চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন এডহক কমিটি গঠন

  • আপডেট: ০৭:০৪:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ মে ২০২২
  • ২২

ফাইল ফটো।

দায়িত্বে অবহেলা, অব্যবস্থাপনা এবং ব্যর্থতার দায়ে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির নির্বাহী পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়েছে। একই সাথে অন্তর্বর্তীকালীন কার্য পরিচালনার জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৪ মে মঙ্গলবার চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই সৃদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির সভাপতি অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সদস্যদের সর্ব সম্মতিক্রমে সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক গঠনতন্ত্রের ২৪ এর (ছ) উপ-ধারার ক্ষমতাবলে বর্তমান নির্বাহী পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষনা করেন। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন কার্য পরিচালনার জন্য গঠনতন্ত্রের ২৪ এর (জ) উপ-ধারা অনুযায়ী ১১ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীণ কমিটি (এডহক কমিটি) গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন।

চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর এডহক কমিটি নিম্মরূপ: আহ্বায়ক অতি: জেলা প্রশাসক মোছামৎ রাশেদা আক্তার (শিক্ষা ও আইসিটি), সদস্য সচিব কবি, লেখক ও সংগঠক মোঃ শাহাদাৎ হোসেন শান্ত, সদস্য অতি: পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল সদর) অসিফ মহিউদ্দিন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক অজয় কুমার ভৌমিক, শিক্ষক ও লেখক অধ্যাপক জালাল চৌধুরী, কবি ও লেখক মাহবুবুর রহমান সেলিম, শিক্ষক, কবি ও সাংবাদিক মোঃ ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, কবি ও লেখক আব্দুল্লাহ হিল কাফি, কবি, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক জাহাঙ্গীর হোসেন, কবি ও গল্পকার কাদের পলাশ, কবি, গল্পকার ও সংগঠক আশিক বিন রহিম।

আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্বের কমিটি এডহক কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করা এবং সকল হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

সভার উল্লেখযোগ্য আলোচনা হলো : গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ সাহিত্য একাডেমী যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেননি। এমনকি ২০১৯ সালে আয়োজিত সভার সিদ্ধান্তসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। গঠণতন্ত্রের প্রথম অধ্যয়ের ৭ ধারায় বর্ণিত সাহিত্য একাডেমির আদর্শ ও উদ্দেশ্য সভায় পাঠ করা হয়। যা অনুযায়ী যথাযথ কার্যক্রম গৃহীত হয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপধারা-ঘ তে উল্লিখিত আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও ওয়ার্কসপ আয়োজিত হয়নি। উপধারা-ঙ অনুযায়ী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস এবং জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সাহিত্য ব্যক্তিত্বদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করা হয়নি। উপধারা-চ অনুয়ায়ী আঞ্চলিক ও জাতীয় ভিত্তিতে সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়নি। গঠণতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ পরিষদের সভা আয়োজনের কথা থাকলেও তা আয়োজিত হয়নি। নির্বাহী পরিষদ গঠনতন্ত্রের আলোকে সঠিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়নি। গঠনতন্ত্র সংশোধনের লক্ষ্যে নির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়ে থাকলেও গঠনতন্ত্রই সংশোধন করা হয়নি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চাঁদা উত্তোলন করা হয়নি ফলে আর্থিক চরম অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়েছে। একাডেমীকে পুনুরুজ্জীবিত করে এর আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমান নির্বাহী পরিষদকে অবলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়।

একাডেমির সভাপতি অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একাডেমীর চরম আর্থিক দুরবস্থা, সদস্যগণের অসহযোগিতা এবং একাডেমীর আদর্শ ও উদ্দেশ্য হতে বিচ্যুত হওয়ায় বর্তমানে চরম অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাহিত্য একাডেমীর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যারা সাহিত্য অনুরাগী, সাহিত্য চর্চা করেন এবং সাহিত্যের জন্য নিবেদিত প্রাণ, উদ্যমী এবং শিল্প ও সাহিত্যের জন্য কাজকরতে আগ্রহী তাদের নিয়ে নতুন করে কমিটি গঠন করা হলে বর্তমান এই অচল অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

