চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জের একটি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের করোনার টিকা নিতে প্রায় ৩শত শিক্ষার্থীর কাছ থেকে জনপ্রতি ৬০ টাকা হারে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে অর্থ আদায় করা ছাড়াও টাকার বিনিময়ে ভুয়া নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে কর্মচারী নিয়োগ করার গুরুতর অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক নেছার আহাম্মেদের বিরুদ্ধে বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এলাকাবাসীর মধ্যে অসন্তুষ বিরাজ বিরাজ করছে।
শনিবার বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির প্রথম সভায় প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে শিক্ষার্থীদের টিকা নিতে অবৈভ ভাবে টাকা গ্রহন ছাড়াও স্বেচ্ছাচারিতা ও অবৈধ ভাবে কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে আলোচনা হয়। এক পর্যায়ে প্রধান শিক্ষক নেছার আহাম্মেদ নিজের অনিয়মের বিষয়ে ম্যানিজিং কমিটির সভাপতি শিক্ষাবিদ ও সমাজ সেবক শাহাজাহান কবিরের কাছে ক্ষমা চেয়ে প্রাথমিক ভাবে পার পেয়ে যান বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, পৌর এলাকার পূর্ব বড়ালী গ্রামে ২০১০ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় ‘পূর্ব বড়ালী শাহ্জাহান কবির উচ্চ বিদ্যালয়ে প্রধান শিক্ষক হিসেবে নেছার আহাম্মেদকে নিয়োগ করা কয়। প্রতিষ্ঠার পর ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বিদ্যালয়টি এম.পি.ও-ভূক্ত হয়। পরে প্রধান শিক্ষকও এমপিও ভুক্ত হওয়ার পর থেকেই তার স্বেচ্ছারিতা ও অনিয়মের মাত্রা বেড়ে যায়। বিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা বলেছেন, ফরিদগঞ্জ পৌর এলাকার যথাক্রমে মো. তাফাজ্জল, মো. মনির ও কুষ্টিয়া জেলার মো. সেলিম নিরাপত্তা কর্মীর পদে বিভিন্ন সময়ে চাকুরি করেছেন। তারা আরও বলেছেন, প্রধান শিক্ষকের যখন ইচ্ছা হয়েছে- তখনই নিরাপত্তা কর্মীকে বরখাস্ত করেছেন। নিরাপত্তা কর্মীকে মারধরও করার অভিযোগও রয়েছে।
কয়েকজন অভিভাবক অভিযোগ করে বলেছেন, করোনা ভাইরাসের টিকা গ্রহণ কেন্দ্র করে পরিবহন ও যোগাযোগের অজুহাতে ২৯০ জন শিক্ষার্থীর কাছ থেকে ৬০ টাকা হারে আদায় করেছেন প্রধান শিক্ষক। টিকার ক্যাম্প ছিলো স্কুল থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ মিনিটের পায়ে হাঁটা পথ বড়ালী সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ে।
এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্টজন ও এলাকাবাসীর অভিযোগ, প্রধান শিক্ষক টাকার লোভে পড়ে অবৈধ ভাবে ভুয়া নিয়োগ পরীক্ষার মাধ্যমে শামিম বেপারী’র নামে এক ব্যক্তি ওই স্কুলে ৪র্থ শ্রেনীর কর্মচারী হিসেবে নিয়োগ দিয়েছেন। শামীম বেপারী ২০১৯ সালের জুলাই মাসে বিদ্যালয়ে যোগদান করেন। অথচ, তার নিয়োগ দেখানো হয়েছে ২০১২ সালে।
বিদ্যালয়ের প্রতিবেশি হুমায়ুন কবির (৫৫), মো. মোক্তার (৫০) দুঃখ করে বলেছেন, শামিম বেপারীকে লাঠিয়াল হিসেবে ব্যবহার করেন প্রধান শিক্ষক। তিনি নিজের বাড়ির দ্বন্দ্বে শামিমকে ডেকে নেন। এতে, শামিম বেপারী ওই এলাকার লোকজনের পিটুনি খেয়েছেন। তারা, প্রধান শিক্ষককে স্বেচ্ছাচার বলে মন্তব্য করেছেন।
এলাকাবাসী জানিয়েছেন, প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা প্রসারের উদ্যেশ্যে জমি, ভবন ও বিপুল অর্থ ব্যয়ের মাধ্যমে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেছেন এলাকার জনহিতকর ব্যক্তি শিক্ষাবিদ শাহ্জাহান কবির । বিদালয়টি প্রতিষ্ঠার পর থেকেই ম্যানেজিং কমিটির সভাপতির দায়িত্ব পালন করছেন শাহ্জাহান কবির। তার সরলতার সুযোগ বিদ্যালয়ে নানা দুর্নীতির মাধ্যমে সরকারের ভামমূর্তি বিনষ্ট করা ছাড়াও নানা বিতর্ক সৃষ্টি করেছেন সর্বমহলে।
এ নিয়ে প্রধান শিক্ষক নেছার আহাম্মেদ বক্তব্য জানতে চাইলে তিনি কোন প্রশ্নের জবাব না দিয়ে বলেন, আমি আপনার সাথে দেখা করবো বলে লাইন কেটে দেন।
জানতে চাইলে সভাপতি শাহ্জাহান কবির বলেন, ব্যবসার সূত্রে ঢাকা ও দেশের বাইরে আমাকে থাকতে ও যাতায়াত করতে হয়। বিদ্যালয় সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার স্বার্থে স্বাধীনভাবে কাজ করার জন্য প্রধান শিক্ষককে সুযোগ দিয়েছি। প্রধান শিক্ষক এমপিও ভুক্ত হওয়ার আগে তার কর্মকান্ড যা ছিল কিন্তু এমপিও ভুক্ত হওয়ার পর তার কর্মকান্ড আগের মতো নেই। ‘ আমার সরলতার সুযোগ নিয়ে প্রধান শিক্ষক নেছার আহাম্মেদ স্বেচ্ছাচারিতা ছাড়াও বিদ্যালয়ের স্বার্থ বিরোধী কাজ করে নানা বিতর্ক সৃষ্টি করবে তা কখনো ভাবিনি।
এ ব্যাপারে কথা হয় উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার শাহ্ আলী রেজা আশরাফী’ বলেন, ওই বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নেছার আহাম্মেদের বিরুদ্ধে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।