হাজীগঞ্জে আহমেদাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, ব্যহত হচ্ছে পাঠদান

  • আপডেট: ০২:৩২:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯
  • ৩৪

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্:
হাজীগঞ্ জে১৩নং আহমেদাবাদ লুৎফুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে পাঠদান মারাত্মক ব্যহত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা একদিকে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে তারা অমনোযোগি হয়ে পড়ছে। অপর দিকে একজন শিক্ষক অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্লান্তিতে ভুগছেন। মাঝে মধ্যে প্যারা শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা হলেও, অর্থের অভাবে তাও বন্ধ রয়েছে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান।
বিদ্যালয়টি উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড রামরা (আহমেদাবাদ) গ্রামে অবস্থিত। যা স্থানীয়ভাবে রামরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়টি চালু হওয়ার পর ১৯৯২ খিস্ট্রাব্দে চারকক্ষ বিশিষ্ট একতলা টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে একটিতে অফিস এবং অপর তিনটি কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে আরেকটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৫জনের পদ রয়েছে। এর মধ্যে একটি পদ শূণ্য এবং একজন শিক্ষক ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। এতে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এ শিক্ষক সংকট থাকায় একজন শিক্ষককে একাধিক অতিরিক্ত ক্লাশ নিতে হয়। এতে শিক্ষকেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং শিক্ষার্থীরাও অমনোযোগি হয়ে পড়ে।
বিদ্যালয়টিতে ২০১জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে (শিশু শ্রেণি) ২৯ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৩৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৪ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৫ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এই ২০১ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন মাত্র তিনজন শিক্ষক।
অভিযোগ করে অভিভাবকেরা বলেন, শিক্ষকের অভাবে যথাযথ পাঠদান হচ্ছেনা বিদ্যালয়ে। তাই মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের সন্তানেরা। তাই বিদ্যালয়ে দ্রুত শিক্ষকের ব্যবস্থা করার আহবান জানান তারা। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র ও নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তান। যার ফলে বাধ্য হয়েই এই বিদ্যালয়ে সন্তানদের পড়ালেখা করাতে হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হাদী বলেন, বিদ্যালয়টিতে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী আছে এবং মাননীয় সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এখানে নতুন একটি ভবন (একাডেমিক ভবন) দিয়েছেন। যার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই বিদ্যালয়ে অন্তত একজন শিক্ষক হলেও দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
পাঠদান ব্যহৃতের বিষয়টি স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদ হাছান মোস্তফা বলেন, আমিসহ তিনজন শিক্ষক রয়েছি। মাঝে মধ্যে দাপ্তরিক কাজে আমি বা আমার শিক্ষকেরা অন্যত্র গেলে পাঠদানের সমস্যা হয়। এ বিষয়ে ক্লাষ্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।
ক্লাষ্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আফতাবুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে ৫জন শিক্ষকদের পদ রয়েছে। এর মধ্যে একটি পদ শূণ্য এবং কর্মরত একজন ট্রেনিং আছে। তিনি জানুয়ারী মাসে যোগ দিবেন। তাছাড়া রাজারগাঁও ক্লাস্টারে বেশ কয়েকটি শূণ্য পদ থাকায় ডেপুটিশনের ব্যবস্থা করা যাচ্ছেনা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চ.দা.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল সরকারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে উপজেলার সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষক শূণ্য পদের তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। আশাকরি শিঘ্রই শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

বিএনপির জাতীয় নির্বাহী কমিটি সদস্য মোতাহার হোসেন পাটোয়ারী’র সামাজিক ও ধর্মীয় অনুষ্ঠানে ব্যাপক জনসমাগম

হাজীগঞ্জে আহমেদাবাদ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকট, ব্যহত হচ্ছে পাঠদান

