দু’দেশের মধ্যেকার ব্যবসা বাণিজ্যের পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহবান প্রধানমন্ত্রীর

  • আপডেট: ১২:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০১৯
  • ৬৪

অনলাইন ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদেশের মধ্যেকার ব্যবসা বাণিজ্যের পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে রপ্তানিমুখী খাতগুলোতে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান করতে জাপানি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে বৈচিত্র দেখতে চাই। এক্ষেত্রে জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে রপ্তানি কেন্দ্রিক খাতগুলোতে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধানের আহ্বান জানাই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে টোকিও-তে জাপান-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে ব্যবসা এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগকে আরো উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আকাঙ্খা ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশকে ব্যয়, মানব সম্পদ, বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ সুবিধা, বাণিজ্য সুবিধা, বিনিয়োগ সুরক্ষা ইত্যাদির বিচারে একটি দ্রুত উদীয়মান আকর্ষণীয় বিনিয়োগ স্থল হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আরো বেশি জাপানি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন।

গেল বছর জাপান টোবাকো’র বাংলাদেশে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাপানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এ রকম আরও বিনিয়োগ দেখতে চাই।

বেসরকারী খাতকে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি উদ্যোক্তা তৈরিতে এবং বেসরকারি বিনিয়োগে, এটা দেশি বা বিদেশি হতে পারে।

এশিয়ায় জাপানকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের কোম্পানিগুলো এখন বাংলাদেশে ব্যবসার আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই কোম্পানিগুলো ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সারাদেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরমধ্যে আড়াইহাজারে জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্যই একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার টু সরকার এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীতে প্রচুর জায়গা নেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও আমরা মহেশখালি- মাতারবারি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, যার মাধ্যমে এটিকে একটি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি কেন্দ্র এবং শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। এই উদ্যোগগুলোতে চাইলে জাপান সহযোগিতা করতে পারে।

তৈরী পোষাক শিল্প, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার শিল্পের সম্ভাবনা, কৃষিভিত্তিক পণ্য, পাটের তৈরী সামগ্রি, গৃহস্থলী সামগ্রি, হালকা প্রকৌশল, চামড়া জাত পণ্য এবং ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা তুলে ধরে তিনি এসব খাতে জাপানি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের সাফল্য সারা বিশ্বে সমাদৃত। বিশ্বে আমরা চীনের পরেই ২য় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানীকারক দেশ। জাপানে এই কাপড়ই আমাদের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানী পণ্য এবং ২০১৮ সালে এই রপ্তানী প্রবৃদ্ধি সকল প্রতিযোগী দেশকে ছাড়িয়ে প্রায় ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশকে বর্তমানে মান সম্পন্ন ওষুধের প্রধান বৈশ্বিক কেন্দ্রস্থল আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকাসহ বিশ্বের প্রায় ১শ’ দেশে আমরা ওষুধ রপ্তানী করছি।

তিনি বলেন, বিশ্ব সমাদৃত সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণের মধ্যদিয়ে আমাদের জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। আমাদের কোম্পানীগুলোর নির্মিত যাত্রীবাহী এবং মালামাল পরিবাহী কার্গো জাহাজ ইউরোপসহ বিশ্বের ১৪টি সরবরাহ করা হয়।

সফটওয়্যার শিল্পকে দেশের আরেকটি সম্ভবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ৮০০ আইটি কোম্পানির মধ্যে দেড়’শ কোম্পানি বিদেশী গ্রাহকদের বিশেষ আইটি সেবা দিচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মাইক্রোসফট, ইনটেল, আইবিএম, ওরাকল, সিকসোসহ স্বনামধন্য কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশের ২০ হাজার আইটি বিশেষজ্ঞ কাজ করছে। পাশাপাশি জাপানের বিশাল আইটি বাজারে আমাদের আইটি পণ্যের স্থান করে নেওয়ার উজ্জ্বল সম্ভবনা তৈরী হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমাদের কৃষি ভিত্তিক পণ্য, পাট জাতীয় পণ্য, গৃহস্থলী সামগ্রী, হালকা প্রকৌশল, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ শিল্প এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্র বিশ্ব বাজারে তার নিজস্ব একটি পরিচয় গড়ে তুলছে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে পরিবেশ নিয়ে সকলের উদ্বেগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের পচনশীল পাট এবং পাটজাতীয় পণ্য বিশ্বে ব্যাপক সম্ভবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে দেখা দিয়েছে।

তিনি এসময় দেশের দ্রুত শিল্পায়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে এক্ষেত্রে জাপানের সহযোগিতা আরো বৃদ্ধিও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ শিগগিরই দুই অংকের ঘরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং ক্রয় সক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্বে এর অবস্থান ৪১ তম। এ বছরের শেষ নাগাদ আমরা ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ জিডিপি অর্জনে সক্ষম হব বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে শীর্ষ ৩২টি দেশের মধ্য রয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী দেশের মধ্যে একটি হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে দ্রুত শিল্পায়ন আমাদের বাৎসরিক রপ্তানীর হারকে মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই দ্বিগুণ কওে তোলার সম্ভবনার সৃষ্টি করেছে।

ম্যাকিনজে এন্ড কোম্পানী বাংলাদেশকে একটি অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল সোর্সিং ডেস্টিনেশন, উদীয়মান উৎপাদন শিল্প এবং সরবরাহ কেন্দ্র এবং ক্রমবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

জেটরো তার এক সাম্প্রতিক জরিপে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের জাপানি কোম্পানীগুলোর সঙ্গে বেড়ে ওঠা শীর্ষ স্থানীয় দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের ব্যবসায়িক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করার জন্য জাপানের ব্যবসায়ীদের চিন্তা-ভাবনা পরস্পরের সঙ্গে ভাগাভাগি করার আহবান জানিয়ে বলেন, আসুন এই বিনিময়টা হোক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং উৎপানমুখী। আমি সবসময়ই আপনাদের মতামতের মূল্য দেই। কারণ, বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ককে শক্তিশালীকরণে আপনাদের অবদানের বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি।

গোল টেবিলের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার (সচিব) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সভায় শীর্ষস্থানীয় জাপানের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের ভূয়শি প্রশংসা করেন।

একইসঙ্গে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনাকারী বিদেশি ব্যবসায়ী, বিশেষকরে জাপানি ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তাদের নিরপত্তা নিশ্চিত করায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গোলটেবিল আলোচনায় সন্তোষ ব্যক্ত করা হয়।

তারা উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশকে এখন তাঁদের বিনিয়োগের একটি অন্যতম গন্তব্যস্থল হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।

বর্তমানে প্রায় ২৮০টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছে বলেও নজরুল ইসলাম উল্লেখ করেন।

অর্থমন্ত্রী এএইচএম মুস্তাফা কামাল, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক এবং সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহম্মদ আজিজ খান আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া, জাপানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে জাপান বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্সিয়াল এন্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (জেবিসিসিইসি) এর চেয়ারপার্সন টিউরো আসাদা, জাইকার নির্বাহী সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজুহিকো কোশিকাওয়া, জেটরো প্রেসিডেন্ট ইয়াসুশি আকাহোশি, সুমিটোমো কর্পোরেশনের সভাপতি এবং সিইও মাসাউকি হিউদো, মিটসুই এন্ড কোম্পানি লি: এর নির্বাহী সহ-সভাপতি শিনসুকে ফুজী, সজিটজ কর্পোরেশনের সিনিয়র ম্যানেজিং এক্সিকিউটিভ অফিসার রুটারো হিরাই, মিটসুবিশি মটরস্ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রুজিরো কোবাশি, হোন্ডা মটরস কোম্পানি লি: এর ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা নরিয়াকি আবে এবং মারুশিহা কোম্পানী প্রাইভেট লি. এর সভাপতি কিমিনবু হিরাইশিও বক্তব্য রাখেন।

জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা গোলটেবিল আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ভাবিকে বিয়ে করতে প্রবাস ফেরত বড় ভাইকে নির্মমভাবে খুন

দু’দেশের মধ্যেকার ব্যবসা বাণিজ্যের পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগানোর আহবান প্রধানমন্ত্রীর

আপডেট: ১২:৩৫:১৪ অপরাহ্ন, বুধবার, ২৯ মে ২০১৯

অনলাইন ডেস্ক:

