চাঁদপুরের মধ্য আশিকাটি সপ্রাবি’র সম্পত্তি রক্ষায় শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ

  • আপডেট: ০৫:২৩:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০১৯
  • ২৬

শরীফুল ইসলাম॥

চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের ১৪৮নং মধ্য আশিকাটি সরকারি বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি স্থানীয় ভূমি জবরদখলকারীর হাত থেকে রক্ষার্থে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রায় দেড় ঘন্টা অবরোধের পরে চাঁদপুরে সদর উপজেলা প্রশাসন ও মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধের কারনে সড়কে দীর্ঘ লাইনে শত শত যানবাহন আটক পড়ে এবং যাত্রীরা চরম দূর্ভোগের শিকার হয়।

বুধবার (৬ নভেম্বর) ১২টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সম্পত্তি জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান সড়ক মুখোরিত করে তুলে। এই সময় উৎসুক জনতা ও আটকে পড়া যানবাহনের যাত্রী এসে ঘটনাস্থলে জড়ো হয়।

এই ঘটনার খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা, জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিম উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিভাবকদের সমস্যার কথা শুনেন এবং বৃহস্পতিবার বিষয়টি সমাধানের আশ^াস দিলে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেন। পরে পুলিশ ও স্থানীয় জনতা সড়কে থাকা গাছের গুড়ি সরিয়ে দেয় এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফা বেগম জানান, বিদ্যালয়ের সম্পতির বিএস খতিয়ান অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি এবং বিষয়টি আইনীভাবে সমাধানের লক্ষ্যে চাঁদপুর ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইবুন্যালে মামলা চলমান রয়েছে। তারপরেও স্থানীয় সংঘবদ্ধ ভূমি দখলকারী লোকজন বিদ্যালয়ের অবকাঠামগত উন্নয়ন কাজ শুরু করার জন্য আসলে বাধা প্রদান করে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদন থেকে জানাগেছে, ১৪৮নং মধ্য আশিকাটি সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি ও জেলা প্রশাসকের নামে প্রথমে ১৯৭৪ সালে ১৮ জুলাই ৫৪৬৬ নং রেজিষ্ট্রিকৃত দানপত্র দলিল মুলে মোট ৩৩ শতাংশ এবং ১৯৯৩ সালের ১৪ আগষ্ট ৩৮০৬ ও ৩৮০৭নং দলিল দুই শতাংশ একুনে মোট ৩৫ শতাংশ ভূমি রেজিষ্ট্র সম্পন্ন হয়। কিন্তু উল্লেকিত সম্পত্তি সরকারের নামে হওয়া সত্ত্বেও বিএস খতিয়ান অন্তর্ভূক্ত হয়নি। যার অনুকুলে চাঁদপুর জেলা জজ আদালতের ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইবুন্যালে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে মোকদ্দমা দায়ের করা হয়। মামলা নং-৩৯৪৩/২০১৪।

অবরোধ সর্ম্পকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুন্না, শান্ত, মাহি, ইভা ও প্রিয়া বলেন, বিদ্যালয়টি ঝরাঝীর্ণ হওয়ার কারণে ভবন ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে গত ৪ মাস যাবৎ বিদ্যালয়ের পাশের ফুল মিয়া নামক ব্যাক্তির ভবনের ২য় তলায় তারা পাঠদান গ্রহন করে। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের চক্রান্তের কারণে ওই ব্যাক্তি তার বাড়ীতে তালাবদ্ধ করে দেয়। বিষয়টি সমাধানের জন্য সরকারি প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য সড়ক অবরোধ করে।
অভিভাবক সাজ্জাদ হোসেন ও মো. নাজির গাজী বলেন, কয়েকদিন পরেই তাদের সন্তানদের পঞ্চম শ্রেনীর সমাপনী পরীক্ষা। এমতাবস্থায় শ্রেনী কক্ষ নিয়ে টানাটানি করতে গিয়ে তাদের পড়া-খেলার চরম ক্ষতি হচ্ছে। যার কারণে সন্তানদের সাথে আমরা সড়কে অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি। আমরা চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুমাইয়া আক্তার সুমি, রুনু আক্তার, পারভীন আক্তার, তাহমিনা আক্তার জানান, বিদ্যালয়ের সম্পত্তি নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন মাষ্টারের নেতৃত্বে ইউপি সদস্য দুলাল মালসহ একাধিকবার শালিশ বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠক থেকে জানানো হয় বিদ্যালয়কে ৩৫ শতাংশের মধ্য থেকে ১০শতাংশ দেয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে সম্পত্তি মাপার পরে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের কাছে জানতে চাইলে তারা কোন সমাধান না দিয়ে কেটে পড়ে।
সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছে জেনে ঘটনাস্থলে এসেছি। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে আলোচনা করে একটি জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিম উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের অবরোধের সংবাদ পেয়ে প্রথমে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে দীর্ঘ সময় অবরোধ থাকায় আমি নিজেই ঘটনাস্থলে আসি এবং স্থানীয়দের সহায়তা যান চলাচল স্বাভাবিক করি।
চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান বলেন, ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি জানতে পেরেছি। আপাতত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে। বৃহস্পতিবার আলোচনা করে এবং পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।

