• ঢাকা
  • মঙ্গলবার, ৩০শে এপ্রিল, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ, ১৭ই বৈশাখ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ
প্রকাশিত: ২৮ জুন, ২০১৯
সর্বশেষ আপডেট : ২৮ জুন, ২০১৯

সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশীদের টাকা জমানোর হিড়িক

অনলাইন ডেস্ক
[sharethis-inline-buttons]

অনলাইন ডেস্ক:

বিশ্বের সবচেয়ে সুরক্ষিত ব্যাংক হিসেবে পরিচিত সুইস ব্যাংকে টাকা জমানোর হিড়িক পড়েছে বাংলাদেশিদের। সুইজারল্যান্ডের এই ব্যাংকগুলোয় গত এক বছরে প্রায় ১ হাজার ৩০০ কোটি টাকা জমা করেছেন বাংলাদেশিরা। অন্য যে কোনো বছরের তুলনায় টাকা জমানোর এই পরিমাণ অনেক বেশি। সব মিলিয়ে সুইস ব্যাংকগুলোয় এখন বাংলাদেশিদের আমানত ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। গতকাল সুইস কেন্দ্রীয় ব্যাংকের বার্ষিক প্রতিবেদনে এসব তথ্য দেওয়া হয়।

সুইস ন্যাশনাল ব্যাংকের গতকাল প্রকাশিত প্রতিবেদনে দেখা যায়, সুইজারল্যান্ডের ব্যাংকে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বাংলাদেশিদের আমানত দাঁড়িয়েছে ৬১ কোটি ৭৭ লাখ সুইস ফ্রাঁ। বাংলাদেশি মুদ্রায় যার পরিমাণ প্রায় ৫ হাজার ৩৪৩ কোটি টাকা। ঠিক এক বছর আগে ২০১৭-এর ডিসেম্বরে বাংলাদেশিদের অর্থ জমানোর পরিমাণ ছিল ৪৮ কোটি ১৩ লাখ ফ্রাঁ; যা বাংলাদেশি মুদ্রায় ৪ হাজার ৫৩ কোটি টাকা। অর্থাৎ মাত্র এক বছরে সুইস ব্যাংকে বাংলাদেশিদের আমানত বেড়েছে ১ হাজার ২৭৪ কোটি টাকা। এর আগে এক বছরে এত বাড়েনি বাংলাদেশিদের আমানত।
২০১৭ সালে বাংলাদেশিদের অর্থ জমানোর পরিমাণ ছিল ৪ হাজার ৬৯ কোটি টাকা, ২০১৬-তে এর পরিমাণ ছিল ৫ হাজার ৫৬৬ কোটি, ২০১৫-তে ৪ হাজার ৪১৭ কোটি, ২০১৪-তে ৪ হাজার ৫৮ কোটি, ২০১৩-তে ২ হাজার ৯৮১ কোটি। অর্থাৎ মাঝে ২০১৭ সাল ছাড়া প্রতি বছরই সুইস ব্যাংকগুলোয় বাংলাদেশিদের অর্থ জমানোর পরিমাণ বেড়ে চলেছে। বাংলাদেশ থেকে বিভিন্ন পথে অর্থ পাচার করে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নিয়ে যাওয়া হয়; যার একটি বড় অংশ সুইস ব্যাংকে জমা হয়। তবে ইউরোপের দেশগুলোয় ওভার ইনভয়েসের মাধ্যমে বেশি অর্থ পাচার হয়। হুন্ডি, মিথ্যা তথ্য, আমদানি-রপ্তানি পণ্যে মূল্য দেশে না নিয়ে সংশ্লিষ্ট দেশেই রেখে দেওয়া হয়। সম্প্রতি একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাংকের মাধ্যমে শীর্ষ এক ব্যবসায়ী এ পদ্ধতিতে প্রায় ৩ হাজার কোটি টাকা পাচার করেছেন। বাংলাদেশ থেকে বড় ব্যবসায়ী, আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যের সঙ্গে জড়িতরা, ব্যাংকিং ও শুল্ক দফতরের কিছু লোকও পাচারের সঙ্গে জড়িত।

