বলেন, সেই সময় আমরা কোভিড-১৯ কে খুব দূরের কিছু মনে করেছিলাম। করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হওয়া পিটার্সমিটের বাবা স্যামুয়েলের সাক্ষাৎকার নিতে পারেনি রয়টার্স।

এই গির্জার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রথম করোনা রোগী পাওয়া যায় ২৯ ফেব্র“য়ারি। এরপর দেশটির জনস্বাস্থ্য কর্মকর্তারা এই গির্জায় আগতদের ও তাদের সংস্পর্শে আসাদের শনাক্ত করতে দীর্ঘ অনুসন্ধান শুরু করেন। কিন্তু তার আগেই গির্জায় আগতরা দেশটির বিভিন্ন প্রান্ত ও বিশ্বের বিভিন্ন দেশে ছড়িয়ে পড়েন।

গির্জা কর্তৃপক্ষ উপাসনায় অংশগ্রহণকারীদের একটি তালিকা দেশটির স্বাস্থ্য বিভাগের কাছে দিয়েছে। কিন্তু স্বাস্থ্য বিভাগের তদন্তকারীরা বলছেন, বেশ দেরি হয়ে গেছে। ফ্রান্সের পূর্বাঞ্চলের জাতীয় জনস্বাস্থ্য সংস্থার মহামারী বিশেষজ্ঞ মাইকেল ভার্নি বলেন, গির্জায় শিশুদের দেখাশোনা যারা করেন, ইতোমধ্যে তাদের অনেকেই করোনায় সংক্রমিত হয়েছেন।

তিনি বলেন, আমরা হেরে গেছি। আমরা বুঝতে পারছি, আমাদের সামনে এখন করোনার টাইম বোমা অপেক্ষা করছে। গির্জার সমাবেশে অংশগ্রহণকারীদের একজন স্থানীয় বাসিন্দা এলি উইদমার। একটি গৃহনির্মাণ প্রতিষ্ঠানের ৩৭ বছর বয়সী এই ব্যবস্থাপক বলেন, তার বাবা-মা এই গির্জার সদস্য ছিলেন। ১৯৬৬ সালে গির্জাটি নির্মাণ করেছিলেন জিন পিটার্সমিট নামের এক ব্যবসায়ী। একদিন হঠাৎ করেই তার স্ত্রী অসুস্থ হয়ে পড়েন। পরে ওই দোকানি যীশু খ্রিস্টের বাণী প্রচার করলে স্ত্রী সুস্থ হয়ে যান বলে জনশ্র“তি রয়েছে। এর পরপরই যীশুর বাণী প্রচারের জন্য গির্জাটি প্রতিষ্ঠা করেন জিন।

এলি উইদমার বলেন, কিশোর বয়সে এই গির্জা থেকে দূরে ছিলেন তিনি, কিন্তু বর্তমানে আবারও সেখানে যাতায়াত শুরু করেছেন। মূল হাউসের এই গির্জার বার্ষিক এই সমাবেশের জন্য অনেকেই পুরো বছর ধরে অপেক্ষা করেন। তিনি বলেন, এই সপ্তাহে সেখানে গেলে আপনি বিশেষ শক্তি অনুভব করবেন। আধ্যাত্মিক এই শক্তি অর্জনের জন্য আপনি সবকিছু এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ করে দেবেন। এই গির্জার বাদক দলের ড্রামার হিসেবে সেখানে পুরো সপ্তাহজুড়ে থাকেন এলি।