চাপের মুখে ইরান

  • আপডেট: ০৫:৪৯:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২০
  • ২৩

অনলােইন ডেস্ক:

ইরানের তেহরানে ইউক্রেনীয় বিমানে ‘অনিচ্ছাকৃত’ হামলার জেরে সব আরোহী নিহত হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত যেমন জটিল, তেমনি ওই ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি সেটার চেয়ে কম জটিল নয়। ঠিক এই মুহূর্তে ইরান যে পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, সেটার দায় খোদ ইরানের ওপর চাপাতে যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এ চাপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও ইরান সরকারের জন্য প্রতিকূল হয়ে উঠেছে।

তেহরান-ওয়াশিংটন দ্বন্দ্বের চরম পর্যায়ে এসে গত ৩ জানুয়ারি ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। সোলাইমানি হত্যার ‘চরম প্রতিশোধ’ নেওয়ার জন্য ইরান গত বুধবার ভোররাতে ইরাকে মার্কিন সেনাদের অবস্থান লক্ষ্য করে প্রায় দুই ডজন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুসারে তাদের কোনো সেনার প্রাণহানি ঘটেনি, উল্টো সেদিন তেহরান থেকে কিয়েভগামী ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কবলে পড়ে এবং ১৭৬ আরোহীর সবাই নিহত হয়।

বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে নাকি হয়নি, এ নিয়ে বাগিবতণ্ডার মধ্যে ইরান স্বীকার করে নেয়, ভুল করে তারা ওই বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু দেশের লোকজন তাতে কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারছে না।

দুর্ঘটনার ব্যাপারে ইরানের আধাসরকারি সংবাদ সংস্থা আইএলএনএকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির মধ্যপন্থী ধর্মীয় নেতা আলী আনসারি বলেন, ‘এটা এক জাতীয় ট্র্যাজেডি। কর্তৃপক্ষ যেভাবে বিষয়টা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং যে ঘোষণা দিয়েছে, তা আরো মর্মান্তিক।’ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রথমে ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে ইউক্রেনের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। পরে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইরান স্বীকার করে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৭৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

প্রথমে সরকার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা অস্বীকার করায় জনগণের প্রতি সরকারের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মিরা সেদাঘাতি নামের একজন বলেন, ‘সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে কোনো আমেরিকানকে যেন হত্যা করা না হয়, অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তারা তা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু তারা বিমানবন্দর বন্ধ করেনি। এতেই বোঝা যায়, ইরানিদের প্রতি সরকার কতটা যত্নবান।’ বলা দরকার, গত বুধবার ইউক্রেনের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতদের মধ্যে ৮২ জন ইরানি ছিল।

ইরান সরকার একদিকে দেশের ভেতর তোপের মুখে রয়েছে, অন্যদিকে তাদের আন্তর্জাতিক চাপ সামলাতে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ ছাড়া ইরানকে বিশ্ব অঙ্গনে একঘরে করার লক্ষ্যে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে, ইরান কমপক্ষে চারটি মার্কিন দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা করেছিল এবং সেসব হামলা ঠেকাতেই সোলাইমানি হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। মার্কিন দূতাবাসে হামলায় ইরানের পরিকল্পনার প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় উপ-অর্থ সম্পাদক হাজীগঞ্জের মাহবুব আলম ২ দিনের রিমান্ডে

চাপের মুখে ইরান

আপডেট: ০৫:৪৯:১৫ পূর্বাহ্ন, রবিবার, ১২ জানুয়ারী ২০২০

অনলােইন ডেস্ক:

ইরানের তেহরানে ইউক্রেনীয় বিমানে ‘অনিচ্ছাকৃত’ হামলার জেরে সব আরোহী নিহত হওয়ার ঘটনার পরিপ্রেক্ষিত যেমন জটিল, তেমনি ওই ঘটনার পরবর্তী পরিস্থিতি সেটার চেয়ে কম জটিল নয়। ঠিক এই মুহূর্তে ইরান যে পরিস্থিতির মধ্যে রয়েছে, সেটার দায় খোদ ইরানের ওপর চাপাতে যুক্তরাষ্ট্র অব্যাহত চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনের এ চাপের মধ্যে অভ্যন্তরীণ পরিস্থিতিও ইরান সরকারের জন্য প্রতিকূল হয়ে উঠেছে।