সভায় সাহিত্য একাডেমির সভাপতি একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত এর কাছে গত সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চান। মহাপরিচালক জানান, গত সভার সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন বিভিন্ন কারণে সম্ভব ও হয়নি। এবিষয়ে সভাপতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং গঠনতন্ত্রের ৭ অনুচ্ছেদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য পাঠ করে শোনান। যেখানে বলা আছে যে –

(ক) সাহিত্যের চর্চা ও সাধনার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যক্তি মনের উদারতা বিধান, জাতীয় ঐক্যের মৌল ভিত্তি সুদৃঢ় করিবার বিষয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করা এবং মানুষে মানুষে প্রীতি ও সৌহার্দ্য্যের বন্ধন রচনা করা।

(খ) সংস্কৃতিবান ও রুচিশীল জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করা।

(গ) মানবিক গুনাবলীর উৎকর্ষ সাধন করা।

ঘ) সাহিত্যের নানা বিষয়ে আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও ওয়ার্কশপ এর আয়োজন করা। (ঙ) জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য ও ব্যক্তিত্বের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করা।

(চ) আঞ্চলিক ও জাতীয় ভিত্তিতে সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা। (ছ) সর্ব শ্রেণীর লোকের মধ্য হইতে একটি সাহিত্য অনুরাগী ও পাঠক শ্রেণী গড়ে তোলা। (জ) নবীন-প্রবীণ লেখকদের মেধা ও প্রতিভা বিকাশের উদ্দেশ্যে এবং সৃজনশীলতার পরিপুষ্টি সাধনের জন্য বিশিষ্ট সাহিত্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। (ঝ) জনগণকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কবিতা পাঠ বা আবৃত্তি এবং গল্প ও প্রবন্ধ পাঠের আয়োজন করা ।

(ঞ) স্থানীয় লেখকদের প্রতিভা বিকাশের জন্য এবং তাদের সৃজনশীলতাকে পরিচর্যা করবার জন্য পত্রিকা, সাহিত্য পত্রিকা, সংকলন ইত্যাদি প্রকাশ করা। (ট) একাডেমীর সঙ্গে জড়িত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং এলাকার ও দেশের স্বনামধন্য সুধীজনের নামে বক্তৃতামালা প্রবর্তন করা। (ঠ) সাহিত্যে ক্ষেত্রে সুপ্ত প্রতিভার অন্বেষণ, বিকাশ সাধন ও লালন করা।

(ড) লোকজ সাহিত্যর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা।( ঢ) অপসংস্কৃতির প্রসার রোধ করা। (ণ) সমসাময়িক সাহিত্য, সংস্কৃতি বা শিল্পকলার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিকে সহিত্য একাডেমীর পুরস্কার ও সনদপত্র বা “সাহিত্য একাডেমী পদক” প্রদান করা।

সভাপতি মহাপরিচালকের নিকট ২০১৩ সালের গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত জানান, গঠনতন্ত্র সংশোধন সাপেক্ষে উক্ত কমিটি বৈধতা পাওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে গঠণতন্ত্র সংশোধন করা সম্ভবপর হয়নি। উক্ত কমিটি ২০১৫ সালে মেয়াদ উত্তীর্ন হয়।
এর পেক্ষিতে সভাপতি বলেন, ‘তাহলেতো গঠিত কমিটিতে গোড়ায় গলদ রয়েছে।’