আপডেট: ০২:৩২:১৩ পূর্বাহ্ন, মঙ্গলবার, ৩ ডিসেম্বর ২০১৯

মোহাম্মদ হাবীব উল্যাহ্:
হাজীগঞ্ জে১৩নং আহমেদাবাদ লুৎফুন্নেছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষক সংকটে পাঠদান মারাত্মক ব্যহত হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীরা একদিকে মানসম্মত শিক্ষা অর্জন থেকে বঞ্চিত হচ্ছে, অন্যদিকে তারা অমনোযোগি হয়ে পড়ছে। অপর দিকে একজন শিক্ষক অতিরিক্ত ক্লাস নিয়ে ক্লান্তিতে ভুগছেন। মাঝে মধ্যে প্যারা শিক্ষক দিয়ে পাঠদান করা হলেও, অর্থের অভাবে তাও বন্ধ রয়েছে বলে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জানান।
বিদ্যালয়টি উপজেলার রাজারগাঁও ইউনিয়নের ২নং ওয়ার্ড রামরা (আহমেদাবাদ) গ্রামে অবস্থিত। যা স্থানীয়ভাবে রামরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় নামে পরিচিত। ১৯৮০ খ্রিস্টাব্দে বিদ্যালয়টি চালু হওয়ার পর ১৯৯২ খিস্ট্রাব্দে চারকক্ষ বিশিষ্ট একতলা টিনশেড ভবন নির্মাণ করা হয়। এর মধ্যে একটিতে অফিস এবং অপর তিনটি কক্ষে শ্রেণি কার্যক্রম চলছে। বর্তমানে বিদ্যালয়ে আরেকটি একাডেমিক ভবন নির্মাণের কাজ চলমান রয়েছে।
জানা গেছে, বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষকসহ ৫জনের পদ রয়েছে। এর মধ্যে একটি পদ শূণ্য এবং একজন শিক্ষক ট্রেনিংয়ে রয়েছেন। এতে বিদ্যালয়টিতে শিক্ষক সংকট দেখা দেয়। দীর্ঘদিন ধরে এ শিক্ষক সংকট থাকায় একজন শিক্ষককে একাধিক অতিরিক্ত ক্লাশ নিতে হয়। এতে শিক্ষকেরা ক্লান্ত হয়ে পড়েন এবং শিক্ষার্থীরাও অমনোযোগি হয়ে পড়ে।
বিদ্যালয়টিতে ২০১জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে প্রাক-প্রাথমিকে (শিশু শ্রেণি) ২৯ জন, প্রথম শ্রেণিতে ৩৫ জন, দ্বিতীয় শ্রেণিতে ৩৪ জন, তৃতীয় শ্রেণিতে ৩৫ জন ও পঞ্চম শ্রেণিতে ৩৮ জন শিক্ষার্থী রয়েছে। এর মধ্যে পঞ্চম শ্রেণির শিক্ষার্থীরা সমাপনী পরীক্ষায় অংশ নিয়েছে। এই ২০১ জন শিক্ষার্থীকে পাঠদান করাচ্ছেন মাত্র তিনজন শিক্ষক।
অভিযোগ করে অভিভাবকেরা বলেন, শিক্ষকের অভাবে যথাযথ পাঠদান হচ্ছেনা বিদ্যালয়ে। তাই মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে তাদের সন্তানেরা। তাই বিদ্যালয়ে দ্রুত শিক্ষকের ব্যবস্থা করার আহবান জানান তারা। কয়েকজন অভিভাবক বলেন, বিদ্যালয়ের বেশিরভাগ শিক্ষার্থীই দরিদ্র ও নিন্মবিত্ত পরিবারের সন্তান। যার ফলে বাধ্য হয়েই এই বিদ্যালয়ে সন্তানদের পড়ালেখা করাতে হয়।
স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান আলহাজ্ব আব্দুল হাদী বলেন, বিদ্যালয়টিতে পর্যাপ্ত শিক্ষার্থী আছে এবং মাননীয় সংসদ সদস্য মেজর অব. রফিকুল ইসলাম বীরউত্তম এখানে নতুন একটি ভবন (একাডেমিক ভবন) দিয়েছেন। যার নির্মাণ কাজ চলমান রয়েছে। কিন্তু প্রয়োজনীয় শিক্ষকের অভাবে এই এলাকার শিক্ষার্থীরা মানসম্মত শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। তাই বিদ্যালয়ে অন্তত একজন শিক্ষক হলেও দেয়ার অনুরোধ জানান তিনি।
পাঠদান ব্যহৃতের বিষয়টি স্বীকার করে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাহমুদ হাছান মোস্তফা বলেন, আমিসহ তিনজন শিক্ষক রয়েছি। মাঝে মধ্যে দাপ্তরিক কাজে আমি বা আমার শিক্ষকেরা অন্যত্র গেলে পাঠদানের সমস্যা হয়। এ বিষয়ে ক্লাষ্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তাকে অবহিত করেছি।
ক্লাষ্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও উপজেলা প্রাথমিক সহকারি শিক্ষা কর্মকর্তা মো. আফতাবুল ইসলাম বলেন, বিদ্যালয়ে ৫জন শিক্ষকদের পদ রয়েছে। এর মধ্যে একটি পদ শূণ্য এবং কর্মরত একজন ট্রেনিং আছে। তিনি জানুয়ারী মাসে যোগ দিবেন। তাছাড়া রাজারগাঁও ক্লাস্টারে বেশ কয়েকটি শূণ্য পদ থাকায় ডেপুটিশনের ব্যবস্থা করা যাচ্ছেনা।
উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা (চ.দা.) মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম বুলবুল সরকারের সাথে মুঠোফোনে কথা হলে তিনি বলেন, বিষয়টি জেনে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। ইতিমধ্যে উপজেলার সকল বিদ্যালয়ের শিক্ষক শূণ্য পদের তালিকা উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে প্রেরণ করা হয়েছে। আশাকরি শিঘ্রই শিক্ষক নিয়োগ করা হবে।