দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুজিবকন্যার যুদ্ধে জনগণ পাশে :পীর হাবিবুর রহমান

  • আপডেট: ০৩:৫৪:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ২৬
গোটা সমাজ মূল্যবোধের অবক্ষয়ের শেষ তলানিতে। গোটা রাজনীতি এখন বাণিজ্যিকীকরণের স্বর্ণশিখরে। দুর্নীতিবাজ, সুবিধাবাদী, মতলববাজ, চাঁদাবাজ, দলবাজ ও নির্লজ্জ বেহায়া অবৈধ পথে কমিনশন বাণিজ্যের মাধ্যমে রাজনীতিকে অর্থবিত্ত গড়ার লোভের ফণা বিষাক্ত করছে। আদর্শিক, ত্যাগের, মানবকল্যাণের সততার নির্লোভ রাজনীতি গৌরবের ঐতিহ্য নির্বাসিত করে গোটা সমাজে নষ্টদের উল্লাসনৃত্য চলছে। সৎ-আদর্শিক মানুষ আজ গোটা দেশে রাজনীতি থেকে নানা পেশায় ও সমাজজীবন থেকে পারিবারিক জীবনে উপহাস-বিদ্রƒপের পাত্রে পরিণত হয়েছে। একদিন যে দেশে সৎ-আদর্শিক রাজনীতিবিদ সরকারি কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জগৎসংসারে মাথার তাজ হয়েছিলেন, সেখানে আজ এই নষ্ট রাজনীতির হাত ধরে প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে নানা শ্রেণি-পেশার একদল মানুষ দুর্নীতিবাজ লুটেরা অসৎ মানুষদের মাথায় তুলে গর্ব করছে।

সেনাশাসন জমানায় দেখেছি, সুন্দরী স্ত্রীকে ক্ষমতাবানের শয্যায় তুলে দিয়ে তথাকথিত শিক্ষিত সরকারি কর্মকর্তা একের পর এক প্রমোশন বাগিয়ে সচিব পর্যন্ত হয়েছিলেন। রাজপতিতার যুগ থেকে গণতন্ত্রের জমানায় বেশ্যার দালালদের, মন্ত্রী-আমলাদের দালাল থেকে যখন যারা ক্ষমতায় তাদের দালালে উৎপীড়ন দিনে দিনে সীমা ছাড়িয়েছে। নষ্ট রাজনীতির এই যুগে একদল নষ্ট পুরুষ যেমন অর্থসম্পদ গড়েছে, তেমনি রাজনীতির ক্ষমতার ছায়াতলে একদল নষ্ট নারীও নানা ঘাটে জল খেয়ে অঢেল অর্থসম্পদ, দামি গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে। নষ্ট পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একদল নষ্ট নারীও চরম ভোগবিলাসে সাঁতার কাটতে শিখে গেছে।

এককালে মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের হাত ধরে তাদের স্ত্রী-পুত্ররা যেমন ত্যাগের মনোভাবে মানুষের সেবায় আদর্শের রাজনীতির পথে নিজেদের নিবেদিত করতেন, জীবনের উত্থান-পতনের কষ্ট সহ্য করতেন সেখানে সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক ইতিহাসে ইতিহাসের চাকাকে উল্টে দিয়ে একদল নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও আমলার হাত ধরে তাদের স্ত্রী-সন্তানরা অসৎ পথে কমিশন নিয়ে অর্থবিত্ত ভোগবিলাস ও বিদেশে সম্পদ গড়ার নষ্ট রাজনীতির নীতির শিকার হয়েছেন। এরা আমাদের মহান আদর্শিক রাজনীতির মহানায়কদের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করে না। এরা রাজনীতি ও সমাজের জন্য অভিশাপের দরজা খুলে দিয়েছে। অথচ এখনো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও জনগণ আদর্শিক সততার রাজনীতির আকাক্সক্ষাকেই লালন করে। কিন্তু যখন যারা ক্ষমতায় তাদের কেন্দ্র থেকে তৃণ-মূল বিস্তৃত দানব সিন্ডিকেটের কাছে মানব সিন্ডিকেট দৃশ্যমান হতেই পারছে না।

বিগত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল। সেই যুদ্ধ তিনি শুরু করেছেন। তার শাসনকালের নানা ভুলত্রুটির সমালোচনা করা গেলেও এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, তিনি তার নির্বাচনী অঙ্গীকার অতীতে পূরণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও ’৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসিতে চড়িয়েছেন। দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছেন। সম্প্রতি এ দেশের নষ্ট ছাত্র রাজনীতির জমানায় তাঁর পছন্দ করা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দলের বিতর্কিত নেতা-কর্মীদের লাল বার্তাই দেননি, কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

এর আগে তিনি বার বার তার পিতার মতো রাজনীতিকে মানুষের সেবার ব্রত হিসেবে গ্রহণ করার তাগিদ দিয়েছেন। অর্থবিত্তের লোভ পরিহারের তাগিদ দিয়েছেন। দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কঠোর পরিণতির ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করে নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ার করেছেন। আজকে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রীই নন, আওয়ামী লীগের আদর্শিক নেতা-কর্মীদের কাছে শেষ ঠিকানাই নন, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী জনগণের আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর চলমান যুদ্ধে এ দেশের জনগণ ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁর পাশে থাকবে। যেমন করে তাঁর জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে পাশে ছিল।বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে তারা যে অন্যায়-অপরাধ ও পাপাচার করেছিল, তার পরিণতি সেদিনের সুবিধাভোগ না করা বিএনপির অগণিত নেতা-কর্মীও এখন ভোগ করছে। যারা লুটপাট ও ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়েছিলেন, তারা করুণ পরিণতি ভোগ করছেন। বিএনপি নামের জনপ্রিয় দলটি যা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণের রায় নিয়ে দুবার ক্ষমতায় এসেছে সেটি আজ করুণ পরিস্থিতির মুখে। খোদ খালেদা জিয়ার মতো জনপ্রিয় নেত্রী এখন কারান্তরিন। গত এক যুগ ধরে বিএনপি ক্ষমতায় নেই। তাদের জোটশক্তি জামায়াতকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা।