সভাপতি আরো বলেন, সাহিত্য একাডেমীর নির্বাহী পরিষদের ২/৩ বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনায় দেখা যায় তারা সাহিত্য একাডেমীর আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে উদ্যেগী ছিলেন না, সাধারণ পরিষদের কোন সভা আহবান করা হয়নি, সদস্যদের কার্যক্রম গ্রহণে অনীহা বা অসহযোগিতা ছিল এবং নিয়মিত চাঁদা আদায় না করা ইত্যাদি কারণে একাডেমীতে আর্থিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা কাম্য নয়।

একাডেমির পরিচালক অজয় ভৌমিক বলেন, সাহিত্য একাডেমী সৃষ্টির পর থেকে কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে এগুতে পারেনি। আমরা যারা কমিটিতে ছিলাম, আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিনি। এ ব্যর্থতার দায় আমাদের। সাহিত্য একাডেমীকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সভাপতি যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন আমি তার সাথে একমত। যদি নতুন কমিটি গঠিত হয় তবে আমি উক্ত কমিটিকে স্বাগত জানাব।

একাডেমির নির্বাহী সদস্য সামীম আহম্মেদ খান বলেন, জেলা প্রশাসকের নিকট বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রকাশনাসমূহ তুলে ধরেন। এ বিষয়ে সভাপতি প্রকাশনাসমুহের অনুলিপি থাকলে দিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। একাডেমির পরিচালক ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, কমিটিতে থাকা সত্ত্বেও আমি কখনও সভার বিষয়ে জানিনা বা জানতাম না এবং সাহিত্য একাডেমির লাইব্রেরীতে খুব কম সংখ্যক বই রয়েছে। বর্তমান কমিটির কার্যকলাপে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

নির্বাহী সদস্য ডা: পিযূষ কান্তি বড়ুয়া বলেন, সাহিত্য একাডেমীর কার্যক্রম চালানোর জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়েছি। কতটুকু সফল হয়েছি তা বিবেচনার দায়িত্ব জেলা প্রশাসক মহোদয়ের। এছাড়াও তিনি বলেন, পূর্বের নির্বাহী কমিটি অবৈধ না বলার জন্য অনুরোধ করেন। এ দায় সকল সদস্যদের উপর বর্তায়।
এ বিষয়ে সভাপতি বলেন, গত সভায় দুটি কমিটি করেছিলাম কিন্তু কোন কমিটি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি যা কোনভাবেই কাম্য নয়।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

শাহরাস্তিতে প্রবাসীর ঘরে দুর্ধর্ষ চুরি

চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির পুরনো কমিটি বিলুপ্ত করে নতুন এডহক কমিটি গঠন

আপডেট: ০৭:০৪:৩৫ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৭ মে ২০২২

দায়িত্বে অবহেলা, অব্যবস্থাপনা এবং ব্যর্থতার দায়ে চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির নির্বাহী পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষনা করা হয়েছে। একই সাথে অন্তর্বর্তীকালীন কার্য পরিচালনার জন্য ১১ সদস্য বিশিষ্ট নতুন এডহক কমিটি গঠন করা হয়েছে। ২৪ মে মঙ্গলবার চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির কার্যনির্বাহী কমিটির সভায় এই সৃদ্ধান্ত গৃহিত হয়।

চাঁদপুরের জেলা প্রশাসক ও চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমির সভাপতি অঞ্জনা খান মজলিশের সভাপতিত্বে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভার সদস্যদের সর্ব সম্মতিক্রমে সাহিত্য একাডেমীর সভাপতি হিসেবে জেলা প্রশাসক গঠনতন্ত্রের ২৪ এর (ছ) উপ-ধারার ক্ষমতাবলে বর্তমান নির্বাহী পরিষদ বিলুপ্ত ঘোষনা করেন। পাশাপাশি অন্তর্বর্তীকালীন কার্য পরিচালনার জন্য গঠনতন্ত্রের ২৪ এর (জ) উপ-ধারা অনুযায়ী ১১ সদস্য বিশিষ্ট অন্তর্বর্তীকালীণ কমিটি (এডহক কমিটি) গঠন করার সিদ্ধান্ত নেন।

