চাঁদপুর, ২০ মে, বুধবার:
পশ্চিম মধ্য বঙ্গপসাগর ও তৎসংলগ্ন এলাকায় অবস্থানরত সৃষ্টি হওয়া ঘূর্ণিঝড় আম্পানের প্রভাবে চাঁদপুর জেলার সর্বত্র বৃষ্টি ও ঝড়ো হাওয়া শুরু হয়েছে। আবহাওয়া অধিদপ্তর চাঁদপুর জেলাকে ১০ নম্বর মহাবিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। এসময় স্বাভাবিক জোয়ারের চেয়ে ১০ থেকে ১৫ ফুট অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছ্বাসেরও পূর্বাভাস রয়েছে।
জেলার মতলব উত্তর, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার মেঘনা নদীর পশ্চিম পাড়ে প্রায় ৩০টি চরাঞ্চলে বসবাসকারী লোকদেরকে নিরাপদ আশ্রয় রাখার জন্য সব ধরণের প্রস্তুতি রয়েছে। ইতোমধ্যে মানুষ আশ্রয় কেন্দ্রে অবস্থান করছেন। চরাঞ্চলের লোকদেরকে প্রয়োজনে নিরাপদ আশ্রয়ে নেয়ার জন্য ১২১টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
চাঁদপুর জেলা আবহাওয়া অফিস থেকে সর্বশেষ জানানো হয়েছে , সর্বশেষ ঢাকা আবহাওয়া অফিসের তথ্য অনুযায়ী চাঁদপুর জেলাকে ৭ নম্বর বিপদ সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে। ঘুর্ণিঝড়ের প্রভাব ও আমবস্যার কারণে উপকূলীয় জেলাসহ চাঁদপুর জেলার অদূরবর্তী চরসমূহের নিম্নাঞ্চলে স্বাভাবিক জোয়ারে চেয়ে ১০ ফুট অধিক উচ্চতায় জলোচ্ছসে প্লাবিত হতে পারে।
চাঁদপুর আবহাওয়া অফিস কর্মকর্তা শাহ্ মো. শোয়াইব সর্বশেষ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
চাঁদপুর সদর উপজেলার রাজরাজেশ্বর ইউনিয়নের বাসিন্দা প্রায় ৫ হাজারের অধিক। এই ইউনিয়নটি সদরের মধ্যে সবাচাইতে ঝুঁকিপূর্ণ। প্রাকৃতিক দূযোর্গ আসলেই ক্ষতির সম্মুখীন হয় ইউনিয়নের বাসিন্দারা।
ঘুর্ণিঝড় আম্পান বিষয়ে ইউনিয়নের চেয়ারম্যান হযরত আলী বেপারী জানান, জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনের নির্দেশনা অনুযায়ী মঙ্গলবার সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ইউনিয়নের সকল মসজিদে, বাজারে ও এলাকায় মাইকিং করে লোকজনকে ঘূর্ণিঝড় সম্পর্কে সতর্ক করে দেয়া হয়েছে। সকলকে নিরাপদে থাকার জন্য বলা হয়েছে। ইতোমধ্যে কিছু লোক সাইক্লোন সেন্টারে অবস্থান নিয়েছে। ইউপি সদস্যসহ ইউনিয়নের লোকদের সাথে আমার সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে।
মতলব উত্তর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) এ.এম. জহিরুল হায়াত জানান, মতলব উত্তর উপজেলায় ঘুর্ণিঝড় সম্পর্কে প্রচারণা করা হয়েছে। ঝুকিপূর্ণ চরাঞ্চলের লোকদের জন্য ২২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত করে রাখা হয়েছে। প্রয়োজন হলে আরো আশ্রয় কেন্দ্র লোকজনকে নিরাপদে রাখা যাবে। মানুষরা আ্শ্রয় কেন্দ্রে আসা শুরু করেছে।
চাঁদপুর সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কানিজ ফাতেমা জানান, চাঁদপুর সদরের নদী উপকূলীয় এলাকাসহ উপজেলার ৭৮টি আশ্রয় কেন্দ্র ও ২টি সাইক্লোন সেন্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে। সকল ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যানদেরকে সতর্ক থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছি। প্রশাসনের সাথে জনপ্রতিনিধিদের সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রয়েছে।
হাইমচর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ফেরদৌসি বেগম জানান, হাইমচরের ৪টি ইউনিয়নের চরাঞ্চলের লোকদেরকে নিরাপদ আনার জন্য ২২টি আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত। লোকজনকে সর্তক থাকার জন্য ইউনিয়ন পরিষদ থেকে মাইকিং করে প্রচারণা করা হয়েছে। জনপ্রতিনিধিদের সাথে আমরা সার্বক্ষনিক যোগাযোগ রক্ষা করছি। আবহাওয়া প্রতির্কল দেখে মানুষ আ্শ্রয় কেন্দ্রে আসছে।
অপরদিকে চাঁদপুর জেলায় ঘুর্ণিঝড় আম্পান মোকাবেলায় প্রস্তুত রয়েছে জেলা প্রশাসন। ইতোমধ্যে চাঁদপুর জেলা দূর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটি সভা করেছেন। এছাড়াও ঝুঁকিপূর্ণ মতলব উত্তর, চাঁদপুর সদর ও হাইমচর উপজেলার সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের জনপ্রতিনিধি, ইউএনও, পিআইও এর সাথে জেলা প্রশাসক, সকল এডিসিদের বার্চুয়াল সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে।
জেলা কমিটি ঘূর্ণিঝড় মোকাবেলায় মেডিকেল টীম, স্বেচ্ছাসেবী প্রস্তুত রেখেছেন। সংশ্লিষ্ট সকলকে প্রস্তুত থাকার জন্য নির্দেশ দিয়েছেন। এছাড়াও যদি ঘুর্ণিঝড়ে চরাঞ্চলের লোকজন ক্ষতিগ্রস্থ হয় তাদের জন্য তাৎক্ষনিক ত্রাণের ব্যবস্থা রয়েছে।
আবহাওয়া অধিদপ্তর সূত্রে জানাগেছে, ঘুর্ণিঝড় আম্পান বুধবার ২০ মে সকালের পর থেকে বাংলাদেশের উপর দিয়ে অতিক্রম করার সম্ভাবনা রয়েছে।