ফরিদগঞ্জে মাদকাসক্ত ভাইয়ের নির্যাতন থেকে বাঁচতে সেইফ হোমকে বেছে নিল দত্তক নেয়া কিশোরী

  • আপডেট: ০১:২১:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯
  • ৪১

শওকতআলী॥
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও মাদকাসক্ত ভাইয়ের বিরুদ্ধে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে থানায় জিডি করে এক কিশোরী। ঘটনাটি ঘটে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে।

পরে ঐ কিশোরীর ইচ্ছা অনুযায়ী নিরাপদ স্থান হিসাবে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সেইফ হোমকে নিজের ঠিকানা হিসাবে খুজে পেলো।

মঙ্গলবার ফরিদগঞ্জ থানায় তাকে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও মাদকাসক্ত ভাইয়ের বিরুদ্ধে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে থানায় জিডি করে ঐ কিশোরী। শুধু তাই নয়, দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও ভাই রুবেল জোর পূর্বক স্থানীয় কিছু যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা আদালতে বলতে বাধ্য করছে এমন অভিযোগও তুলে ঐ জিডিতে।
থানায় দায়েরকৃত কিশোরীর জিডির ভিত্তিতে পুলিশ চাঁদপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে সেইফ হোমে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে ৪ সেপ্টম্বর বুধবার বিকেলে গাজীপুর জেলার কোনাবাড়িস্থ কিশোরীদের জন্য নির্মিত সেইফ হোমে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, ওই কিশোরীকে শারিরিক নির্যাতন করার অভিযোগ করে তার পালিত মা মানছুরা বেগম ২৪ আগস্ট ফরিদগঞ্জ থানায় এবং পরবর্তীতে তার পালিত বাবা বসির উল্ল্যাহ্ ২৯ আগস্ট চাঁদপুর আদালতে তার মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ করে মামলা দায়ের করেছিলো। এইসব ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছিল ওই কিশোরীটি।

থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফরিদগঞ্জ থানার ওসি(তদন্ত) অহিদুল ইসলাম জানান, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১১নং চরদু:খিয়া ইউনিয়নের আলোনিয়া গ্রামে গত ২০ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বসির উল্ল্যাহর মেয়েকে শারিরিক নির্যাতন করে এমন অভিযোগ তুলে ২৪ আগস্ট শনিবার থানায় মামলা দায়ের করে ওই কিশোরীর মা মানছুরা বেগম। এঘটনায় পুলিশ জসিম ঢালী ও আয়াত উল্ল্যা নামে দুইজনকে আটক করে। কিন্তু কিশোরীর পিতা বসির উল্ল্যা ২৯ আগস্ট চাঁদপুরের নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে জসিম ঢালী, হান্নান ওরফে হানু ও ওসমান বেপারী নামে তিনজনকে অভিযুক্ত করে তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে। আদালত পরবর্তীতে ফরিদগঞ্জ থানাকে মামলা দায়ের পূর্বক তদন্তক রার নির্দেশনা দেয়।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা কিশোরীকে ২২ ধারায় জবানবন্দি নেয়ার জন্য আদালতে হাজির করেন। ২২ ধারায় জবানবন্দি সম্পন্নের পর ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য নিলে সে ডাক্তারী পরীক্ষা করাতে অস্বীকৃতি জানায়।

পরবর্তীতে সে গত ৩ সেপ্টেম্বর থানায় তাকে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও মাদকাসক্ত ভাইয়ের বিরুদ্ধে শারিরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে থানায় জিডি করে। জিডিতে সে আরো উল্লেখ করে, তাকে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও মাদকাসক্ত ভাই রুবেল দত্তক পিতার দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত যুবকদের বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষণের কথা বলার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তাই, তাকে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও ভাইয়ের কাছ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানোর জন্য আবেদন করে। সেই অনুযায়ী আদালত বুধবার তাকে সেইফ হোমে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়।

এব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রকিব জানান, কিশোরীটিকে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও মাদকাসক্ত ভাইয়ের শারিরিক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে সে আবেদন করলে সেটিকে জিডি হিসেবে গ্রহন করে পরবর্তীতে আদালতে পাঠানো হয়। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে ৪ সেপ্টম্বর বুধবার গাজীপুর জেলার কোনাবাড়িস্থ কিশোরীদের জন্য নির্মিত সেইফ হোমে পাঠানো হয়েছে।

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া হবে না-রিজভী

ফরিদগঞ্জে মাদকাসক্ত ভাইয়ের নির্যাতন থেকে বাঁচতে সেইফ হোমকে বেছে নিল দত্তক নেয়া কিশোরী

আপডেট: ০১:২১:০৮ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ৫ সেপ্টেম্বর ২০১৯

শওকতআলী॥
চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও মাদকাসক্ত ভাইয়ের বিরুদ্ধে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে থানায় জিডি করে এক কিশোরী। ঘটনাটি ঘটে চাঁদপুরের ফরিদগঞ্জে।