এবার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠন করেছে। তাই সব সুনাম ও দুর্নামের কৃতিত্ব ও দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। শোভন-রাব্বানীকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ায় এখন তাদের পেছনে রাস্তার ফকিরও হাঁটবে না। সূর্যের তাপের চেয়ে বালির তাপ বেশি হয়ে গেলে পরিণতি এমনই হয়। ফেনীর জয়নাল হাজারী একজন মুক্তিযোদ্ধাই নন, আজীবনের আওয়ামী লীগার ছিলেন। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে তখন সামরিক শাসকদের গঠিত দলের পেটোয়া বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। দলের শক্তির প্রতীক স্থানীয়ভাবে তাকেই মনে করা হয়েছিল। এমনকি ’৯১ সালে বিএনপি জমানায় তাকে দমন করতে গিয়ে বিডিআরকেও যুদ্ধ করতে হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার দম্ভে পরবর্তীতে অন্ধ হয়ে ভুলের চোরাবালিতে ডুবে ছিলেন জয়নাল হাজারী। তার মতো দাপুটে ফেনী সাম্রাজ্যের অধিপতিকে শেখ হাসিনা তাঁর সূর্যের আলো থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ায় রাজনীতিতে কার্যত এতিম হয়ে পড়েন।

সেদিন তিনি যখন টেলিফোন করে জানালেন, মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার জন্য ৪০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন, তখন মনে হয়েছে আজ যে ক্ষমতার দাপটে বাঘ কাল তার পরিণতি কী, সে হয়তো নিজেই জানে না। জয়নাল হাজারীর বদলে দেশে যদি দলীয় ক্ষমতায় আরও কিছু হাজারী জন্ম নিয়ে থাকেন, তাদের সরিয়ে দেওয়ার এখনই সময়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, দলীয় দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সেল মাঠে নেমেছে। মুজিবকন্যার এই সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমকে অভিনন্দন জানিয়ে বলতে চাই, শোভন-রাব্বানীর মতো পিতার সততা অবদান দেখে ১০ বছরের রাজনীতিতে আসা যে গণবিচ্ছিন্ন, দলবিচ্ছিন্ন তরুণকে বড় আশা করে একটি জেলা শহরে দলীয় নেতৃত্বে বসিয়েছিলেন, পাওয়ার গ্রিডে রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সে এখন রাতারাতি নিজ শহরে আলিশান প্রাসাদ বানিয়েছে। ধানমন্ডিতে ১০ কোটি টাকার অভিজাত ফ্ল্যাটসহ দেশ-বিদেশে দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যে অর্থসম্পদ গড়েছে। এ রকম উদাহরণ সারা দেশে অনেক। অতীতে ব্যাংকে রাজনৈতিক নিয়োগ নিয়েও অনেকে বিতর্কিত হয়েছেন।

আজকে যদি সারা দেশের দলীয় ১০ বিতর্কিত লুটেরা এমপি, ২০ জন লুটেরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ৫০ জন দলীয় দখলবাজ সন্ত্রাসী লুটেরা যারা এই ১০ বছরে অবৈধভাবে সম্পদ গড়েছে, যাদের নাম এলাকায় মুখে মুখে তাদের গ্রেফতার করে দল থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইনের আওতায় আনলে জনগণের শক্তি যেমন শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াবে তেমনি দলের নিবেদিত আদর্শ নেতা-কর্মীরা অভিমান-হতাশা থেকে বের হয়ে দলে সক্রিয় হবেন। এমনকি কেন্দ্রীয় কমিটিতে থেকেও যদি বা বর্তমান বা আগের মন্ত্রিসভায় থেকে যদি কেউ অবৈধ অর্থসম্পদ বা দুর্নীতি করে থাকেন তাদের দু-একজনকেও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারেন। শুধু দলীয় নেতা-কর্মীই নন, রাব্বানী ও জাবির সাদ্দামের টেলিফোন অডিওতে জাবি ভিসির বিতর্কিত অনৈতিক কর্মকা- এসেছে। এমনকি জাবি ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম দাবি করেছেন, জাবি ভিসি ফারজানার স্বামী ও পুত্রের টেলিফোনের কললিস্ট ও রেকর্ড বের করলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রধানমন্ত্রী যে বিশাল উন্নয়ন বরাদ্দ দিচ্ছেন সেখানে শক্তিশালী তদন্ত এখন অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি জাবি ভিসিকেও যেমন তদন্তে এনে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নিতে হবে তেমনি ছাত্রলীগের অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শোভন-রাব্বানীর মধ্য দিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠন এমনকি মূল দলের যেসব জেলা নেতা রাজনীতিকে স্থানীয়ভাবে বাণিজ্যিকীকরণ, মনোনয়ন বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্য ও পদবাণিজ্য করেছেন অর্থের বিনিময়ে তাদের আমলনামা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি। শুধু দল নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ কর্মকর্তারা অবশ্যই দলমতের ঊর্ধ্বে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু যেসব জেলার পুলিশ সুপার বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুটেরা হিসেবে বিতর্কিত তাদের অন্তত ২০ জনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অন্যরা ঠিক হয়ে যাবেন। এমনকি জামালপুরের ডিসি যেমন অফিসকে বালাখানা বানিয়েছিলেন তেমনি ডিআইজি মিজান অর্থ নারী ক্ষমতার দম্ভ ও লুটপাটে পুলিশ বাহিনীকে কলঙ্কিত করেছেন। যেসব আমলা ও ডিসি ও এসপি অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ নেন আর যারা অর্থের বিনিময়ে তদবির করে নিয়োগ দেন তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত প্রয়োজন। যারা ব্যাংক লুটেছেন, যারা শেয়ারবাজার লুটেছেন, তাদের মধ্য থেকে একটি অংশকে আইনের আওতায় নিয়ে এলে গোটা ব্যবসায়ী সমাজ সরকারকে সমর্থন দেবে। এক কথায় যেখানে আজকের নষ্ট পচে যাওয়া সমাজে লজ্জা ও গ্লানির সঙ্গে বলতে হয়, পিতার হাতে কন্যা ধর্ষিতা হচ্ছে, আল্লাহর ঘর মসজিদের পাহারাদার ইমাম যেখানে ধর্ষক, ধর্মের পাঠ দেওয়া মাদ্রাসাশিক্ষক যেখানে যৌন বিকৃত কামুক ধর্ষক, বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক যেখানে সিরিজ ধর্ষণ করে সেখানে গোটা সমাজকেও এসব অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পথ গ্রহণ করে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা সামাজিক গণজাগরণ ঘটাতে পারেন। বর্তমান পুলিশের আইজি জাবেদ পাটোয়ারীর ক্লিন ইমেজ রয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুব হোসেন, ঢাকার নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম, সিআইডি-প্রধান চৌধুরী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকার ডিআইজি পদে হেডকোয়ার্টারে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা হাবিবুর রহমানসহ বিশেষ শাখায় বিশ্বাস আফজাল হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়ায় সব মহল সন্তুষ্ট হয়েছে। মানুষের কাছে ভালোর খবর যেমন থাকে, খারাপের খবরও তার আগে থাকে।

মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় ও বেদনাবহ ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক পরিবার-পরিজন হারানো যন্ত্রণা নিয়ে যথার্থই বলেছেন, দুঃসময়ে যেখানে কেউ অস্ত্র নিয়ে বের হতে পারে না, লড়তে জানে না, সেখানে ক্ষমতার রাজনীতিতে ক্যাডার রাজনীতি ও অস্ত্রবাজি চলবে না। গত ১০ বছরে দলের যেসব কর্মী বা সুবিধাবাদীকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সেগুলো নতুন করে খতিয়ে দেখা উচিত। এমনকি দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো দরকার। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর দেখা গেছে সেনাবাহিনীর একদল খুনি অস্ত্র নিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে আর এই ষড়যন্ত্রে বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের ভূমিকায় কুৎসিত পুতুল হয়ে এসেছিল খন্দকার মোশতাক আর তাহের ঠাকুররা।

সেদিন সামরিক নেতৃত্ব কাপুরুষ ব্যর্থ অথবা ষড়যন্ত্রকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিরোধের ডাক দিতে ব্যর্থ হলেও ’৭১-এর টাইগার সিদ্দিকী বলে খ্যাত কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বঙ্গবন্ধুর আদর্শের তরুণদের নিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ গড়েছিলেন জাতীয় মুক্তিবাহিনীর নামে। সেদিন ইজ্জত রক্ষা করেছিলেন। দুঃখজনক তিনি আওয়ামী লীগে থাকেননি অথবা আওয়ামী লীগ তাকে রাখতে পারেনি। তবে সেই বীরদের স্বীকৃতি ও প্রাপ্য মর্যাদা মুজিবকন্যা না দিলে ইতিহাসে আর কেউ কোনো দিন দেবে না। আর ’৭৫-পরবর্তী দুঃসময়ের দীর্ঘ সংগ্রামের পথের সাথীদের তালিকা করেই আগামী দিনে দলকে শক্তিশালী করা দরকার।

একসময় টকশো ছিল রাজনৈতিক সচেতন টিভি দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। টকশোর প্রতি মানুষের সেই আকর্ষণ এখন নেই। তবু টকশো চলছে। বরেণ্য সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপনায় চ্যানেল আইয়ের রাত ১২টার ‘আজকের সংবাদপত্র’ টকশো ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। পরদিনের সংবাদপত্রে আসা দিনের আলোচিত ঘটনার ওপর যেদিন যাকে প্রয়োজন সেদিন ঠিক তাকেই নেওয়ায় আলোচনা দর্শক টেনে রাখত। সময় ১৮-২০ মিনিট। আলোচক একজন। একসময়ের দেশ কাঁপানো রিপোর্টার, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, কূটনৈতিক রিপোর্টার ও বিশ্বকাপ ফুটবল প্রথম কভার করা এবং দেশের প্রথম ট্যাবলয়েড দৈনিকের জনক তিনি। অনেক সরকার শাসকের দমন-পীড়নও সইতে হয়েছে তাকে।

মতিউর রহমান চৌধুরী মৃদুভাষী হলেও টকশোয় জুতসই তীক্ষ প্রশ্ন ছোট্ট করে ছুড়ে দেন আর আলোচককে কথা বলতে দেন। হস্তক্ষেপ করেন না। আরও অনেকেই উপস্থাপক হিসেবে সফল। কিন্তু অনেক নারী উপস্থাপক আছেন যারা তাকে দূরে থাক কোনো কিছুই অনুসরণ করেন না। হালে তারা কথায় ফ্যাশনে সাজগোজে পোশাকে স্মার্ট হয়ে উপস্থাপকের চেয়ারে কড়া মেকআপে বসেন। এসব অনেক অ্যাংকরের দুর্বলতা টিভি চ্যানেলের প্রধানদের দেখা উচিত। তারা টকশোয় আলোচক অনেক আনেন, প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন এমনকি অনেকে আলোচকদের চেয়ে বেশি বক্তব্য দেন এবং নিজের মতকে জোর করে চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেন।

তিনটি টিভি চ্যানেলে আমি তিনজন অ্যাংকরের ভূমিকায় চরম বিরক্ত হয়েছি এবং অনুজ হিসেবে ধমকও দিয়েছি কয়েকবার। তারা বেশির ভাগ রাজনৈতিক টকশোর অ্যাংকর হলেও রাজনীতির অতীত-বর্তমান ইতিহাস নানান ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দূরে থাক অবহিতও নন। তারা একের পর এক প্রশ্ন, উত্তর শোনার আগেই প্রশ্ন করে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করেই তৃপ্ত। আলোচক বা দর্শকদের সামনে যে নিজেদের অজ্ঞ-মূর্খ হিসেবে তুলে ধরছেন তা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন।

এদের অনেককেই যদি দেশের ১০টি রাজনৈতিক দলের নাম ও সেসব দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা ভাষা আন্দোলনের নেতা, ’৬২, ’৬৬ এমনকি ’৬৯-এর দশজন ছাত্রনেতার নাম জিজ্ঞাসা করা হয় বলতে পারবেন না। বিভিন দলের ইতিহাসও নয়। তবু তারা রাজনীতিতে এত অজ্ঞ থাকার পরও, মেধাহীন এবং পড়াশোনা না থাকলেও অ্যাংকর কেন বুঝি না।

