মতলব, ২৪ নভেম্বর, রবিবার॥
চাঁদপুরের মতলব উত্তরে এতিমখানার ছাদ ধসে অর্ধশত শিক্ষার্থী আহত হয়েছেন। আহতদের মধ্যে মতলব উত্তর, মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স এবং চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে প্রায় ৪৪জনকে চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। চাঁদপুর সদর হাসপাতালে গভীর রাতে আহত শিশুদের দেখতে যান জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান।
বর্তমানে চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে ১২জন। গুরুতর আহত একজন শিশু শিক্ষার্থীকে ঢাকা রেফার করা হয়েছে। ঘটনার খবর পেয়ে চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও দুই উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছেন।
শনিবার (২৩ নভেম্বর) দিনগত রাত আনুমানিক ১০টার দিকে মতলব উত্তর উপজেলার ফরাজিকান্দি কমপ্লেক্সের আল-আমিন এতিমখানার পরিত্যাক্ত ৪তলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় ছাদে শিক্ষককের সাথে শতাধিক শিক্ষার্থী ১৬ ডিসেম্বর বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজে অংশগ্রহন বিষয়ে একত্রিত হলে দূর্ঘটনার শিকার হয়। একত্রিত হওয়া শিক্ষার্থীরাসহ ছাদের মাঝখানের অংশ ধসে নিচে পড়ে যায়। এই সময় ওই স্থানে থাকা প্রায় ৫০জন শিক্ষার্থী কম-বেশী আহত হয়।
চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন এতিম শিক্ষার্থীরা হলেন-সিহাব (১৪), আইনুদ্দিন (১৩), নাহিদ (১৩), সাব্বির (১৩), ইব্রাহীম (১৩), তরিকুল ইসলাম (১৩), আব্দুল আজিজ (১৩), সজিব (১৫), আব্দুল্লাহ (১৪), রহমান (১৫), নাহিদ (১৪) ও সিনিয়র সহকারী মৌলভী মোহাম্মদ হোসেন (৫০)। ঢাকায় চিকিৎসার জন্য নেয়া শিশুর নাম হচ্ছে সিয়াম (১০)।
রাত ২টায় মতলব দক্ষিন উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে থাকা ওই মাদ্রাসার শিক্ষক মাওলানা আহম্মদ উল্যাহ বলেন, মতলব হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন ২৫জন। এর মধ্যে ৯জন ছাড়া বাকিদের চাঁদপুর সরকারি জেনারেল হাসপাতালে ও ৩জন চিকিৎসা নিয়ে বাড়িতে চলে যায়।
ফরাজিকান্দি কমপ্লেক্সের মহিলা মাদ্রাসার অধ্যক্ষ মো. শহীদ উল্যাহ বলেন, এতিমখানার সকল ছাত্রদের মাদ্রাসার আভ্যন্তরনী পরীক্ষা শেষ হয় শনিবারে। পরদিন রোববারে ১৬ ডিসেম্বর উপলক্ষ্যে প্রস্তুতির জন্য কাউকে ছুটি দেয়া হয়নি। প্রস্তুতি নেয়ার জন্য সকলকে কথা বলার জন্য ডেকে আনা হয় ঘটনাস্থলে। একত্রিত হলেই দূর্ঘটনার কবলে পড়ে শিক্ষার্থীরা। ঘটনার পরেই স্থানীয়দের ও মাদ্রাসার অন্য শিক্ষার্থীদের সহযোগিতায় আহতদের মতলব উত্তর উপজেলা হাসপাতালে নিয়ে যায়। ওই হাসপাতালে চিকিৎসা নেয় ১৭জন। এছাড়াও কিছু আহত ছাত্র আনন্দ বাজার ও ছেঙ্গারচর বাজারে প্রাথমিক চিকিৎসা নেয়।
ফরাজিকান্দি আলিয়া মাদ্রাসার আলিম দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র মো. মাসুদ আল বলেন, ১৬ ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবস উপলক্ষে ফরাজীকান্দি আল-আমিন এতিমখানা থেকে একটি টিম জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে, একটি টিম চাঁদপুর জেলা স্টেডিয়ামে এবং একটি টিম মতলব উত্তর উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বিজয় দিবসের অনুষ্ঠানে কুচকাওয়াজ প্রদর্শন করতে পাঠানো হয়। সেই কারণে টিম লিডার (শিক্ষক) মোহাম্মদ হোসেন সেই এতিমখানার কুচকাওয়াজে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীদের নিয়ে টিমের তালিকা তৈরী করছিলেন। এমতাবস্থায় এতিমখানার বর্ধিত অংশের দ্বিতীয় তলার ছাদ ধসে পড়ে।
এই ঘটনার সংবাদ পেয়ে তাৎক্ষনিক ঘটনাস্থলে উপস্থিত হন মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শারমিন আক্তার। তিনি পরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে এসে আহত শিশুদের চিকিৎসার তদারকি করেন। একই ভাবে মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের চিকিৎসার তত্ত্বাবধান করেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফাহমিদা হক।
চাঁদপুরের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মোহাম্মদ শওকত ওসমান বলেন, ঘটনার পরেই আমরা ৩ হাসপাতাল ও ঘটনাস্থলের সাথে সার্বিক যোগাযোগ রক্ষা করেছি। ঘটনাস্থলের ওই ভবনটি পূর্ব থেকেই পরিত্যাক্ত ঘোষণা করা হয়েছে।
রাত ১২টার পরে ঘটনাস্থল পরিদর্শনে মতলব উত্তর ফরাজিকান্দি, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে, মতলব দক্ষিণ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও সদর হাসপাতাল পরিদর্শন করেন জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান, পুলিশ সুপার মো. মাহবুবুর রহমান।
চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক মো. মাজেদুর রহমান খান বলেন, আমি রাতেই শিশুদের দেখতে হাসপাতালে ছুটে গিয়েছি। আহতদের সাথে কথা বলেছি। সবাই সুস্থ্য আছে। যারা গুরুতর আহত হয়েছেন তাদের চিকিৎসা দেয়া হয়েছে। আমরা সকলে আহত শিক্ষার্থীদের সার্বক্ষনিক চিকিৎসার খোঁজ খবর রাখছি।