তারিখ: ০৬.১১.২০১৯খ্রি.

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া হবে না-রিজভী

চাঁদপুরের মধ্য আশিকাটি সপ্রাবি’র সম্পত্তি রক্ষায় শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ

আপডেট: ০৫:২৩:২৮ অপরাহ্ন, বুধবার, ৬ নভেম্বর ২০১৯

শরীফুল ইসলাম॥

চাঁদপুর সদর উপজেলার আশিকাটি ইউনিয়নের ১৪৮নং মধ্য আশিকাটি সরকারি বিদ্যালয়ের নিজস্ব সম্পত্তি স্থানীয় ভূমি জবরদখলকারীর হাত থেকে রক্ষার্থে চাঁদপুর-কুমিল্লা আঞ্চলিক মহাসড়ক অবরোধ করে রাখে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও অভিভাবকরা। প্রায় দেড় ঘন্টা অবরোধের পরে চাঁদপুরে সদর উপজেলা প্রশাসন ও মডেল থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে। গাছের গুড়ি ফেলে অবরোধের কারনে সড়কে দীর্ঘ লাইনে শত শত যানবাহন আটক পড়ে এবং যাত্রীরা চরম দূর্ভোগের শিকার হয়।

বুধবার (৬ নভেম্বর) ১২টা থেকে দুপুর দেড়টা পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা সম্পত্তি জবরদখলকারীদের বিরুদ্ধে স্লোগান সড়ক মুখোরিত করে তুলে। এই সময় উৎসুক জনতা ও আটকে পড়া যানবাহনের যাত্রী এসে ঘটনাস্থলে জড়ো হয়।

এই ঘটনার খবর পেয়ে চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান, সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা, জেলা সহকারী প্রাথমিক শিক্ষা অফিসার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ ও চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিম উদ্দিন সঙ্গীয় ফোর্স নিয়ে ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন। তারা বিদ্যালয়ের শিক্ষক অভিভাবকদের সমস্যার কথা শুনেন এবং বৃহস্পতিবার বিষয়টি সমাধানের আশ^াস দিলে শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ তুলে নেন। পরে পুলিশ ও স্থানীয় জনতা সড়কে থাকা গাছের গুড়ি সরিয়ে দেয় এবং যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক করে।

বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক লুৎফা বেগম জানান, বিদ্যালয়ের সম্পতির বিএস খতিয়ান অন্তর্ভূক্ত না হওয়ার বিষয়ে জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে আবেদন করেছি এবং বিষয়টি আইনীভাবে সমাধানের লক্ষ্যে চাঁদপুর ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইবুন্যালে মামলা চলমান রয়েছে। তারপরেও স্থানীয় সংঘবদ্ধ ভূমি দখলকারী লোকজন বিদ্যালয়ের অবকাঠামগত উন্নয়ন কাজ শুরু করার জন্য আসলে বাধা প্রদান করে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের করা আবেদন থেকে জানাগেছে, ১৪৮নং মধ্য আশিকাটি সরকারি বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের রাষ্ট্রপতি ও জেলা প্রশাসকের নামে প্রথমে ১৯৭৪ সালে ১৮ জুলাই ৫৪৬৬ নং রেজিষ্ট্রিকৃত দানপত্র দলিল মুলে মোট ৩৩ শতাংশ এবং ১৯৯৩ সালের ১৪ আগষ্ট ৩৮০৬ ও ৩৮০৭নং দলিল দুই শতাংশ একুনে মোট ৩৫ শতাংশ ভূমি রেজিষ্ট্র সম্পন্ন হয়। কিন্তু উল্লেকিত সম্পত্তি সরকারের নামে হওয়া সত্ত্বেও বিএস খতিয়ান অন্তর্ভূক্ত হয়নি। যার অনুকুলে চাঁদপুর জেলা জজ আদালতের ল্যান্ডসার্ভে ট্রাইবুন্যালে বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদের পক্ষ থেকে মোকদ্দমা দায়ের করা হয়। মামলা নং-৩৯৪৩/২০১৪।