পরে ঐ কিশোরীর ইচ্ছা অনুযায়ী নিরাপদ স্থান হিসাবে বুধবার (৪ সেপ্টেম্বর) বিকেলে সেইফ হোমকে নিজের ঠিকানা হিসাবে খুজে পেলো।

মঙ্গলবার ফরিদগঞ্জ থানায় তাকে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও মাদকাসক্ত ভাইয়ের বিরুদ্ধে শারিরিক ও মানসিক নির্যাতনের শিকার হওয়ার অভিযোগ তুলে থানায় জিডি করে ঐ কিশোরী। শুধু তাই নয়, দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও ভাই রুবেল জোর পূর্বক স্থানীয় কিছু যুবকের বিরুদ্ধে ধর্ষণের ঘটনা আদালতে বলতে বাধ্য করছে এমন অভিযোগও তুলে ঐ জিডিতে।
থানায় দায়েরকৃত কিশোরীর জিডির ভিত্তিতে পুলিশ চাঁদপুরের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রেট আদালতে হাজির করলে আদালত তাকে সেইফ হোমে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়। আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ফরিদগঞ্জ থানা পুলিশ তাকে ৪ সেপ্টম্বর বুধবার বিকেলে গাজীপুর জেলার কোনাবাড়িস্থ কিশোরীদের জন্য নির্মিত সেইফ হোমে পাঠানো হয়েছে। কিন্তু, ওই কিশোরীকে শারিরিক নির্যাতন করার অভিযোগ করে তার পালিত মা মানছুরা বেগম ২৪ আগস্ট ফরিদগঞ্জ থানায় এবং পরবর্তীতে তার পালিত বাবা বসির উল্ল্যাহ্ ২৯ আগস্ট চাঁদপুর আদালতে তার মেয়েকে ধর্ষণের অভিযোগ করে মামলা দায়ের করেছিলো। এইসব ঘটনায় মানসিকভাবে বিপর্যন্ত হয়ে পড়েছিল ওই কিশোরীটি।

থানায় দায়েরকৃত দুটি মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও ফরিদগঞ্জ থানার ওসি(তদন্ত) অহিদুল ইসলাম জানান, ফরিদগঞ্জ উপজেলার ১১নং চরদু:খিয়া ইউনিয়নের আলোনিয়া গ্রামে গত ২০ আগস্ট মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বসির উল্ল্যাহর মেয়েকে শারিরিক নির্যাতন করে এমন অভিযোগ তুলে ২৪ আগস্ট শনিবার থানায় মামলা দায়ের করে ওই কিশোরীর মা মানছুরা বেগম। এঘটনায় পুলিশ জসিম ঢালী ও আয়াত উল্ল্যা নামে দুইজনকে আটক করে। কিন্তু কিশোরীর পিতা বসির উল্ল্যা ২৯ আগস্ট চাঁদপুরের নারী ও শিশু দমন ট্রাইব্যুনাল আদালতে জসিম ঢালী, হান্নান ওরফে হানু ও ওসমান বেপারী নামে তিনজনকে অভিযুক্ত করে তার মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে উল্লেখ করে মামলা দায়ের করে। আদালত পরবর্তীতে ফরিদগঞ্জ থানাকে মামলা দায়ের পূর্বক তদন্তক রার নির্দেশনা দেয়।

আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ১ সেপ্টেম্বর থানায় মামলা দায়েরের পর তদন্তকারী কর্মকর্তা কিশোরীকে ২২ ধারায় জবানবন্দি নেয়ার জন্য আদালতে হাজির করেন। ২২ ধারায় জবানবন্দি সম্পন্নের পর ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য নিলে সে ডাক্তারী পরীক্ষা করাতে অস্বীকৃতি জানায়।

পরবর্তীতে সে গত ৩ সেপ্টেম্বর থানায় তাকে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও মাদকাসক্ত ভাইয়ের বিরুদ্ধে শারিরিক নির্যাতনের অভিযোগ তুলে থানায় জিডি করে। জিডিতে সে আরো উল্লেখ করে, তাকে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও মাদকাসক্ত ভাই রুবেল দত্তক পিতার দায়ের করা মামলায় অভিযুক্ত যুবকদের বিরুদ্ধে জোর পূর্বক ধর্ষণের কথা বলার জন্য চাপ প্রয়োগ করে। তাই, তাকে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও ভাইয়ের কাছ থেকে নিরাপদ আশ্রয়ে পাঠানোর জন্য আবেদন করে। সেই অনুযায়ী আদালত বুধবার তাকে সেইফ হোমে পাঠানোর নির্দেশনা দেয়।

এব্যাপারে ফরিদগঞ্জ থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুর রকিব জানান, কিশোরীটিকে দত্তক নেয়া পিতা-মাতা ও মাদকাসক্ত ভাইয়ের শারিরিক নির্যাতনের হাত থেকে বাঁচতে সে আবেদন করলে সেটিকে জিডি হিসেবে গ্রহন করে পরবর্তীতে আদালতে পাঠানো হয়। বিজ্ঞ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে ৪ সেপ্টম্বর বুধবার গাজীপুর জেলার কোনাবাড়িস্থ কিশোরীদের জন্য নির্মিত সেইফ হোমে পাঠানো হয়েছে।