চাঁদপুর সাহিত্য একাডেমীর এডহক কমিটি নিম্মরূপ: আহ্বায়ক অতি: জেলা প্রশাসক মোছামৎ রাশেদা আক্তার (শিক্ষা ও আইসিটি), সদস্য সচিব কবি, লেখক ও সংগঠক মোঃ শাহাদাৎ হোসেন শান্ত, সদস্য অতি: পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল সদর) অসিফ মহিউদ্দিন, সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক অজয় কুমার ভৌমিক, শিক্ষক ও লেখক অধ্যাপক জালাল চৌধুরী, কবি ও লেখক মাহবুবুর রহমান সেলিম, শিক্ষক, কবি ও সাংবাদিক মোঃ ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী, কবি ও লেখক আব্দুল্লাহ হিল কাফি, কবি, প্রাবন্ধিক ও সংগঠক জাহাঙ্গীর হোসেন, কবি ও গল্পকার কাদের পলাশ, কবি, গল্পকার ও সংগঠক আশিক বিন রহিম।

আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে পূর্বের কমিটি এডহক কমিটির নিকট দায়িত্ব হস্তান্তর করা এবং সকল হিসাব বুঝিয়ে দেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়।

সভার উল্লেখযোগ্য আলোচনা হলো : গত বছরের ৩০ সেপ্টেম্বর ২০২১ কার্য নির্বাহী কমিটির সভায় গৃহীত সিদ্ধান্তসমূহ সাহিত্য একাডেমী যথাযথভাবে বাস্তবায়ন করেননি। এমনকি ২০১৯ সালে আয়োজিত সভার সিদ্ধান্তসমূহ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। গঠণতন্ত্রের প্রথম অধ্যয়ের ৭ ধারায় বর্ণিত সাহিত্য একাডেমির আদর্শ ও উদ্দেশ্য সভায় পাঠ করা হয়। যা অনুযায়ী যথাযথ কার্যক্রম গৃহীত হয়নি। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য উপধারা-ঘ তে উল্লিখিত আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও ওয়ার্কসপ আয়োজিত হয়নি। উপধারা-ঙ অনুযায়ী জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস এবং জাতীয় ও আর্ন্তজাতিক সাহিত্য ব্যক্তিত্বদের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করা হয়নি। উপধারা-চ অনুয়ায়ী আঞ্চলিক ও জাতীয় ভিত্তিতে সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা হয়নি। গঠণতন্ত্র অনুযায়ী সাধারণ পরিষদের সভা আয়োজনের কথা থাকলেও তা আয়োজিত হয়নি। নির্বাহী পরিষদ গঠনতন্ত্রের আলোকে সঠিক প্রক্রিয়ায় গঠিত হয়নি। গঠনতন্ত্র সংশোধনের লক্ষ্যে নির্বাহী পরিষদ গঠিত হয়ে থাকলেও গঠনতন্ত্রই সংশোধন করা হয়নি। গঠনতন্ত্র অনুযায়ী চাঁদা উত্তোলন করা হয়নি ফলে আর্থিক চরম অব্যবস্থাপনার সৃষ্টি হয়েছে। একাডেমীকে পুনুরুজ্জীবিত করে এর আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের লক্ষ্যে সর্বসম্মতিক্রমে বর্তমান নির্বাহী পরিষদকে অবলুপ্ত করার প্রস্তাব করা হয়।

একাডেমির সভাপতি অঞ্জনা খান মজলিশ বলেন, গঠনতন্ত্র অনুযায়ী একাডেমীর চরম আর্থিক দুরবস্থা, সদস্যগণের অসহযোগিতা এবং একাডেমীর আদর্শ ও উদ্দেশ্য হতে বিচ্যুত হওয়ায় বর্তমানে চরম অচলবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সাহিত্য একাডেমীর কার্যক্রম পরিচালনার জন্য যারা সাহিত্য অনুরাগী, সাহিত্য চর্চা করেন এবং সাহিত্যের জন্য নিবেদিত প্রাণ, উদ্যমী এবং শিল্প ও সাহিত্যের জন্য কাজকরতে আগ্রহী তাদের নিয়ে নতুন করে কমিটি গঠন করা হলে বর্তমান এই অচল অবস্থা থেকে উত্তরণ সম্ভব।