তবে কি গণমাধ্যমের দেউলিয়াত্বের প্রকাশ। টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা আর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক টকশোর অ্যাংকর এক নয়, এটা টিভি কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে, ভাবতে হবে। ইতিহাসের গভীরতা, ঘটনার পরম্পরার সঙ্গে মাথার যোগাযোগ থাকতে হবে।

অর্থনীতি, শেয়ারবাজারসহ অনেক টকশো অনেক টিভিতে দেখি, অ্যাংকর অতিথি আলোচকদের প্রশ্নও করতে পারেন না। আলোচকদের চেয়ে নিজেরা বেশি কথা বলেন, নিজেদের মত নিয়ে রীতিমতো ভাষণ দেন। যোগ্যতার আকালের যুগে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে টিভি কর্তৃপক্ষকে মেধাহীন অযোগ্য রূপবতী বাকপটু নয়, মেধাবী পড়াশোনা করা, দক্ষদের আনতে হবে। চলমান দীনতা গণমাধ্যমের জন্যই লজ্জা ও বেদনার। পেশাদারিত্বের বিকল্প নেই। আমি জানি, আমি পীর হাবিবুর রহমানকে না ডাকলেও তদবির করে টকশোয় যাওয়ার সস্তা লোকের অভাব সমাজে নেই। শুনেছি গভীর রাতের এক, দুজন ব্যাংকের টাকার বিনিময়ে ফালতুদের খুঁজে এনে বসিয়ে দেন। আমি নিজেও যেতে কাঙাল নই। কিন্তু গণমাধ্যমের ইজ্জত-মর্যাদা অনেক বড়। গন্ডমূর্খ একদল সুন্দরীর হাতে (সবাই নয়) অ্যাংকরের দায়িত্ব দেওয়া যায় না, যদি তার যোগ্যতা-দক্ষতা ও জ্ঞানের পরিধি না থাকে। অ্যাংকর তির্যক প্রশ্ন করুন, উত্তর আনুন, প্রশ্নে ঘামিয়ে দিন আপত্তি নেই। কিন্তু টকশোয় নিজে ভাষণ ও উত্তর শেষ না হতেই প্রশ্নের পর প্রশ্ন করবেন না। এতে নিজে জানা থেকে দূরে থাকবেন। দর্শকও বুঝবে না কে অ্যাংকর কে আলোচক। আর বুঝলে তো সম্মানই দেবে না। গত সোমবার সর্বশেষ রাতে টকশোয় গিয়ে আবার অভিজ্ঞতা হয়েছে।

গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের একটা অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠানকেই জবাবদিহিমূলক সাহসী স্বাধীন ও শক্তিশালী করা অনিবার্য। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর দল ও প্রশাসন থেকে যে যুদ্ধ শুরু করেছেন এর পাশে জনগণকেই আজ দাঁড়াতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানকেই নয়, গণমাধ্যমকেও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিতে হবে। এ লড়াইয়ে শেখ হাসিনা জয়ী হলে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও স্বপ্ন জয়ী হবে। আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত যেমন বৃথা যাবে না তেমন সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশে সুশাসনের সুবাতাস বইলে গণতন্ত্রের বসন্তও  উৎসবমুখর হবে।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

চাঁদপুরে ৪’শ নারী-পুরুষের অংশগ্রহণে অনুষ্ঠিত হল ম্যারাথন প্রতিযোগিতা

দুর্নীতির বিরুদ্ধে মুজিবকন্যার যুদ্ধে জনগণ পাশে :পীর হাবিবুর রহমান

আপডেট: ০৩:৫৪:২৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০১৯
গোটা সমাজ মূল্যবোধের অবক্ষয়ের শেষ তলানিতে। গোটা রাজনীতি এখন বাণিজ্যিকীকরণের স্বর্ণশিখরে। দুর্নীতিবাজ, সুবিধাবাদী, মতলববাজ, চাঁদাবাজ, দলবাজ ও নির্লজ্জ বেহায়া অবৈধ পথে কমিনশন বাণিজ্যের মাধ্যমে রাজনীতিকে অর্থবিত্ত গড়ার লোভের ফণা বিষাক্ত করছে। আদর্শিক, ত্যাগের, মানবকল্যাণের সততার নির্লোভ রাজনীতি গৌরবের ঐতিহ্য নির্বাসিত করে গোটা সমাজে নষ্টদের উল্লাসনৃত্য চলছে। সৎ-আদর্শিক মানুষ আজ গোটা দেশে রাজনীতি থেকে নানা পেশায় ও সমাজজীবন থেকে পারিবারিক জীবনে উপহাস-বিদ্রƒপের পাত্রে পরিণত হয়েছে। একদিন যে দেশে সৎ-আদর্শিক রাজনীতিবিদ সরকারি কর্মকর্তাসহ সমাজের বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ জগৎসংসারে মাথার তাজ হয়েছিলেন, সেখানে আজ এই নষ্ট রাজনীতির হাত ধরে প্রশাসনের কর্মকর্তা থেকে নানা শ্রেণি-পেশার একদল মানুষ দুর্নীতিবাজ লুটেরা অসৎ মানুষদের মাথায় তুলে গর্ব করছে।

সেনাশাসন জমানায় দেখেছি, সুন্দরী স্ত্রীকে ক্ষমতাবানের শয্যায় তুলে দিয়ে তথাকথিত শিক্ষিত সরকারি কর্মকর্তা একের পর এক প্রমোশন বাগিয়ে সচিব পর্যন্ত হয়েছিলেন। রাজপতিতার যুগ থেকে গণতন্ত্রের জমানায় বেশ্যার দালালদের, মন্ত্রী-আমলাদের দালাল থেকে যখন যারা ক্ষমতায় তাদের দালালে উৎপীড়ন দিনে দিনে সীমা ছাড়িয়েছে। নষ্ট রাজনীতির এই যুগে একদল নষ্ট পুরুষ যেমন অর্থসম্পদ গড়েছে, তেমনি রাজনীতির ক্ষমতার ছায়াতলে একদল নষ্ট নারীও নানা ঘাটে জল খেয়ে অঢেল অর্থসম্পদ, দামি গাড়ি-বাড়ির মালিক হয়েছে। নষ্ট পুরুষদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে একদল নষ্ট নারীও চরম ভোগবিলাসে সাঁতার কাটতে শিখে গেছে।

