অনলাইন ডেস্ক :
তুলনামূলকভাবে পুরুষের চেয়ে নারীরা ৩ বছর বেশি বাঁচে। এছাড়া গত ৫ বছরে গড় আয়ু প্রতিবছর শূন্য দশমিক ৩২ বছর হারে বেড়েছে। অর্থাৎ গত ৫ বছরে গড় আয়ু বেড়েছে ১ দশমিক ৬ বছর।বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) ‘রিপোর্ট অন বাংলাদেশ স্যাম্পল ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস-২০১৮’ শীর্ষক প্রতিবেদনে এ চিত্র উঠে এসেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, এ অঞ্চলের অন্যান্য দেশ ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান ও আফগানিস্তানের চেয়ে বাংলাদেশের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল বেশি। শুধু শ্রীলংকার আয়ুষ্কাল বাংলাদেশের চেয়ে বেশি অর্থাৎ ৭৫ বছর।‘মনিটরিং দ্য সিচুয়েশন অব ভাইটাল স্ট্যাটিস্টিকস অব বাংলাদেশ (এমএসভিএসবি) (দ্বিতীয় পর্যায়)’ প্রকল্পের আওতায় এ জরিপটি পরিচালনা করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০১৭ সালে মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল ছিল ৭২ বছর।এছাড়া ২০১৬ সালে আয়ুষ্কাল ছিল ৭১ দশমিক ৬ বছর। তার আগে ২০১৫ সালে আয়ুষ্কাল ছিল ৭০ দশমিক ৯ বছর ও ২০১৪ সালে দেশের মানুষের আয়ুষ্কাল ছিল ৭০ দশমিক ৭ বছর।রাজধানীর আগারগাঁওয়ে অবস্থিত পরিসংখ্যান ভবনে প্রতিবেদনটির প্রকাশনা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন পরিকল্পনামন্ত্রী এমএ মান্নান। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব মো. নজিবুর রহমান।পরিসংখ্যান ও তথ্য ব্যবস্থাপনা বিভাগের সচিব সৌরেন্দ্র নাথ চক্রবর্তীর সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখেন বিবিএসের মহাপরিচালক কৃষ্ণা গায়েন ও মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন প্রকল্প পরিচালক একেএম আশরাফুল হক।মানুষের আয়ুষ্কাল বেড়ে যাওয়ার কারণ হিসেবে সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের সদস্য (সিনিয়র সচিব) ড. শামসুল আলম যুগান্তরকে বলেন, মানুষের সব বিষয়ে সচেতনতা বেড়েছে। অর্থাৎ অসুস্থ হলে দেশে-বিদেশে উন্নত চিকিৎসা নিয়ে থাকে।তাছাড়া খাবার গ্রহণ, ব্যায়ামসহ জীবনযাপানের অভ্যাসে পরিবর্তন এসেছে। জীবনযাত্রার মান উন্নত হয়েছে। চিকিৎসা ব্যবস্থা উন্নত হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে মানুষের প্রত্যাশিত আয়ুষ্কাল (অর্থাৎ একজন মানুষ যত দিন বেঁচে থাকতে পারে) সেটি বেড়ে গেছে।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চলতি বছরের ১ জানুয়ারি পর্যন্ত (প্রাক্কলিত হিসেবে) দেশের জনসংখ্যা ১৬ কোটি ৫৫ লাখ ৭০ হাজার। এর মধ্যে পুরুষের সংখ্যা ৮ কোটি ২৮ লাখ ৭০ হাজার ও নারী ৮ কোটি ২৭ লাখ। দেশের মোট জনসংখ্যার মধ্যে মুসলিম ৮৮ দশমিক ৪ শতাংশ ও হিন্দুসহ অন্যান্য ধর্মের জনসংখ্যা ১১ দশমিক ৬ শতাংশ।গত তিন বছরে মুসলিম ও অন্যান্য ধর্মের জনসংখ্যার অনুপাত একই রয়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, মানুষের জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতির ব্যবহার বেড়েছে। ২০১৮ সালে শতকরা ৬৩ দশমিক ১ জন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছে।এর মধ্যে গ্রামে ৬২ দশমিক ৪ জন ও শহরে শতকরা ৬৪ জন জন্মনিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন। এর মধ্যে আধুনিক জন্ম নিয়ন্ত্রণ পদ্ধতি ব্যবহার করছেন ৬১ দশমিক ৬ জন ও যেকোনো পদ্ধতি ব্যবহার করছেন ৬৩ দশমিক ১ জন।প্রধান অতিথির বক্তব্যে এমএ মান্নান বলেন, মানুষের মধ্যে সচেতনতা বেড়েছে ফলে গড় আয়ু বাড়ছে। মানুষের বিদ্যুতের ব্যবহার বাড়ছে। এটি সরকারের কার্যক্রমের ফসল। এগুলো বিশ্বাসযোগ্য তথ্য। কেননা খানা প্রধানের যে হিসাব দেয়া হয়েছে তার বাস্তবতার সঙ্গে মিল আছে। এখনও অধিকাংশ খানার বা পরিবারে প্রধান হচ্ছেন পুরুষ। আগে আমার এলাকায় সারি সারি খোলা পায়খানা ছিল। তখন হাত-পা কাঁপত। এখন তেমনটি নেই। এখনও ৩২ লাখ মানুষ খোলা জায়গায় পায়খানা করে। এ সংখ্যা কম নয়। আমি ইতিমধ্যে হাওর অঞ্চলে স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা স্থাপনের প্রকল্প নিয়েছি। আমি মনে করি এটি বেস্ট বিনিয়োগ।