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুদেশের মধ্যেকার ব্যবসা বাণিজ্যের পুরো সম্ভাবনা কাজে লাগিয়ে বাংলাদেশের সঙ্গে বাণিজ্য বাড়াতে রপ্তানিমুখী খাতগুলোতে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধান করতে জাপানি ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা আমাদের রপ্তানি বাণিজ্যে বৈচিত্র দেখতে চাই। এক্ষেত্রে জাপানি ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে রপ্তানি কেন্দ্রিক খাতগুলোতে বিনিয়োগের জন্য নতুন নতুন ক্ষেত্র অনুসন্ধানের আহ্বান জানাই।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আজ সকালে টোকিও-তে জাপান-বাংলাদেশ বিজনেস ফোরাম আয়োজিত গোলটেবিল বৈঠকে জাপানের প্রতিষ্ঠানগুলোর শীর্ষ কর্মকর্তাদের এ আহ্বান জানান।

প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশ এবং জাপানের মধ্যে ব্যবসা এবং বাণিজ্যিক সম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে দুই দেশের সম্পর্ক এবং জনগণের সঙ্গে জনগণের যোগাযোগকে আরো উচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার আকাঙ্খা ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশকে ব্যয়, মানব সম্পদ, বিশাল অভ্যন্তরীণ বাজার, আন্তর্জাতিক বাজারে প্রবেশ সুবিধা, বাণিজ্য সুবিধা, বিনিয়োগ সুরক্ষা ইত্যাদির বিচারে একটি দ্রুত উদীয়মান আকর্ষণীয় বিনিয়োগ স্থল হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশে আরো বেশি জাপানি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন।

গেল বছর জাপান টোবাকো’র বাংলাদেশে ১ দশমিক ৪ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগকে স্বাগত জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা জাপানি বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে এ রকম আরও বিনিয়োগ দেখতে চাই।

বেসরকারী খাতকে বাংলাদেশের অর্থনীতির প্রধান চালিকা শক্তি উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিচ্ছি উদ্যোক্তা তৈরিতে এবং বেসরকারি বিনিয়োগে, এটা দেশি বা বিদেশি হতে পারে।

এশিয়ায় জাপানকে বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান রপ্তানি গন্তব্য হিসেবে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাপানের কোম্পানিগুলো এখন বাংলাদেশে ব্যবসার আগ্রহ দেখাচ্ছে। এই কোম্পানিগুলো ব্যবসার পাশাপাশি বিভিন্ন অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে সম্পৃক্ত রয়েছে।

এ প্রসঙ্গে সারাদেশে একশ’ বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার জন্য তাঁর সরকারের উদ্যোগ তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরমধ্যে আড়াইহাজারে জাপানের বিনিয়োগকারীদের জন্যই একটি বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠা করা হচ্ছে।

তিনি আরো বলেন, সরকার টু সরকার এবং পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ মডেলে অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার জন্য চট্টগ্রামে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরীতে প্রচুর জায়গা নেয়া হয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এছাড়াও আমরা মহেশখালি- মাতারবারি সমন্বিত অবকাঠামো উন্নয়ন উদ্যোগ গ্রহণ করেছি, যার মাধ্যমে এটিকে একটি ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র, বিদ্যুৎ এবং জ্বালানি কেন্দ্র এবং শিল্পাঞ্চল হিসেবে গড়ে তুলতে পারি। এই উদ্যোগগুলোতে চাইলে জাপান সহযোগিতা করতে পারে।

তৈরী পোষাক শিল্প, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি এবং সফটওয়্যার শিল্পের সম্ভাবনা, কৃষিভিত্তিক পণ্য, পাটের তৈরী সামগ্রি, গৃহস্থলী সামগ্রি, হালকা প্রকৌশল, চামড়া জাত পণ্য এবং ওষুধ শিল্পের সম্ভাবনা তুলে ধরে তিনি এসব খাতে জাপানি বিনিয়োগ প্রত্যাশা করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের তৈরি পোশাক শিল্পের সাফল্য সারা বিশ্বে সমাদৃত। বিশ্বে আমরা চীনের পরেই ২য় সর্বোচ্চ পোশাক রপ্তানীকারক দেশ। জাপানে এই কাপড়ই আমাদের শীর্ষস্থানীয় রপ্তানী পণ্য এবং ২০১৮ সালে এই রপ্তানী প্রবৃদ্ধি সকল প্রতিযোগী দেশকে ছাড়িয়ে প্রায় ৩৩ দশমিক ৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।

