ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে যেভাবে নিজেদের রক্ষা করেন মার্কিন সেনারা

  • আপডেট: ১০:৫৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২০
  • ১৫

Iraqi Kurds inspect a crater caused by a reportedly Iranian missile initially fired at Iraqi bases housing US and other US-led coalition troops, in the Iraqi Kurdish town of Bardarash in the Dohuk governorate on January 8, 2020. - The missiles targeted the sprawling Ain al-Asad airbase in western Iraq and a base in Arbil, both housing American and other foreign troops deployed as part of a US-led coalition fighting the remnants of the Islamic State group. (Photo by - / AFP)

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ভেবেচিন্তেই ইরাকের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। তেহরানের জন্য যা মুখরক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আবার যুদ্ধের কিনারে গিয়ে ঠেকলেও দুই পক্ষকে সেই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার সুযোগ এনেও দিয়েছে এই হামলা। মধ্যপ্রাচ্য ও ওয়াশিংটনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাতে ওয়াশিংটন পোস্ট এমন দাবি করেছে।

গত সপ্তাহে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রতিশোধের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, মঙ্গলবার বিকালে তারা জানতে পারেন– ইরাকের মার্কিন স্থাপনায় হামলা করতে যাচ্ছে ইরান। কিন্তু কোন কোন স্থাপনা তারা লক্ষ্যবস্তু বানাবেন, তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। তারা জানান, গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রথম হুশিয়ারিগুলো আসে। এছাড়া ইরাকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও জানা যায় যে ইরান হামলা চালাতে ইচ্ছুক।

স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্য ও কূটনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা জানতাম, ইরাকিরা আমাদের বলেছেন– এই তথ্য কয়েক ঘণ্টা আগেই আসছিল।

প্রাণহানি এড়াতে ইরাকিদেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে যে দাবি করা হয়, অন্যরা এসব গুরুত্বহীন বলে দাবি করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যদি ইরাকিরা সতর্কবার্তা দিতেন, তবে এটা নিশ্চিতভাবে কয়েক ঘণ্টা আগে হওয়ার কথা না।

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে পূর্বাভাস দিতে পেন্টাগনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা একটি কক্ষ জড়ো হন। এরপরেই জানতে পারেন, হামলা আসছে।

এক কর্মকর্তা বলেন, আক্ষরিক অর্থে এটা হামলার আগেই। মার্কিন সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক এ. মিল্লি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক টি. এসপার।

হামলা আসছে– এই তথ্য পাওয়ায় মার্ক এসপার বৈঠক থেকে উঠে চলে যান। এক জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সেখানে ব্যাপক উদ্বেগ ছিল। আগাম প্রতিবেদনে কোনো হতাহতের কথা বলা হয়নি। কাজেই প্রথম দফা শেষে কিছুটা আশাবাদ দেখা গেছে।

আগাম তথ্যে মার্কিন বাহিনীকে নিরাপদ সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় পেয়েছিলেন কমান্ডাররা। সামরিক কর্মকর্তাদের তথ্যানুসারে, সুরক্ষা পোশাক পরে সেনাদের বাংকারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছিল। হামলার পরেও বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে তারা সেই স্থানে ছিলেন।

এক কর্মকর্তা বললেন, হামলার আগে অনেকে আল-আসাদ বিমান ঘাঁটি ছেড়ে পশ্চিম ইরাকে চলে যান। উত্তর ইরাকের ইরবিলে একটি সামরিক ঘাঁটির পাশাপাশি আল-আসাদে হামলা চালানো হয়েছে।

এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মতে, তারা কপাল গুণে বেঁচে গেছেন, বিষয়টা এমন না। ভাগ্য সবসময় একটা ভূমিকা রাখে। কিন্তু স্থলের সামরিক কমান্ডাররা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ভালো সাড়া দিয়েছেন।

বুধবার সকালে হোয়াইট হাউস থেকে এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, জীবন না খোয়ানোর জন্য আগাম সতর্ক ব্যবস্থাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরবর্তী সময়ে এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বললেন, সেনাবাহিনীর রাডার নেটওয়ার্কের কথা উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট। এই ব্যবস্থায় শত্রুদের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্রের খোঁজ বের করে দেয়।

অন্তত দুটি গোয়েন্দা সূত্র যুক্তরাষ্ট্রকে হামলা থেকে আত্মরক্ষার প্রস্তুতির সুযোগ করে দেয়। প্রথমত, সেখানে একটা আভাস ছিল যে ইরাকে লক্ষ্যবস্তুতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। কিন্তু কীভাবে সেই আভাস এসেছে, কোনো ব্যক্তি নাকি আড়িপাতার প্রযুক্তির মাধ্যমে, তা পরিষ্কার হওয়া সম্ভব হয়নি।

এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, হামলার আগে পরিষ্কারভাবেই আভাস পেয়েছিল মার্কিন সেনাবাহিনী। সামরিক কর্মকর্তারা বিবেচনা করে দেখেছেন, সোলামানির জানাজা শেষ হতেই যে কোনো ধরনের প্রতিশোধের চেষ্টা চালাবে ইরান।

এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ইরান থেকে প্রতিশোধ আসবে এটা পেন্টাগনের প্রত্যাশিতই ছিল। এটাই ছিল আসল ঘটনা। কিন্তু আমরা কিছুটা প্রতিক্রিয়ারও প্রত্যাশায় ছিলাম।

প্রকৌশল মাধ্যম থেকে দ্বিতীয় হুশিয়ারি আসার কথা জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। মার্কিন সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা দিয়ে শত্রুদের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরেই তা শনাক্ত করা সম্ভব। হামলা হওয়ার পরপরেই মিত্রদের সতর্ক করে দেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

পেন্টাগনে সাংবাদিকদের এসপার বলেন, ইরান সর্বমোট ১৬টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এরমধ্যে ১১টি আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে গিয়ে পড়েছে।

ইরবিলেও একটি আঘাত হেনেছে বলে তিনি জানান। তবে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সেটি মার্কিন কনস্যুলেট ও একটি স্থাপনার মাঝের খালি জায়গায় গিয়ে পড়েছে।

তবে বাকি চারটি ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টি সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।

সোলাইমানিকে হত্যার পূর্ব সতর্কতা হিসেবে, ফোর্ট ব্রাগের ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের সাড়ে চার হাজার সেনার একটি ব্রিগেড মোতায়েন করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে কিছু বাহিনীকে রদবদল করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান ম্যারিন জেনারেল কেনিথ এফ. ম্যাককেনজি সেখানকার কমান্ডারদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের ছোট ঘাঁটি থেকে কিছু সেনাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে তাদের ওপর আঘাত হানা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করতে অস্ত্র ও লোকজনকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছিল।

এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, কম সুরক্ষিত এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার এবং তারা যাতে অতিসুরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় নিতে পারেন, সেটা সহজ করে দেয়া হয়েছে।

সোলাইমানিকে হত্যার পর এভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিন্যাস করা হয়। তিনি বলেন, একই সময়ে একটি একক লক্ষ্যবস্তুতে খুব বেশি লোক যাতে জড়ো না হন, সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা মঙ্গলবার বিকাল চারটা থেকেই সম্ভাব্য ইরানি হামলার সতর্কবার্তা দিতে থাকেন রিপোর্টারদের। এর ঘণ্টাখানেক পরেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের তখন টেলিভিশনে একটি সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা ছিল, তিনি সেই অনুষ্ঠান বাতিল করেন।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, দুটি সুনির্দিষ্ট ঘাঁটিতে হামলার প্রকৃত প্রভাব না পড়া পর্যন্ত কোন ঘাঁটি আক্রান্ত হয়েছে, পেন্টাগন কর্মকর্তারা তা বলতে পারেননি। একঘণ্টা ধরে এই হামলা চলে। ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম আঘাত থেকে শেষটির মধ্য সময়ের ব্যবধান ছিল এক ঘণ্টা (আল জাজিরা)

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ঋণের কথা বলে শাহবাগে সমাবেশের ডাক, অহিংস গণঅভ্যুত্থান বাংলাদেশের আহ্বায়ক মোস্তফা আটক

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা থেকে যেভাবে নিজেদের রক্ষা করেন মার্কিন সেনারা

আপডেট: ১০:৫৯:৪৪ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৯ জানুয়ারী ২০২০

আন্তর্জাতিক ডেস্ক:

বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে ভেবেচিন্তেই ইরাকের মার্কিন সামরিক ঘাঁটিতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান। তেহরানের জন্য যা মুখরক্ষার পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে। আবার যুদ্ধের কিনারে গিয়ে ঠেকলেও দুই পক্ষকে সেই পরিস্থিতি থেকে বের হওয়ার সুযোগ এনেও দিয়েছে এই হামলা। মধ্যপ্রাচ্য ও ওয়াশিংটনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তাদের বরাতে ওয়াশিংটন পোস্ট এমন দাবি করেছে।

গত সপ্তাহে ইরানের শীর্ষ জেনারেল কাসেম সোলাইমানিকে ড্রোন হামলা চালিয়ে হত্যার পর মঙ্গলবার সকাল থেকেই প্রতিশোধের মুখোমুখি হওয়ার জন্য প্রস্তুত ছিলেন হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা।

