অনলাইন ডেস্কঃ
মহামারী করোনাভাইরাসে আক্রান্তদের নমুনা সংগ্রহের জন্য অনেক কম খরচে ভিটিএম (ভাইরাল ট্রান্সপোর্ট মিডিয়া) কিট তৈরি করেছে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সংস্থা বিসিএসআইআরের আন্তর্জাতিক মানের গবেষণাগার ডিআরআইসিএম।
ডিআরআইসিএম (ডেজিগনেটেড রেফারেন্স ইন্সটিটিউট ফর কেমিক্যাল মেজারমেন্টস) ‘রাসায়নিক পরিমাপ বিজ্ঞান’ বা ‘কেমিক্যাল মেট্রোলজি’ বিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান।
দেশের বর্তমান ভয়াবহ করোনা সংকট মোকাবিলায় সঠিক টেস্টের জন্য সঠিক পদ্ধতিতে সঠিক নমুনা সংগ্রহ একান্ত জরুরি। ডিআরআইসিএমের পরিচালক ডক্টর মালা খানের নেতৃত্বে নিজস্ব গবেষণাগারে কোভিড-১৯ এর নমুনা সংগ্রহের জন্য ভিটিএম কিট তৈরি করেছেন ডিআরআইসিএমের একদল গবেষক।
ভিটিএম কী?
ভিটিএম হচ্ছে লবণ, প্রোটিন এবং অ্যান্টিবায়োটিকের সমন্বয়ে তৈরি বিশেষ ধরণের সল্যুশন বা দ্রবণ যার মাধ্যমে ভাইরাস সংগ্রহ, ট্রান্সপোর্ট এবং দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ করা যায়। করোনাভাইরাস (সার্স কোভ-২) এর নমুনা সংগ্রহের জন্য বিশেষ ধরনের ভিটিএম তৈরির গাইডলাইন দিয়েছে সেন্টার ফর ডিসিজ কন্ট্রোল (সিডিসি, ইউএসএ) এবং বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (ডব্লিউএইচও)।
‘কোভিড-১৯’ ও ভিটিএম কিট তৈরি
বাংলাদেশে করোনা পরিস্থিতি প্রসঙ্গে ডিআরআইসিএমের পরিচালক ড. মালা খান বলেন, সারা বিশ্বের মতো বাংলাদেশেও ছড়িয়ে পড়েছে ‘কোভিড-১৯’। কমিউনিটি পর্যায়ে এই ভাইরাসটি ছড়িয়ে পড়ার কারণে এখন ব্যাপক ভিত্তিতে টেস্টের কোনো বিকল্প নাই। শুরুতে স্বল্প সংখ্যক প্রতিষ্ঠান এই করোনা পরীক্ষা করার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও সময়ের সাথে সাথে সরকারি-বেসরকারি অনেক প্রতিষ্ঠান ও বিশ্ববিদ্যালয় ‘কোভিড-১৯’ টেস্ট করার সক্ষমতা অর্জন করেছে। কিন্তু মাঠ পর্যায়ে সঠিক উপায়ে ও পর্যাপ্ত নমুনা সংগ্রহের সীমাবদ্ধতার কারণে টেস্টের ধীরগতি রয়েছে এখনও।
ড. মালা খান বলেন, করোনার RT-PCR টেস্টে ভিটিএম কিটের অপর্যাপ্ততা একটি বড় বাধা। তা সত্ত্বেও মাঠ পর্যায়ে, অনেক বাধা-বিপত্তি উপেক্ষা করে স্যাম্পল কালেকশন করে যাচ্ছেন আমাদের টেকনেশিয়ানরা। সেই সাথে আছে অনেক নতুন প্রশিক্ষণার্থী যারা এই দুর্যোগে দেশের কাজে এগিয়ে এসেছেন। খুব স্বল্প সময়ে ট্রেনিং নিয়ে স্বতঃস্ফুর্তভাবে তারা মাঠে নেমে পড়েছেন। যথাযথ উপায়ে ও দ্রুততম সময়ে নমুনা সংগ্রহ ও দীর্ঘ সময় সংরক্ষণ- এসব কিছু বিবেচনা করে ডিআরআইসিএম ‘কোভিড-১৯’ পরীক্ষা করার জন্য একটি আদর্শ ভিটিএম কিট প্রস্তুতির প্রয়োজনীয়তা অনুভব করে।