সভায় সাহিত্য একাডেমির সভাপতি একাডেমীর মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত এর কাছে গত সভার সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চান। মহাপরিচালক জানান, গত সভার সিদ্ধান্তের বাস্তবায়ন বিভিন্ন কারণে সম্ভব ও হয়নি। এবিষয়ে সভাপতি অসন্তোষ প্রকাশ করেন এবং গঠনতন্ত্রের ৭ অনুচ্ছেদের আদর্শ ও উদ্দেশ্য পাঠ করে শোনান। যেখানে বলা আছে যে –

(ক) সাহিত্যের চর্চা ও সাধনার সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে ব্যক্তি মনের উদারতা বিধান, জাতীয় ঐক্যের মৌল ভিত্তি সুদৃঢ় করিবার বিষয়ে সহায়ক ভূমিকা পালন করা এবং মানুষে মানুষে প্রীতি ও সৌহার্দ্য্যের বন্ধন রচনা করা।

(খ) সংস্কৃতিবান ও রুচিশীল জনগোষ্ঠী সৃষ্টি করা।

(গ) মানবিক গুনাবলীর উৎকর্ষ সাধন করা।

ঘ) সাহিত্যের নানা বিষয়ে আলোচনা সভা, সিম্পোজিয়াম, সেমিনার ও ওয়ার্কশপ এর আয়োজন করা। (ঙ) জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ দিবস এবং জাতীয় ও আন্তর্জাতিক সাহিত্য ও ব্যক্তিত্বের জন্ম ও মৃত্যু দিবস পালন করা।

(চ) আঞ্চলিক ও জাতীয় ভিত্তিতে সাহিত্য সম্মেলনের আয়োজন করা। (ছ) সর্ব শ্রেণীর লোকের মধ্য হইতে একটি সাহিত্য অনুরাগী ও পাঠক শ্রেণী গড়ে তোলা। (জ) নবীন-প্রবীণ লেখকদের মেধা ও প্রতিভা বিকাশের উদ্দেশ্যে এবং সৃজনশীলতার পরিপুষ্টি সাধনের জন্য বিশিষ্ট সাহিত্য ব্যক্তিদের উপস্থিতিতে বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠানের ব্যবস্থা করা। (ঝ) জনগণকে দেশ প্রেমে উদ্বুদ্ধ করার লক্ষ্যে কবিতা পাঠ বা আবৃত্তি এবং গল্প ও প্রবন্ধ পাঠের আয়োজন করা ।

(ঞ) স্থানীয় লেখকদের প্রতিভা বিকাশের জন্য এবং তাদের সৃজনশীলতাকে পরিচর্যা করবার জন্য পত্রিকা, সাহিত্য পত্রিকা, সংকলন ইত্যাদি প্রকাশ করা। (ট) একাডেমীর সঙ্গে জড়িত বিশিষ্ট ব্যক্তিত্ব এবং এলাকার ও দেশের স্বনামধন্য সুধীজনের নামে বক্তৃতামালা প্রবর্তন করা। (ঠ) সাহিত্যে ক্ষেত্রে সুপ্ত প্রতিভার অন্বেষণ, বিকাশ সাধন ও লালন করা।

(ড) লোকজ সাহিত্যর সংগ্রহ ও সংরক্ষণ করা।( ঢ) অপসংস্কৃতির প্রসার রোধ করা। (ণ) সমসাময়িক সাহিত্য, সংস্কৃতি বা শিল্পকলার ক্ষেত্রে বিশেষ অবদান রেখেছেন এমন ব্যক্তিকে সহিত্য একাডেমীর পুরস্কার ও সনদপত্র বা “সাহিত্য একাডেমী পদক” প্রদান করা।