মার্কিন কর্মকর্তারা বলেন, মঙ্গলবার বিকালে তারা জানতে পারেন– ইরাকের মার্কিন স্থাপনায় হামলা করতে যাচ্ছে ইরান। কিন্তু কোন কোন স্থাপনা তারা লক্ষ্যবস্তু বানাবেন, তাৎক্ষণিকভাবে পরিষ্কার হওয়া যায়নি। তারা জানান, গোয়েন্দা সূত্র থেকে প্রথম হুশিয়ারিগুলো আসে। এছাড়া ইরাকের সঙ্গে যোগাযোগ করেও জানা যায় যে ইরান হামলা চালাতে ইচ্ছুক।

স্পর্শকাতর গোয়েন্দা তথ্য ও কূটনৈতিক যোগাযোগ নিয়ে আলোচনার ক্ষেত্রে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, আমরা জানতাম, ইরাকিরা আমাদের বলেছেন– এই তথ্য কয়েক ঘণ্টা আগেই আসছিল।

প্রাণহানি এড়াতে ইরাকিদেরও একটা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বলে যে দাবি করা হয়, অন্যরা এসব গুরুত্বহীন বলে দাবি করেছেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তা বলেন, যদি ইরাকিরা সতর্কবার্তা দিতেন, তবে এটা নিশ্চিতভাবে কয়েক ঘণ্টা আগে হওয়ার কথা না।

ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র হামলা নিয়ে পূর্বাভাস দিতে পেন্টাগনের জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা একটি কক্ষ জড়ো হন। এরপরেই জানতে পারেন, হামলা আসছে।

এক কর্মকর্তা বলেন, আক্ষরিক অর্থে এটা হামলার আগেই। মার্কিন সেনাপ্রধান জেনারেল মার্ক এ. মিল্লি ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র বেসামরিক কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের আয়োজন করেন প্রতিরক্ষামন্ত্রী মার্ক টি. এসপার।

হামলা আসছে– এই তথ্য পাওয়ায় মার্ক এসপার বৈঠক থেকে উঠে চলে যান। এক জ্যেষ্ঠ প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, সেখানে ব্যাপক উদ্বেগ ছিল। আগাম প্রতিবেদনে কোনো হতাহতের কথা বলা হয়নি। কাজেই প্রথম দফা শেষে কিছুটা আশাবাদ দেখা গেছে।

আগাম তথ্যে মার্কিন বাহিনীকে নিরাপদ সুরক্ষিত স্থানে নিয়ে যাওয়ার সময় পেয়েছিলেন কমান্ডাররা। সামরিক কর্মকর্তাদের তথ্যানুসারে, সুরক্ষা পোশাক পরে সেনাদের বাংকারে আশ্রয় নিতে বলা হয়েছিল। হামলার পরেও বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে তারা সেই স্থানে ছিলেন।

এক কর্মকর্তা বললেন, হামলার আগে অনেকে আল-আসাদ বিমান ঘাঁটি ছেড়ে পশ্চিম ইরাকে চলে যান। উত্তর ইরাকের ইরবিলে একটি সামরিক ঘাঁটির পাশাপাশি আল-আসাদে হামলা চালানো হয়েছে।

এক জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার মতে, তারা কপাল গুণে বেঁচে গেছেন, বিষয়টা এমন না। ভাগ্য সবসময় একটা ভূমিকা রাখে। কিন্তু স্থলের সামরিক কমান্ডাররা ভালো সিদ্ধান্ত নিয়েছেন, ভালো সাড়া দিয়েছেন।

বুধবার সকালে হোয়াইট হাউস থেকে এক ঘোষণায় বলা হয়েছে, জীবন না খোয়ানোর জন্য আগাম সতর্ক ব্যবস্থাকে কৃতিত্ব দিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। পরবর্তী সময়ে এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বললেন, সেনাবাহিনীর রাডার নেটওয়ার্কের কথা উল্লেখ করেছেন প্রেসিডেন্ট। এই ব্যবস্থায় শত্রুদের সম্ভাব্য ক্ষেপণাস্ত্রের খোঁজ বের করে দেয়।

অন্তত দুটি গোয়েন্দা সূত্র যুক্তরাষ্ট্রকে হামলা থেকে আত্মরক্ষার প্রস্তুতির সুযোগ করে দেয়। প্রথমত, সেখানে একটা আভাস ছিল যে ইরাকে লক্ষ্যবস্তুতে হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছে ইরান। কিন্তু কীভাবে সেই আভাস এসেছে, কোনো ব্যক্তি নাকি আড়িপাতার প্রযুক্তির মাধ্যমে, তা পরিষ্কার হওয়া সম্ভব হয়নি।

