অনলাইন ডেস্ক:
ভারতের রাজধানী দিল্লিতে বিতর্কিত নাগরিকত্ব আইনের (সিএএ) সমর্থকদের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘর্ষে নিহতের সংখ্যা বেড়ে ৪২ জনে দাঁড়িয়েছে। গত রোববার শুরু হওয়া এই সংঘর্ষ মঙ্গলবার সাম্প্রদায়িক দাঙ্গায় রূপ নিয়েছিল। সিএএ-বিরোধীদের ওপর লাঠিসোঁটা, ইট-পাটকেল আর ধারাল অস্ত্র নিয়ে চড়াও হয় সিএএ-পক্ষের লোকরা।
আনন্দবাজার জানিয়েছে, গত রোববার উত্তর-পূর্ব দিল্লির জাফরাবাদ ও মৌজপুরে প্রথম তাণ্ডব শুরু করে উগ্রহিন্দুত্ববাদীরা। এরপরই তা অন্য সব এলাকায় ছড়িয়ে পড়ে।
এদিকে চারদিন ব্যাপী চল এ দাঙ্গায় দিল্লি পুলিশের নিষ্ক্রিয়তা নিয়ে অভিযোগ উঠেছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে সেনা মোতায়েন চেয়েছেন দিল্লির মূখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়ল।
পুলিশের নীরবতা নিয়ে ওঠা অভিযোগের মাঝেই জানা গেল, রোববার যখন বিভিন্ন এলাকায় দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ছিল পুলিশরা তখন ক্রিকেট ম্যাচ নিয়ে মত্ত ছিলেন।
এ বিষয়ে শুক্রবার ভারতীয় সংবাদমাধ্যম আনন্দবাজার পত্রিকা জানিয়েছে, দাঙ্গা শুরুর সময় দিল্লির কনট প্লেসের কাছে বড়াখাম্বা রোডের একটি বেসরকারি স্কুল মাঠে বাৎসরিক প্রীতি ক্রিকেট ম্যাচ চলছিল। আর সেই ম্যাচে মশগুল ছিলেন দিল্লির অনেক পুলিশ সদস্য।
সংবাদমাধ্যমটি জানিয়েছে, ওই মাঠ থেকে ১০ কিলোমিটার দূরে জাফরাবাদ। আর সেখান থেকেই দাঙ্গার সূত্রপাত। সেদিন ক্রিকেট খেলা নিয়ে মজে থাকা পুলিশদের কাছে দাঙ্গার খবর এলেও তারা খেলা ছেড়ে সেখানে যাননি। এমনকি স্থানীয়রা ফোনে বারবার সাহায্য চাওয়া সত্ত্বেও পুলিশ কর্ণপাত করেনি। পুলিশ কন্ট্রোলরুমে বারবারই খশোনা গেছে – ‘ভিড় বাড়ছে’, ‘জনতা উত্তেজিত’, ‘বড় ঝামেলা হতে পারে’, ‘ফোর্স চাই’।
আনন্দবাজার আরো জানায়, খেলা শেষ হওয়ার আগ পর্যন্ত একজন পুলিশও সহিংস এলাকায় যাননি। এসব বার্তায় কান দেননি।
ওই সময় পুলিশ তৎপর হলে সহিংসতা এত দূর গড়াত না বলে জানিয়েছেন বিশ্লেষকরা।
ভারতীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেন, অতীতের অবস্থানে নেই ভারতের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। আগে এ ধরনের পরিস্থিতি হলে সবার আগে প্রতিটি বাড়ির ছাদে পুলিশ মোতায়েন করা হত। আক্রমণের পথ বন্ধ করে দুর্বৃত্তদের পরিকল্পনা বানচাল করে দিত পুলিশ। দুবৃর্ত্তদের চারিপাশ থেকে ঘিরে পাকড়াও করা হতো। কিন্তু এবারের দাঙ্গায় প্রথম দুই দিন পুলিশ কী করবে, তাই স্পষ্ট ছিল না আমাদের কাছে।
দিল্লি পুলিশ এমন ব্যর্থ বাহিনীতে পরিণত কেন হলো সি বিষয়ে প্রশ্ন তুলছেন ভারতীয়রা।
অনেকেই মনে করছেন পুলিশের উর্ধ্বতন ও অধস্তনদের মধ্যে অনাস্থা ও কমান্ড না মানা বড় কারণ।
উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, গতবছর আইনজীবীদের সঙ্গে দিল্লি পুলিশের সংঘর্ষের ঘটনায় দুই পুলিশ কর্মকর্তাকে বরখাস্ত করার নির্দেশ দেন দিল্লি হাইকোর্ট। এতে নিচুতলার কর্মীদের ক্ষোভের মুখে পড়েন পুলিশ কমিশনার।
এ নিয়ে সদর দফতরেই অবস্থান ধর্মঘট শুরু করেন পুলিশ সদস্যরা। এমন বেশ কিছু ঘটনায় পুলিশবাহিনীতে বিচ্ছিন্নতাবোধ বেড়েছে । তাই সংঘর্ষ হচ্ছে দেখেও নিজ থেকে এগিয়ে যাননি কেউই।