একেএম আশরাফুল হক বলেন, আগে পুরুষরা বেশি বাঁচত। এখন দেখা যাচ্ছে নারীরা বেশি বেঁচে থাকতে পারে। কেননা এখন সচেতনতা বেড়েছে। নারীরা আগে পরিবারের সবার শেষে খেতে বসত। ফলে তারা অপুষ্টিতে ভুগত। এখন সে অবস্থার পরিবর্তন হয়েছে। নারীরা অনেক সচেতন হয়েছে। তাছাড়া মাতৃমৃত্যু ও শিশুমৃত্যু হারও কমেছে। ফলে মানুষের গড় আয়ু বেড়েছে।প্রতিবেদনে শিক্ষার হার সম্পর্কে বলা হয়েছে ২০১৮ সালে ১৫ বছর ও তার ঊর্র্ধ্বে জনসংখ্যার মধ্যে ৭৩ দশমিক ৯ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত। পুরুষদের মধ্যে শিক্ষার হার ৭৬ দশমিক ৭ শতাংশ ও নারীদের মধ্যে ৭১ দশমিক ২ শতাংশ শিক্ষিত। ২০১৭ সালে জাতীয়ভাবে শিক্ষার হার ছিল ৭২ দশমিক ৯ শতাংশ।এ হিসেবে ২০১৮ সালে শিক্ষার হার বেড়েছে। প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে- ৭ বছর ও তার ঊর্র্ধ্বে জনসংখ্যার মধ্যে সাক্ষরতার হার ৭৩ দশমিক ২ শতাংশ। ২০১৭ সালে এ অংশের সাক্ষরতার হার ছিল ৭২ দশমিক ৩ বছর।২০১৮ সালে স্থূল প্রতিবন্ধিতার হার প্রতি হাজারে ৮ দশমিক ৫ জন বলে প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এর মধ্যে পুরুষ হচ্ছে ৯ দশমিক ৩ জন ও নারী ৭ দশমিক ৭ জন। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এক বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার হচ্ছে প্রতি হাজারে জীবিত জন্ম নেয়া শিশুর মধ্যে জাতীয়ভাবে ২২ জন।২০১৭ সালে এ হার ছিল ২৪ জন। এক মাসের কম বয়সের শিশু মত্যুর হার প্রতি হাজার জীবিত জন্ম নেয়ার শিশুর মধ্যে ১৬ জন, যা ২০১৭ সালে ছিল ১৭ জন। এক মাস থেকে ১১ মাস বয়সের শিশু মৃত্যুর হার ৬ জন, যা ২০১৭ সালে ছিল ৭ জন।এছাড়া ১ থেকে ৪ বছর বয়সের শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ১ দশমিক ৭ জন, যা ২০১৭ সালে ছিল ১ দশমিক ৮ জন। এছাড়া ৫ বছরের নিচে শিশু মৃত্যুর হার প্রতি হাজারে ২৯ জন, যা ২০১৭ সালে ছিল ৩১ জন।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এখনও শতকরা ৮৫ দশমিক ৮ শতাংশ পরিবার প্রধানের দায়িত্ব পালন করে পুরুষরা। নারীপ্রধান পরিবারের সংখ্যা শতকরা ১৪ দশমিক ২ শতাংশ। এ সংখ্যা ২০১৭ সালের জরিপেও ছিল। কোনো পরিবর্তন হয়নি।দেশের ৯০ দশমিক ১ শতাংশ পরিবার বিদ্যুৎ ব্যবহার করে, ২০১৭ সালে এ হার ছিল ৮৫ দশমিক ৩। ট্যাপ বা নলকূপের পানি ব্যবহার করে শতকরা ৯৮ শতাংশ পরিবার। স্যানিটারি পায়খানা ব্যবহার করে ৭৮ দশমিক ১ শতাংশ পরিবার।প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সাম্প্রতিককালে বিশেষ করে পুরুষদের ক্ষেত্রে প্রথম বিয়ের গড় বয়স কিছুটা নিম্নমুখী। পুরুষদের বিয়ের গড় বয়স ২০১৫ সালে ছিল ২৫ দশমিক ৩ বছর, যা ২০১৭ ও ২০১৮ সালে কমে হয়েছে যথাক্রমে ২৫ দশমিক ১ বছর ও ২৪ দশমিক ৪ বছর। অপরদিকে নারীদের বিয়ের গড় বয়স ২০১৪ সালে ছিল ১৮ দশমিক ৩ বছর, যা ২০১৮ সালে একই অবস্থানে রয়েছে।এইচআইভি বা এইডস সম্পর্কে সচেতনতা বেড়েছে। ২০১৮ সালের জরিপে দেখা গেছে ১৫-৪৯ বছর বয়সী ৩৪ দশমিক ৬ শতাংশ মহিলা এইচআইভি বা এইডস সংক্রমণের সব পদ্ধতি সম্পর্কে জানে। ২০১৪ সালে এ হার ছিল ২১ শতাংশ।এছাড়া ২০১৮ সালে দেখা গেছে এইচআইভি বা এইডস সংক্রমণের যেকোনো একটি পদ্ধতি সম্পর্কে জানে ৬৮ দশমিক ৯ ভাগ নারী, যা ২০১৪ সালে ছিল ৬১ দশমিক ৫ ভাগ। অন্যদিকে মানুষের বিদেশে যাওয়ার হার কিছুটা কমেছে। ২০১৮ সালে এ হার দাঁড়িয়েছে প্রতি হাজারে ৭২ দশমিক ৪ জন। ২০১৭ সালে এটি ছিল ৭৪ দশমিক ৩ জন।অনুষ্ঠানে জানানো হয়, ২০১৮ সালে সারা দেশের ২ হাজার ১২টি নমুনা এলাকা থেকে তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে। এই নমুনা এলাকার পরিবারের সংখ্যা ছিল ২ লাখ ৯৭ হাজার ২৩৩টি।