রেজাউল করিম নয়ন॥
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গাফলতিতে আগামীকাল অনুষ্ঠিতব্য জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছেনা দুই স্কুল ও মাদরাসা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের দুই শিক্ষার্থী। প্রবেশপত্র আনতে গিয়েই এরা জানতে পারে তাদের প্রবেশপত্র আসেনি, তাই এ বছর তারা পরীক্ষা দিতে পারছে না। পরীক্ষায় অংশ নিতে পারবে না জেনে শিক্ষার্থী ও তাদের পরিবারের সদস্যরা কান্নায় ভেঙ্গে পড়ে। ঘটনাটি ঘটে হাজীগঞ্জ উপজেলার রামচন্দ্রপুর ফাযিল (ডিগ্রি) মাদরাসা ও টঙ্গিরপাড় হাটিলা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ে। শিক্ষার্থীরা হলেন রামচপুরর ফাযিল মাদ্রসার রাকিব হোসেন ও টঙ্গিরপাড় হাটিলা ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্র মোঃ রাব্বী। রামচন্দ্রপুর ফাজিল মাদ্রাসার অষ্টম শ্রেণির এই শিক্ষার্থীর ক্লাসে রোল নং ৩৩। তার গ্রামের বাড়ি উপজেলার ৭নং বড়কুল ইউনিয়নের ঝাঁকনী গ্রামে। সে ওই গ্রামের দেলোয়ার হোসেনের ছেলে।
রাকিব হোসেন কান্নাজড়িত কণ্ঠে নতুনেরকথাকে বলেন, আমি ফরম ফিলাপের জন্যে আমাদের শ্রেণি শিক্ষক বরকত উল্যাহ হুজুরকে ১’শ টাকা দিয়েছি। ফরম পূরণের পর থেকে কেউ আমাকে কিছুই জানায়নি। আমি মূল্যায়ন পরীক্ষা দিয়েছি, বিদায়ের চাঁদা দিয়েছি। গত বুধবার প্রবেশপত্র নিতে আসলে হুজুরারা জানান আমার নাকি ফরম পূরণ হয়নি, তাই আমার প্রবেশপত্র আসেনি। আমি পরীক্ষা দিতে পারবো না।
এ বিষয়ে মাদ্রাসার শিক্ষক মোহম্মদ বরকত উল্লাহ মুঠোফোনে বলেন, আমার কাছে কোনো টাকা দেয়নি। সে ফরম ফিলাপ করেনি, তাই প্রবেশপত্র আসেনি। মুল্যায়ন পরীক্ষা ও বিদায়ের চাঁদার নেয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, রাকিবের ফরম ফিলাপ হয়েছে কিনা তা জানা ছিল না। আমারও খেয়াল ছিল না। তবে সর্বশেষ এই শিক্ষক তার দোষ হয়েছে বলে স্বীকার করেন।
মাদরাসার অধ্যক্ষ সফিকুর রহমান বলেন, পরীক্ষার সময় রাকিব অসুস্থ ছিল। ওই সময় সে ফরম ফিলাপ করতে আসেনি। শিক্ষকের কাছে কোনো টাকাও দেয়নি। এই মাদরাসা থেকে ৩২ জন জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে।
অপরদিকে হাটিলা টঙ্গীরপাড় ইউনিয়ন উচ্চ বিদ্যালয়ের অষ্টম শ্রেণির শিক্ষার্থী (রোল-১১৭) রাব্বির ফরম পূরণ না হওয়ায় তার প্রবেশপত্র আসেনি। বিষয়টি রাব্বি ও তার পরিবার জানতে পেরেছে বৃহস্পতিবার প্রবেশপত্র আনতে গিয়ে। মূল্যায়ন পরীক্ষা, বিদায়ের চাঁদা এবং এমনকি প্রবেশপত্রের জন্যেও ৪৫০০ টাকা দিয়েছে রাব্বি। এখন শিক্ষকরা বলছেন তার প্রবেশপত্র আসেনি। বিষয়টি বৃহস্পতিবার দুপরে স্থানীয় সাংবাদিককের নিশ্চিত করেছে রাব্বির চাচা মোঃ রাসেল ও বাবা বাচ্চু মিয়া।
রাব্বির চাচা রাসেল মজুমদার বলেন, রাব্বি আমার ভাতিজা। আমি একসাথে ৫ জনের ফরম ফিলাপ করেছি। তাদের মধ্যে রাব্বি একজন। প্রধান শিক্ষকের কাছে প্রত্যেকের ফরম ফিলাপের জন্য যথাক্রমে ২৪’শ, ২২’শ, ২৮’শ, ১৮’শ ও ১২’শ টাকা পৃথক পৃথকভাবে দিয়েছি। শিক্ষকদের গাফিলতিতে রাব্বীর প্রবেশপত্র আসেনি। এই দায় প্রধান শিক্ষকের।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক তাফাজ্জল হোসেন বলেন, রাব্বীর ফরম ফিলাপের টাকা জমা হয়নি, তাই প্রবেশপত্র আসেনি। এখানে আমাদের কিছু করার নাই।
অপর দিকে রাব্বির বাবার অভিযোগ ফরম ফিলাপ না হলে রাব্বি মুল্যায়ণ পরীক্ষা দিলো কি করে, আবার প্রবেশপত্রের টাকা ও কেন্দ্র ফি হিসেবে ৪৫০ টাকা নেয়া হয়েছে কেনো?
এ বিষয়ে হাজীগঞ্জ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, যাদের প্রবেশপত্র আসেনি তাদের পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে আরো কয়েকদিন আগে বিষয়টি জানা গেলে হয়তো কিছু একটা করা যেতো। এখন আর কিছুই করার নেই। বিষয়টি দায়িত্বহীনতার মধ্যে পড়ে কিনা তা নিয়ে আমরা খবর নিচ্ছি। অপর এক প্রশ্নে এই কর্মকর্তা বলেন, প্রবেশপত্র আরো কয়েকদিন আগে এসেছে। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আরো আগে প্রবেশপত্র বিতরণ করলে আমাদের নজরে আসতো বিষয়টি।
শিরোনাম:
শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান প্রধানের গাফলতিতে হাজীগঞ্জে জেএসসি ও জেডিসি পরীক্ষা দিতে পারছে না দুই শিক্ষার্থী
Tag :
সর্বাধিক পঠিত