ইসলাম ধর্ম নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করায় শিক্ষক বিপ্লব সাময়িক বহিষ্কার॥ তদন্ত কমিটি গঠন

  • আপডেট: ০৬:১০:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ৩১

শওকতআলী॥

পবিত্র ধর্ম ইসলামকে কটূক্তির মাধ্যমে অবমাননা করায় শিক্ষক বিপ্লব কান্তি সরকারকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। ফরিদগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিপ্লব কান্তি সরকারের সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির আহামেদ।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে বহিষ্কারাদেশের চিঠির অনুলিপি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রধান কর্মকর্তা বরাবরে প্রেরণ করা চিঠি পৌছেছে।।

বহিস্কারের কথা শুনে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করলেও তাকে ওই বিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী জানায়, গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিপ্লব কান্তি সরকার প্রায় এক বছর তিন মাস পূর্বে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয় টির সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক বিল্পব কান্তি সরকার ফেসবুকে তার নিজ নামের আইডিতে কটুক্তি করে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে বিভ্রান্তি মূলক তথ্য প্রচার করেছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে এলাকায় প্রতিবাদের ঝড় উঠে।

তবে ওই এলাকারই মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কজন জানায়, বিপ্লব কান্তি সরকার নিজে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হয়ে কোন উদ্দেশ্যে দুঃসাহস দেখিয়ে পবিত্র ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।

প্রধান শিক্ষক কবির আহামেদ বলেন, বিপ্লব কান্তি সরকার মুসলিম ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানে এমন সব বিষয় অবতারণা করে গত ৩১ আগস্ট শনিবার ফেসবুকে একটি স্পর্শ কাতর পোস্ট দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এতে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করার অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে বিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বলেন, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সুনাম রয়েছে। ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার কথা শুনে তাৎক্ষণিক ওই শিক্ষককে বহিস্কার করতে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিয়েছি এবং এ বিষয়কে কেন্দ্র করে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্যে বিদ্যালয় ও এলাকাবাসীর স্বার্থে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার উদাত্ত আহ্বান জানাই।

এদিকে উক্ত বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্যে সরকার প্রশাসনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নজরদারি রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, এদিকে গত সোমবার নিজের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে বলে বিপ্লব কান্তি সরকার থানায় জিডি করেন। আর ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ঐদিনই থানায় লিখিত অভিযোগ হয়। ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক বিপ্লব ব্যক্তিগত ফেসবুকে ‘ইসলাম ধমের প্রকৃত ইতিহাস এবং হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) পৃথিবীর প্রথম মানব নয়’ এমন তথ্য দিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া হয়। রোববার ফেসবুকে এ পোস্টটি ছাড়া হয়। এ নিয়ে তার কর্মস্থান ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোয়ালভাওড় এলাকায় স্থানীয় জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরদিন সোমবার তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে বিক্ষুব্ধরা মিছিল করে বিদ্যালয়ে গিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে সে বিদ্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। পরে স্থানীয় লোকজন স্থানীয় বাজারে মিছিল সমাবেশ করে। সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস প্রদান করে পরিস্থিতি শান্ত করে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন জানান, সকালে বিপ্লব কান্তি সরকার বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে স্থানীয় জনতা তাকে ঘিরে বিদ্যালয় ঘেরাও করে ফেলে এবং তার বিচার দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি আমাকে জানান, তার ফেসবুক হ্যাক হয়েছে এবং কে বা কারা এই স্ট্যাটাসটি দেয়। পরে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে বিষয়টি জানালে তারা এসে তাকে উদ্ধার করে।

থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রকিব জানান, বিপ্লব কান্তি তার ফেসবুক হ্যাক হয়েছে বলে থানায় জিডি করেছেন। ঘটনা তদন্ত করে অবশ্যই দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে সোমবার রাতে গোয়ালভাওড় এলাকার জনৈক শাহাদাত হোসেন বিপ্লব কান্তির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মমতা আফরিন জানান, এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন আমাদেরকে জানালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। বিপ্লব কান্তির ফেসবুক হ্যাক হয়েছে কি না তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া হবে না-রিজভী

ইসলাম ধর্ম নিয়ে ফেসবুকে কটূক্তি করায় শিক্ষক বিপ্লব সাময়িক বহিষ্কার॥ তদন্ত কমিটি গঠন

আপডেট: ০৬:১০:২১ পূর্বাহ্ন, শুক্রবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শওকতআলী॥

পবিত্র ধর্ম ইসলামকে কটূক্তির মাধ্যমে অবমাননা করায় শিক্ষক বিপ্লব কান্তি সরকারকে সাময়িক বহিস্কার করা হয়েছে। ফরিদগঞ্জের ঐতিহ্যবাহী গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী প্রধান শিক্ষক বিপ্লব কান্তি সরকারের সাময়িক বহিষ্কারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির আহামেদ।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার ৫ সেপ্টেম্বর বিকেলে বহিষ্কারাদেশের চিঠির অনুলিপি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালকসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর প্রধান কর্মকর্তা বরাবরে প্রেরণ করা চিঠি পৌছেছে।।

বহিস্কারের কথা শুনে এলাকাবাসীর মধ্যে স্বস্তি বিরাজ করলেও তাকে ওই বিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিস্কারের দাবি উঠেছে বিভিন্ন মহলে।

বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ও এলাকাবাসী জানায়, গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ে সহকারী প্রধান শিক্ষক হিসেবে বিপ্লব কান্তি সরকার প্রায় এক বছর তিন মাস পূর্বে যোগদান করেন। ১৯৬৯ সালে স্থাপিত ঐতিহ্যবাহী এ বিদ্যালয় টির সুনাম ও সুখ্যাতি রয়েছে। বিদ্যালয়ের বিজ্ঞান বিষয়ের শিক্ষক বিল্পব কান্তি সরকার ফেসবুকে তার নিজ নামের আইডিতে কটুক্তি করে ইসলাম ধর্মকে অবমাননা করে বিভ্রান্তি মূলক তথ্য প্রচার করেছে। এ নিয়ে তার বিরুদ্ধে এলাকায় প্রতিবাদের ঝড় উঠে।

তবে ওই এলাকারই মুসলমান ও হিন্দু সম্প্রদায়ের বেশ কজন জানায়, বিপ্লব কান্তি সরকার নিজে হিন্দু সম্প্রদায়ের লোক হয়ে কোন উদ্দেশ্যে দুঃসাহস দেখিয়ে পবিত্র ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করেছে তা আমাদের বোধগম্য নয়।

প্রধান শিক্ষক কবির আহামেদ বলেন, বিপ্লব কান্তি সরকার মুসলিম ধর্মীয় অনুভুতিতে আঘাত হানে এমন সব বিষয় অবতারণা করে গত ৩১ আগস্ট শনিবার ফেসবুকে একটি স্পর্শ কাতর পোস্ট দিয়ে জনমনে বিভ্রান্তি ও উত্তেজনা সৃষ্টি করে। এতে বিদ্যালয়ের ভাবমূর্তি ও শিক্ষার পরিবেশ বিনষ্ট করার অভিযোগে তাকে সাময়িকভাবে বিদ্যালয় থেকে বহিস্কার করা হয়েছে।
ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি হুমায়ুন কবির পাটওয়ারী বলেন, হিন্দু অধ্যুষিত এলাকায় প্রতিষ্ঠিত গোবিন্দপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সুনাম রয়েছে। ইসলাম ধর্ম নিয়ে কটূক্তি করার কথা শুনে তাৎক্ষণিক ওই শিক্ষককে বহিস্কার করতে প্রধান শিক্ষককে নির্দেশ দিয়েছি এবং এ বিষয়কে কেন্দ্র করে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্যে বিদ্যালয় ও এলাকাবাসীর স্বার্থে সবাইকে সজাগ দৃষ্টি রাখার উদাত্ত আহ্বান জানাই।

এদিকে উক্ত বিষয়টিকে কেন্দ্র করে যাতে কোন অপ্রীতিকর ঘটনা না ঘটে সেজন্যে সরকার প্রশাসনসহ বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার কঠোর নজরদারি রয়েছে বলে নিশ্চিত হওয়া গেছে।

উল্লেখ্য, এদিকে গত সোমবার নিজের ফেসবুক আইডি হ্যাক হয়েছে বলে বিপ্লব কান্তি সরকার থানায় জিডি করেন। আর ধর্ম অবমাননার অভিযোগে ঐদিনই থানায় লিখিত অভিযোগ হয়। ঘটনা সূত্রে জানা গেছে, শিক্ষক বিপ্লব ব্যক্তিগত ফেসবুকে ‘ইসলাম ধমের প্রকৃত ইতিহাস এবং হযরত আদম (আঃ) ও হাওয়া (আঃ) পৃথিবীর প্রথম মানব নয়’ এমন তথ্য দিয়ে স্ট্যাটাস দেয়া হয়। রোববার ফেসবুকে এ পোস্টটি ছাড়া হয়। এ নিয়ে তার কর্মস্থান ফরিদগঞ্জ উপজেলার গোয়ালভাওড় এলাকায় স্থানীয় জনতা বিক্ষুব্ধ হয়ে ওঠে। পরদিন সোমবার তিনি বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে বিক্ষুব্ধরা মিছিল করে বিদ্যালয়ে গিয়ে তাকে অবরুদ্ধ করে রাখে। এক পর্যায়ে সে বিদ্যালয় ত্যাগ করতে বাধ্য হয়। পরে স্থানীয় লোকজন স্থানীয় বাজারে মিছিল সমাবেশ করে। সংবাদ পেয়ে উপজেলা প্রশাসন ও থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচারের আশ্বাস প্রদান করে পরিস্থিতি শান্ত করে।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন জানান, সকালে বিপ্লব কান্তি সরকার বিদ্যালয়ে উপস্থিত হলে স্থানীয় জনতা তাকে ঘিরে বিদ্যালয় ঘেরাও করে ফেলে এবং তার বিচার দাবি করে বিক্ষোভ মিছিল করতে থাকে। বিষয়টি টের পেয়ে তিনি আমাকে জানান, তার ফেসবুক হ্যাক হয়েছে এবং কে বা কারা এই স্ট্যাটাসটি দেয়। পরে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ বিভাগকে বিষয়টি জানালে তারা এসে তাকে উদ্ধার করে।

থানার অফিসার ইনচার্জ আবদুর রকিব জানান, বিপ্লব কান্তি তার ফেসবুক হ্যাক হয়েছে বলে থানায় জিডি করেছেন। ঘটনা তদন্ত করে অবশ্যই দোষী ব্যক্তির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এ বিষয়ে সোমবার রাতে গোয়ালভাওড় এলাকার জনৈক শাহাদাত হোসেন বিপ্লব কান্তির বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত রয়েছে। আমরা বিষয়টি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছি।

উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ভারপ্রাপ্ত) মমতা আফরিন জানান, এ বিষয়ে বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক কবির হোসেন আমাদেরকে জানালে উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাসহ আমরা ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করি। বিপ্লব কান্তির ফেসবুক হ্যাক হয়েছে কি না তা তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হবে।