অবরোধ সর্ম্পকে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মুন্না, শান্ত, মাহি, ইভা ও প্রিয়া বলেন, বিদ্যালয়টি ঝরাঝীর্ণ হওয়ার কারণে ভবন ভেঙে ফেলা হয়। এরপর থেকে গত ৪ মাস যাবৎ বিদ্যালয়ের পাশের ফুল মিয়া নামক ব্যাক্তির ভবনের ২য় তলায় তারা পাঠদান গ্রহন করে। কিন্তু স্থানীয় লোকজনের চক্রান্তের কারণে ওই ব্যাক্তি তার বাড়ীতে তালাবদ্ধ করে দেয়। বিষয়টি সমাধানের জন্য সরকারি প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করার জন্য সড়ক অবরোধ করে।
অভিভাবক সাজ্জাদ হোসেন ও মো. নাজির গাজী বলেন, কয়েকদিন পরেই তাদের সন্তানদের পঞ্চম শ্রেনীর সমাপনী পরীক্ষা। এমতাবস্থায় শ্রেনী কক্ষ নিয়ে টানাটানি করতে গিয়ে তাদের পড়া-খেলার চরম ক্ষতি হচ্ছে। যার কারণে সন্তানদের সাথে আমরা সড়কে অবরোধ করতে বাধ্য হয়েছি। আমরা চাই সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বিষয়টি সমাধানের জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিবেন।

বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা সুমাইয়া আক্তার সুমি, রুনু আক্তার, পারভীন আক্তার, তাহমিনা আক্তার জানান, বিদ্যালয়ের সম্পত্তি নিয়ে সমস্যা দেখা দিলে ইউপি চেয়ারম্যান বিল্লাল হোসেন মাষ্টারের নেতৃত্বে ইউপি সদস্য দুলাল মালসহ একাধিকবার শালিশ বৈঠক হয়। কিন্তু বৈঠক থেকে জানানো হয় বিদ্যালয়কে ৩৫ শতাংশের মধ্য থেকে ১০শতাংশ দেয়া হবে। কিন্তু পরবর্তীতে সম্পত্তি মাপার পরে চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্যের কাছে জানতে চাইলে তারা কোন সমাধান না দিয়ে কেটে পড়ে।
সহকারী জেলা শিক্ষা অফিসার ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করেছে জেনে ঘটনাস্থলে এসেছি। বৃহস্পতিবার এই বিষয়ে আলোচনা করে একটি জরুরি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
চাঁদপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. নাসিম উদ্দিন বলেন, শিক্ষার্থীদের অবরোধের সংবাদ পেয়ে প্রথমে পুলিশ পাঠানো হয়। পরে দীর্ঘ সময় অবরোধ থাকায় আমি নিজেই ঘটনাস্থলে আসি এবং স্থানীয়দের সহায়তা যান চলাচল স্বাভাবিক করি।
চাঁদপুর সদর উপজেলা পরিষদের ভাইস-চেয়ারম্যান নুরুল ইসলাম নাজিম দেওয়ান বলেন, ঘটনাস্থলে এসে বিষয়টি জানতে পেরেছি। আপাতত বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পাঠদানের জন্য অস্থায়ী ব্যবস্থা করা হবে। বৃহস্পতিবার আলোচনা করে এবং পরবর্তীতে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলে বিষয়টি সমাধান করার চেষ্টা করা হবে।

তারিখ: ০৬.১১.২০১৯খ্রি.