বাংলাদেশকে বর্তমানে মান সম্পন্ন ওষুধের প্রধান বৈশ্বিক কেন্দ্রস্থল আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অষ্ট্রেলিয়া এবং আফ্রিকাসহ বিশ্বের প্রায় ১শ’ দেশে আমরা ওষুধ রপ্তানী করছি।

তিনি বলেন, বিশ্ব সমাদৃত সমুদ্রগামী জাহাজ নির্মাণের মধ্যদিয়ে আমাদের জাহাজ নির্মাণ শিল্প ও বিশ্ববাসীর নজর কাড়তে সক্ষম হয়েছে। আমাদের কোম্পানীগুলোর নির্মিত যাত্রীবাহী এবং মালামাল পরিবাহী কার্গো জাহাজ ইউরোপসহ বিশ্বের ১৪টি সরবরাহ করা হয়।

সফটওয়্যার শিল্পকে দেশের আরেকটি সম্ভবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে চিহ্নিত করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশের ৮০০ আইটি কোম্পানির মধ্যে দেড়’শ কোম্পানি বিদেশী গ্রাহকদের বিশেষ আইটি সেবা দিচ্ছে।

এ প্রসঙ্গে মাইক্রোসফট, ইনটেল, আইবিএম, ওরাকল, সিকসোসহ স্বনামধন্য কোম্পানিগুলোতে বাংলাদেশের ২০ হাজার আইটি বিশেষজ্ঞ কাজ করছে। পাশাপাশি জাপানের বিশাল আইটি বাজারে আমাদের আইটি পণ্যের স্থান করে নেওয়ার উজ্জ্বল সম্ভবনা তৈরী হচ্ছে বলে উল্লেখ করেন শেখ হাসিনা।

তিনি বলেন, আমাদের কৃষি ভিত্তিক পণ্য, পাট জাতীয় পণ্য, গৃহস্থলী সামগ্রী, হালকা প্রকৌশল, চামড়াজাত পণ্য, ওষুধ শিল্প এবং বিভিন্ন ইলেকট্রনিক যন্ত্র বিশ্ব বাজারে তার নিজস্ব একটি পরিচয় গড়ে তুলছে। পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে পরিবেশ নিয়ে সকলের উদ্বেগ বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের পচনশীল পাট এবং পাটজাতীয় পণ্য বিশ্বে ব্যাপক সম্ভবনাময় ক্ষেত্র হিসেবে দেখা দিয়েছে।

তিনি এসময় দেশের দ্রুত শিল্পায়নে তাঁর সরকারের পদক্ষেপসমূহ তুলে ধরে এক্ষেত্রে জাপানের সহযোগিতা আরো বৃদ্ধিও প্রত্যাশা ব্যক্ত করেন।

বাংলাদেশ শিগগিরই দুই অংকের ঘরে প্রবৃদ্ধি অর্জনে সক্ষম হবে এমন আশাবাদ ব্যক্ত করে শেখ হাসিনা বলেন, বাংলাদেশ এখন দক্ষিণ এশিয়ার দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতির দেশ এবং ক্রয় সক্ষমতার ভিত্তিতে বিশ্বে এর অবস্থান ৪১ তম। এ বছরের শেষ নাগাদ আমরা ৮ দশমিক ১৩ শতাংশ জিডিপি অর্জনে সক্ষম হব বলে আশা করছি।

তিনি বলেন, প্রাইস ওয়াটার হাউস কুপারস এর প্রতিবেদনে বাংলাদেশ অর্থনীতিতে শীর্ষ ৩২টি দেশের মধ্য রয়েছে, ২০৫০ সালের মধ্যে অন্যতম শক্তিশালী দেশের মধ্যে একটি হবে।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, দেশে দ্রুত শিল্পায়ন আমাদের বাৎসরিক রপ্তানীর হারকে মাত্র ৫ বছরের মধ্যেই দ্বিগুণ কওে তোলার সম্ভবনার সৃষ্টি করেছে।