এককালে মন্ত্রী-এমপি-নেতাদের হাত ধরে তাদের স্ত্রী-পুত্ররা যেমন ত্যাগের মনোভাবে মানুষের সেবায় আদর্শের রাজনীতির পথে নিজেদের নিবেদিত করতেন, জীবনের উত্থান-পতনের কষ্ট সহ্য করতেন সেখানে সাম্প্রতিককালে রাজনৈতিক ইতিহাসে ইতিহাসের চাকাকে উল্টে দিয়ে একদল নেতা, মন্ত্রী, এমপি ও আমলার হাত ধরে তাদের স্ত্রী-সন্তানরা অসৎ পথে কমিশন নিয়ে অর্থবিত্ত ভোগবিলাস ও বিদেশে সম্পদ গড়ার নষ্ট রাজনীতির নীতির শিকার হয়েছেন। এরা আমাদের মহান আদর্শিক রাজনীতির মহানায়কদের উত্তরাধিকারিত্ব বহন করে না। এরা রাজনীতি ও সমাজের জন্য অভিশাপের দরজা খুলে দিয়েছে। অথচ এখনো দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাজনৈতিক নেতা-কর্মী ও জনগণ আদর্শিক সততার রাজনীতির আকাক্সক্ষাকেই লালন করে। কিন্তু যখন যারা ক্ষমতায় তাদের কেন্দ্র থেকে তৃণ-মূল বিস্তৃত দানব সিন্ডিকেটের কাছে মানব সিন্ডিকেট দৃশ্যমান হতেই পারছে না।

বিগত জাতীয় নির্বাচন নিয়ে অনেক প্রশ্ন থাকলেও সেই নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার দুর্নীতির বিরুদ্ধে যুদ্ধের অঙ্গীকার ছিল। সেই যুদ্ধ তিনি শুরু করেছেন। তার শাসনকালের নানা ভুলত্রুটির সমালোচনা করা গেলেও এ কথা অস্বীকার করা যাবে না যে, তিনি তার নির্বাচনী অঙ্গীকার অতীতে পূরণ করেছেন। বঙ্গবন্ধুর খুনি ও ’৭১-এ মানবতাবিরোধী অপরাধীদের ফাঁসিতে চড়িয়েছেন। দেশকে উন্নয়নের মহাসড়কে তুলে জাতীয় প্রবৃদ্ধি বাড়িয়েছেন। সম্প্রতি এ দেশের নষ্ট ছাত্র রাজনীতির জমানায় তাঁর পছন্দ করা ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি দিয়ে দলের বিতর্কিত নেতা-কর্মীদের লাল বার্তাই দেননি, কড়া হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করেছেন।

এর আগে তিনি বার বার তার পিতার মতো রাজনীতিকে মানুষের সেবার ব্রত হিসেবে গ্রহণ করার তাগিদ দিয়েছেন। অর্থবিত্তের লোভ পরিহারের তাগিদ দিয়েছেন। দলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মরহুম সৈয়দ আশরাফুল ইসলামও দায়িত্বশীল হওয়ার তাগিদ দিয়েছেন। বর্তমান সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের কঠোর পরিণতির ভয়াবহতা সম্পর্কে অবহিত করে নেতা-কর্মীদের হুঁশিয়ার করেছেন। আজকে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশের রাজনীতিতে অপ্রতিদ্বন্দ্বী নেত্রীই নন, আওয়ামী লীগের আদর্শিক নেতা-কর্মীদের কাছে শেষ ঠিকানাই নন, মুক্তিযুদ্ধ ও অসাম্প্রদায়িক গণতান্ত্রিক রাজনীতিতে বিশ্বাসী জনগণের আস্থার জায়গায় পরিণত হয়েছেন। দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর চলমান যুদ্ধে এ দেশের জনগণ ও সব শ্রেণি-পেশার মানুষ তাঁর পাশে থাকবে। যেমন করে তাঁর জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাসবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধে পাশে ছিল।বিএনপি-জামায়াত শাসনামলে তারা যে অন্যায়-অপরাধ ও পাপাচার করেছিল, তার পরিণতি সেদিনের সুবিধাভোগ না করা বিএনপির অগণিত নেতা-কর্মীও এখন ভোগ করছে। যারা লুটপাট ও ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ হয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়েছিলেন, তারা করুণ পরিণতি ভোগ করছেন। বিএনপি নামের জনপ্রিয় দলটি যা খালেদা জিয়ার নেতৃত্বে জনগণের রায় নিয়ে দুবার ক্ষমতায় এসেছে সেটি আজ করুণ পরিস্থিতির মুখে। খোদ খালেদা জিয়ার মতো জনপ্রিয় নেত্রী এখন কারান্তরিন। গত এক যুগ ধরে বিএনপি ক্ষমতায় নেই। তাদের জোটশক্তি জামায়াতকে পঙ্গু করে দেওয়া হয়েছে। ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ ও তার মিত্ররা।

এবার ক্ষমতায় আসার পর আওয়ামী লীগ এককভাবে সরকার গঠন করেছে। তাই সব সুনাম ও দুর্নামের কৃতিত্ব ও দায় আওয়ামী লীগকেই নিতে হবে। শোভন-রাব্বানীকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ায় এখন তাদের পেছনে রাস্তার ফকিরও হাঁটবে না। সূর্যের তাপের চেয়ে বালির তাপ বেশি হয়ে গেলে পরিণতি এমনই হয়। ফেনীর জয়নাল হাজারী একজন মুক্তিযোদ্ধাই নন, আজীবনের আওয়ামী লীগার ছিলেন। আওয়ামী লীগ যখন বিরোধী দলে তখন সামরিক শাসকদের গঠিত দলের পেটোয়া বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধ করেছেন। দলের শক্তির প্রতীক স্থানীয়ভাবে তাকেই মনে করা হয়েছিল। এমনকি ’৯১ সালে বিএনপি জমানায় তাকে দমন করতে গিয়ে বিডিআরকেও যুদ্ধ করতে হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতার দম্ভে পরবর্তীতে অন্ধ হয়ে ভুলের চোরাবালিতে ডুবে ছিলেন জয়নাল হাজারী। তার মতো দাপুটে ফেনী সাম্রাজ্যের অধিপতিকে শেখ হাসিনা তাঁর সূর্যের আলো থেকে ছুড়ে ফেলে দেওয়ায় রাজনীতিতে কার্যত এতিম হয়ে পড়েন।