বিশেষ করে, প্রত্যন্ত অঞ্চল থেকে জেলা বা বিভাগীয় পর্যায়ের টেস্টিং ল্যাবরেটরিতে নেয়া পর্যন্ত- এই দীর্ঘ সময় নমুনা সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি। এক্ষেত্রে ‘ডিআরআইসিএম’র তৈরি ভিটিএমে সংগৃহীত নমুনা ৪ ডিগ্রি তাপমাত্রায় সহজেই তিনদিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। ফলে সঠিকভাবে সংরক্ষণের অভাবে স্যাম্পল বাতিল হওয়া বা বাতিলের কারণে একই নমুনা একাধিকবার সংগ্রহ ও টেস্ট করার দীর্ঘ প্রক্রিয়া এড়ানো সম্ভব হবে।
‘ডিআরআইসিএম’র গবেষক দল ল্যাবরেটরিতে সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রিত পদ্ধতিতে সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোলের (সিডিসি, ইউএসএ) গাইডলাইন অনুযায়ী ভিটিএম কিট তৈরি করেছে। কিটটিতে সল্যুশন রাখার জন্য টিউব নির্বাচন করা হয় বিভিন্ন দিক বিবেচনা করে। দায়িত্বরত টেকনেশিয়ান অথবা ল্যাবরেটরিতে কার্যরত গবেষকদের হ্যান্ডলিং করার সময় কোনোভাবেই যেন ক্রস-কন্টামিনেশন না হয়, সে বিষয় বিবেচনা করেই সল্যুশন রাখার টিউব নির্বাচন করা হয়েছে। টিউবটি হালকা, সহজে এক হাতে ধরা যায় এবং এতে রবার স্টপার্স সংবলিত মুখ থাকায় চুইয়ে পড়ার কোনো সম্ভাবনা নাই।
সেন্টার ফর ডিজিজ কন্ট্রোল (সিডিসি, ইউএসএ) অথবা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা’র গাইডলাইন অনুযায়ি ‘কোভিড-১৯’ রোগীর নমুনা সংগ্রহ করতে হয় মূলত তিনটি স্থান থেকে। নাকের দুটি ছিদ্র ও গলা। নাকের মধ্যে একটি নমুনা হচ্ছে ন্যাজাল সোয়াব এবং অপরটি হচ্ছে নাকের শেষ প্রান্তে গিয়ে গলার পিছনের দেয়াল থেকে Nasopharyngeal সোয়াব। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি কার্যকর হচ্ছে Nasopharyngeal নমুনা সংগ্রহ পদ্ধতি। Nasopharyngeal নমুনা সংগ্রহের পদ্ধতি একটু জটিল। তাই এই পদ্ধতিটিকে সহজ করার জন্য কিটটিতে স্যাম্পল কালেকশনের উপযুক্ত সোয়াব স্টিক দেয়া হয়েছে।
এছাড়া গলার Oropharyngeal স্যাম্পল কালেকশন করার ক্ষেত্রে রোগীকে যেন দীর্ঘক্ষণ মুখ খোলা রাখতে না হয়, সেজন্য কিটটিতে রয়েছে একটি ‘টাং হোল্ডার’ যা ব্যবহার করে সহজেই ডিপ থ্রট থেকে নমুনা সংগ্রহ করা সম্ভব। এছাড়া কিটটিতে সিডিসি’র গাইডলাইন অনুযায়ী ছবিযুক্ত একটি নির্দেশনালিপি দেয়া হয়েছে যা খুব সহজেই ফলো করতে পারবেন মাঠপর্যায়ের একজন কর্মী।
দেশে তৈরি সঠিক মানের এই ভিটিএম কিট করোনার টেস্টের ক্ষেত্রে আমদানি নির্ভরতা যেমন কমাবে, তেমনি বৈদেশিক মুদ্রা সাশ্রয়ও সম্ভব হবে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য অধিদফতর কর্তৃক কিটটি ব্যবহারের জন্য সবুজ সংকেত দেয়া হয়েছে।
মঙ্গলবার ডিআরআইসিএম পরিচালক ড. মালা খান স্বাস্থ্য অধিদফতরের ভারপ্রাপ্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডাক্তার নাসিমা সুলতানার নিকট ৫,০০০ (পাঁচ হাজার) করোনা টেস্টের নমুনা সংগ্রহের জন্য ভিটিএম কিট উপহার হিসেবে হস্তান্তর করেন।