জানা যায়, সুইজারল্যান্ড সরকারের আর্থিক সব কাজের নিয়ন্ত্রণ ও লেনদেনের সঙ্গে যুক্ত এমন সব প্রতিষ্ঠানের তদারকি করে সুইস ফাইন্যানশিয়াল মার্কেট সুপারভাইজারি অথরিটি সংক্ষেপে এফআইএমএসএ ও সুইজারল্যান্ড কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের অধীনে যত ব্যাংক আছে তার সবকটিকে একসঙ্গে ‘সুইস ব্যাংক’ বলা হয়। বর্তমানে সুইজারল্যান্ডে ৩ শতাধিক ব্যাংক রয়েছে। গোপনে অর্থ গচ্ছিত রাখার জন্য অনেকেরই পছন্দ সুইজারল্যান্ড। গ্রাহকের নাম-পরিচয় গোপন রাখতে কঠোর দেশটির ব্যাংকিং খাত। যে কারণে অবৈধ আয় ও কর ফাঁকি দিয়ে জমানো টাকা রাখা হয় সুইস ব্যাংকে। তবে গত কয়েক বছরে বিষয়টি নিয়ে সুইজারল্যান্ড সরকারের কঠোর অবস্থানের কারণে ২০১৭ সালে এসে আমানত কমেছে সুইস ব্যাংকে। অর্থসম্পদ গচ্ছিত রাখার বিষয়ে গোপনীয়তা কমতে থাকায় অনেক ধনী এখন অবৈধ টাকা জমা রাখার জন্য ঝুঁকছেন লুক্সেমবার্গ, ব্রিটিশ ভার্জিন আইল্যান্ড, পানামা, বারমুডা, সিঙ্গাপুরের মতো দেশের দিকে। চলতি বছরেও সামগ্রিকভাবে সুইজার‌্যলান্ডে অর্থ জমার পরিমাণ কমেছে। কিন্তু বাংলাদেশিদের জমা রাখার পরিমাণ বেড়েছে। এর আগে সুইজার‌্যলান্ডের ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের বিষয়ে কোনো তথ্যই প্রকাশ না করলেও গত কয়েক বছর ধরে দেশভিত্তিক আমানতের তথ্য প্রকাশ করছে দেশটি। সুইস ব্যাংকগুলোয় যেসব বাংলাদেশি অর্থ জমা রেখেছেন, বাংলাদেশ সরকার চাইলে তাদের পরিচয় জানতে পারে কিনা- এমন প্রশ্নে বিশ্লেষকরা বলছেন, খুব সোজা উত্তর হচ্ছে- না। কারণ সুইজারল্যান্ডের সংবিধান ও ব্যাংকিং আইন অনুযায়ী সেখানে ব্যাংক গ্রাহকদের গোপনীয়তা কঠোরভাবে রক্ষা করা হয়। সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, গোপনীয়তার অধিকার সুইস আইনব্যবস্থার অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ এবং ফেডারেল সংবিধান দ্বারা তা সুরক্ষিত। তবে কোনো অপরাধের ক্ষেত্রে এ সুরক্ষা কাজ করবে না। অর্থাৎ সেখানে গচ্ছিত অর্থ যদি কোনো অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত হয়, তাহলে সে ক্ষেত্রে গ্রাহকের পরিচয় প্রকাশে কোনো বাধা থাকবে না। সুইস ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশনের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, অপরাধ তদন্তের ক্ষেত্রে সুইস ব্যাংকগুলো তাদের গ্রাহকদের পরিচয় প্রকাশে বাধ্য। সে অপরাধ সুইজারল্যান্ডেই হোক বা অন্য কোনো দেশেই হোক।

Sharing is caring!

[sharethis-inline-buttons]

আরও পড়ুন

  • অর্থনীতি এর আরও খবর
error: Content is protected !!