গল্পে গল্পে তাহেরী আংকেল

  • আপডেট: ১২:৫৪:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৯
  • ৩৮
রম্য গল্প

ঘুম থেকে দেরিতে উঠায় ক্লাসে ১০ মিনিট লেইট। স্যার বোর্ডে কি যেন লিখছিলেন। এই ফাঁকে চুপি চুপি পেছনের দরজা দিয়ে ক্লাসে ঢুকে লাস্ট বেঞ্চে বসে গেলাম। ক্লাসে তখন পিনপতন নীরবতা। পাশের জনকে আস্তে আস্তে বললাম- ‘দোস্ত, পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হৈচৈ আছে?’

স্যারের চোখ আবার মাছরাঙার চোখের মতো। ধরা খেয়ে গেলাম। স্যার আমাকে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে বলতে শুরু করলেন- ‘দিদার, ক্লাসে লেইট করে আসো; পেছনে বসো; তোমাকে তো আমি ভালো ভেবেছিলাম।’

আমি মাথা নিচু করে মনে মনে বলতেছিলাম-‘স্যার, আমি কি কাউকে গালি দিয়েছি? কারো সম্পর্ক বাজে বলেছি। তারপরও আপনি বলবেন আমি ভালো না। আমিও বলি, আমি তো ভালা না, ভালা লইয়া থাইকেন।’

স্যার কিছুক্ষণ বকাঝকা দিয়ে আমাকে বসিয়ে দিলেন। ক্লাস নিতে লাগলেন। স্যার আবার মাইক্রোফোনে ক্লাস নেন। মাইক্রোফোনটা আজ একটু ডিস্টার্ব করতেছে। তাই স্যার বলতেছিল- ‘কথা কি ক্লিয়ার নাকি ভেজাল আছে?’

না! মাইক্রোফোনটা দিয়ে ক্লাস নেয়া যাচ্ছে না। একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে ওটা। স্যার এবার দাঁড়িয়ে নিজের গলা দিয়ে চিল্লায়ে চিল্লায়ে পড়াতে শুরু করলেন। যাতে করে সবাই শুনতে পারে। আমি পেছন থেকে মনে মনে বলতেছিলাম- ‘চিল্লায়া কি মার্কেট ফাওন যাইব?’

এক পর্যায়ে স্যার আমাকে আবার দাঁড় করালেন। একটা ডেফিনেশন ধরলেন। আমি বাংলা-ইংলিশ মিলিয়ে স্যারের উত্তর করলাম। স্যার আবার বকা দিয়ে বসিয়ে দিলেন আমাকে। আর বিরক্তস্বরে বললেন- ‘ছাত্র এখন মারাত্মক। বাংলা-ইংলিশ মিলায়া ডেফিনেশন বানায়া ফালাই।’

ক্লাস তখন প্রায় শেষের দিকে। পড়ানো শেষ করে স্যার আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন- ‘ক্লাস কেমন লাগল?’

আমরা তখন স্যারের একেকজন একেক প্রসংশা করতে লাগলাম। স্যার প্রসংশা শুনে তখন বলেছিলেন- ‘ফাম দিস না; ফাম দিস না; তোদের ছোটদের ফামে আমি শেষ।’

লেখক: দিদার মোহাম্মদ, শিক্ষার্থী, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ (যুগান্তর)

Tag :
সর্বাধিক পঠিত

উপদেষ্টাদের যাচ্ছেতাই কর্মকাণ্ড মেনে নেয়া হবে না-রিজভী

গল্পে গল্পে তাহেরী আংকেল

আপডেট: ১২:৫৪:৩০ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ৩০ অগাস্ট ২০১৯
রম্য গল্প

ঘুম থেকে দেরিতে উঠায় ক্লাসে ১০ মিনিট লেইট। স্যার বোর্ডে কি যেন লিখছিলেন। এই ফাঁকে চুপি চুপি পেছনের দরজা দিয়ে ক্লাসে ঢুকে লাস্ট বেঞ্চে বসে গেলাম। ক্লাসে তখন পিনপতন নীরবতা। পাশের জনকে আস্তে আস্তে বললাম- ‘দোস্ত, পরিবেশটা সুন্দর না? কোনো হৈচৈ আছে?’

স্যারের চোখ আবার মাছরাঙার চোখের মতো। ধরা খেয়ে গেলাম। স্যার আমাকে সবার সামনে দাঁড় করিয়ে বলতে শুরু করলেন- ‘দিদার, ক্লাসে লেইট করে আসো; পেছনে বসো; তোমাকে তো আমি ভালো ভেবেছিলাম।’

আমি মাথা নিচু করে মনে মনে বলতেছিলাম-‘স্যার, আমি কি কাউকে গালি দিয়েছি? কারো সম্পর্ক বাজে বলেছি। তারপরও আপনি বলবেন আমি ভালো না। আমিও বলি, আমি তো ভালা না, ভালা লইয়া থাইকেন।’

স্যার কিছুক্ষণ বকাঝকা দিয়ে আমাকে বসিয়ে দিলেন। ক্লাস নিতে লাগলেন। স্যার আবার মাইক্রোফোনে ক্লাস নেন। মাইক্রোফোনটা আজ একটু ডিস্টার্ব করতেছে। তাই স্যার বলতেছিল- ‘কথা কি ক্লিয়ার নাকি ভেজাল আছে?’

না! মাইক্রোফোনটা দিয়ে ক্লাস নেয়া যাচ্ছে না। একেবারে নষ্ট হয়ে গেছে ওটা। স্যার এবার দাঁড়িয়ে নিজের গলা দিয়ে চিল্লায়ে চিল্লায়ে পড়াতে শুরু করলেন। যাতে করে সবাই শুনতে পারে। আমি পেছন থেকে মনে মনে বলতেছিলাম- ‘চিল্লায়া কি মার্কেট ফাওন যাইব?’

এক পর্যায়ে স্যার আমাকে আবার দাঁড় করালেন। একটা ডেফিনেশন ধরলেন। আমি বাংলা-ইংলিশ মিলিয়ে স্যারের উত্তর করলাম। স্যার আবার বকা দিয়ে বসিয়ে দিলেন আমাকে। আর বিরক্তস্বরে বললেন- ‘ছাত্র এখন মারাত্মক। বাংলা-ইংলিশ মিলায়া ডেফিনেশন বানায়া ফালাই।’

ক্লাস তখন প্রায় শেষের দিকে। পড়ানো শেষ করে স্যার আমাদের জিজ্ঞাসা করলেন- ‘ক্লাস কেমন লাগল?’

আমরা তখন স্যারের একেকজন একেক প্রসংশা করতে লাগলাম। স্যার প্রসংশা শুনে তখন বলেছিলেন- ‘ফাম দিস না; ফাম দিস না; তোদের ছোটদের ফামে আমি শেষ।’

লেখক: দিদার মোহাম্মদ, শিক্ষার্থী, শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ, কিশোরগঞ্জ (যুগান্তর)