সেদিন তিনি যখন টেলিফোন করে জানালেন, মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা তার চিকিৎসার জন্য ৪০ লাখ টাকা আর্থিক অনুদান দিয়েছেন, তখন মনে হয়েছে আজ যে ক্ষমতার দাপটে বাঘ কাল তার পরিণতি কী, সে হয়তো নিজেই জানে না। জয়নাল হাজারীর বদলে দেশে যদি দলীয় ক্ষমতায় আরও কিছু হাজারী জন্ম নিয়ে থাকেন, তাদের সরিয়ে দেওয়ার এখনই সময়। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, দলীয় দুর্নীতিবাজদের ক্ষমতার অপব্যবহারকারীদের চিহ্নিত করতে গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সেল মাঠে নেমেছে। মুজিবকন্যার এই সিদ্ধান্ত ও কার্যক্রমকে অভিনন্দন জানিয়ে বলতে চাই, শোভন-রাব্বানীর মতো পিতার সততা অবদান দেখে ১০ বছরের রাজনীতিতে আসা যে গণবিচ্ছিন্ন, দলবিচ্ছিন্ন তরুণকে বড় আশা করে একটি জেলা শহরে দলীয় নেতৃত্বে বসিয়েছিলেন, পাওয়ার গ্রিডে রাজনৈতিক নিয়োগ দেওয়া হয়েছিল সে এখন রাতারাতি নিজ শহরে আলিশান প্রাসাদ বানিয়েছে। ধানমন্ডিতে ১০ কোটি টাকার অভিজাত ফ্ল্যাটসহ দেশ-বিদেশে দুর্নীতি ও কমিশন বাণিজ্যে অর্থসম্পদ গড়েছে। এ রকম উদাহরণ সারা দেশে অনেক। অতীতে ব্যাংকে রাজনৈতিক নিয়োগ নিয়েও অনেকে বিতর্কিত হয়েছেন।

আজকে যদি সারা দেশের দলীয় ১০ বিতর্কিত লুটেরা এমপি, ২০ জন লুটেরা স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ৫০ জন দলীয় দখলবাজ সন্ত্রাসী লুটেরা যারা এই ১০ বছরে অবৈধভাবে সম্পদ গড়েছে, যাদের নাম এলাকায় মুখে মুখে তাদের গ্রেফতার করে দল থেকে অব্যাহতি দিয়ে আইনের আওতায় আনলে জনগণের শক্তি যেমন শেখ হাসিনার পাশে দাঁড়াবে তেমনি দলের নিবেদিত আদর্শ নেতা-কর্মীরা অভিমান-হতাশা থেকে বের হয়ে দলে সক্রিয় হবেন। এমনকি কেন্দ্রীয় কমিটিতে থেকেও যদি বা বর্তমান বা আগের মন্ত্রিসভায় থেকে যদি কেউ অবৈধ অর্থসম্পদ বা দুর্নীতি করে থাকেন তাদের দু-একজনকেও চিহ্নিত করে ব্যবস্থা নিতে পারেন। শুধু দলীয় নেতা-কর্মীই নন, রাব্বানী ও জাবির সাদ্দামের টেলিফোন অডিওতে জাবি ভিসির বিতর্কিত অনৈতিক কর্মকা- এসেছে। এমনকি জাবি ছাত্রলীগ নেতা সাদ্দাম দাবি করেছেন, জাবি ভিসি ফারজানার স্বামী ও পুত্রের টেলিফোনের কললিস্ট ও রেকর্ড বের করলে চাঞ্চল্যকর তথ্য পাওয়া যাবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়কে প্রধানমন্ত্রী যে বিশাল উন্নয়ন বরাদ্দ দিচ্ছেন সেখানে শক্তিশালী তদন্ত এখন অনিবার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে। এমনকি জাবি ভিসিকেও যেমন তদন্তে এনে দোষী প্রমাণিত হলে ব্যবস্থা নিতে হবে তেমনি ছাত্রলীগের অভিযুক্তদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে হবে। শোভন-রাব্বানীর মধ্য দিয়ে দলের কেন্দ্রীয় কমিটি থেকে বিভিন্ন অঙ্গসহযোগী সংগঠন এমনকি মূল দলের যেসব জেলা নেতা রাজনীতিকে স্থানীয়ভাবে বাণিজ্যিকীকরণ, মনোনয়ন বাণিজ্য, কমিটি বাণিজ্য ও পদবাণিজ্য করেছেন অর্থের বিনিময়ে তাদের আমলনামা নিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণ সময়ের দাবি। শুধু দল নয়, আইনশৃঙ্খলা রক্ষার্থে পুলিশ কর্মকর্তারা অবশ্যই দলমতের ঊর্ধ্বে অপরাধীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন। কিন্তু যেসব জেলার পুলিশ সুপার বা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা লুটেরা হিসেবে বিতর্কিত তাদের অন্তত ২০ জনের বিরুদ্ধে প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণ করলে অন্যরা ঠিক হয়ে যাবেন। এমনকি জামালপুরের ডিসি যেমন অফিসকে বালাখানা বানিয়েছিলেন তেমনি ডিআইজি মিজান অর্থ নারী ক্ষমতার দম্ভ ও লুটপাটে পুলিশ বাহিনীকে কলঙ্কিত করেছেন। যেসব আমলা ও ডিসি ও এসপি অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ নেন আর যারা অর্থের বিনিময়ে তদবির করে নিয়োগ দেন তাদের বিরুদ্ধেও তদন্ত প্রয়োজন। যারা ব্যাংক লুটেছেন, যারা শেয়ারবাজার লুটেছেন, তাদের মধ্য থেকে একটি অংশকে আইনের আওতায় নিয়ে এলে গোটা ব্যবসায়ী সমাজ সরকারকে সমর্থন দেবে। এক কথায় যেখানে আজকের নষ্ট পচে যাওয়া সমাজে লজ্জা ও গ্লানির সঙ্গে বলতে হয়, পিতার হাতে কন্যা ধর্ষিতা হচ্ছে, আল্লাহর ঘর মসজিদের পাহারাদার ইমাম যেখানে ধর্ষক, ধর্মের পাঠ দেওয়া মাদ্রাসাশিক্ষক যেখানে যৌন বিকৃত কামুক ধর্ষক, বিজ্ঞানমনস্ক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষক যেখানে সিরিজ ধর্ষণ করে সেখানে গোটা সমাজকেও এসব অপরাধ ও দুর্নীতির বিরুদ্ধে কঠোর পথ গ্রহণ করে মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা সামাজিক গণজাগরণ ঘটাতে পারেন। বর্তমান পুলিশের আইজি জাবেদ পাটোয়ারীর ক্লিন ইমেজ রয়েছে। অতিরিক্ত আইজিপি মাহবুব হোসেন, ঢাকার নবনিযুক্ত পুলিশ কমিশনার শফিকুল ইসলাম, সিআইডি-প্রধান চৌধুরী মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল মামুন, ঢাকার ডিআইজি পদে হেডকোয়ার্টারে দক্ষতা ও সুনামের সঙ্গে দায়িত্ব পালন করা হাবিবুর রহমানসহ বিশেষ শাখায় বিশ্বাস আফজাল হোসেনকে দায়িত্ব দেওয়ায় সব মহল সন্তুষ্ট হয়েছে। মানুষের কাছে ভালোর খবর যেমন থাকে, খারাপের খবরও তার আগে থাকে।

মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা তাঁর দীর্ঘ রাজনৈতিক সংগ্রামের অভিজ্ঞতায় ও বেদনাবহ ’৭৫-এর ১৫ আগস্টের মর্মান্তিক পরিবার-পরিজন হারানো যন্ত্রণা নিয়ে যথার্থই বলেছেন, দুঃসময়ে যেখানে কেউ অস্ত্র নিয়ে বের হতে পারে না, লড়তে জানে না, সেখানে ক্ষমতার রাজনীতিতে ক্যাডার রাজনীতি ও অস্ত্রবাজি চলবে না। গত ১০ বছরে দলের যেসব কর্মী বা সুবিধাবাদীকে অস্ত্রের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে সেগুলো নতুন করে খতিয়ে দেখা উচিত। এমনকি দেশে অবৈধ অস্ত্র উদ্ধার অভিযান চালানো দরকার। বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের পর দেখা গেছে সেনাবাহিনীর একদল খুনি অস্ত্র নিয়ে এই হত্যাকান্ড ঘটিয়েছে আর এই ষড়যন্ত্রে বিশ্বাসঘাতক মীরজাফরের ভূমিকায় কুৎসিত পুতুল হয়ে এসেছিল খন্দকার মোশতাক আর তাহের ঠাকুররা।

সেদিন সামরিক নেতৃত্ব কাপুরুষ ব্যর্থ অথবা ষড়যন্ত্রকারীর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছিল। রাজনৈতিক নেতৃত্ব প্রতিরোধের ডাক দিতে ব্যর্থ হলেও ’৭১-এর টাইগার সিদ্দিকী বলে খ্যাত কাদের সিদ্দিকী বীরউত্তম বঙ্গবন্ধুর আদর্শের তরুণদের নিয়ে সশস্ত্র প্রতিরোধযুদ্ধ গড়েছিলেন জাতীয় মুক্তিবাহিনীর নামে। সেদিন ইজ্জত রক্ষা করেছিলেন। দুঃখজনক তিনি আওয়ামী লীগে থাকেননি অথবা আওয়ামী লীগ তাকে রাখতে পারেনি। তবে সেই বীরদের স্বীকৃতি ও প্রাপ্য মর্যাদা মুজিবকন্যা না দিলে ইতিহাসে আর কেউ কোনো দিন দেবে না। আর ’৭৫-পরবর্তী দুঃসময়ের দীর্ঘ সংগ্রামের পথের সাথীদের তালিকা করেই আগামী দিনে দলকে শক্তিশালী করা দরকার।

একসময় টকশো ছিল রাজনৈতিক সচেতন টিভি দর্শকদের কাছে তুমুল জনপ্রিয়। টকশোর প্রতি মানুষের সেই আকর্ষণ এখন নেই। তবু টকশো চলছে। বরেণ্য সাংবাদিক মতিউর রহমান চৌধুরীর উপস্থাপনায় চ্যানেল আইয়ের রাত ১২টার ‘আজকের সংবাদপত্র’ টকশো ছিল জনপ্রিয়তার শীর্ষে। পরদিনের সংবাদপত্রে আসা দিনের আলোচিত ঘটনার ওপর যেদিন যাকে প্রয়োজন সেদিন ঠিক তাকেই নেওয়ায় আলোচনা দর্শক টেনে রাখত। সময় ১৮-২০ মিনিট। আলোচক একজন। একসময়ের দেশ কাঁপানো রিপোর্টার, রাজনৈতিক ভাষ্যকার, কূটনৈতিক রিপোর্টার ও বিশ্বকাপ ফুটবল প্রথম কভার করা এবং দেশের প্রথম ট্যাবলয়েড দৈনিকের জনক তিনি। অনেক সরকার শাসকের দমন-পীড়নও সইতে হয়েছে তাকে।

