অনলাইন ডেস্ক:
কুর্মিটোলা হাসপাতাল এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীকে ধর্ষণের ঘটনায় র্যাবের হাতে গ্রেফতার মজনু একজন সিরিয়াল ধর্ষক। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে মজনু নিজেই র্যাবের কাছে একথা স্বীকার করেছে।
বুধবার দুপুরে কাওয়ানবাজারে র্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেললনে এ তথ্য জানায় র্যাব। র্যাবের মুখপাত্র সারওয়ার বিন কাশেম জানান, কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের আগেও মজনু বেশ কয়েকজনকে ধর্ষণ করেছে।
তিনি বলেন, মজনু একজন সিরিয়াল রেপিস্ট। এর আগেও তিনি এই কাজ করেছেন। রাস্তায় প্রতিবন্ধী নারী, ভিক্ষুকদের ধর্ষণ করত মজনু। র্যাবের এই মুখপাত্র বলেন, ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনায় মজনু আগে থেকেই ওঁৎ পেতে ছিল ঘটনাস্থলে। মেয়েটিকে জোরপূর্বক সেখান থেকে ধরে নিয়ে যায় সে। এরপর ঝোপের এক পাশে নিয়ে পাশবিক নির্যাতন চালানো হয়। এর আগেও একই জায়গায় কয়েকজন নারীকে ধর্ষণ করে সে।
‘একই জায়গায় সে এ ধরনের অপরাধ করেছে। প্রতিবন্ধী, ভিক্ষুকসহ বিভিন্ন নারীদের সে আটকে রেখে ধর্ষণ করতো। তাদের হত্যার হুমকিও দিত। মজনু স্বীকার করেছে ঘটনার সময় সে একাই ছিল, ভিকটিমও তেমনই বলেছে। ঘটনার দিন মজনু কুর্মিটোলা হাসপাতাল নিয়ে রাস্তায় বের হওয়ার পর মেয়েটিকে দেখতে পায়। এরপরই সে আলোচিত হয়। পরে মেয়েটিকে অনুসরণ করে তার পিছু পিছু যায়’-যোগ করেন সারওয়ার বিন কাশেম।
তিনি বলেন, ছবি দেখিয়ে ভিকটিমের কাছ থেকে আসামিকে শনাক্ত করা হয়েছে। ভিকটিম বলেছে, সব চেহারা ভুলে গেলেও এই চেহারা তিনি কোনোদিন ভুলবেন না।
জিজ্ঞাসাবাদে মজনু র্যাবকে জানিয়েছে, সে নিরক্ষর। ট্রেন থেকে পড়ে গিয়ে তার সামনের দুটি দাঁত ভেঙে যায়। স্ত্রী মারা যাওয়ার পরে সে আর বিয়ে করতে পারেনি। তাই সে এধরনের কাজ করত ।
মজনুকে গ্রেফতারের বিষয়ে র্যাবের ব্যাখ্যা হচ্ছে- ‘মামলাটি ক্লুলেস ছিল। মূলত ভিকটিমের মোবাইলের সূত্র ধরেই তাকে গ্রেফতার করতে আমরা সক্ষম হই। মজনুর কাছ থেকে ভিকটিমের ব্যাগ, পাওয়ারব্যাংক ও মোবাইল উদ্ধার করা হয়। মজনু সেই মোবাইলটি শেওড়া এলাকার অরুনা নামে একজনের কাছে দেয়। অরুনা সেই মোবাইলটি খায়রুল নামে একজনের কাছে বিক্রি করে। সেই মোবাইলের সূত্র ধরেই মজনুকে গ্রেফতার করে র্যাব। ওই এলাকায় গিয়ে জানা যায় সে প্রায় ওই এলাকায় ওৎ পেতে থাকত।’
এর আগে মঙ্গলবার রাতে ধর্ষক সন্দেহে মজনুকে গাজীপুর মহানগরীর টঙ্গী থেকে আটক করে র্যাব। পরে ধর্ষণের শিকার ছাত্রীর জবানবন্দি মোতাবেক তাদের ধর্ষক হিসেবে শনাক্ত করা হয়। এরপরই তাদের গ্রেফতার দেখানো হয়। নিয়ে আসা হয় র্যাব মিডিয়া সেন্টারে।
উল্লেখ্য, রোববার সন্ধ্যায় পরীক্ষার প্রস্তুতি নিতে রাজধানীর শেওড়ায় বান্ধবীর বাসায় যেতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ওই ছাত্রী ক্যাম্পাস থেকে রওনা হন। সন্ধ্যায় বিশ্ববিদ্যালয়ের বাস থেকে ভুল করে কুর্মিটোলা হাসপাতাল এলাকায় নেমে পড়েন ওই ছাত্রী। পরে হেটে শেওড়া যাওয়ার পথে তাকে ফলো করেন ধর্ষক। তাকে সড়ক থেকে তুলে নির্জন স্থানে নিয়ে গিয়ে ধর্ষণ করে। এ সময় ওই ছাত্রী অচেতন হয়ে পড়েন। তিন ঘণ্টা পর জ্ঞান ফিরে পেলে বন্ধুদের সহায়তায় হাসপাতালে যান ওই ছাত্রী। তিনি এখন ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। সেখানে ফরেনসিক পরীক্ষায় তার ধর্ষণের আলামত মিলেছে।
এ ঘটনায় পরদিন শাহবাগ ও ক্যান্টনমেন্ট থানায় দুটি মামলা হয়।
ক্যান্টনমেন্ট থানায় দায়ের করা মামলায় ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, ধর্ষক যুবকের বয়স ২৫ থেকে ৩০ বছরের মধ্যে। উচ্চতা প্রায় পাঁচ ফুট চার ইঞ্চি, গায়ের রং শ্যামলা। স্বাস্থ্য মাঝারি। ঘটনার সময় তার চুল ছোট ছোট ছিল। স্যান্ডেল পরা এই যুবকের পরনে পুরাতন জিন্সের প্যান্ট ছিল। গায়ে ময়লা কালো রঙের ফুলহাতা জ্যাকেট ছিল।
এদিকে, সহপাঠী ধর্ষণের শিকার হওয়ার খবর প্রকাশের পর রোববার রাত থেকে ধর্ষকের গ্রেপ্তার ও সর্বোচ্চ শাস্তির দাবিতে বিক্ষোভ করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।