তেহরান-ওয়াশিংটন দ্বন্দ্বের চরম পর্যায়ে এসে গত ৩ জানুয়ারি ইরানের জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলায় হত্যা করে যুক্তরাষ্ট্র। সোলাইমানি হত্যার ‘চরম প্রতিশোধ’ নেওয়ার জন্য ইরান গত বুধবার ভোররাতে ইরাকে মার্কিন সেনাদের অবস্থান লক্ষ্য করে প্রায় দুই ডজন ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালায়। কিন্তু যুক্তরাষ্ট্রের দাবি অনুসারে তাদের কোনো সেনার প্রাণহানি ঘটেনি, উল্টো সেদিন তেহরান থেকে কিয়েভগামী ইউক্রেন ইন্টারন্যাশনাল এয়ারলাইনসের বোয়িং ৭৩৭-৮০০ বিমানটি ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কবলে পড়ে এবং ১৭৬ আরোহীর সবাই নিহত হয়।

বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা হয়েছে নাকি হয়নি, এ নিয়ে বাগিবতণ্ডার মধ্যে ইরান স্বীকার করে নেয়, ভুল করে তারা ওই বিমানে ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে। ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি ও প্রেসিডেন্ট হাসান রুহানি এ ঘটনায় দুঃখ প্রকাশ করেছেন। কিন্তু দেশের লোকজন তাতে কিছুতেই সন্তুষ্ট হতে পারছে না।

দুর্ঘটনার ব্যাপারে ইরানের আধাসরকারি সংবাদ সংস্থা আইএলএনএকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে দেশটির মধ্যপন্থী ধর্মীয় নেতা আলী আনসারি বলেন, ‘এটা এক জাতীয় ট্র্যাজেডি। কর্তৃপক্ষ যেভাবে বিষয়টা সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে এবং যে ঘোষণা দিয়েছে, তা আরো মর্মান্তিক।’ বিমান বিধ্বস্ত হওয়ার পর প্রথমে ইরানের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়, কারিগরি ত্রুটির কারণে ইউক্রেনের বিমানটি বিধ্বস্ত হয়েছে। পরে যুক্তরাষ্ট্র-কানাডাসহ আন্তর্জাতিক চাপের মুখে ইরান স্বীকার করে, তাদের ক্ষেপণাস্ত্র হামলায় ১৭৬ জনের প্রাণহানি ঘটেছে।

প্রথমে সরকার ক্ষেপণাস্ত্র হামলার কথা অস্বীকার করায় জনগণের প্রতি সরকারের দায়িত্ববোধ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। মিরা সেদাঘাতি নামের একজন বলেন, ‘সোলাইমানি হত্যাকাণ্ডের প্রতিশোধ নিতে গিয়ে কোনো আমেরিকানকে যেন হত্যা করা না হয়, অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে তারা তা নিশ্চিত করেছে। কিন্তু তারা বিমানবন্দর বন্ধ করেনি। এতেই বোঝা যায়, ইরানিদের প্রতি সরকার কতটা যত্নবান।’ বলা দরকার, গত বুধবার ইউক্রেনের বিমান বিধ্বস্ত হয়ে নিহতদের মধ্যে ৮২ জন ইরানি ছিল।

ইরান সরকার একদিকে দেশের ভেতর তোপের মুখে রয়েছে, অন্যদিকে তাদের আন্তর্জাতিক চাপ সামলাতে ব্যতিব্যস্ত থাকতে হচ্ছে। যুক্তরাষ্ট্র এরই মধ্যে ইরানের ওপর নতুন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এ ছাড়া ইরানকে বিশ্ব অঙ্গনে একঘরে করার লক্ষ্যে তারা প্রমাণ করার চেষ্টা চালাচ্ছে, ইরান কমপক্ষে চারটি মার্কিন দূতাবাসে হামলার পরিকল্পনা করেছিল এবং সেসব হামলা ঠেকাতেই সোলাইমানি হত্যাকাণ্ড ঘটানো হয়েছে। মার্কিন দূতাবাসে হামলায় ইরানের পরিকল্পনার প্রমাণ রয়েছে বলেও দাবি করেছেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি।