চাঁদপুরের শাহরাস্তিতে জনৈক মোঃ জহিরুল হক পাটোয়ারীর বিরুদ্ধে জাল জালিয়াতির মাধ্যমে আপন সহোদর ভাই ও বোনের সম্পত্তি আত্মসাতের অভিযোগ উঠেছে।
এ নিয়ে ভাই-বোনের মাঝে সম্পত্তি দখল, বে-দখল, মামলা ও হামলার ঘটনা ঘটেছে। পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের কাজির কামতা পাটোয়ারী বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে।
স্থানীয় এলাকাবাসী ও বিভিন্ন নথিপত্র সূত্রে জানা যায়, পৌর শহরের ১নং ওয়ার্ডের কাজির কামতা পাটোয়ারী বাড়ির মৃত গোলাম হোসেন পাটোয়ারীর পুত্র জহিরুল হক পাটোয়ারী তার বড় ভাই আবদুল হক পাটোয়ারীর ওয়ারিশ হিসেবে প্রাপ্ত সম্পত্তি ও দলিলের সম্পত্তি জাল জালিয়াতির মাধ্যমে নিজের হস্তগত করে নেন। এছাড়া বোনের সম্পত্তি ও নিজের সুবিধার্থে ভাইয়ের সম্পত্তির উপর জনগনের চলাচলের রাস্তা দাবি করে আত্মসাতের পায়তারা করছেন। এ নিয়ে তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে বিরোধ ও মামলা হামলার ঘটনা ঘটেছে।
আবদুল হক পাটোয়ারী জানান, আমি আমার স্ত্রী খালেদা বেগমের সাব কবলা দলিলের সম্পত্তিতে দোকানঘর নির্মাণ করতে গেলে আমার ছোট ভাই এখানে জনগনের চলাচলের পথ দাবি করে বাঁধা দেয়। সে ২০০১ সালে আমার কাছ থেকে ১৭ শতাংশ সম্পত্তি নিয়ে আমাকে আড়াই শতাংশ সম্পত্তি দানপত্র করে দেয়। আমাকে দেয়া আড়াই শতাংশ দানপত্র দলিলের সম্পত্তি পরবর্তীতে দলিল বাতিল করে নিজের নামে করে নেয়। অথচ আমার দেয়া দানপত্রের ১৭ শতাংশ সম্পত্তি তার দখলেই রয়েছে। এছাড়া বিএস ৪৪ খতিয়ানের অন্তর্ভূক্ত ৪২৫ দাগের ৬ শতাংশ সম্পত্তি আমাদের দুই ভাইয়ের সমান ভাগ রয়েছে। সে ওই সম্পত্তি একাই অন্যত্র হস্তান্তর করে ফেলে যা আমি পরবর্তীতে জানতে পারি। তাছাড়া আমার বোনের সম্পত্তি নিজ দখলে রাখায় সম্পত্তির ন্যায্য ভাগ পেতে তারা জহিরুল হকের বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করেছেন। আমার বাবার নিজ নামে খরিদা সম্পত্তির দলিল থাকা সত্বেও ওই সম্পত্তি সে নিজের ক্রয়কৃত বলে দাবী করছে। সে রেলওয়েতে চাকরী করার সুবাধে অত্যান্ত চালাক প্রকৃতির একজন মানুষে পরিণত হয়েছে। আমরা গ্রামের সহজ সরল মানুষ, কাগজপত্রের কোন জটিলতা বুঝতে না পারায় আমাদেরকে ঘুমে রেখে নিজের অসদ উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য জাল জালিয়াতির আশ্রয় নিয়েছে। এতে করে আমি ও আমার বোন সম্পত্তির ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হচ্ছি। একের পর এক ভূমি আত্মসাৎ ও দখল ছাড়াও তার বহু অপকর্ম সমাজে কথিত রয়েছে। তার জাল জালিয়াতির কবল থেকে রক্ষা পেতে আইনি সহযোগিতা ও সংশ্লিষ্ট দপ্তরের মাধ্যমে কঠিন শাস্তির দাবী জানাই।
কাজির কামতা গ্রামের মৃত আমির উদ্দিন পাটোয়ারীর পুত্র মোঃ মমিনুল হক পাটোয়ারী জানান, তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে বিরোধ চলে আসছে। জহিরুল হক পাটোয়ারী তার ভাই আবদুল হকের সম্পত্তি জোর পূর্বক দখল করে নিচ্ছে। তার সম্পত্তির গাছগাছালি কেটে নিয়েছে।
একই গ্রামের মৃত কামিন উদ্দিন পাটোয়ারীর পুত্র মোঃ ছফিউল্যাহ পাটোয়ারী জানান, তাদের দুই ভাইয়ের বিরোধের বিষয়ে আমি বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক করেছি। সালিশ বৈঠকে শান্তির লক্ষে সিদ্ধান্ত হলেও জহিরুল হক পাটোয়ারী তা মানতে চান না।
ওই গ্রামের মৃত আঃ রবের পুত্র দুলাল পাটোয়ারী জানান, তর্কিত সম্পত্তিটি পূর্বে খাল ছিলো। আমরা এটি ভরাট করে আবদুল হক পাটোয়ারীর স্ত্রীর নিকট বিক্রয় করি। তাদের দুই ভাইয়ের মধ্যে সম্পত্তি নিয়ে মামলা মোকদ্দমা চলছে। যে রাস্তা নিয়ে বর্তমানে বিরোধ দেখা দিয়েছে এখানে সরকারি কোন সম্পত্তি নেই। ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তির উপর পূর্ব থেকে এমনিতে মানুষ হাটাচলা করতো।
ওই গ্রামের মমিনুল হক পাটোয়ারীর পুত্র মোঃ সেলিম পাটোয়ারী জানান, এখানে সরকারি কিংবা আগ থেকে চলাচলের কোন রাস্তা ছিলো না। ব্যক্তি মালিকানা সম্পত্তির উপর দুই ভাই তার পরিবারের লোকজন আসা যাওয়া করতো। জহিরুল হক পাটোয়ারীর বাড়ির লোকজনের জন্য চলাচলের রাস্তা রয়েছে। তারা অহেতুক মালিকানা জায়গার উপর রাস্তা দাবি করছে।
জহিরুল হকের চাচাতো ভাই মৃত সুলতান হোসেনের পুত্র সৈয়দ আহমেদ জানান, অভিযুক্ত জহিরুল হক আমার আপন চাচাতো ভাই। আমার বাবা জীবিত থাকতে পাশর্^বর্তি নিজমেহার মৌজায় সে কিছু সম্পত্তি প্রলোভন দিয়ে লিখে নেয়। পরবর্তীতে ফেরত দিবে বলে কালক্ষেপন করায় আমার বাবা সম্পত্তি শোকে পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। এছাড়া বর্তমানে আমাদের বসতঘরের ১ শতাংশ সম্পত্তি জহিরুল হক পাটোয়ারী নিজনামে খারিজ খতিয়ান করে নেন।
ওই গ্রামের ছফিউল্যাহ পাটোয়ারীর পুত্র ইয়াছিন পাটোয়ারী মানিক জানান, আমি তাদের বিরোধকৃত বিষয়ে বেশ কয়েকবার সালিশ বৈঠক করেছি। উভয়পক্ষই আমাকে সালিশ নিযুক্ত করেছে। অথচ জহিরুল হক পাটোয়ারী আমাকে অভিযুক্ত করে থানায় মামলা দায়ের করেছেন। তিনি প্রকৃতপক্ষে সমাজের একজন ভূমিদস্যু ও অসাধু ব্যক্তি।
আবদুল হকের স্ত্রী খালেদা বেগম জানান, আমার স্বামী মোহরানা’র হকের বিপরীতে ২ শতাংশ সম্পত্তি দিয়েছেন। আমার দেবর জহিরুল হক পাটোয়ারী নিজস্বার্থ হাসিলের উদ্দেশ্যে ওই সম্পত্তির উপর দিয়ে কাল্পনিক রাস্তা তৈরি করার অপচেষ্টা করছেন।
অভিযোগের বিষয়ে জহিরুল হক পাটোয়ারীর পুত্র লাভলু পাটোয়ারীর সাথে আলাপে তিনি জানান, দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত আমার জেঠা আবদুল হক পাটোয়ারী আমার বাবার সম্পত্তি দখল করে আছে। পৈত্রিক সম্পত্তি শেষ করে এখন আমার বাবার ক্রয়কৃত সম্পত্তির উপর তার নজর পড়েছে। স্থানীয় কিছু দালাল প্রকৃতির লোকদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে তিনি আমাদের হয়রানি করছেন। আমাদের সহ পাশ^বর্তি এলাকার লোকজনের চলাচলের রাস্তার সম্মুখে আমার জেঠির নামে সম্পত্তি কিনে চলমান পথ বন্ধ করে দোকানঘর নির্মাণ করার চেষ্টা করছেন। এতে করে আমাদের বাড়ির লোকজন ও সাধারণ পথচারীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছে।
অভিযুক্ত জহিরুল হক পাটোয়ারী জানান, জনগনের চলাচলের জন্য দীর্ঘ বছর ধরে আমাদের বাড়ির পূর্ব পাশ দিয়ে আশপাশের এলাকার লোকজনের চলাচলের রাস্তা রয়েছে। ইদানিং কিছু দুস্কৃতিকারী লোকদের ছত্রছায়ায় আমার বড় ভাই নিজের সম্পত্তি দাবী করে ওই রাস্তার সম্মুখে একটি দোকান ঘর নির্মাণের চেষ্টা করেন। তিনি ওই সম্পত্তি আমাদের একই বাড়ির দুলাল নামক এক ব্যক্তির কাছ থেকে তার স্ত্রীর নামে ক্রয় করেছেন বলে দাবী করেন। জনগনের চলাচলের রাস্তা কিভাবে তিনি ক্রয় করেন সেটা আমার বোধগম্য নয়। আমার ভাই এলাকার কিছু দুষ্টু লোকদের সাথে নিয়ে আমার সম্পত্তি ও জনগনের রাস্তা বন্ধ করে দেয়ার অপচেষ্টা করছে। ইতোপূর্বেও তিনি আমার অনেক সম্পত্তি দখল করেছেন। আমি তাদের এ সকল কর্মকান্ডে ও এলাকার দুষ্টু লোকদের ভয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে দুঃশ্চিন্তায় রয়েছি।