ম্যাকিনজে এন্ড কোম্পানী বাংলাদেশকে একটি অন্যতম দ্রুত বর্ধনশীল সোর্সিং ডেস্টিনেশন, উদীয়মান উৎপাদন শিল্প এবং সরবরাহ কেন্দ্র এবং ক্রমবর্ধনশীল অর্থনীতির দেশ হিসেবে আখ্যায়িত করেছে।

জেটরো তার এক সাম্প্রতিক জরিপে বাংলাদেশকে ভবিষ্যতে এই অঞ্চলের জাপানি কোম্পানীগুলোর সঙ্গে বেড়ে ওঠা শীর্ষ স্থানীয় দেশ হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে।

প্রধানমন্ত্রী দু’দেশের ব্যবসায়িক এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ককে জোরদার করার জন্য জাপানের ব্যবসায়ীদের চিন্তা-ভাবনা পরস্পরের সঙ্গে ভাগাভাগি করার আহবান জানিয়ে বলেন, আসুন এই বিনিময়টা হোক বন্ধুত্বপূর্ণ এবং উৎপানমুখী। আমি সবসময়ই আপনাদের মতামতের মূল্য দেই। কারণ, বাংলাদেশ-জাপান সম্পর্ককে শক্তিশালীকরণে আপনাদের অবদানের বিষয়ে আমি অবগত রয়েছি।

গোল টেবিলের পরে সাংবাদিকদের ব্রিফিংকালে প্রধানমন্ত্রীর স্পিচ রাইটার (সচিব) মো. নজরুল ইসলাম বলেন, সভায় শীর্ষস্থানীয় জাপানের ব্যবসায়ী নেতৃবৃন্দ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশের সাম্প্রতিক আর্থসামাজিক উন্নয়নের এবং উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনের ভূয়শি প্রশংসা করেন।

একইসঙ্গে বাংলাদেশে ব্যবসা পরিচালনাকারী বিদেশি ব্যবসায়ী, বিশেষকরে জাপানি ব্যবসায়ী এবং উদ্যোক্তাদের নিরপত্তা নিশ্চিত করায় যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করায় গোলটেবিল আলোচনায় সন্তোষ ব্যক্ত করা হয়।

তারা উল্লেখ করেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার গতিশীল নেতৃত্বের কারণে বাংলাদেশকে এখন তাঁদের বিনিয়োগের একটি অন্যতম গন্তব্যস্থল হিসেবেও চিহ্নিত করা হয়।

বর্তমানে প্রায় ২৮০টি জাপানি কোম্পানি বাংলাদেশে কর্মরত রয়েছে বলেও নজরুল ইসলাম উল্লেখ করেন।

অর্থমন্ত্রী এএইচএম মুস্তাফা কামাল, এফবিসিসিআই সভাপতি শেখ ফজলে ফাহিম, বিজিএমইএ সভাপতি রুবানা হক এবং সামিট গ্রুপের চেয়ারম্যান মুহম্মদ আজিজ খান আলোচনায় বক্তব্য রাখেন।

এছাড়া, জাপানের ব্যবসায়ীদের মধ্যে জাপান বাংলাদেশ কমিটি ফর কমার্সিয়াল এন্ড ইকোনমিক কো-অপারেশন (জেবিসিসিইসি) এর চেয়ারপার্সন টিউরো আসাদা, জাইকার নির্বাহী সিনিয়র সহ-সভাপতি কাজুহিকো কোশিকাওয়া, জেটরো প্রেসিডেন্ট ইয়াসুশি আকাহোশি, সুমিটোমো কর্পোরেশনের সভাপতি এবং সিইও মাসাউকি হিউদো, মিটসুই এন্ড কোম্পানি লি: এর নির্বাহী সহ-সভাপতি শিনসুকে ফুজী, সজিটজ কর্পোরেশনের সিনিয়র ম্যানেজিং এক্সিকিউটিভ অফিসার রুটারো হিরাই, মিটসুবিশি মটরস্ এর ভাইস প্রেসিডেন্ট রুজিরো কোবাশি, হোন্ডা মটরস কোম্পানি লি: এর ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা নরিয়াকি আবে এবং মারুশিহা কোম্পানী প্রাইভেট লি. এর সভাপতি কিমিনবু হিরাইশিও বক্তব্য রাখেন।

জাপানে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত রাবাব ফাতিমা গোলটেবিল আলোচনাটি সঞ্চালনা করেন।