সভাপতি মহাপরিচালকের নিকট ২০১৩ সালের গঠিত কার্যনির্বাহী কমিটি সম্পর্কে জানতে চাইলে মহাপরিচালক কাজী শাহাদাত জানান, গঠনতন্ত্র সংশোধন সাপেক্ষে উক্ত কমিটি বৈধতা পাওয়ার কথা থাকলেও বিভিন্ন কারণে গঠণতন্ত্র সংশোধন করা সম্ভবপর হয়নি। উক্ত কমিটি ২০১৫ সালে মেয়াদ উত্তীর্ন হয়।
এর পেক্ষিতে সভাপতি বলেন, ‘তাহলেতো গঠিত কমিটিতে গোড়ায় গলদ রয়েছে।’

সভাপতি আরো বলেন, সাহিত্য একাডেমীর নির্বাহী পরিষদের ২/৩ বছরের কার্যক্রম পর্যালোচনায় দেখা যায় তারা সাহিত্য একাডেমীর আদর্শ ও উদ্দেশ্য বাস্তবায়নে উদ্যেগী ছিলেন না, সাধারণ পরিষদের কোন সভা আহবান করা হয়নি, সদস্যদের কার্যক্রম গ্রহণে অনীহা বা অসহযোগিতা ছিল এবং নিয়মিত চাঁদা আদায় না করা ইত্যাদি কারণে একাডেমীতে আর্থিক অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে, যা কাম্য নয়।

একাডেমির পরিচালক অজয় ভৌমিক বলেন, সাহিত্য একাডেমী সৃষ্টির পর থেকে কিছু অব্যবস্থাপনার কারণে এগুতে পারেনি। আমরা যারা কমিটিতে ছিলাম, আমরা আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করিনি। এ ব্যর্থতার দায় আমাদের। সাহিত্য একাডেমীকে পুনরুজ্জীবিত করার জন্য সভাপতি যে পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন আমি তার সাথে একমত। যদি নতুন কমিটি গঠিত হয় তবে আমি উক্ত কমিটিকে স্বাগত জানাব।

একাডেমির নির্বাহী সদস্য সামীম আহম্মেদ খান বলেন, জেলা প্রশাসকের নিকট বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রকাশনাসমূহ তুলে ধরেন। এ বিষয়ে সভাপতি প্রকাশনাসমুহের অনুলিপি থাকলে দিয়ে যাওয়ার জন্য অনুরোধ করেন। একাডেমির পরিচালক ইকবাল হোসেন পাটওয়ারী বলেন, কমিটিতে থাকা সত্ত্বেও আমি কখনও সভার বিষয়ে জানিনা বা জানতাম না এবং সাহিত্য একাডেমির লাইব্রেরীতে খুব কম সংখ্যক বই রয়েছে। বর্তমান কমিটির কার্যকলাপে তিনি অসন্তোষ প্রকাশ করেন।

নির্বাহী সদস্য ডা: পিযূষ কান্তি বড়ুয়া বলেন, সাহিত্য একাডেমীর কার্যক্রম চালানোর জন্য আমরা চেষ্টা চালিয়েছি। কতটুকু সফল হয়েছি তা বিবেচনার দায়িত্ব জেলা প্রশাসক মহোদয়ের। এছাড়াও তিনি বলেন, পূর্বের নির্বাহী কমিটি অবৈধ না বলার জন্য অনুরোধ করেন। এ দায় সকল সদস্যদের উপর বর্তায়।
এ বিষয়ে সভাপতি বলেন, গত সভায় দুটি কমিটি করেছিলাম কিন্তু কোন কমিটি তাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেনি যা কোনভাবেই কাম্য নয়।