চাঁদপুর আল আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজে জাল সনদ দিয়ে এমপিওভুক্ত হলেন সহকারী গ্রন্থাগারিক শিক্ষক মোঃ আব্দুল মোতালেব।
জানা যায়, গত ৩ নভেম্বর চট্টগ্রাম আন্তজার্তিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এর পরিক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিসের প্রশাসনিক কর্মকর্তা মোঃ ইউসুফ মিয়া চাঁদপুর আল আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ বরাবর যাচাই করে সনদটি জাল বলে স্বাক্ষরিত পত্রে উল্লেখ করে তা প্রেরণ করেন। (স্মারক নং- আ আ এ/প্রশা/নং-২৪৩) এছাড়া পত্রে উল্লেখ করা হয়, আইডি নং- ২০১৭০১১৩০৩ এর অধিনে আমাদের কোন ছাত্র/ছাত্রী ছিল না বা নেই। আমাদের জানামতে, সার্বিক তথ্য যাচাই বাচাই করে সংযোজিত সনদটি জাল বলে প্রতিয়মান হয়। বিষয়টি বুঝতে পেরে গত ১লা নভেম্বর প্রতিষ্ঠানের (ইনডেক্স নং-৫৬৮৮৩৫০) সহকারী গ্রন্থাগারিক চাকুরি হতে পিতার অসুস্থতার কারণ দেখিয়ে স্বেচ্ছায় অব্যাহতি নেন।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, মোঃ আবদুল মোতালেব ২০০৯ সালে আল-আমিন একাডেমি গুনরাজদী ক্যাম্পাসে সহকারী শিক্ষক হিসেবে যোগদান করেন। পরে তাকে ২০১৮ সালে একই পদে বাবুরহাট ক্যাম্পাসে দেওয়া হয়। সেখানে কয়েকদিন চাকুরী করার পর আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আবদুল গাফফার এর সাথে যোগসাজসে নানা তথ্য আদান প্রদান করে অধ্যক্ষের কাছের মানুষ হয়ে যান। অধ্যক্ষ গাফফার এর সাথে মিল করে সে আল-আমিন একাডেমি স্কুল এন্ড কলেজে সহকারি গ্রন্থাগারিক হিসেবে যোগদান করেন। যতদিন শিক্ষক মোতালেব সাবেক অধ্যক্ষ গাফফার এর সাথে ছিলেন ততদিন তিনি প্রতিষ্ঠানের অনেকের উপর প্রভাব খাটিয়েছেন। সাবেক অধ্যক্ষ গাফফারও ভুয়া সনদ দিয়ে চাকুরী হারার পর মোতালেব একটু শান্ত হয়ে যায়। মোঃ আবদুল মোতালেব গ্রামের বাড়ি হাজীগঞ্জ উপজেলায়। তিনি বিএনপি জোট সরকারের আমলে নিজ ইউনিয়নের বর্তমান সরকার দলের অনেক নেতাকে মামলা দিয়ে হয়রানি করেছেন। পরে চাঁদপুর শহরে এসে ২০১১ সাল থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত জামাতের অর্থ সম্পাদকেরও দায়িত্বে ছিলেন। এর পূর্বে তিনি ছাত্র শিবিরের সাথী ছিলেন। জামায়াতের দায়িত্বে থেকে তিনি কখনও ৫ হাজার, কখনও ২ হাজার টাকা করে সবসময় বায়তুল মাল দিয়ে গেছেন। আর সরকার বিরোধী সকল আন্দোলনে মিছিলের প্রথম সারিতে থেকে নেতৃত্ব দিতেন। এছাড়া মোতালেব ও তার পরিবার চিহ্নিত জামায়াত শিবির পরিবার। শহরের বর্তমান সরকারের আমলে মন্ত্রী ও জেলা আওয়ামীলীগের শীর্ষ নেতাদের সাথে ছবি তুলে এলাকায় গিয়ে মানুষকে তার সাথে নেতাদের শখ্যতার ছবি দেখান।
চলতি বছরের ২৯ এপ্রিল বুধবার রাষ্ট্রপতির আদেশক্রমে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের উপসচিব মো. কামরুল হাসান স্বাক্ষরিত আলাদা আলাদা প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। এই প্রজ্ঞাপনে চাঁদপুরের ৮ উপজেলায় আল আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজসহ ১৮ টি স্কুল-কলেজ এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। আল আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ এমপিওভুক্ত হওয়ায় সহকারী গ্রন্থাগারিক পদে এমপিওভুক্ত হন মোঃ আবদুল মোতালেব।
মুঠোফোনে মোঃ আবদুল মোতালেব বলেন, এটা ভুল বুঝাবুঝি হয়েছে। আর আমি ব্যক্তিগত সমস্যায় স্বেচ্ছায় চাঁদপুর আল আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজ থেকে অব্যাহতি নিয়েছি। আমি চট্টগ্রামে আছি, সঠিক কাগজ নিয়ে ফিরবো।
চাঁদপুর আল আমিন একাডেমী স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ কর্নেল ড. মোঃ শাহাদাৎ হোসেন সিকদার (অব) বলেন, বিষয়টি আমরা চট্টগ্রাম আন্তজার্তিক ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবগত হয়েছি। এর পূর্বেই মোতালেব আমাদের প্রতিষ্ঠান থেকে অব্যাহতি নিয়েছেন।
জাল সনদ দিয়ে দির্ঘদিন তিনি এই প্রতিষ্ঠানে চাকুরী করেছেন, তার বিরুদ্ধে কোন আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে অধ্যক্ষ বলেন, বিষয়টি ম্যানেজিং কমিটিকেও জানানো হয়েছে, তাদের সাথে আলোচনা করেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোছাম্মৎ রাশেদা আক্তার জানান, যদি এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকে। তাহলে সত্যতা যাচাইয়ের জন্য তদন্ত কমিটি গঠন করা হবে। ঘটনার সত্যতা থাকলে সংশ্লিস্ট প্রতিষ্ঠান আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারবেন।