কলেজে চাকুরি করতে হলে আমাদের কথা শুনতে হবে বলেই অধ্যক্ষকে মারতে মারতে মাটিতে ফেললেন ছাত্রলীগ সভাপতি

  • আপডেট: ১২:২৯:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ১৩

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার আশাশুনি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের ওপর তিন দফা হামলা চালিয়ে তার অফিস ভাঙচুর করেছে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজসহ তার কয়েকজন সহযোগী।

কিল-ঘুষি মারতে মারতে অধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজ বলেন, কলেজে চাকরি করতে চাইলে আমাদের কথা শুনতে হবে। এ অবস্থায় কেঁদে ফেলেন অধ্যক্ষ।

সোমবারের এ ঘটনায় অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান আশাশুনি থানায় একটি মামলা করেছেন। পরে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুরে আশাশুনি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম বলেন, সোমবার অধ্যক্ষ মামলা দেয়ার পর আশরাফুজ্জামান তাজ ও তার সহযোগী ছাত্রলীগ নেতা আল মামুনকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় কয়েকজন সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে নিজ কক্ষে অফিসিয়াল কাজ করছিলাম। এ সময় সালাম দিয়ে আমাকে রুমের বাইরে আসতে বলে এক ছাত্রলীগ নেতা। বাইরে আসার পরপরই আমার সামনে একটি ছেলেকে মারধর করতে থাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মারধরের কারণ জানতে চাইলে তারা জানায় সাতক্ষীরা থেকে একটি মেয়েকে এনে কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে অনৈতিক আচরণ করেছে ওই ছেলে। তখন ছেলেটিকে মারধর না করে আমার কাছে দিতে বলি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। পরে ওই ছেলের অভিভাবকদের ফোন করে ডেকে আনি। একই সময়ে সেখানে পুলিশও পৌঁছায়। পরে পুলিশ থানায় এনে মুচলেকা নিয়ে ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়।

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান আরও বলেন, ওই ছেলেটিকে তাদের হাতে কেন দেয়া হলো না এই কৈফিয়ত তলব করে আমার ওপর হামলা করে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজ ও তার সহযোগী শাওন, আল মামুন ও সাইফুল্লাহসহ ৭-৮ জন ছাত্রলীগ কর্মী। এ সময় আমার কক্ষ ভাঙচুর করে তারা। সেই সঙ্গে জানালার গ্লাস, চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে ইটপাটকেল ছুড়ে তাণ্ডব চালানো হয়।

অধ্যক্ষ বলেন, তাদের হামলার সময় পরপর তিনবার হামলার শিকার হই আমি। আমাকে চড় কিল-ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়া হয়। সহকর্মী শিক্ষকরা হামলাকারীদের কবল থেকে আমাকে রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সহকর্মীরাও লাঞ্ছিত হয়েছেন।

এ সময় ছাত্রলীগ নেতা তাজ অধ্যক্ষকে বলেন, এখানে চাকরি করতে হলে আমাদের কথা মতো চলতে হবে। না হলে সাইজ করে দেব।

আক্ষেপ করে অধ্যক্ষ বলেন, এসব সন্তানতুল্য ছেলেদের হাতে বারবার লাঞ্ছিত হয়ে আমরা যেন মরে গেছি। এটি চরম লজ্জার। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। একই সঙ্গে তাদের নামে মামলা করেছি।

ওসি আবদুস সালাম বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। মামলার পর সোমবার রাতেই আশরাফুজ্জামান তাজ ও আল মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান বলেন, তাজ ও অন্যদের বিরদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আশাশুনি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

ফরিদগঞ্জে গণপিটুনিতে যুবকের মৃত্যু

কলেজে চাকুরি করতে হলে আমাদের কথা শুনতে হবে বলেই অধ্যক্ষকে মারতে মারতে মাটিতে ফেললেন ছাত্রলীগ সভাপতি

আপডেট: ১২:২৯:৫৮ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ১০ সেপ্টেম্বর ২০১৯

সাতক্ষীরা প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার আশাশুনি সরকারি কলেজের অধ্যক্ষের ওপর তিন দফা হামলা চালিয়ে তার অফিস ভাঙচুর করেছে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজসহ তার কয়েকজন সহযোগী।

কিল-ঘুষি মারতে মারতে অধ্যক্ষকে ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজ বলেন, কলেজে চাকরি করতে চাইলে আমাদের কথা শুনতে হবে। এ অবস্থায় কেঁদে ফেলেন অধ্যক্ষ।

সোমবারের এ ঘটনায় অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান আশাশুনি থানায় একটি মামলা করেছেন। পরে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজসহ দুইজনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।

মঙ্গলবার দুপুরে আশাশুনি থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবদুস সালাম বলেন, সোমবার অধ্যক্ষ মামলা দেয়ার পর আশরাফুজ্জামান তাজ ও তার সহযোগী ছাত্রলীগ নেতা আল মামুনকে রাতেই গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান বলেন, শনিবার সন্ধ্যায় কয়েকজন সহকর্মীকে সঙ্গে নিয়ে নিজ কক্ষে অফিসিয়াল কাজ করছিলাম। এ সময় সালাম দিয়ে আমাকে রুমের বাইরে আসতে বলে এক ছাত্রলীগ নেতা। বাইরে আসার পরপরই আমার সামনে একটি ছেলেকে মারধর করতে থাকে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। মারধরের কারণ জানতে চাইলে তারা জানায় সাতক্ষীরা থেকে একটি মেয়েকে এনে কলেজ ক্যাম্পাসের মধ্যে অনৈতিক আচরণ করেছে ওই ছেলে। তখন ছেলেটিকে মারধর না করে আমার কাছে দিতে বলি ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের। পরে ওই ছেলের অভিভাবকদের ফোন করে ডেকে আনি। একই সময়ে সেখানে পুলিশও পৌঁছায়। পরে পুলিশ থানায় এনে মুচলেকা নিয়ে ছেলেটিকে ছেড়ে দেয়।

অধ্যক্ষ মিজানুর রহমান আরও বলেন, ওই ছেলেটিকে তাদের হাতে কেন দেয়া হলো না এই কৈফিয়ত তলব করে আমার ওপর হামলা করে কলেজ ছাত্রলীগ সভাপতি আশরাফুজ্জামান তাজ ও তার সহযোগী শাওন, আল মামুন ও সাইফুল্লাহসহ ৭-৮ জন ছাত্রলীগ কর্মী। এ সময় আমার কক্ষ ভাঙচুর করে তারা। সেই সঙ্গে জানালার গ্লাস, চেয়ার টেবিল ভাঙচুর করে ইটপাটকেল ছুড়ে তাণ্ডব চালানো হয়।

অধ্যক্ষ বলেন, তাদের হামলার সময় পরপর তিনবার হামলার শিকার হই আমি। আমাকে চড় কিল-ঘুষি মেরে মাটিতে ফেলে দেয়া হয়। সহকর্মী শিক্ষকরা হামলাকারীদের কবল থেকে আমাকে রক্ষার চেষ্টা করেও ব্যর্থ হন। সহকর্মীরাও লাঞ্ছিত হয়েছেন।

এ সময় ছাত্রলীগ নেতা তাজ অধ্যক্ষকে বলেন, এখানে চাকরি করতে হলে আমাদের কথা মতো চলতে হবে। না হলে সাইজ করে দেব।

আক্ষেপ করে অধ্যক্ষ বলেন, এসব সন্তানতুল্য ছেলেদের হাতে বারবার লাঞ্ছিত হয়ে আমরা যেন মরে গেছি। এটি চরম লজ্জার। বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানিয়েছি। একই সঙ্গে তাদের নামে মামলা করেছি।

ওসি আবদুস সালাম বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে অভিযোগের সত্যতা পেয়েছি। মামলার পর সোমবার রাতেই আশরাফুজ্জামান তাজ ও আল মামুনকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ সাদিকুর রহমান বলেন, তাজ ও অন্যদের বিরদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় আশাশুনি সরকারি কলেজ ছাত্রলীগের কমিটি বিলুপ্ত করা হয়েছে।