“শাহরাস্তিতে ইউএনও’র নাম ব্যানারে না থাকায় ধানের বীজ খোলা আকাশের নিচে” শিরোনামে” ফেইসবুক ও কয়েকটি অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ হওয়া মিথ্যা ও বানোয়াট সংবাদ এবং অপপ্রচারের বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে ব্যাখ্যা দেয়া হয়েছে।
ব্যাখ্যায় তিনি বলেন, উপজেলা কৃষি অফিসার নিজের দূর্নীতি ও অপকর্ম ঢাকতে নিজেই ছবি তুলে সামাজিক যোগাযোগ মাধম (ফেইসবকু) ও কয়েকটি অনলাইনে সংবাদ প্রকাশ করে। নিন্মে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শিরীন আকতারের বক্তব্য তুলে ধরা হলো –
১। ২০১৯-২০২০ অর্থবছরে খরিপ-১/২০২০-২০২১ মৌসুমে উফশী আউশ ধান (২য় পর্যায়) চাষে কৃষকদের প্রনোদনা কর্মসূচির আওতায় অত্র উপজেলায় ০২টি ভাগে উপকরণ বীজ, সার সংগ্রহ ও বিতরণ বাবদ (৪০০+২০০)= ৬০০ জন কৃষকের জন্য সর্বমোট- (৩,৪,০০০+১,৭০,০০০) = ৫,১০,০০০/- (পাঁচ লক্ষ দশ) হাজার টাকা বরাদ্দ পাওয়া গেছে। বিগত ০৬ এপ্রিল ২০২০খ্রি. তারিখে জেলা প্রশাসক, মহোদয়ের চাঁদপুর সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত জেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভার ০২নং অনুচ্ছেদে উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটি কর্তৃক অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত ও অনুমোদন শেষে বীজ ও সার কৃষি উপকরণ সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে নীতিমালা অনুযায়ী বিতরণের ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। তাছাড়া উক্ত সভার কার্যবিবরণীর ০৪নং অনুচ্ছেদে বিধি মোতাবেক কৃষকের ছবি সম্বলিত মাষ্টাররোলের মাধ্যমে উপকরণ বিতরণের নির্দেশনা প্রদান করা হয়েছে।
২। জেলা কৃষি পুনর্বাসন বাস্তবায়ন কমিটির সভার আলোকে নিম্নস্বাক্ষরকারীর সভাপতিত্বে বিগত ০৬ এপ্রিল ২০২০ ও ১৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখে উপজেলা কৃষি বাস্তবায়ন কমিটির সভা ০২টি সভা অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত সভায়ও এ মর্মে সিদ্ধান্ত গৃহীত হয় যে, উক্ত কর্মসূচির আওতায় কৃষি পুনর্বাসন নীতিমালা অনুযায়ী ইউনিয়ন কমিটির মাধ্যমে অগ্রাধিকার তালিকা তৈরি করে উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটি’র অনুমোদন নেয়ার সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। কিন্তু উপজেলা কৃষি অফিসার তালিকা অনুমোদন না করেই কৃষকদের মাঝে বীজ, সার বিতরণ করার জন্য কৃষকদের গণজমায়েত করেছেন।
৩। জনাব মো: আহসান হাবিব, উপজেলা কৃষি অফিসার, শাহরাস্তি চাঁদপুর ইউনিয়ন কমিটির অগ্রাধিকার তালিকা প্রস্তুত ও চূড়ান্ত না করে এবং উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটির অনুমোদন ব্যতিরেকে কৃষি উপকরণ বিতরণের লক্ষ্যে গত ১৩ এপ্রিল ২০২০ তারিখে উপজেলা পরিষদ মাঠে কৃষক, পরিবহন শ্রমিক, রিক্সা/ভ্যান চালকসহ অনেক লোকের গণজমায়েত সৃষ্টি করেন। বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী অফিসারের দৃষ্টিগোচর হলে উপজেলা কৃষি অফিসারকে ডেকে এনে সম্প্রতি সারা দেশে নভেল করোনা ভাইরাসের বিস্তাররোধে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা এবং স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত স্বাস্থ্য বিধি অনুসরণ পূর্বক সামাজিক দুরত্ব বজায় রাখার স্বার্থে অতি দ্রুততার সাথে ৪ থেকে ৫ জন কৃষককে উপকরণ দিয়ে অন্যান্য কৃষকসহ জমায়েতবদ্ধ ব্যক্তিদেরকে উপজেলা পরিষদ ত্যাগ করার জন্য পরামর্শ প্রদান করি। তাঁকে এও জানানো হয় যে, আগে দ্রুত তালিকা সংগ্রহের ব্যবস্থা গ্রহন করেন, প্রয়োজনে উপজেলা পরিষদের নিজস্ব অর্থায়নে স্থানীয় মেয়র এবং ইউপি চেয়ারম্যানগনের মাধ্যমে নির্বাচিত কৃষকদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে বীজ, সার দিয়ে আসবো। কিন্তু দুঃখের বিষয়ে তিনি ইউএনও এর কথা কর্ণপাত করেননি।
৪। তিনি ফেসবুক স্ট্যাটাস ও অনলাইন সংবাদ মাধ্যমে প্রচার করেছেন যে, কৃষি প্রনোদনা হিসেবে কৃষকদের মাঝে বিনামূল্যে সার, বীজ প্রদানের ব্যানারে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের নাম না থাকায় বীজ গেট তালাবন্ধ করে খোলা আকাশের নিচে ফেলে রেখেছে। যেখানে উপজেলা নির্বাহী অফিসার উপজেলা কৃষি পুনর্বাসন কমিটির সভাপতি হিসেবে জানতেন না যে, ১৩ এপ্রিল ২০২০খ্রি. তারিখে কৃষকদের মাঝে বীজ দেয়া হবে, সেখানে ব্যানারে নাম থাকা, না থাকা নিয়ে প্রশ্নের অবকাশ হওয়ার কথা নয় এবং ব্যানার তৈরির বিষয়ে আমার সাথে কোনরূপ আলোচনা হয়নি। অথচ তিনি কৌশলে পাশ কাটিয়ে বক্তব্য ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার হীন অপচেষ্টা করছেন।
৫। তিনি লিখেছেন খোলা আকাশের নিচে বীজ রেখেছে এবং ছবিও উঠিয়েছে। এখন প্রশ্ন হলো এই অল্প বীজই কি বরাদ্দ পাওয়া গেছে নাকি আরো বেশি এসেছে সেগুলো কোথায়? ৬০০ জন কৃষকের বরাদ্দ এসেছে প্রায় ৩০০০ কেজি বীজ। অবশিষ্টগুলো কোথায়? এই ছবি উঠানোর পূর্বে সব বীজ যদি গুদামে ঢুকাতে পারে, তাহলে এগুলো ঢুকাতে পারলো না কেন? এমনকি উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে জানানো হয় নি যে, বীজ ভ্যানের উপর খোলা আকাশের নিচে রাখা হয়েছে। তাছাড়া যে গেইটের সামনে বীজের ভ্যান রেখে ছবি উঠিয়েছে, সেটি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক কোয়ার্টারের প্রধান গেইট যা ২৪ ঘন্টায় বন্ধ থাকে। শুধুমাত্র প্রয়োজন অনুসারে কর্মকর্তা-কর্মচারীগণ তাদের নিজ ব্যবস্থাপনায় গেইট খোলে এবং কাজ শেষে আবার বন্ধও করে দেয়। সেখানে উপজেলা কৃষি অফিসার অভিযোগ করেন যে, আমি গেইট খুলে দেয় নাই। এমনকি আবাসিক কোয়ার্টারে যেখানে কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বসবাস করে সেখানে কৃষিজ উপকরণ সার, কীটনাশক, বীজের রাখার জন্য গুদাম আছে বা ব্যবহার করছে, এ বিষয়ে আমি জানতামও না। আর গুদাম থেকে থাকলেও, সেটি নিয়ম বহির্ভূত। তদুপরি পূর্বে যে বীজগুলো গুদামে সংরক্ষন করেছেন সেগুলো উপজেলা কৃষি অফিসারের নির্দেশ মোতাবেক নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় গুদামজাত করেন। তাহলে অবশিষ্টগুলো গুদামজাত করলো না কেন? এমনকি এই সংবাদ প্রকাশের পর সেখানে কি এখনো বীজগুলো খোলা আকাশের নিচে পড়ে আছে? নাকি সংরক্ষণ করা হয়েছে। এ সকল কর্মকান্ড উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে প্রশ্নবিদ্ধ বা সুনাম ক্ষুন্ন করার জন্য চেষ্টা করা হচ্ছে না?