এক প্রতিরক্ষা কর্মকর্তা বলেন, হামলার আগে পরিষ্কারভাবেই আভাস পেয়েছিল মার্কিন সেনাবাহিনী। সামরিক কর্মকর্তারা বিবেচনা করে দেখেছেন, সোলামানির জানাজা শেষ হতেই যে কোনো ধরনের প্রতিশোধের চেষ্টা চালাবে ইরান।

এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন সামরিক কর্মকর্তা বলেন, ইরান থেকে প্রতিশোধ আসবে এটা পেন্টাগনের প্রত্যাশিতই ছিল। এটাই ছিল আসল ঘটনা। কিন্তু আমরা কিছুটা প্রতিক্রিয়ারও প্রত্যাশায় ছিলাম।

প্রকৌশল মাধ্যম থেকে দ্বিতীয় হুশিয়ারি আসার কথা জানিয়েছেন এক কর্মকর্তা। মার্কিন সামরিক বাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্র আছে, যা দিয়ে শত্রুদের ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়ার পরেই তা শনাক্ত করা সম্ভব। হামলা হওয়ার পরপরেই মিত্রদের সতর্ক করে দেন মার্কিন কর্মকর্তারা।

পেন্টাগনে সাংবাদিকদের এসপার বলেন, ইরান সর্বমোট ১৬টি দূরপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র নিক্ষেপ করেছে। এরমধ্যে ১১টি আল-আসাদ বিমান ঘাঁটিতে গিয়ে পড়েছে।

ইরবিলেও একটি আঘাত হেনেছে বলে তিনি জানান। তবে স্থানীয় এক বাসিন্দা বলেন, সেটি মার্কিন কনস্যুলেট ও একটি স্থাপনার মাঝের খালি জায়গায় গিয়ে পড়েছে।

তবে বাকি চারটি ক্ষেপণাস্ত্রের বিষয়টি সম্পর্কে কোনো তথ্য জানা সম্ভব হয়নি।

সোলাইমানিকে হত্যার পূর্ব সতর্কতা হিসেবে, ফোর্ট ব্রাগের ৮২তম এয়ারবোর্ন ডিভিশনের সাড়ে চার হাজার সেনার একটি ব্রিগেড মোতায়েন করেছেন মার্কিন কর্মকর্তারা। মধ্যপ্রাচ্যের মধ্যে কিছু বাহিনীকে রদবদল করা হয়েছে বলেও জানা গেছে।

মার্কিন সেন্ট্রাল কমান্ডের প্রধান ম্যারিন জেনারেল কেনিথ এফ. ম্যাককেনজি সেখানকার কমান্ডারদের দেখাশোনার দায়িত্বে ছিলেন। মধ্যপ্রাচ্যের ছোট ঘাঁটি থেকে কিছু সেনাকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। যাতে তাদের ওপর আঘাত হানা কঠিন হয়ে দাঁড়ায়, তা নিশ্চিত করতে অস্ত্র ও লোকজনকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে রাখা হয়েছিল।

এক জ্যেষ্ঠ মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, কম সুরক্ষিত এলাকা থেকে লোকজনকে সরে যাওয়ার এবং তারা যাতে অতিসুরক্ষিত এলাকায় আশ্রয় নিতে পারেন, সেটা সহজ করে দেয়া হয়েছে।

সোলাইমানিকে হত্যার পর এভাবেই নিরাপত্তা ব্যবস্থাকে বিন্যাস করা হয়। তিনি বলেন, একই সময়ে একটি একক লক্ষ্যবস্তুতে খুব বেশি লোক যাতে জড়ো না হন, সেই ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে।

মার্কিন কর্মকর্তারা মঙ্গলবার বিকাল চারটা থেকেই সম্ভাব্য ইরানি হামলার সতর্কবার্তা দিতে থাকেন রিপোর্টারদের। এর ঘণ্টাখানেক পরেই হামলার ঘটনা ঘটেছে। ভাইস প্রেসিডেন্ট মাইক পেন্সের তখন টেলিভিশনে একটি সাক্ষাতকার অনুষ্ঠানে যোগ দেয়ার কথা ছিল, তিনি সেই অনুষ্ঠান বাতিল করেন।

এক মার্কিন কর্মকর্তা বলেন, দুটি সুনির্দিষ্ট ঘাঁটিতে হামলার প্রকৃত প্রভাব না পড়া পর্যন্ত কোন ঘাঁটি আক্রান্ত হয়েছে, পেন্টাগন কর্মকর্তারা তা বলতে পারেননি। একঘণ্টা ধরে এই হামলা চলে। ক্ষেপণাস্ত্রের প্রথম আঘাত থেকে শেষটির মধ্য সময়ের ব্যবধান ছিল এক ঘণ্টা (আল জাজিরা)