স্টাফ রিপোর্টার॥
চাঁদপুর ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল। যেখানে প্রতিদিনই হাজার হাজার রোগীর সমাগম ঘটে। শরীরের যাতনা লাঘবের জন্যেই রোগীদের ডাক্তারের কাছে আসতে হয়। আর সাধারণ রোগীরা সহজলভ্যতা ও কম খরচের জন্য ছুটে আসে জেলা সদরের সরকারি হাসপাতালে। কিন্তু সেখানেই মনে হয় রোগীদের কষ্ট বেশিই ভোগ করতে হয়। ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ অলিউর রহমান।
দীর্ঘদিন থেকেই তিনি চাঁদপুরে। সরকারি হাসপাতালে যতক্ষন থাকার কথা কোনদিনই সঠিক সময় পর্যন্ত অফিস করেন না। করবেনই বা কিভাবে সরকারি হাসপাতালের চেয়ে প্রাইভেটই লাভ বেশি। আর যতক্ষণ সরকারি হাসপাতালে বসেন ততক্ষণই ব্যস্ত থাকেন রোগী বাণিজ্যে। রোগীদের বিভিন্ন পরীক্ষা নিরীক্ষা দিয়ে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টার গ্রীন ভিউতে পাঠান ডাঃ অলিউর রহমান। সেখান থেকে কমিশন বাণিজ্য করেন তিনি।
এরকমই একটি ঘটনা ঘটে গত ২৫ নভেম্বর। খাদিজা নামের ৪ বছরের এক বাচ্চা রোগীকে দেখে তিনি আল্ট্রাসনোগ্রাম ও ইউরিন টেস্টের জন্য নির্দিষ্ট করে গ্রিন ভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠান। হাসপাতালের জনবল শাখায় কর্মরত ডাঃ অলিউর রহমানের অধীনে থাকা মোহাম্মদ রোগী ও তার মাকে গ্রিন ভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের কর্মচারী মুহিতকে সাথে করে গ্রিনভিউতে পাঠান।
সেখানে দু’টি টেস্ট করাতে ১৩শ’ টাকা চাওয়া হয়। রোগীর মায়ের কাছে এত টাকা না থাকায় তিনি বাকীতে পরিচিত মীম ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পরীক্ষা করিয়ে রিপোর্ট নিয়ে ১২টা ৩০ মিনিটে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালটেন্ট ডাঃ অলিউর রহমানের চেম্বারে গেলে তাকে পাওয়া যায়নি। বাধ্য হয়ে রোগীকে নিয়ে তার মা পরের দিন হাসপাতালের ডাঃ অলিউর রহমানের কাছে আসার পর মীম ডায়াগনস্টিক সেন্টারের রিপোর্ট থেকে তিনি রিতিমত চিৎকার চেচামেচি শুরু করেন। রোগীর মায়ের সাথে দুর্ব্যবহার ও ব্যাঙ্গাত্মক করে কথা বলতে থাকেন।
কয়েকজন সাংবাদিক বিষয়টি জেনে খোঁজ খবর নেয়ার পর বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। হাসপাতালে সেই ডাক্তারের চেম্বারে ঢুকতেই সেখানে বসা রয়েল হাসপাতালের মালিক পরিচয়দানকারী হারুন নামের এক ব্যক্তি।
ডাক্তারকে রোগীর পরিবারের সাথে এরকম ব্যবহারের কারন জিজ্ঞাসা করতেই হারুন নামের ওই ব্যক্তি নিজেই আগ বাড়িয়ে ডাক্তারের গুনকির্তন করতে থাকেন। নাছোরবান্দা সাংবাদিকগন বিষয়টি নিয়ে গভীরভাবে জানতে চাইলে ডাক্তার সাহেব নিজে গ্রিনভিউ ডায়াগনিস্টক সেন্টারের কোন বিষয় জড়িত না কিন্তু তার কর্মচারী মোহাম্মদ জড়িত বলে স্বিকার করেন।
ডাক্তার অলিউর রহমানের সাথে সাক্ষাত শেষ করে প্রতিবেদক ছুটে যান গ্রিনভিউ ডায়াগনিস্টক সেন্টারে। সেখানে পরিচয় গোপন রেখে শিশু মুহিতকে খোঁজার চেষ্টা করা হয় যাকে দিয়েই ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতাল থেকে রোগী আনা হয় গ্রিন ভিউতে। তার এই ডায়াগনস্টিক সেন্টারে যুক্ত থাকার বিষয় প্রমাণ পেলে সাংবাদিকগন তাদের পরিচয় দিয়ে ডাঃ অলিউর রহমানের সাথে তাদের যোগাযোগের বিষয়টি জানতে চাইলে দায়িত্বে থাকা ম্যানেজার বলেন, ডাক্তার সাহেব মুহিতকে দিয়ে বাড়ির বাজার করান। হাসপাতালে চা-টা আনান এবং এখানে রোগী পাঠান।
পরবর্তীতে ম্যানেজরা প্রতিবেদককে গ্রিন ভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টার ও আইডিয়েল ডায়াগনিস্টক সেন্টারের মালিক আজাদের সাথে যোগাযোগ করতে বলে। ডায়াগনস্টিক সেন্টারের ম্যানেজারের কথা নিয়ে আবার ডাঃ অলিউর রহমানের কাছে জানতে চাইলে তিনি কিছুটা বিব্রতবোধ করে ২৫নভেম্বর রোগীর মায়ের সাথে দুর্বব্যহারের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেন। কিন্তু হাসপাতাল থেকে নির্দিষ্ট ডায়াগনিস্টক সেন্টারে নিজে রোগী পাঠানোর বিষয়টি বরাবরই অস্বিকার করেন।
গ্রিন ভিউ ডায়াগনস্টিক সেন্টারের মালিক আজাদ (০১৬৭৬৮৯৪৮৪৯) এর মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সাংবাদিক আমি পকেটে রাখি। এরকম বহু সাংবাদিক প্রতি সপ্তাহে আমার কাছ থেকে বাজারের টাকা নিয়ে যায়। আজকে সন্ধ্যায়ও এক সাংবাদিককে বাজারের টাকা দিয়েছি। সুতরাং আমারে নিয়া নিউজ কইরা লাভ নাই। আপনাদের সাংবাদিকদেরই আপনার পিছনে লাগাইয়া দিব।
আরো জানা যায়, হাসপাতালের আল্ট্রাসনোগ্রামসহ আধুনিক সব সেবা চালু থাকার কথা থাকলেও হাসপাতালে বেশির ভাগ সময়ে এসব সেবা বন্ধ থাকে। এর প্রথম এবং প্রধান কারণ হচ্ছে হাসপাতালের সরকারি ফি কম এবং সেটা থেকে টাকা আত্মসাৎ করার সুযোগ কম। তাই হাসপাতালের পরীক্ষা নিরীক্ষা অনেক সময় বন্ধ রেখে রোগীদের বাইরে নির্দিষ্ট ডায়াগনস্টিক সেন্টারে পাঠিয়ে দেয়া হয়।