৬। পরম শ্রদ্ধেয় মেজর (অবঃ) রফিকুল ইসলাম, বীর উত্তম, এম.পি. মহোদয় মুক্তিযুদ্ধের কিংবদন্তী, ০১নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার যিনি আমার পিতৃতুল্য এবং প্রিয় অভিভাবক আমি শাহরাস্তিতে যোগদান করার পর থেকে সরকারি স্বার্থ সংশ্লিষ্ট যে কোন বিষয়ে প্রতিনিয়ত সকল কিছু তাঁকে জানিয়েছি, প্রতিনিয়ত পরামর্শ গ্রহন করেছি, সব সময় এমপি স্যারের আদেশ প্রতিপালন করেছি। মাননীয় এমপি স্যারের সাথে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের সাথে খারাপ মনোভাব সৃষ্টি করার উদ্দেশ্যে এমপি স্যারকে তথ্য গোপন করে উপজেলা কৃষি অফিসার সার, বীজ কৃষকদের মাঝে বিতরণের জন্য সূক্ষ্ম পরিকল্পনা গ্রহন করেন। এমপি স্যারকে জানান যে, উপজেলা নির্বাহী অফিসারকে অবহিত করার পরও বীজ বিতরণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত হচ্ছেন না। অথচ সম্মানিত এমপি মহোদয়ের সাথে আমি যোগদান করার পর এ যাবত ওনার প্রত্যেকটি উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে আমি আমার সকল কাজের মাঝেও উপস্থিত থাকার চেষ্টা করেছি এবং যে অনুষ্ঠানে থাকতে পারি নি, সে অনুষ্ঠানের বিষয়ে এমপি স্যারকে জানিয়ে ও স্যারের অনুমতি স্বাপেক্ষে অনুপুস্থিত থেকেছি।
৭। মূলত দেশব্যাপী সম্প্রতি প্রাণঘাতি নভেল করোনা ভাইরাস (কোভিড-১৯) মহামারি রোগের বিস্তাররোধ ও সতর্কতামূলক প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্য উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে অত্র উপজেলায় পৌরসভা ও ১০টি ইউপিতে সুষ্ঠুভাবে দায়িত্ব পালন করার জন্য ১২টি টীম গঠন করা হয়েছে। উপজেলা কৃষি অফিসার পৌরসভা ০১-০৬ নং ওয়ার্ডের দায়িত্ব পালনের জন্য পত্রের মাধ্যমে অবহিত করা হয়েছিলো। কিন্তু তিনি এই ধরনের দায়িত্ব বন্টনের ব্যবস্থাকে স্বাভাবিক ভাবে গ্রহন করেননি। যার ফলে সম্ভবত এটিকে কেন্দ্র করেও উপজেলা কৃষি অফিসার জনাব আহসান হাবীব উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শাহরাস্তিকে জনসম্মুখে হেয় পতিপন্ন এবং সুনাম ক্ষুন্ন করার অপচেষ্টা চালাচ্ছে।
৮। উপজেলা নির্বাহী অফিসার, শাহরাস্তি হিসেবে যোগদানের পর থেকে আমি বিভিন্ন ধরনের বিভিন্ন বিষয়ে অনিয়ম, সিন্ডিকেট এবং সরকারি কাজে দুর্নীতি, স্বজনপ্রীতি, গদবাধা কাজ থেকে বিরত রাখার জন্য উদ্যোগ গ্রহন করেছি এবং তা সুষ্ঠুভাবে সম্পন্নও করেছি। অতিসম্প্রতি কৃষি সহায়তা কার্ডের মাধ্যমে কৃষকৃদের নিকট হতে ন্যায্য মূল্যে ধান ক্রয়ের বিষয়েও হস্তক্ষেপ করে উপজেলা কৃষি বিভাগের প্রস্তুতকৃত কৃষকদের তালিকা হতে যখন উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক এবং ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা, খাদ্য গুদাম (ওসিএলএসডি) কৃষকদের নিকট হতে ধান সংগ্রহ করতে পারছে না, ঠিক তখনি তদন্তের মাধ্যমে ভূয়া, বিত্তবান, ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট বা যারা ধান বিক্রয় করতে আগ্রহী নয় এমন কৃষকদের বাদ দিয়ে প্রকৃত কৃষকদের তালিকা প্রস্তুত ও অনুমোদন করে ধান সংগ্রহ করি। যা আমার কাছে রেকর্ডভুক্ত অবস্থায় আছে, যে কোন সময়ে চাইলে প্রমাণস্বরুপ তা দিতে পারবো।
৯। সর্বোপরি হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙ্গালী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সোনার বাংলা বিনির্মাণে তারই সুযোগ্য কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রি শেখ হাসিনা’র বিশেষ উদ্যোগ এবং সকল নির্দেশনা সমূহ মাননীয় এমপি স্যারের পরামর্শ ও জেলা প্রশাসক মহোদয়, চাঁদপুরের নির্দেশনায় সকল কাজ সময়মত প্রতিপালন করার জন্য অনেক প্রতিকূল অবস্থায়ও নিজ নিজ দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালন করছি।
১০। আমি খুব ছোট বেলা থেকে নীতি আদর্শে সৎ থাকার চেষ্টা করেছি এবং অদ্যবধি তা ধরে রেখেছি। নিয়ম বহির্ভূত কোন কর্মকান্ড হলে সেটিকে সামনে থেকে দমন করার চেষ্ট করেছি এবং একবারও পিছনে ফিরে তাকাইনি। যদিও সম্প্রতি নভেল করোনা ভাইরাসের মত প্রানঘাতি মহামারি রোগে আজ দেশ দুর্যোগ মুহুর্ত পার করছে, আমি চাইনি এ বিষয়ে কোন ধরনের মিডিয়া বা সরকারের উর্দ্ধতন মহল জানুক। চেয়েছি উপজেলা কৃষি অফিসারকে নিজ থেকে নীতিমালার বিষয়ে স্পষ্ট ধারনা বা জ্ঞান দেয়ার জন্য। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্যি উনি গত ০২দিন বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক এবং অনলাইন পত্রিকায় একটি মিথ্যা, বানোয়াঁট সংবাদ প্রচার করছে। যার প্রেক্ষিতে আমি এ বিষয়ে লিখিত আকারে তথ্য ও প্রমাণ দিয়ে উর্দ্ধতন কর্তৃপক্ষের নিকট পত্রের মাধ্যমে অবহিত করেছি এবং এ বিষয়ে অধিকতর তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহনের জন্যও অনুরোধ করেছি। আমি এ ভিত্তিহীন সংবাদের তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করছি।