মতিউর রহমান চৌধুরী মৃদুভাষী হলেও টকশোয় জুতসই তীক্ষ প্রশ্ন ছোট্ট করে ছুড়ে দেন আর আলোচককে কথা বলতে দেন। হস্তক্ষেপ করেন না। আরও অনেকেই উপস্থাপক হিসেবে সফল। কিন্তু অনেক নারী উপস্থাপক আছেন যারা তাকে দূরে থাক কোনো কিছুই অনুসরণ করেন না। হালে তারা কথায় ফ্যাশনে সাজগোজে পোশাকে স্মার্ট হয়ে উপস্থাপকের চেয়ারে কড়া মেকআপে বসেন। এসব অনেক অ্যাংকরের দুর্বলতা টিভি চ্যানেলের প্রধানদের দেখা উচিত। তারা টকশোয় আলোচক অনেক আনেন, প্রশ্নবাণে জর্জরিত করেন এমনকি অনেকে আলোচকদের চেয়ে বেশি বক্তব্য দেন এবং নিজের মতকে জোর করে চাপিয়ে দিতে চেষ্টা করেন।

তিনটি টিভি চ্যানেলে আমি তিনজন অ্যাংকরের ভূমিকায় চরম বিরক্ত হয়েছি এবং অনুজ হিসেবে ধমকও দিয়েছি কয়েকবার। তারা বেশির ভাগ রাজনৈতিক টকশোর অ্যাংকর হলেও রাজনীতির অতীত-বর্তমান ইতিহাস নানান ঘটনার সঙ্গে সম্পৃক্ত দূরে থাক অবহিতও নন। তারা একের পর এক প্রশ্ন, উত্তর শোনার আগেই প্রশ্ন করে নিজেদের কৃতিত্ব জাহির করেই তৃপ্ত। আলোচক বা দর্শকদের সামনে যে নিজেদের অজ্ঞ-মূর্খ হিসেবে তুলে ধরছেন তা বেমালুম ভুলে যাচ্ছেন।

এদের অনেককেই যদি দেশের ১০টি রাজনৈতিক দলের নাম ও সেসব দলের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক বা ভাষা আন্দোলনের নেতা, ’৬২, ’৬৬ এমনকি ’৬৯-এর দশজন ছাত্রনেতার নাম জিজ্ঞাসা করা হয় বলতে পারবেন না। বিভিন দলের ইতিহাসও নয়। তবু তারা রাজনীতিতে এত অজ্ঞ থাকার পরও, মেধাহীন এবং পড়াশোনা না থাকলেও অ্যাংকর কেন বুঝি না।

তবে কি গণমাধ্যমের দেউলিয়াত্বের প্রকাশ। টিভি ম্যাগাজিন অনুষ্ঠান উপস্থাপনা আর রাজনৈতিক-অর্থনৈতিক টকশোর অ্যাংকর এক নয়, এটা টিভি কর্তৃপক্ষকে বুঝতে হবে, ভাবতে হবে। ইতিহাসের গভীরতা, ঘটনার পরম্পরার সঙ্গে মাথার যোগাযোগ থাকতে হবে।

অর্থনীতি, শেয়ারবাজারসহ অনেক টকশো অনেক টিভিতে দেখি, অ্যাংকর অতিথি আলোচকদের প্রশ্নও করতে পারেন না। আলোচকদের চেয়ে নিজেরা বেশি কথা বলেন, নিজেদের মত নিয়ে রীতিমতো ভাষণ দেন। যোগ্যতার আকালের যুগে প্রতিযোগিতার বাজারে টিকে থাকতে টিভি কর্তৃপক্ষকে মেধাহীন অযোগ্য রূপবতী বাকপটু নয়, মেধাবী পড়াশোনা করা, দক্ষদের আনতে হবে। চলমান দীনতা গণমাধ্যমের জন্যই লজ্জা ও বেদনার। পেশাদারিত্বের বিকল্প নেই। আমি জানি, আমি পীর হাবিবুর রহমানকে না ডাকলেও তদবির করে টকশোয় যাওয়ার সস্তা লোকের অভাব সমাজে নেই। শুনেছি গভীর রাতের এক, দুজন ব্যাংকের টাকার বিনিময়ে ফালতুদের খুঁজে এনে বসিয়ে দেন। আমি নিজেও যেতে কাঙাল নই। কিন্তু গণমাধ্যমের ইজ্জত-মর্যাদা অনেক বড়। গন্ডমূর্খ একদল সুন্দরীর হাতে (সবাই নয়) অ্যাংকরের দায়িত্ব দেওয়া যায় না, যদি তার যোগ্যতা-দক্ষতা ও জ্ঞানের পরিধি না থাকে। অ্যাংকর তির্যক প্রশ্ন করুন, উত্তর আনুন, প্রশ্নে ঘামিয়ে দিন আপত্তি নেই। কিন্তু টকশোয় নিজে ভাষণ ও উত্তর শেষ না হতেই প্রশ্নের পর প্রশ্ন করবেন না। এতে নিজে জানা থেকে দূরে থাকবেন। দর্শকও বুঝবে না কে অ্যাংকর কে আলোচক। আর বুঝলে তো সম্মানই দেবে না। গত সোমবার সর্বশেষ রাতে টকশোয় গিয়ে আবার অভিজ্ঞতা হয়েছে।

গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠানের প্রতি মানুষের একটা অসন্তোষ দেখা যাচ্ছে। গণমাধ্যমসহ সব প্রতিষ্ঠানকেই জবাবদিহিমূলক সাহসী স্বাধীন ও শক্তিশালী করা অনিবার্য। মুজিবকন্যা শেখ হাসিনা দুর্নীতির বিরুদ্ধে তাঁর দল ও প্রশাসন থেকে যে যুদ্ধ শুরু করেছেন এর পাশে জনগণকেই আজ দাঁড়াতে হবে। সব প্রতিষ্ঠানকেই নয়, গণমাধ্যমকেও স্বতঃস্ফূর্ত সমর্থন দিতে হবে। এ লড়াইয়ে শেখ হাসিনা জয়ী হলে আমাদের মহান নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আদর্শ ও স্বপ্ন জয়ী হবে। আমাদের সুমহান মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের রক্ত যেমন বৃথা যাবে না তেমন সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের শহীদদের আত্মা শান্তি পাবে। দেশে সুশাসনের সুবাতাস বইলে গণতন্ত্রের বসন্তও  উৎসবমুখর হবে।

লেখক : নির্বাহী সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রতিদিন