অনলাইন ডেস্ক:
বাংলাদেশের শান্তিকামী মানুষ দিল্লি গণহত্যার খলনায়ক ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনকারী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের মাটিতে কোনোক্রমেই মেনে নেবে না বলে মন্তব্য করেছেন জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী।
তিনি বলেছেন, আমরা গভীর উদ্বেগ, বেদনা ও ক্ষোভের সঙ্গে লক্ষ্য করছি, ভারতে নতুন নাগরিকত্ব আইন ও নাগরিকপঞ্জি তৈরির বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণভাবে প্রতিবাদের কারণে দেশটির সংখ্যালঘু মুসলমান সম্প্রদায়ের ওপর নির্মম হত্যাযজ্ঞ শুরু হয়েছে। ইতিমধ্যে প্রায় ২৫ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন এবং বহু মানুষ আহত হয়ে জীবন-মৃত্যুর সঙ্গে লড়ছেন।
বুধবার এক বিবৃতিতে জমিয়ত মহাসচিব আরও বলেছেন, ভারতের রাজধানী দিল্লিতে প্রায় ৩-৪ দিন ধরে পদ্ধতিগত এই হত্যা চললেও দেশটির আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী, আদালত, রাজ্য সরকার; কেউই তা থামাতে এগিয়ে আসেনি। এটি বিশ্বজুড়ে বিস্ময় তৈরি করেছে। এমনকি আহতদের হাসপাতালেও নেয়া যাচ্ছে না হামলার ভয়ে।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, আমরা দেখেছি ধর্মীয় স্বাধীনতা এবং উপাসনালয়ের নিরাপত্তা বিশ্বজুড়ে একটা স্বীকৃতি মৌলিক মানবাধিকার হলেও দিল্লিতে একের পর মসজিদে হামলা চলছে। সেখানে মসজিদের মিনারগুলোতে হিন্দুধর্মীয় প্রতীক স্থাপন করা হচ্ছে। যা মুসলমানদের ঈমান-বিশ্বাস-অনুভূতির প্রতি চরম অবমাননাকর। ভারতে যে গুটিকয়েক নিরপেক্ষ প্রচারমাধ্যম রয়েছে তাদের কর্মীরা সংবাদ সংগ্রহকালে বাধাপ্রাপ্ত হচ্ছেন এবং হামলার শিকার হচ্ছেন।
তিনি বলেন, স্পষ্টতই এটা যে পরিকল্পিত ও পদ্ধতিগত গণহত্যা তা পরিষ্কার হয়ে যাচ্ছে।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী বলেন, আমরা আরও দেখছি, পদ্ধতিগত এই হত্যা চালানোর সময় বাংলাদেশের সরকারসহ বিশ্বসমাজ নীরব দর্শকের ভূমিকা পালন করছে। এই হামলার সময় দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট উপস্থিত থাকলেও তিনি এ বিষয়ে উচ্চ-বাচ্য করেননি। যা যুক্তরাষ্ট্রের গণতান্ত্রিক ভাবমূর্তির জন্য চরম লজ্জাজনক।
তিনি বলেন, আমরা এটা জেনেও গভীরভাবে উদ্বেগ ও বেদনাবোধ করছি যে, বাংলাদেশ সরকার এই গণহত্যার জন্য প্রধানতম দায়ী ব্যক্তি নরেন্দ্র মোদিকে শিগগিরই বাংলাদেশে আমন্ত্রণ জানাচ্ছেন সফরের জন্য। যা এ মুহূর্তে বাংলাদেশের মুসলমান জনগোষ্ঠীর জন্য চরম উস্কানিমূলক।
তিনি বলেন, আমাদের প্রিয় মাতৃভূমির শান্তি-শৃঙ্খলা ও সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি অটুট রাখার স্বার্থে এবং আমাদের প্রতিবেশী রাষ্ট্র ভারতে মুসলিমবিদ্বেষী লাগাতার অপতৎপরতার প্রতিবাদে মোদির বাংলাদেশ সফর বাতিল করা সরকারের অপরিহার্য কর্তব্য মনে করি। বাংলাদেশের শান্তিকামী মানুষ দিল্লি গণহত্যার খলনায়ক ও সাম্প্রদায়িক বিভাজনকারী নরেন্দ্র মোদিকে বাংলাদেশের মাটিতে কোনোক্রমেই মেনে নিবে না।
আল্লামা নূর হোসাইন কাসেমী আরও বলেন, আমরা ভারতীয় এই গণহত্যা থামানোর জন্য জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে দাবি জানাচ্ছি। আমরা মনে করি রাষ্ট্রীয়ভাবে একই দাবি তুলে ধরা বাংলাদেশ সরকারের একটা নৈতিক, ধর্মীয় ও সাংবিধানিক দায়িত্ব। সাংবিধানিকভাবে বিশ্বের নিপীড়িত জনগোষ্ঠীর পাশে দাঁড়ানোর জন্য বাংলাদেশ প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
তিনি বলেন, আমরা বাংলাদেশের দল-মত-ধর্ম নির্বিশেষে সব মানুষের কাছে ভারতীয় এই গণহত্যার বিরুদ্ধে শান্তিপূর্ণ ও অহিংস প্রতিবাদের আহ্বান জানাই। আমরা মনে করি, চরম উস্কানি সত্ত্বেও এ মুহূর্তে বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করে আমরা আবারও বিশ্বের কাছে সাম্প্রদায়িক শান্তির উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে পারব এবং একই সঙ্গে ভারতীয় গণহত্যার বিরুদ্ধেও জোরালো প্রতিবাদ জানাতে ভুলব না।